somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শব্দ বিভ্রাট

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১৯৯৯ সালের দিকের ঘটনা। অফিসে একটা মেইল পেলাম। শেষের দিকে লেখা asap. কম্পিউটারের মনিটরে হাল্কা ঘষা দিয়ে দেখলাম, কোন সমস্যা হল কিনা? অভিজ্ঞতার আলোকে।
পিতাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে এসেছে ছেলে। ঢাকায় এসে একটু বেশী অসুস্থতার সাথে নিঃসঙ্গতা যোগে পিতার অবস্থা খুব একটা ভাল না হওয়াতে, ছেলে মাকে আসবার জন্য টেলিগ্রাম করতে বাধ্য হল। পরিবারে ছেলেই একমাত্র শিক্ষিত, তাই জরুরী প্রয়োজনে পাঠানো টেলিগ্রামগুলি বরাবর পাশের বাড়ীর হাই স্কুলের হাই স্যারই পড়ে বাংলায় শোনাতেন। সেদিন স্যার বাইরে থাকায় স্যারের স্ত্রী পড়ে দিলেন। উনি নিজেও মোটামুটি শিক্ষিতা। মানে টিটিএমপি (টেনেটুনে মেট্রিক পাশ) আরকি! যা হোক লিখেছিল - Ma, Baba very sick. উনি বললেন - মা, বাবা খুবই অসুস্থ। এটা শুনেই -
- ও মোর ময়নার বাপ, আপনি কেন ঢাকা যেয়ে বেশী অসুস্থ হয়ে গেলেন!
এই বলে এক পশলা কান্নাকাটির পরে ছেলেটির মা জিজ্ঞেস করলেন -
- অসুস্থ হবার পরে কি হয়েছে? আর কিছু লেখে নাই?
লিখেছিল - Come sharp. কিন্তু প্রিন্টার বা কাগজের বা উভয়ের সমস্যা থাকায়, পি এর নীচের দাগটা একটু ভাঁজের মত হয়ে, পি এর গোল অংশের ডান দিকে ঘুরে যাওয়াতে, পি কে এ এর মত লাগছিল। উনি তাই পরলেন -
- কাম সারা ( কর্ম সাধন - মানে ইহজগতের কর্ম সাধন করিলেন)। মানে দাঁড়াল - খুবই অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন আরকি!
শোকের মাতম উঠে গেল। ডেড বডি আসতেছে। কবর খোঁড়া চলতেছে। যা তা অবস্থা! সেই অভিজ্ঞতা থেকে কম্পিউটার এর স্ক্রিনটা ঘষে দেখা যে, কোন সমস্যা হল কিনা? কারণ আমার ডাক নামের সাথে আবার asap এর কিঞ্চিত মিল আছে। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পরলাম।

সেনাবাহিনীতে কর্মরত এক অফিসার বন্ধুর কাছে শোনা - এক সিনিয়র কর্মকর্তার স্ত্রী ফোন করে এক কর্মচারীকে অর্ডার করেছিলেন একটি পিরিটন আনতে। কিছুক্ষণ পরে ফোন করলে উত্তর পান -
- ম্যাডাম, লোকজন সহ থ্রিটন ট্রাক রেডি।
ছোটবেলায় পড়তে শিখবার পরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পেপার পড়তাম। একদিন মাকে জিজ্ঞাসা করলাম -
- মা, এই প্রমুখ লোকটা কে? সব জায়গায় উনি দাওয়াত পান।
বিভিন্ন জায়গায় লজ্জা পেতে হয়েছে। ইউনিভার্সিটিতে এসে লজ্জাটা চলে গেল, যখন একজন খুব বিরক্ত হয়ে বলেছিল -
- এই আততায়ীটা কে? পুরো নাম কি লোকটার? একটা লোককে পুলিশ ধরতে পারছে না?

