ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে গতকাল বুধবার সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট আইএস। বৃহস্পতিবার আইএসের মুখপাত্র হিসেবে আমাক নিউজ এজেন্সি এই কথা জানিয়েছেন।তার আগে গতকাল বুধবার লন্ডনের স্থানীয় সময় দুপুরে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের বাইরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আরো আহত হয়েছেন ২৯ জন।সংবাদে আরও জানানো হয় সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ওই হামলাকারী। ঘটনার সময় পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশন চলছিল।তার আগে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের বাইরে রক্তক্ষয়ী এ সন্ত্রাসী হামলা উদযাপন করছে আইএস।
লন্ডনে পার্লামেন্ট ভবনে হামলার চেষ্টা যেভাবে হয়েছিল
লন্ডনে এটি ছিল ২০০৫ সালের পর এ এই পর্যন্ত সবথেকে বড় সন্ত্রাসী হামলা।গতকাল বুধবার আনুমানিক বিকেল পৌনে তিনটার আগে একজন হামলকারী একটি গাড়ি ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় তার গাড়ি তুলে দেয় পথচারীদের ওপর। সে সময় দুজন নিহত হন,আর আহত হন আরো বহু মানুষ। তারপর গাড়িটি এসে ধাক্কা দেয় পার্লামেন্ট ভবনের রেলিং এ। ছুরি হাতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে তারপর হামলাকারী পার্লামেন্ট ভবনের দিকে দৌড়ে যায়। সেখানে পুলিশ তাকে বাধা দেন। তখন একজন নিরস্ত্র পুলিশ অফিসার কীথ পামারকে ছুরিকাঘাত করেন হামলকারী। কীথ পামার নিহত হন। পরে পুলিশ হামলাকারীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় । নিহত হয় হামলাকারীও।তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে সেখানে ছিল খুবই আতংকজনক এবং বিশৃঙ্খল এক অন্যরকম পরিস্থিতি। রিচার্ড টাইস নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছে তিনি ওয়েস্টমিনস্টার টিউব স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসছিলেন ঠিক পৌনে তিনটার দিকে। আর তখন পুলিশ তাকে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখেন ব্রিজের ওপর অনেক লোক আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তখন তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। রিচার্ড টাইস জানতে পারেন ফুটপাথে লোকজনের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ব্রিজের দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত এভাবে লোকজনকে চাপা দিতে দিতে গাড়িটি সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। তিনি আরো বলেন আমি গুনে দেখেছি পুরো ব্রিজে অন্তত আটজন লোক পড়ে ছিল।
এ হামলার পরপরই পুরো রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
হামলার ঘটনার পরে রাস্তায় পড়ে থাকা আহত মানুষদের দৃর্শ্যপট ।নিহত পুলিশ অফিসার কীথ পামার তার বয়স ৪৮বছর। তিনি ছিলেন পুলিশের পার্লামেন্টারি এবং ডিপ্লোমেটিক প্রটেকশন কমান্ডের সদস্য। তিনি পনেরো বছর ধরে পুলিশের চাকুরিতে নিয়োগ ছিলেন।আর নিহত একজন পথচারীর নাম আয়শা ফ্রেড। তিনি ডিএলডি কলেজ লন্ডনে কাজ করতেন। হামলাকারি ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ দিয়ে যখন গাড়ি তুলে দিয়েছিল লোকজনের ওপরে, তখন তিনি আহত হন।নিহত আরেকজনের ৫০ বছর বয়সী একজন পুরুষ। সাতজন আহত মানুষের অবস্থা খুবই আশংকাজনক। আর ২৯ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।আহতদের মধ্যে আছে তিনজন পুলিশ অফিসার। তারা একটি অনুষ্ঠান থেকে পায়ে হেঁটে ফিরছিলেন ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের ওপর দিয়ে।একদল ফরাসী স্কুল ছাত্রও সে সময় ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের ওপর ছিলেন। তাদের তিনজনও সে সময় আহত হন।ল্যাংকাশায়ারের এজ হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন ছাত্রও এই ঘটনায় আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো পাঁচ জন দক্ষিণ কোরিয় পর্যটক।
প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে জানিয়েছেন হামলাকারীর জন্ম ব্রিটেনেই এবং একবার ব্রিটেনের নিরাপত্তা বাহিনী তার ব্যাপারে তদন্তও করেছে জঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে। তবে পুলিশ এখনো তার নাম প্রকাশ করেননি।অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে তারা হামলাকারী কে তা জানেন। আর এখন পুলিশ হামলাকারীর অন্য সহযোগী কারা ছিল তাদের ধরার চেষ্টা করছেন। পুলিশ সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন হামলকারী কে তা জানার চেষ্টা না করার জন্য।পুলিশ আরো বলছেন হামলাকারী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বা ইসলাপন্থীদের সন্ত্রাসবাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল বলে তারা অনুমান করছেন।হামলাকারী কি উদ্দেশ্যে হামলা করেছে ও কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে এবং তার সহযোগী কারা ছিলো পুলিশের তদন্তে এসব বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সূত্রঃ রয়টার্স।
এবং যুক্তরাজ্যের এক্সপ্রেস পত্রিকা ও বিবিসি বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৫৮