ধরুন, আপনার খুব শখ ঘরে বসে বড় পর্দায় সিনেমা দেখবেন। শখটা পূরণ করতে হলে আপনাকে অন্ততঃপক্ষে ২৪,০০০ টাকা খোয়াতে হবে। কেন? একটা ভাল Projector কিনতে হবে যে। কি, খুব হতাশ হলেন? ভাবছেন, শখটা বুঝি মাটি হল। চিন্তা নেই। আজ আমি দেখিয়ে দিচ্ছি অল্প খরচে কিভাবে ঐ বস্তুটা তৈরি করতে হবে।
Projector তৈরির জন্য আমাদের প্রয়োজন হবে শক্ত, যতদূর সম্ভব আলোক নিরোধী একটা বাক্স (কার্টন বাক্স হলে ভাল হয়), Racket-এর ফেদারের একটা শক্ত খোল, এবং ৩-৬ ইঞ্চি (এর মধ্যে যেকোন) ফোকাস দূরত্ব বিশিষ্ট একটি উত্তল লেন্স। এছাড়াও কাচি, স্কচটেপ, স্কেল, পেনসিল ইত্যাদি লাগবে। আর বানানো শেষে ভিডিওর জন্য দরকার পড়বে যেকোন ভিজু্য়াল ডিভাইসের (মোবাইল ফোন, MP4, MP5 ইত্যাদি) । তাহলে আসুন, কাজ শুরু করা যাক।
প্রথমে বাক্সটার দৈর্ঘ্য বরাবর দুটো বৃত্তাকার গর্ত করতে হবে, যাদের ব্যাস হবে Racket-এর ফেদারের খোলের ব্যাসের সমান। বাক্সটা পুরোপুরি কালো রঙের হলে ভালো হয়। অন্য রঙের বাক্স হলে কাগজ পেঁচিয়ে কিংবা রঙ করে কালো করে নিতে হবে।
কালো বাক্স(ছবিতে সাদা দেখানো হয়েছে)
এবার, Racket-এর ফেদারের খোলের দুটো ঢাকনার মধ্যে যে ঢাকনাটা সমতল, সেটার মধ্যে একটা বৃত্তাকার গর্ত করে উত্তল লেন্সটাকে বসাতে হবে।
এখন Racket-এর ফেদারের খোলটার মধ্যে একটু কারসাজি করতে হবে। নিচের চিত্রের মত করে খোলটাকে কাটতে হবে।
ছাই রঙের অংশটুকু কেটে ফেলতে হবে। অংশটার প্রস্থ হবে যে ডিভাইসটি ব্যবহার করা হবে(মোবাইল ফোন, MP4, MP5 ইত্যাদি), তার প্রস্থের সমান। খোলটির অবস্থা দাঁড়াবে এরকম-
এবার আপনার কাজ সোজা। কাটা Racket-এর ফেদারের খোলটাকে কালো বাক্সটার মধ্যে ঢুকিয়ে দিন। কাজটা নিচের চিত্রের মত করে করতে হবে।
(ছবিটা বাক্সের উপরের দিক থেকে দেখানো হয়েছে)
এখন, বাক্সের সামনের দিকে(A প্রান্তে) খোলের মাথায় লেন্স লাগানো প্লাস্টিকের ক্যাপটা লাগিয়ে দিন। অন্য ক্যাপটা দিয়ে খোলের পিছনের মাথাটাও বন্ধ করে রাখবেন। সামগ্রিকভাবে, খোলের ভেতরটা যতদুর সম্ভব আলোক নিরুদ্ধ হওয়া চাই। খোলটাকে খুব শক্ত করে বাক্সের সঙ্গে আটকাতে হবে। একাজে স্কচটেপ ও আইকা আঠা ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই কাজগুলো শেষ হয়ে গেলেই আপনার Projector তৈরি। পুরো জিনিসটা দাঁড়াবে এরকম-
ভিজুয়াল ডিভাইসটির স্ক্রীনটাকে লেন্সের দিকে মুখ করিয়ে ডিভাইসটিকে খোলের মধ্যে বসিয়ে দিতে হবে। এবার Projector-টিকে দেয়ালের (দেয়ালটাকে অবশ্যই সাদা হতে হবে) দিকে মুখ করিয়ে স্থিরভাবে কোন জায়গায় বসিয়ে দিলেই দেয়ালে স্ক্রীনের ছবি বড় করে দেখা যাবে।
মনে রাখতে হবেঃ
I. ঘর অবশ্যই অন্ধকার রাখতে হবে।