শব্দের সংকোচন, শব্দ ভুল শ্রবণ, শব্দের অর্থ না জানা বা ভুল অর্থ জানা - সব মিলিয়ে আমাদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি করে, যা কিছু সময় নিরেট হাস্যরসের খোরাক যোগায়, কখনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে, কখনো অপমানিত হতে হয়, আবার কখনো বা চরম বেদনাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। একটু সচেতন থাকলে বেশীরভাগ সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু শব্দের সংকোচন একটু বেশী পরিমাণ ভোগান্তির কারণ হতে পারে যদিনা আপনি নিজেকে দেশের ভিতরে এবং বহির্বিশ্বের চলমান ব্যাপারগুলি সন্মন্ধে আপটুডেট রাখেন।
টিভিতে বাংলা সিনেমা চলছে। শুরুতেই ভিলেন নায়ককে আচ্ছা মত ধোলাই করছে। শেষের অংশ তো নায়কের পৈত্রিক সম্পত্তি। সিনেমার শুরুতে যে মানুষ ভিলেনের চড় খেয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়, ঠিকমত হাত পা নড়াতে পারে না, মাত্র ঘণ্টা দেড়েক পরে সেই মানুষ কি করে শূন্যে তিন ডিগবাজি দিয়ে একাই দশ বার জনের বারটা বাজাতে পারে তা আমার অদ্যাবধি মাথায় ঢোকে না। আবার ভিলেন নায়িকাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে মিনিট পাঁচেক গাড়ী চালিয়ে যখন জঙ্গলে কোন এক বিল্ডিং এর ভিতর নিয়ে যায় তার কু ইচ্ছা পরিপূর্ণ করার জন্য, নায়ক তার পরেও খবর পেয়ে দৌড় দিয়ে কিভাবে সেকেন্ড পাঁচেকের মধ্যে ছাদ ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে নায়িকাকে উদ্ধার করে তা একমাত্র ছবির প্রযোজকই জানেন। আবার এই নায়ক বাসা থেকে বের হবার সাথে সাথে যখন ভিলেন নায়কের বোনকে ধরে নিয়ে যায়, তখন বোনের হাজার চিৎকার, আহাজারি নায়কের কানে পৌঁছায় না। আহাম্মকটা তখন টের পায় যখন বোন রশিতে ঝুলছে। আপন বোনের থেকে প্রেমিকার প্রতি টান টানটান উত্তেজনায় অনেক বেশী। আরে বেকুব, প্রেমিকা গেলে দশটা পাবি, বোন পাবি কোথায়? বেয়াদব স্ত্রৈণ কোথাকার? ভূমিকা চাওলাকে নিয়ে বেশী টানাহেঁচড়া না করে বরং আসল কথা বলি। নায়কের এহেন ধোলাই খাওয়া দেখে বাসার কাজের ছেলেটা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলছে -
- আণ্ডা পারতে সব পুলিশ থুইছে। পুলিশের থিকা নিপড ভালা।
আমি বললাম কিরে নিপড কি? জীবনে এইরকম অশিক্ষিত এবং বোকা মানুষ দেখে নাই, এইরকম একটা ভাব করে হাসছে আর ছেলেকে ডাকছে -
- ভাইয়া আস, দেখো, খালু না নিপড বোঝে না। পরে বুঝলাম নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। হায়রে অবোধ বালক, ওরাও পুলিশ। পার্থক্যটা যে কোথায় সেটা বোঝা যখন সবার জন্যই অসম্ভব তখন ওর জন্য খুবই সহজ।

এই জাতীয় শব্দ সংকোচনকে স্থানীয় শব্দ সংকোচন বলে যেটা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি, পরিবার বা গোত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর কিছু সংকোচন গ্লোবালি ঘটে। স্ত্রী গভর্বতী এবং হটাৎ করে তার সরিষা ফুল দিয়ে ডিম ভাজা খেতে ইচ্ছে হল। পরিবারে সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠল। দু একজন সরিষা ফুলের রং কিরকম জিজ্ঞেস করে বসল। আরেক গ্রুপ ইন্টারনেটে সার্চ দিতে বসে গেল - হাউ এন্ড হয়্যার উই ক্যান গেট সরিষা ফ্লাওয়ার? অবশেষে মিলিল। সবার এই ব্যস্ততা স্ত্রীর জন্য নয়। ভবিষ্যৎ বংশধরের যাতে মুখ দিয়ে লোল বা লালা না পড়ে তার জন্যই সবার ছোটাছুটি। কারণ, গর্ভবতী অবস্থায় যদি কোন মেয়ের কিছু খেতে ইচ্ছা করে