somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাইপেশিয়া একজন খ্যাতিমান গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক ব্যক্তি

০১ লা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাইপেশিয়া হলেন একজন বিখ্যাত মিশরীয় নব্য প্লেটোবাদী দার্শনিক এবং গণিতজ্ঞ। মহিলাদের মধ্যে তিনিই প্রথম উল্লেখযোগ্য
গণিতজ্ঞ। তিনি সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আলেক্সান্দ্রিয়ান প্যাগান ছিলেন। শিক্ষক হিসেবেও তার সাফল্য উল্লেখ করার মত।হাইপেশিয়ার পিতার নাম থিওন। তিনিও একজন খ্যাতিমান গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক ছিলেন এবং হাইপেশিয়াকে মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষিতকরণে তার ভূমিকাই ছিল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। ৪০০ সালের দিকে হাইপেশিয়া আলেক্সান্দ্রিয়ার নব্য প্লেটোবাদী দর্শনধারার মূল ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এবং খ্যাতির চরম শিখরে পৌঁছে যান। তার মধ্যে অসাধারণ বাগ্মীতা, বিনয় এবং সৌন্দর্য্যের সার্থক সম্মিলন ঘটেছিল। সেজন্য তিনি অসংখ্য শিক্ষার্থীর আকর্ষণ লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন সিরিনের সাইনেসিয়াস “Synesius’’ যিনি পরবর্তীতে ৪১০ খৃস্টাব্দে টলেমাইস নামক অঞ্চলের বিশপ হন। হাইপেশিয়ার কাছে সাইনেসিয়াসের লেখা কিছু চিঠি এখনও রয়েছে। তার কোন ছবি পাওয়া যায়নি তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর লেখক ওসাহিত্যিকেরা তাকে সৌন্দর্য্যে দেবী এথেনের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তিনি শিক্ষা এবং বিজ্ঞানকে সঠিক উপমার মাধ্যমে প্রতিকায়িত করেন। তৎকালীন সময়ে সে ধরণের শিক্ষাকে প্যাগান রীতিনীতি এবং
সংস্কৃতির সাথে একীভূত মনে করা হত যার ফলে জ্ঞানের বিকাশের পথে বাঁধার সৃষ্টি হয়, আর সে কারনেই তাকে অনেক প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।সুডা লেক্সিকন নামক দশম শতাব্দীর একটি বিশ্বকোষের বর্ণনা মতে তিনি কয়েকটি পুস্তকের উপর ভাষ্য রচনা করেন। তর মধ্যে রয়েছে, আলেক্সান্দ্রিয়ার ডায়োফ্যান্টাস রচিত এরিথমেটিকা।পার্গার অযপোলোনিয়াস রচিত কনিকস।সম্ভবত সেই বইগুলো পরে আর পাওয়া যায়নি। তবে এরিথমেটিকা বইটির বর্ধিত আরবি সংস্করণে তার ভাষ্য সম্বন্ধে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক একটি সারগ্রন্থের উপর তিনি ভাষ্য রচনা করেন। অনেকের মতে এটি ছিল টলেমি রচিত আলমাজেস্ট।
যেমন তার পিতা থিওনের সূত্রে জানা যায় যে হাইপেশিয়া আলমাজেস্টের উপর তার লেখা ভাষ্যটির পুর্ণপরীক্ষা করেছিলেন।
তার অধিকাংশ কীর্তি সম্বন্ধে যা জানা যায় তার প্রায় পুরো অংশেরই দলিল গৃহীত হয়েছে সাইনেসিয়াসের পত্রাবলী থেকে।
সাইনেসিয়াস উল্লেখ করেন যে হাইপেশিয়া একটি অ্যাস্ট্রোল্যাব এবং একটি হাইড্রোস্কোপ তৈরিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। উল্লেখ্য সপ্তদশ শতাব্দীতে পিয়ের দ্য ফের্মা হাইড্রোস্কোপকে হাইড্রোমিটার নামে নামাঙ্কিত করেন।সে থেকে বুঝা যায় যে হাইপেশিয়া নিজেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং গণিতের চর্চায় উৎসর্গ করেছিলেন।

