somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু করেছিল যে বালক

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
সম্প্রতি বিশ্বের বেশ কিছু দেশের বেশ কিছু লোককে সিরিয়ায় যুদ্ধ কিভাবে শুরু হয়েছে? জিজ্ঞেস করা হলে, বিভিন্ন রকম উত্তর আসে -
- ISIS কে দমন করতে।
- হিজবুল্লাহ।
- আসাদকে রাশিয়ার সমর্থন
- বারাক ওবামার আসাদ বিরোধী অবস্থান।
- ইত্যাদি... ইত্যাদি...
কতগুলি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে? কে কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে? কোন কোন দেশ নাক গলিয়েছে? কোন দেশ কোন গ্রুপের পক্ষে? -
- চট করে কেউই উত্তর দিতে পারে না।
শুরুতে কিছু লোক জানলেও, পাঁচ বছর ব্যাপী যুদ্ধের তান্ডবে সবাই সেটি ভুলে গেছে। সেটি বলবার আগে, ছোট বেলায় শোনা ছোট্ট একটি গল্প বলে নেয়া দরকার বলে মনে করছি।
ছোট্ট একটি ছেলে গুড় খেয়ে পাশের একটি বাড়ীর সীমানা দেয়ালে হাতটা মুছে বাসায় চলে এসেছে। কিছুক্ষণ বাদে সেই গুড়ে পিপড়া এসেছে। সেই পিপড়া খেতে পোকা এসেছে। পোকা খেতে টিকটিকি এসেছে। টিকটিকি খেতে দুপাড়ার দু বাসার দুটি মুরগী এসেছে। মুরগী দুটোকে তাড়া করেছে দু বাসার দুই কুকুর। সেই কারণে, দুই বাসার দুই ছেলে কুকুর দুটোকে মেরেছে। কেন কুকুর মারা হল? ছেলে দুটোর মধ্যে মারামারি লেগেছে। ছেলে দুটোর বড় বোন এসে চুলোচুলি শুরু করে দিয়েছে। কেন বোনকে মারা হয়েছে? এই কারণে দুই বাড়ীর ভাইরা হাতাহাতি করেছে। এরপরে তাদের বাবারা মারামারি শুরু করেছে। দুই পরিবারের পক্ষে সাপোর্টার জুটেছে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। পুরো এলাকা দুভাগে বিভক্ত। দুই দিকের দুই মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। লাঠি, বল্লম নিয়ে পুরো গ্রাম দুভাগে ভাগ হয়ে, মাঝামাঝি একটি বড় মাঠে জমায়েত হয়ে মারামারি শুরু করেছে। আজও মারামারি চলছে