কিন্তু খেতে না পায় তাহলে নাকি ওই বাচ্চার মুখ দিয়ে লোল পরে। হটাৎ করে বছর খানেক আগে ফেসবুকে প্রথম লোল (Lol) লিখা দেখলাম। বিষয়বস্তু হাসির হবার কারণে ভাবলাম হাসতে হাসতে এমন অবস্থা যে, মুখ দিয়ে লোল বের হয়ে গেছে। এরপর এর বহুল ব্যাবহারে অবস্থা যখন লোলের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায় টাইপের, তখন ইন্টারনেট ঘেঁটে ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। বোঝার পরে ভাবলাম আমরা কি আমাদের দেশ থেকেও কিছু কিছু শব্দ সংকোচন বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারি না? যেমন হতে পারে -
১.ক - ঝোল (JHOL) (ব্যক্তিবিশেষ) ঃ - jealous have/has out of limit. যারা খুব বেশী পরিমাণ হিংসা করে তাদেরকে কিছুটা শায়েস্তা করতে ঝোল বলে ডাকা যেতে পারে।
১.খ - ঝোল (JHOL) (অবস্থা বিশেষ) ঃ - ঝামেলা হয়েছে out of limit. যেমন - দোস্ত, কামটা তো পুরা ঝোল।
আবার অবস্থা বিশেষে দুটোকে একত্রেও ব্যাবহার করার পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে- আমি তো আগেই জানতাম যে একমাত্র ওই সখিনা ঝোলই ঝোল করতে পারে এটাকে।
২. - মল (Mol) ধারে কাটা অর্থাৎ মেধা বা যোগ্যতা দিয়ে কোন কিছু অর্জন পুরনো প্রচলিত শব্দ। সময়ের সাথে সাথে ধারে কাটার সাথে যোগ হয় ভারে কাটা। মানে ক্ষমতা বা টাকার জোরে বাঁকা পথে কিছু করা। ইদানীং ধার, ভার এর বাইরে আরেকটি জিনিস যোগ হয়েছে - ভাব। ভাবে কাটা। শুধু ভাব দিয়েই লোকজনকে পাজলড করে ফেলা। একটা জোরে ঝাড়ি মারলে এরা যদিও প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে। এদের একটা কঠিন শাস্তি দেয়া যেতে পারে মল (mood out of limit) বলে ডেকে।
৩. রোল (Rol) - যারা অবৈধ সম্পর্কে জড়িত তাদের রোল (relation out of law) বলা যায়।
৪. কল (Kol) - যদি রোল সম্পর্কটার চূড়ান্ত ঘটনা ঘটে যায় তাহলে কল (কাম out of law) বলা যেতে পারে।
সাধারণত রোল এর পরের ধাপ কল। তাই হয়ত বলা যায় - মফিজ পাশের বাড়ীর জরিনা ভাবীকে টিচার না হয়েও রোল কল করেছে।

অনেক সময় অনেকে কোন কোন শব্দ অভ্যাসবশত ঠিকমত উচ্চারণ করতে পারেন না যদিও সঠিক শব্দটা জানেন। যেমন - উপরে না বলে বলেন উরপে। স্যালাইন এর জায়গায় স্যানাইল। এপোয়েন্টমেন্টকে এপার্টমেন্ট। তবে এসব পরিস্থিতিতে লজ্জা না পাবার একটা ভাল সমাধান ইংরেজি সাহিত্যে আছে। স্লিপ অফ টাং। এটা বলে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। যেহেতু লিখতে টাং লাগে না তাই লেখার সময় স্লিপ অফ টাং লেখা উচিৎ। কিন্তু আমার মতে বলার সময় টিলিপ অফ সাং বলা উচিৎ। বলব স্লিপ অফ টাং, কিন্তু টাং স্লিপ করবে না, কেমন জানি কন্ট্রাডিকটরি মনে হয়। অনেকটা সুট টাই পরে ভিক্ষা করার মত।
তবে ভুল শোনা এবং ভুলটাকে না জানা থাকলে কিন্তু সমস্যা। হাজবেন্ড যথেষ্ট জ্ঞানী কিন্তু স্ত্রী টিটিএমপি। তাদের ছেলে যথেষ্ট ভাল ছাত্র এবং পিতার রাস্তায় হাঁটছে। ছেলে বাবার কাছে একটা বিষয় বুঝতে এলো। ভালভাবে বোঝানোর পরেও ছেলের আগ্রহ দেখে পিতা বললেন -
- তুমি যদি আরও বেশী কিছু জানতে চাও এই বিষয়ে, তাহলে কষ্ট করে যেয়ে একটু এনসাইক্লোপিডিয়াটা দেখ।
স্ত্রী পাশের ঘর থেকে দৌড়ে আসলেন এবং বললেন -
- এই যে শিক্ষিত মানুষ, একটু চোখ কান খোলা রাখেন। বাইরে সূর্যের অবস্থাটা দেখছেন। নিজে একটা বিষয় জানেন না ভাল কথা, কিন্তু কোন আক্কেলে এই রৌদ্রের মধ্যে - অন সাইকেল পিডিয়া পোলাডারে আমার কই পাঠাইতেছেন আপনে?!
