বিনীতা - দ্যা আনটোল্ড স্টোরি
লেখকঃনিলয় আহসান নিশো(বৃষ্টিহীন বর্ষাকাল)
..
...
একটি মেয়ে....
নাম ধরা যাক খুসবু।মা আদর করে আদুরি ও ডাকতো। আজ তার কথাই বলবো। তার জীবনের না বলা গল্প। এক বিনীতার গল্প....
..
...
খুসবুর বয়স যখন ৪বছর তখন ওর মা ২য় সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়। তবে রেখে যায় ফুটফুটে একটি মেয়ে। নাম দেয় মৌনতা। খুসবুর বাবা ২মেয়ের কথা ভেবে নতুন মা নিয়ে আসে সংসারে।
খুসবুর বাবা ছিল ব্যবসায়ী। তাই সকালে বেড়িয়ে যেত ফিরত রাত করে।
..
...
খুসবুর বাবা বেড়িয়ে গেলে শুরু হত সৎ মায়ের অত্যাচার। খুসবু সব কিছু নিরবে সহ্য করতো শুধু ছোট বোন টার মুখের দিকে তাকিয়ে।৪বছরের একটা মেয়ে বাড়ির সব কাজ করে, কাপড় কাচা, রান্নাকরা, ঘর মোছা, নাস্তা বানানো। খুব সহজেই শিখেও ফেলে সবকিছু।হয়তো ভাগ্যে যা ছিল তা মেনেই নিয়েছিল।এভাবেই চলতে থাকে দিনরাত সৎ মায়ের অত্যাচার। সৎ মা ঠিক মত খেতেও দিত না।খুসবুর মনে পড়ে আগে তার মা থাকতে না খাওয়ার জন্য কাঁদত আর এখন একবেলা পেট ভরে খাবার পাওয়ার জন্য সারারাত কাঁদে।
..
...
দিনে চলে যায়.....
সৎ মায়ের ছেলে হয়।অনেক আদর করে ২ভাইবোন কে বড় করছে খুসবু। নিজের কখনোই স্কুলে যাওয়া হল না। আস্তে আস্তে বড় ও হয়ে যাচ্ছে ছোট বোনটা এখন সপ্তম শ্রেণী তে পড়ে।ছোট ভাইটা ২য় তে।
খুসবু এখন পুরোপুরি কাজের মেয়ে হয়ে গেছে নিজের বাড়িতেই।থাকার জায়গা হয়েছে রান্নাঘরের পাশে মেঝেতে। বোনটার ও কিছুই করার নেই আর সৎ মা বলে দিয়েছে যদি বোনকে লেখাপড়া করাতে চাও তাহলে কাজের মেয়ের মতই থাকো বাড়ির মেয়ে হতে এসো না।
..
...
এইতো সেদিন
জ্ব্ররের ঘোরে রান্না করতে গিয়ে ছোট ভাইটার দুধটা পড়ে যায়।রান্না ঘরে গিয়ে সৎ মা গরম খুন্তি দিয়ে পেটে পিঠে ছ্যাকা দেয়। সেদিন রাতে না খেয়েই থাকতে হয়েছিল। রাতে জ্বর বেড়ে গেলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। ছোট বোন টা সারারাত কেঁদেছে। কিন্তু লাভ হয়নি। ভোর বেলা জ্বর নিয়েই উঠতে হয়েছে, নাস্তা বানাতে হয়েছিল।
..
...
খুসবু ছোট বেলায় খেলতো একটা ছেলের সাথে, নাম ছিল আবির।আবির রা তাদের প্রতিবেশী ছিল।তার কষ্ট শুধু আবির বুঝতো, হয়তো ভাল ও বেসে ফেলেছিল আবির কে।কিন্তু জন্ম থেকেই যে অভাগিনী তার কপালে সুখ আসবে কি করে।আবির রা ঢাকায় চলে যায় স্ব পরিবারে।খুসবু আবার একা।
..
...