হাইপেশিয়া দুজন বিখ্যাত নব্য প্লেটোবাদী ব্যক্তিত্বের গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক শিক্ষা ও পদ্ধতির উপর ভাষণ প্রদান করতেন।
সেই দুজন হলেন প্লোটিনাস যিনি নব্য প্লেটোবাদের জনক হিসেবে খ্যাত এবং ল্যাম্বলিকাস যিনি নব্য প্লেটোবাদের সিরিয় ধারায় উদ্ভাবক।তার দর্শন ছিল তৎকালীন যুগের সাপেক্ষে অনেক পরিপক্ক ও বৈজ্ঞানিক এবং তার মাঝে পৌরাণিকতা ছিলনা বললেই চলে যদিও তার দর্শন সম্বন্ধে কোন সুস্পষ্ট দলিল বর্তমানে অবশিষ্ট নেই। দর্শনের ব্যাপারে তিনি আপোষহীনভাবে প্যাগান মতবাদের অনুসারী ছিলেন এবং তার এই চিন্তাধারার প্রকৃতি তৎকালীন অন্যান্য নব্য প্লেটোবাদী দর্শনধারা হতে স্বতন্ত্র ছিল।তার দুটি বিখ্যাত উক্তি থেকে তার দর্শনের অকাট্যতা প্রতিভাত হয়:
১। তোমার চিন্তা করার অধিকার সংরক্ষণ কর। এমনকি ভুলভাবে চিন্তা করা একেবারে চিন্তা না করা থেকে উত্তম।
২। কুসংস্কারকে সত্য হিসেবে শিক্ষা দেয়া একটি ভয়ংকরতম বিষয়।


তার এই সকল চিন্তাধারাই হয়তোবা সিরিলকে এতোটা উত্তেজিত করে থাকবে যে সে খ্রীস্টান জনতাকে এতোটা উন্মত্ত করতে সমর্থ হয়েছিল। আর তারই পরিণতিতে নিহত হতে হয় হাইপেশিয়াকে।

তার মৃত্যুর সঠিক তাৎপর্য উপলব্ধি করতে হলে ইতিহাসের বেশকিছু ঘটনার ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সম্রাট থিওডোসিয়াস১,৩৮০ সালে প্যাগানবাদ এবং অরিয়ানবাদের বিরুদ্ধে একটি অসহিষ্ণুতা নীতির সূচনা ঘটান। তিনি ৩৭৯ সাল থেকে ৩৯২ সাল পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন এবং তারপর থেকে ৩৯৫ সাল পর্যন্ত রোমান সাম্রাজ্যের পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন। ৩৯১ সালে তিনি আলেক্সান্দ্রিয়ার বিশপ থিওফিলাসের পত্রের জবাবে মিশরের ধর্মীয় সংস্থানসমূহকে ধ্বংস করে দেওয়ার অনুমতি প্রদান করেন। তার পরপরই খৃস্টান জনতা সম্মিলিত আক্রমণের মাধ্যমে আলেক্সান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার এবং সারাপিস মন্দির সহ অন্যান্য প্যাগান সৌধগুলো ধ্বংস করে দেয়।৩৯৩ সালে আইনসভার আইনের মাধ্যমে এ ধরণের স্থাপনা বিশেষ করে ইহুদী মন্দির ধ্বংসে আক্রমণাত্মক কার্যাবলির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু ৪১২ সালে আলেক্সান্দ্রিয়ার উর্ধ্বতন যাজক হিসেবে সিরিলের ক্ষমতায় আসার পর আবার সেই ধ্বংসাত্মক কাজগুলো শুরু হয়। ৪১৪ সালে আলেক্সান্দ্রিয়ায় ইহুদী বিতারণের সূচনার মাধ্যমে বিপর্যয়ের ঘনঘটা দেখা দেয়। আর তারই ধারাবাহিকতায় ৪১৫ সালে একদল ধর্মোন্মাদ খৃস্টান জনতার হাতে হাইপেশিয়া নিহত হন। বর্ণনা মতে রথে করে ফেরার পথে উন্মত্ত জনতা তার উপর হামলা করে এবং হত্যার পর তার লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে রাস্তায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অনেক বিশেষজ্ঞই তার মৃত্যুকে প্রাচীন আন্তর্জাতিক শিক্ষাকেন্দ্র আলেক্সান্দ্রিয়ার পতনের সূচনাকাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:২৩
১৬টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×