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তুখোড় ছাত্রটি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে খানখান করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হতে যাচ্ছে। একেবারে অজ পাড়া গাঁর ছেলে। শহরে প্রথম আগমন। যারা রাতে চিরা ভিজিয়ে রেখে সকাল খেয়ে, মাথায় চপচপে তেল দিয়ে, প্রথম কয়েকদিন লুঙ্গি মালকোঁচা মেরে তার উপর পায়জামা বা ট্রাউজার পরে ক্লাসে যায়। জীবনটা বাংলা সিনেমা নয়, যেখানে নায়ক সারাদিন আটার বস্তা পিঠে নিয়ে পয়সা রোজগার করে সেই পয়সায় পুরো সংসার চালানোর পরেও গরীব দুখীর সেবা করে এবং রংবেরং জামাকাপড় পরে বনে বাদারে নৃত্য করতে পারে। আবার নায়িকার সাথে নিয়মিত প্রেম, নিয়মিত ক্লাস করে, ভিলেনের সাথে মারপিট করেও বাসায় পড়াশুনা করতে পারে। আমার দুটো খুবই সাধারণ প্রশ্ন মনে জাগে - ১. আটার বস্তা টানার পারিশ্রমিক কত? যদিও এটা হতে পারে প্রাকটিস - কারণ নায়িকা আর আটার বস্তা তো একই কথা, এজ ফার এজ লিফটিং ইজ কন্সার্ন ২. নায়কের কত ঘণ্টায় এক দিন হয়? এরপরেও ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, জন্মগত ভাবে গানের গলা ভাল, কৈ মাছের মত প্রাণ - গুলি লাগলেও মরে না। চুলে তেল দিলেও চুল হয় সিল্কি, চুল কখনই পরে না। চেষ্টা করলে ব্ল্যাক হোল তত্ব বোঝা সহজ, নায়কের লাইফ স্টাইল? - অসম্ভব। জীবন সিনেমা নয়, তাই তুখোর ছাত্রটির পড়াশুনা ব্যতীত সব কারিশমা অনুপস্থিত। অন্যদিকে - একই ক্লাসের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ছাত্রীটির পরিবার কতটা প্রগতিশীল যে, মুসলমান হলেও মেয়েটির নাম শুনলে দশ জনের মধ্যে দশ জনই বলবে হিন্দু। চেহারা ছবি খুব একটা সুবিধার না, কিন্তু মুখের দিকে না তাকিয়ে শুধু কথা শুনলে যে কেউ ভাবতে বাধ্য বিদেশী ফরেনার। স্কুলে একটা অক্ষর ঠিকমত উচ্চারণ করতে না পারলে একটা বেতের বারি। সেখানে এই মেয়ে নির্দ্বিধায় ওয়েডনেস্টডে কে বলে ওয়েন্সডে। সারাজীবন পটেটো বলে আসলাম আর এই মেয়ে বলে পোটাটো। এ বুক কে বলে আ বুক।
দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা রেল লাইনের মত সমান্তরালে না চলে প্রেম নামক এক বেহায়া বল এর কারণে, প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালে একটি লাইনে প্রবাহিত হয়। প্রেমের অপর নাম ঝগড়াঝাঁটি। একদিন মেয়েটি খানিকটা রেগে ছেলেটিকে বলল,
- Sometimes, I don't understand you guys....