২।
ফেব্রুয়ারী ২০১২। দারা শহর, সিরিয়া। Mouawiya Syasneh একজন ফ্যাশন সচেতন পাংক স্কুল ছাত্র। বয়স ১৪। সপ্তম গ্রেডের ছাত্র। Mouawyia এর মাথায় দেয়াল লিখনের আইডিয়া (gaffiti) আসে শুধুমাত্র দুষ্টু বুদ্ধি থেকে, অন্য কোন কারণে নয়। সে তার স্কুলের দেয়ালে লিখে -
- "It's your turn doctor"।
তখন মধ্যপ্রাচ্যের Egyptian president হোসনি মোবারক ও তিউনিসিয়ার ক্ষমতাধর বেন আলীকে জনতা ক্ষমতাচ্যুত করেছে। ইতোমধ্যে NATO বাহিনী কর্নেল গাদ্দাফিকে সরিয়ে দিয়েছে। সিরিয়ার মানুষের ধারনা বা আশা ছিল - এবার আসাদের টার্ন। আসাদ বাকীদের মতই ডিকটেটটর এবং একজন ডাক্তার - অপথ্যালমোলজিষ্ট।
পুলিশের চোখে আসে লেখাটি। কয়েকদিনের মধ্যেই Mouawyia, তার তিন বন্ধু ও আরও ছয়জনকে পুলিশ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে তাদের উপরে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ইলেকট্রিক শক দেয়া হয় বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে, সেই পানিকে ইলেকট্রিফাইড করে।
তাদের ব্যপারে খোঁজ নিতে গেলে, তাদের বাবাদের বলা হয় -
- তোমাদের ছেলেদের ভুলে যাও। বাসায় যেয়ে আরও বাচ্চা পয়দা কর। না পারলে, তোমাদের মহিলাদের আমাদের কাছে পাঠিয়ে দাও, আমরা বাচ্চা বানিয়ে দিচ্ছি।
এসব কথায় জনমনে রোষের সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে এক মাস পেরিয়ে গেছে। ছেলেগুলোর সম্মন্ধে বাবা মায়েরা কিছুই জানতে পারেনি।
মার্চের ষোল তারিখে জুম্মার নামাজের পরে প্রথম মিছিল বের হয় দারা শহরে। মিছিল শান্তিপূর্ণই ছিল এবং বারবার শ্লোগান দেয়া হচ্ছিল - আর্মি জনগন এক। প্রথমে জলকামান ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু, তারা আবার জোট বাঁধে। বিকেল ৪টা ২০ এর দিকে হেলিকপ্টারে করে সৈন্যরা এসে গুলি ছুড়লে ২ জন নিহত হয়। পরের দিন দুইজনের দাফনের সময় আবার বিক্ষোভ হয়। এবার গুলিতে আরো অনেকেই নিহত হয় বাচ্চা সহ। প্রতিবাদ চলতেই থাকে, সাথে গুলিবর্ষনও চলতে থাকে। নিকটস্থ প্রাচীন একটি মসজিদে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। মার্চের ২২ তারিখে সেই মসজিদের ভেতরে গুলি করে একজন ডাক্তার সহ ৭ জনকে হত্যা করে আর্মিরা। প্রতিবাদ চলতেই থাকে।
ফলশ্রুতিতে ৪৫ দিন পরে সবাইকে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু, তাদের ক্ষতবিক্ষত চেহারা দেখে বিক্ষোভে ফেটে পরে জনতা। সাথে এতদিনের হত্যাকান্ডের ক্ষোভ তো ছিলই। চলে প্রতিবাদ, চলে গুলিবর্ষন। ধীরে ধীরে বিক্ষোভ দারা শহর থেকে ছড়িয়ে পরে পুরো সিরিয়ায়। সম্প্রতি আলেপোকে মৃত নগরী বানিয়ে ফেলে আসাদ বাহিনী।

৩।
Mouawiya Syasneh এক সাক্ষাৎকারে বলে -
- আমি যদি জানতাম যে, আমার লেখা এই graffiti গুলো এত বড় সংঘাতে রুপ নিবে, তাহলে আমি কখনই লিখতাম না। Mouawiya Syasneh এর বয়স ইতোমধ্যে ১৯। এখন সে নিজেই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে বিদ্রোহী মিলিট্যান্টদের সাথে যুদ্ধ করছে। তার হারাবার কিছুই নেই। সে বলে -
- আমি জীবনে চেয়েছি, কিন্তু পাইনি এমন কোন ঘটনা আমার জীবনে ঘটেনি বাবার জন্য। আমার ইচ্ছে ছিল বিজনেস অথবা অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা করব। সিরিয়ায় সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার - বোম্বিংয়ে আমার বাবাই মারা গেছেন। মারা গেছে সবচেয়ে কাছের বন্ধু। আমি তার কবরে প্রায়ই যাই। ভাবি, যে কোন দিনেই আমার বন্ধুরা আসবে আমাকে এখানে দেখতে।
- "ইতোমধ্যে পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে অপারেশন হয়েছে Mouawiya Syasneh এর, কিন্তু যুদ্ধ সে চালিয়ে যাচ্ছে।"
যদিও বিশ্ব রাজনীতি জড়িয়ে গেছে সিরিয়া নিয়ে, তারপরেও বলতে হয় -
- "গুড়টা প্রথম দেয়ালে Mouawiya Syasnehই লাগিয়েছিল।"

তথ্যসূত্রের লিংকঃ
https://news.vice.com/article/the-young-men-who-started-syrias-revolution-speak-about-daraa-where-it-all-began
http://www.aljazeera.com/programmes/specialseries/2017/02/boy-started-syrian-war-170208093451538.html
http://pulse.ng/world/mouawiya-syasneh-meet-the-boy-who-started-the-syrian-war-video-id6212663.html
http://newsdespatch.com/tag/mouawiya-syasneh/

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৫২
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×