দেখতে দেখতে খুসবুর বয়স ২০ ছুই ছুই।
সৎ মায়ের মাথায় চিন্তা এলো আপদ টাকে বিদায় করবে।তার জন্য পাত্র দেখা হল। সামনে মাসে তার বিয়ে।খুসবু যখন ছোট ছিল তখন তার মা বলতো
দেখিস মা আদুরি তোর জন্য রাজপুত্র আসবে, রাজকুমার এসে তোকে রানী করে নিয়ে যাবে। তোর চোঁখে কখনোই জল আসতে দিবে না।
হ্যা, খুসবুর জন্য রাজকুমার এসেছিল,তবে রাজকুমার টা ট্রাক ড্রাইভার ছিল,আগের বউকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।আর রাজকুমারের মদ গাঁজা না খেলে ঘুম আসে না।
..
...
খুসবুর বিয়ে হল
শুধু ৫-৭জন লোক এলো, খাওয়া দাওয়া হল। তারপর খুসবু কে নিয়ে গেল।
বাসর ঘর???
খুসবু বসে আছে একটা টিনশেড ঘরের চৌকিতে।
এটাই তার খাট, অবশ্য এর আগে পর্যন্ত মেঝেতেই ঘুমাতো। বাসর রাত থেকে শুরু তার মদ্যপ স্বামীর অত্যাচার। বিনা কারনে মারধোর। খুসবু আর নিতে পারছে না।তবুও স্বপ্ন দেখে তার স্বামী ভাল হয়ে যাবে & তাদের সুখের সংসার হবে।কিন্তু তা হয় না।
খুসবুর স্বামী অনেক রাত করে ঘরে ফিরে। রাতে এসে কখনোই খায় না, তবুও খুসবু রান্না করে তার জন্য অপেক্ষায় থাকে।
..
...
সন্ধ্যা বেলা খুসবু রান্না করছে, এমন সময় দরজায় চিতকার শুনে বাইরে এসে দেখে কারা যেন তার স্বামীকে মেরে রক্তাক্ত করে রেখে গেছে।খুসবু চিতকার করে কাঁদতে লাগলো। তারপর অনেক কষ্টে ধরে ঘরে নিয়ে যায়। সারারাত জেগে তার সেবা করে।
পুরোপুরি সুস্থ হতে ১৫দিন সময় লাগে, এই ১৫দিন ১৫মিনিটের জন্যও খুসবু তার স্বামীর কাছ থেকে সরেনি।নামাজ পরে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করেছে আল্লাহ যেন তার স্বামী কে সুস্থ করে দেন।
..
...
১৫দিন পর তার স্বামী পুরো পুরি সুস্থ হয়ে যায়,
এই ১৫দিন সে শুধু মনে মনে কেঁদেছে। যে তার এত গুনবতী স্ত্রী কে সে এতদিন বিনা দোষে মারধোর করত।সে নিজে নিজে অনেক অনুতপ্ত হল।
সে খুসবু কে পাশে ডেকে নিয়ে এসব এর জন্য মাফ চাইতে গেলে খুসবু বাধা দিয়ে বলে ছি ছি ছি স্বামীর সন্তুষ্টি তেই স্ত্রীর বেহেশত। তখন তার স্বামী বলল আমি তোমার প্রতি অবিচার করেছি।তোমার জীবন টা নষ্ট করেছি।তোমার সৎ মা এর জন্য তোমাকে বিয়ে করেছি।
..
...
কিন্তু আজ থেকে কথা দিলাম...
আমি ভাল হয়ে যাবো।আমি তোমার জন্য ভাল হয়ে যাবো, জানি তোমার রাজকুমার হতে পারবো না কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে আর তোমার চোঁখে জল পড়তে দিব না।আমি ভালবাসি তোমাকে।
আর আজ থেকে তুমি আমার খুসবু না তুমি আমার বিনীতা.... যে তার জীবনে কখনোই নিজের কথা ভাবে নি। বিনীত জীবনে থেকেছে।
..
...
খুসবু আজ তার জন্মের পর প্রথম এত খুশি।আজ মনে মনে আল্লাহ এর শুকরিয়া আদায় করছে আর বলছে
মা আমি আমার রাজকুমার কে পেয়ে গেছি
যে আমার চোঁখে আর জল আসতে দিবে না।
..
...
তারপর থেকে স
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৮