ছেলেটি হোস্টেলে ফিরে দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করার পর বন্ধুরা জিজ্ঞেস করল কারণ। বুক ফাটা কষ্ট নিয়ে ছেলেটি জানাল যে মেয়েটি তাকে আজ গাই বলে গালি দিয়েছে। বন্ধুরাও সঙ্গত কারণে উত্তেজিত। কারণ ও ছাড়া সবাই যে পরীক্ষার সময় এতিম। সবাই একমত - দুকলম ইংরেজি পারে, তাতেই এত বাহাদুরি। আরে, বিলেতে তো রিকশাওয়ালারাও ইংরেজি বলে!! আরেকজন বলে, পুরুষ জাতীর অপমান। কোন সাহসে গাই বলে! বলদ বললেও একটা কথা ছিল!! বলা বাহুল্য যে শেষ পর্যন্ত এই প্রেম আর বিয়ের পিড়িতে পা রাখেনি।

৮০ এর দশকের শুরুতে মহকুমা শহরের মাঠ কাঁপানো ডিফেন্ডার বয়তুল্লাহ ভাই। বয়তুল্লাহ ভাই ঢাকা যাচ্ছিলেন হায়ারে খেলতে। এরশাদের শাসনামলে তখন কিছুদিনের জন্য মিটলেছ ডে চালু ছিল এবং বড় মাপের হোটেলগুলো তা পালন করত। এই রকম একটি হোটেলে ঢুকে বয়তুল্লাহ ভাই অর্ডার করলেন -
- দুই পিছ ভাল দেখে খাসীর মাংস লাগাও।
- আজকে তো মাংস তো হবে না।
- তাহলে গরু দাও।
- স্যার মাংস হবে না। আজকে তো মিটলেছ ডে।
- কি আর করা! তাহলে ওটারই দুই পিছ দাও। আর শোন- সিনার দিকেরটা দিও।
বয়তুল্লাহ ভাই যে অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছেন ব্যাটসম্যান হিসেবে, আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, ক্রিজের অপর প্রান্ত থেকে সেটা দেখার সৌভাগ্যও তার হয়েছিল। একটি মোটামুটি মাপের মুদি দোকানের মালিক ছিলেন। একদিন এক কাস্টমার কেনা কাটার পর সয়াবিন তেলের গায়ে কোলেস্টরেল ফ্রি লেখাটা দেখিয়ে ফ্রি আইটেম ডিমান্ড করে বসলেন। স্মার্ট বয়তুল্লাহ ভাইয়ের স্মার্ট উত্তর -
- ওটা তেলের সাথে মেশানো আছে। কিন্তু, আলাদা দাম দিতে হবে না।
কোলেস্টরেল ফ্রি তেলের নামে আমরা তাহলে খাচ্ছিটা কি?

বক্তৃতা দেন যিনি - বক্তা। এই এককথায় প্রকাশ পড়ার আগে পর্যন্ত জানতাম বক্তৃতা দেন যিনি - তাহের। মাইকের গায়ে তো সেটাই লেখা থাকত। এই ব্যাপারটায় ধরা খাইনি তাই লজ্জাও পাইনি। কিন্তু সবার ভাগ্য তো আমার মত এইরকম ভাল নাও হতে পারে। ভুল শোনা ও শব্দের অর্থ ভুল জানাটা কখনও কখনও চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে। ৮০ এর দশকের শেষের দিকে কলেজে রসায়ন বিভাগে একজন শিক্ষক যোগ দিলেন। কিছুদিন পর স্যার ফ্যামিলি নিয়ে আসলেন। স্ত্রী এবং ১১-১২ বৎসরের একটি মেয়ে। পরে জানা গেল স্যারের অতি আদরের ছোট বোন। পরীক্ষা শেষে মাস খানেকের জন্য ভাইয়ের বাসায় বেরাতে আসা। অসম্ভব রকমের মিশুক আর রাজশাহীর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার কারণে সবার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠল। সারাদিন কলেজেই থাকত। সন্তানের থেকে ছোট এবং কারো কারো নাতনীর বয়সী মেয়ের মুখে ভাইয়া ডাক মেয়েটিকে আরও বেশী