মুড়াপাড়া রাজবাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং এটি শতবর্ষী জমিদার বাড়ি। বিভিন্ন সময় এই জমিদার বাড়িটি কয়েকজন জমিদার কর্তৃক সংস্কার এবং সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এটি উপজেলার মুড়াপাড়া নামক গ্রামে অবস্থিত। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর থেকে সড়ক পথে এর দুরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। স্থানীয়রা একে মঠেরঘাট জমিদার বাড়ি বলেও অভিহিত করেন।
মুড়াপাড়া রাজবাড়িটি ৬২ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। এই জমিদার বাড়িটি তৈরি করেন বাবু রামরতন ব্যানার্জী যিনি এই অঞ্চলে মুড়াপাড়া জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারপর তার কয়েকজন বংশধর কর্তৃক প্রাসাদটি সংস্কার এবং সম্প্রসারণ করা হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে জমিদার প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জী এই ভবনের পিছনের অংশ সম্প্রসারণ করেন এবং পরিবার নিয়ে এখানেই বসাবাস শুরু করেন।
তার পুত্র বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রাসাদের সামনের অংশে একটি ভবন নির্মাণ ও দুটি পুকুর খনন করেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে তার দুই পুত্র জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী এবং আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জী কর্তৃক প্রাসাদের দোতালার কাজ সম্পন্ন করা হয় ।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর জগদীশ চন্দ্র তার পরিবার নিয়ে কলকাতা গমন করেন। তারপর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাড়িটি দখল নেন ও এখানে হাসপাতাল এবং কিশোরী সংশোধন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে স্কুল এবং কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করা হত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটির দায়িত্ব গ্রহণ করে সেটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। বর্তমানে এটি মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ নামে পরিচিত হয়ে আসছে।
দ্বিতল এই জমিদার বাড়িটিতে ৯৫টি কক্ষ রয়েছে আরো আছে সংলগ্ন দুটি পুকুর। বাড়ির সামনে একটি বৃহদাকার পুকুর আর পেছনভাগে তুলনামূলক ক্ষুদ্রকার আরেকটি পুকুর। তাছাড়াও পুরো জমিদার বাড়িটিতে রয়েছে বেশকিছু নাচঘর, আস্তাবল, মন্দির, ভাণ্ডার এবং কাচারি ঘর।
মন্দিরের ওপরের চূড়াটি প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। মূল প্রাসাদে প্রবেশের পথে রয়েছে বেশ বড় একটি ফটক।একটি আম বাগানও আছে জমিদার বাড়ির পাশে। দুটি পুরনো মঠ রয়েছে প্রধান সড়কের পাশে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:২৩