একটি সময় অনেক বছর আগে পার হয়ে গেছে সে সময় ডাইনী শিকার করা হত । হয়ত ইতি মধ্যে আমার পোস্টে ঢুকে অনেকের মাথায় গিত্তু লেগেছে এরকম প্রশ্ন হয়ত জেগেছে যে ডাইনী আবার শিকার করে কি ভাবে । আসলে মূলত এখানে যা বোঝানো হয়েছে তা হল পৃথিবীতে একটি সময় ডাইনী শিকার হতো তা হলো ডাইনী খোঁজা বা ডাকিনীবিদ্যার প্রমাণ খোঁজা অথবা তাদের ডাইনীর অস্থিত খোঁজা তবে এর সাথে জড়িত ব্যাপারগুলো হলো নৈতিক আতঙ্ক অনেকজনের মূর্ছা যাওয়া এবং জনতার বেআইনী শাস্তি বা বিচারের সময় বেআইনী সাজা দেওয়া এরকম কিছু কে বোঝানো হয়েছে । আসলে বিষয়টি বেআইনী মনে হলেও সে সময় ওটা তাদের আইন সম্মত আইনী ছিল,বা ইতিহাসগত ভাবে ঘটনাগুলো আইনগতভাবেই হয়েছিল এবং দাপ্তরিক ডাকিনীবিদ্যা বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছিল ।
ডাইনী শিকারের প্রাথমিক যুগ ছিল ১৪৮০ সাল থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে । পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতিতেই এই ডাইনী শিকার হয়ে আসছে প্রাচীন এবং আধুনিককাল জুড়ে ।মানুষ কুসংস্কারে আক্রান্ত হয়ে ডাইনী ভীতিতে ডাইনীদের বা যারা ডাকিনীবিদ্যা চর্চা করে তাদের হত্যা করে আসছে অথবা বর্জন করে আসছে । ডাইনী শিকার এখনও আধুনিক সমাজে চলছে যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা আধুনিক বিজ্ঞান যুগে কেও ডাকিনীবিদ্যা এবং গুপ্তবিদ্যা সমর্থন করে না । ডাইনী শিকার বলতে এটাও বোঝায় যে আতঙ্কজনিত কারণে আসল ডাইনী বাদে অন্য সন্দেহজনক ভুল মানুষকে খোঁজা । প্রাচীন মিশর এবং ব্যবিলনে জাদুকর ও ডাইনীদের জন্য আলাদা আইন ছিল । হামুরাবি কোড ১৮০০ সালের আগের হিসেব অনুযায়ী যদি একজন মানুষ আরেকজনের ওপর যাদুটোনা করে এবং তা যদি প্রমাণিত না হয় তবে যার ওপর যাদু প্রয়োগ করা হয়েছে সে পবিত্র নদীর কাছে যাবে ও নদীতে নামবে । নদী যদি তাকে ডুবিয়ে ফেলে তবে তার বাড়ীর মালিকানা পাবে ওই যাদু প্রয়োগকারী ব্যাক্তি । যদি সে পবিত্র নদীতে না ডোবে তাহলে ওই যাদুকর কে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে এবং তার বাড়ীর মালিকানা পাবে ওই যাদুতে আক্রান্ত হওয়া ব্যাক্তি । এটা হল ভাই প্রাচীন যুগের হিসাব । এর পর চলুন মধ্য যুগ দেখি তখনকার অবস্থা কি ?
