২০১৩ সালের রমজান মাসের একটি ঘটনা বলি। তার আগে আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিই একজনের সাথে। যখনকার কথা বলছিলাম তার আগের বছর তিনি আমাদের বাড়ির মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন। সেদিন এশার নামাজ পড়তে গিয়ে তাঁর দেখা পাই। তিনি এসেছেন আমার খোঁজেই। যখন তিনি আমাদের মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিলেন তখন তাঁর সাথে মোটামুটি ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো। সেই সুবাধে হয়তো দেখা সাক্ষাত করতেই এলেন।
একটু পর তিনি আমাকে বললেন তাঁর সাথে নামাজের পরে এক জায়গায় যেতে হবে। রোজার মাস হওয়ায় এশারের পর কোথাও যেতে ইচ্ছে করছিলো না। তাই রাজি হচ্ছিলাম নাহ। কিন্তু তাঁর অনেক জোরাজুরিতে শেষমেষ রাজি হলাম।
তারাবির নামাজ শেষে তিনি আমায় বললেন, আজ একটা বাড়ীতে মিলাদ আছে। সেখানে উনাকে ৪জন হুজুর নিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু উনি সহ ৩জন হয়েছেন। আরো একজন লাগবে। কিন্তু কাউকে পাচ্ছেন নাহ। তাই আমাকে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরে যেতে হবে।
তাঁর প্রস্তাব শুনে আমি এবার বেঁকে বসলাম। যাবো না আমি। আমি পোলাপাইন মানুষ। তিনি বললেন, "শুধু পাঞ্জাবি পরে আমার সাথে যাবেন। মিলাদ পড়বেন। তারপর ভাত খেয়ে চলে আসবেন। ব্যস।"
রমজান মাসে ইফতারের পর আমি ভাত টাত খাইনা আর। সেটাও উনাকে জানালাম। কিন্তু উনি আমাকে ছাড়তে নারাজ। আমি না গেলে উনি রাগ করবেন। মনে কষ্ট নিবেন। হ্যানত্যান বলতে লাগলেম। অগত্যা তাঁর মন রক্ষার্থে পুনরায় রাজি হলাম।
কি আর করা, আমি তখন বাড়িতে এসে আমার নতুন লুঙ্গিটা পরলাম। সাথে সবুজ পাঞ্জাবি এবং লম্বা টুপিটা পরে উনার সাথে গেলাম। এবার উনার ৪জন হুজুর পূর্ণ হলো। হুজুরদের মধ্যে আমিই সর্বকনিষ্ঠ। বাকী দুইজনের একজন মাঝবয়সী, আরেকজন মোটামুটি মুরুব্বি শ্রেণীর।
আগেই বলেছি রমজান মাসে আমি ইফতারের পর আর ভাত খাই না। কিন্তু সেদিন দাওয়াতে গিয়ে একেবারে পেট ভরে ভাত খাইছি। ভাত খাওয়া শেষে হুজুরদের সাথে মিলাদ পরলাম। হাত তুলে উনাদের (যারা মিলাদ পড়িয়েছেন) জন্য দোয়াও করলাম। চলে আসার সময় বাড়ির গৃহকর্তা মুরুব্বি শ্রেণির হুজুরের কাছে ৪০০ টাকা দিলেন।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর রাস্তায় এসে সিএনজির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। মুরুব্বি হুজুর আমাদের ৪০০ টাকা করে ভাগ করে দিলেন। আমরা ৪জন তাই আমার ভাগে ১০০ টাকা।
এই ধরণের মিলাদের সাথে যদিও ছোটকাল থেকেই পরিচিত। তারপরও এই প্রথম নিজে কোন মিলাদে গিয়ে ফ্রি ভাতও খাইলাম আবার ১০০টাকাও পাইলাম। তখন থেকেই চিন্তা করি, আমাদের ইসলাম কি আসলে এইরকম শিক্ষা দেয়? দোয়ার বিনিময়ে ভাতও খাও, টাকাও খাও। এই ধরণের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয় কি???
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৩:১০