জনপ্রিয় করে তুলল। একদিন কলেজে আসতে দেরী করলে সবাই অস্থির হয়ে উঠত। দেখতে দেখতে মাস পার হল এবং একদিন সবাইকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে বাড়ী চলে গেল। বেশ কিছুদিন পরে স্যার মন খারাপ করে বলল যে মেয়েটি খুবই অসুস্থ। ডাক্তাররা ঠিক রোগটা ধরতে পারছে না। সবার মন বিষাদগ্রস্ত। তার কিছুদিন পরে সবার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হল যখন স্যারের ভাইয়ের টেলিগ্রাম আসল - Sister expired. তাড়াতাড়ি গাড়ী ঠিক করে স্যার রওনা করার আগে স্যারের ভাইয়ের অফিসে ফোন করলেন এবং ফোনটা ধরে অফিসের পিওন জানাল উনি প্রোটোকলে। স্যার বললেন উনাকে জানাতে যে, উনার অসুস্থ বোন রাজশাহীতে মারা গেছে। পিওন ভুলে বোনকে বউ শুনল। শুনতে ভুল করলেও বলার সময় আর দ্বিতীয়বার ভুল না করে জানাল যে, স্যার, আপনার স্ত্রী রাজশাহীতে মারা গেছেন। কারণ বউ তো হয় অশিক্ষিত ও গরিবের, বড়লোক আর শিক্ষিত লোকদের ক্ষেত্রে তো হয় স্ত্রী। কাকতালীয় ভাবে স্যারের ভাবী তখন রাজশাহীতে একই বাড়ীতে এবং হাল্কা পাতলা সিজনাল ফিভার চলছিল। স্যারের ভাই পাগলের মত ছুটলেন এবং যাবার আগে শ্বশুর বাড়ীতে জানালেন খবরটা। স্যারের ভাইয়ের শ্বশুরের হার্ট এটাক হয়ে গেল এবং লোকজন দুইভাগে ভাগ হয়ে একভাগ হাসপাতালে আরেকভাগ রাজশাহী অভিমুখী। স্যার পৌঁছিয়েই পাগলের মত বোনের ঘরের দিকে ছুটলেন এবং ঘরে ঢুকেই একটা ইলেকট্রিক শক খেলেন। বোনটির শরীর শুকিয়ে কাঠ এবং চোখ দুটো অল্প খোলা। বলছে - ভাইয়া কেমন আছ? - খুবই ক্ষীণ স্বরে।
স্যার কয়েক মুহূর্ত বোধশক্তিহীন হয়ে থেকে ভাইকে টেলিগ্রামের কারণ জিজ্ঞাসা করল। স্যারের ডিগ্রী পড়া ভাইয়ের কনফিডেন্স নিয়ে উত্তর - কেন? এক্সপায়ার মানে খুবই অসুস্থ, নরমাল মানে সাধারণ অসুস্থ আর ডেড বা কোমা মানে মৃত্যু!! জীবনে প্রথমবারের মত ভাইয়ের গালে স্যারের হাতের রেখার ফটোকপি হয়ে গেল।

শুদ্ধ ভাষা চর্চাও কখনো কখনো কর্ণকটু (পাঁচ ইন্দ্রিয় ভাইয়ের মধ্যে দৃষ্টিকটু এর ছোট ভাই) হতে পারে। একটু হাল্কা অশোভন মনে হলে আগাম দু:খ প্রকাশ করছি। শুদ্ধ ভাষায় চালকে চাউল, ডালকে ডাউল বলে। যদিও শুদ্ধ ভাষায় এই দুটো শব্দ কেউ সাধারণত বলেনা। কিন্তু একজন শিল্পী সবসময় শুদ্ধ ভাষায় এই শব্দ দুটো বলতেন। যেহেতু তিনি বাউল শিল্পী তাই হয়ত শুদ্ধ ভাষা চর্চার প্রয়োগ থেকে এই রকম বলা। মহল্লার মুদি দোকানদার একদিন ওনাকে জিজ্ঞেস করলেন -
- মহল্লায় তো আপনার মত আরও বিভিন্ন রকমের শিল্পী সহ অনেক লোকই থাকে। কিন্তু আপনিই একমাত্র মানুষ যিনি চালকে চাউল আর ডালকে ডাউল বলেন। কারণটা কি?
- দেখেন ভাই, আমি যদি চাউল কে চাল বলি, ডাউলকে ডাল বলি, তাহলে আমি বাউল শিল্পী, লোকে আমায় কি বলবে?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×