প্রাথমিক মধ্যযুগে গির্জায় সরাসরি ডাইনী বিচার যেত না । যদিও এসব বিচার গির্জার আদর্শ থেকেই শুরু হয়ে এসেছে । ৭৮৫ সালে চার্চ অব প্যাডেরবর্ন ডাকিনীবিদ্যা নিষিদ্ধ করেন । পোপ জন XXII ডাকিনীবিদ্যা দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেন ১৩২০ সালে যখন তিনি জানতে পারেন এ বিষয় সম্পর্কে । তদন্তকারী আদালত এই বিচারে জড়িত হয় ১৫ শতকে যখন দুই জন মহিলা স্বীকার করেন যে তারা ১৩৮৪সালে এবং ১৩৯০সালে এক প্রকারের সাদা যাদুতে অংশ নিয়েছে । প্রাথমিক আধুনিক ইউরোপে ডাইনী বিচার শুরু হয়েছিল ভালোভাবেই । ১৫ শতকে এবং ১৬ শতকে প্রাথমিক ডাইনী বিচার শুরু হয় । তারপর মানুষের ডাইনী ভীতি কমে গেলে বিচারও কমে যায় । পরে আবার ১৭ শতকে এটা তুমুলভাবে শুরু হয় । খ্রিস্টান সমাজ এবং সেক্যুলার প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করত ডাকিনীবিদ্যা নগ্ননৃত্য অরজি যৌনতা এবং মানুষের মাংস খাওয়া নিয়ে পালিত শয়তানী ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাথে ভালভাবে জড়িত । জার্মানীতে ডাইনী শিকার শুরু হয় অনেক আগে । দক্ষিণ পশ্চিম জার্মানীতে ডাইনী শিকারের সফল বছর ছিল ১৫৬১ থেকে ১৬৭০ সাল । তখনকার সময় ডাইনীদের ধরে পুড়িয়ে মারা হত । সারা ইউরোপে প্রায় ১২০০০ ডাইনী বিচারের ঘটনা ঘটেছিল । প্রায় ৪০০০০ থেকে ১০০০০০ লোক এসব বিচার সম্পাদন করেছিলেন । ১৮ শতকে এ ধরনের অভ্যাস কমে যায় । ইংল্যান্ডে শেষ ডাইনী শিকারের ঘটনা ঘটেছিল ১৬৮২ সালে । ১৭১২ সালে জ্যানি ওয়েনহ্যাম ছিল প্রথাগত ডাইনী বিচারের শেষ ঘটনা যেখানে সে ক্ষমা চায় তার কৃতকর্মের জন্য এবং মুক্তি পায় ।
এখন আমাদের এই আধুনিক যুগেও ডাইনী শিকার চলছে বিশেষ করে আফ্রিকাতে । ১৯৯৯ সালে বিবিসির প্রতিবেদনে দেখা যায় যে কঙ্গোতে শিশুদের ডাইনী সন্দেহ করা হচ্ছে এবং তাঞ্জানিয়াতে ডাইনী সন্দেহে বয়স্ক মহিলাদের মারা হচ্ছে যদি তাদের চোখ লাল হয় । ডাইনী শিকার করে আফ্রিকাতে মূলত করে ডাইনীর আত্নীয় স্বজনরা তার সম্পত্তির লোভে । আমেরিকাতেও ডাকিনীবিদ্যা সম্পর্কীত ঘটনা শোনা যায় । ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে ওকলাহোমাতে এক ছাত্রীকে ১৫ দিনের জন্য স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় যাদুমন্ত্র করার অভিযোগে । ১৬ই ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ফাওজা ফালিহ নামের এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয় এবং অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করা হয় ডাইনী সন্দেহে । রাজা যদি তার দুঃষ্পাপ্য ক্ষমা না করেন তবে মহিলার মাথা কাটা যাবে । শেষ হয়েগেছে ।
কি কিছু বুঝলেন ভাই । বুঝেন নাই আরে এগুলো প্রচীন যুগের একটি ভন্ডামী আইন বা বিচারের কথা পড়লেন । এটা এমন বিষয় যেয়ে দাঁড়ালো বা আমরা বুঝলাম যে আসলে ভূত পেতনী যাই বলেন আর আমরা যাই মনে করি না কেন এগুলো শুরু ছিল কিছু ভন্ডামী দিয়ে ।
ছবিগুলো গুগল থেকে নেওয়া ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৮