II. ছবি অস্পষ্ট দেখা গেলে খোলের কাটা অংশের মধ্যে ডিভাইসটিকে সামনে-পিছনে করলেই যেকোন একটি অবস্থানে ছবি স্পষ্ট আসবে। দেয়াল থেকে যত দূরে যাওয়া হবে, ডিভাইসের অবস্থান লেন্সের তত কাছে হতে হবে।
III. এরপরও ছবি ভালো না আসলে খোলের কাটা অংশের দৈর্ঘ্য বাড়াতে হবে অথবা আরও বেশি ক্ষমতার লেন্স(অপেক্ষাকৃত ছোট ফোকাস দূরত্বের লেন্স) ব্যবহার করতে হবে।
IV. ভালো লেন্স ব্যবহার করলে ছবিও ভালো আসবে।
V. লেন্স যত বেশি ক্ষমতার হবে, ছবি তত বড় আর সুন্দর আসবে। ছবির মান (রেজুলেশন) ডিভাইসের স্ক্রীনের সমান হবে।
VI. দেয়াল সাদা না হলে সাদা পর্দা বা কাগজ(যেমন ক্যালেন্ডারের পিছনের সাদা অংশ বা আর্ট পেপার) ব্যবহার করা যেতে পারে।
আপনাদের জন্য একটি উদাহরণ দিয়ে দিচ্ছি:
২ ফুট লম্বা খোল এবং ৫ ইঞ্চি ফোকাস দূরত্বের উত্তল লেন্স ব্যবহার করলে ভাল মানের ডিভাইসের (যেমন Nokia 6300 বা Nokia 5130 অর্থাৎ রেজুলেশন বেশি এমন ডিভাইস) সাহায্যে আপনারা ৪ ফুট বাই ৩ ফুট সাইজের ছবি দেখতে পারবেন পর্দায়, তাতে ছবি একদম স্পষ্ট পাবেন! (মনে রাখবেন, ছবি যত ছোট রাখবেন, তত স্পষ্ট আসবে) লেন্সের সাথে ডিভাইসের দূরত্ব কমিয়ে বাড়িয়ে আপনারা ছবি ছোট বড় করতে পারবেন।
মোবাইল ব্যবহার করলে মোবাইলের লাউডস্পীকারের শব্দটাই শোনা যাবে। কিন্তূ ভাল মানের শব্দ পেতে চাইলে আপনি বাক্সের নিচে একটা ফুটো করে মোবাইলের ইয়ারফোনের প্লাগ ঢুকিয়ে সাউন্ডবক্সের সাহায্যে ভাল শব্দ পেতে পারেন।
তো, আর দেরি কেন? বসে পড়ুন ঘরে বসে বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে!!!
এই লেখাটা আমি অনেক আগে, একদম শুরুতে যখন আমি ব্লগে কমেন্ট করারও অনুমতি পাইনি, তখন একবার দিয়েছিলাম। কেউ পড়েনি। । তাই আবার দিলাম। এখন মনে হয় কেউ না কেউ পড়বে।
এই প্রজেক্টর টা সম্পূর্ণভাবেই নিজে বানিয়েছি। আইডিয়াটাও পুরোপুরি নিজস্ব, ধার করা না (ভাববেন না যেন আমি জব্বার কাগুর মতো প্যাটেন্ট করিয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু করবো......... )। এটা সায়েন্স প্রজেক্টে দিয়ে আমি ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে সেকেন্ড প্রাইজ পেয়েছিলাম। আপনারা কেউ এটা দ্বারা উপকৃত হলে আনন্দিত হবো।
বানাতে গিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে জানাবেন। আমি সাধ্যমত সমাধান দেবার চেষ্টা করবো।
আলোচিত ব্লগ
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?
অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update
মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-
গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন