ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। শান্তিতে নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি।
তাঁর নোবেলজয় নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। দুর্মুখেরা বলেন,
পশ্চিমা পুঁজিবাদী সভ্যতার ঘনিষ্ট মিত্র হওয়ার সুবাদে তিনি এ
নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। দেশেও তাঁর সমালোচকের অভাব
নেই। আমি তাঁর গূণগ্রাহী নই। তবে তাঁর নোবেলজয়ের আনন্দ
আমাকেও স্পর্শ না করে যায়নি। হাজার হোক তিনিতো আমার
দেশেরই একজন কৃতী সন্তান। নোবেলজয়ের পর
তিনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কী ভূমিকা রেখেছেন বা রেখে চলেছেন
তা আমার জানা নেই। তবে তিনি তাঁর স্বউদ্ভাবিত অর্থনৈতিক
ধারণা "সোশ্যাল বিজনেস"কে গ্লোবাল রূপ দেয়ার জন্য
দুনিয়াব্যাপী চষে বেড়ান। বড় বড় সেমিনার-সিম্পোজ
িয়ামে ভারি ভারি লেকচার ঝাড়েন। সোশ্যাল বিজনেস এর
ধারণাটি খারাপ না তবে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। যাহোক আমি আপাতত
ওদিকে যাচ্ছি না। 'শান্তিতে' নোবেলজয়ী ডঃ ইউনুসকে নিয়েই
আলোচনা আপাতত সীমাবদ্ধ রাখি। শান্তিবাদী হলেই কেবল
কাউকে এ পুরস্কারটি দেয়া হয় এমন একটি সাধারণ ধারণা সবাই
পোষণ করলেও এটি সবসময় সত্য হিসেবে প্রতিভাত হয়নি।
আইজ্যাক রবিন আর শিমন পেরেজ এর মতো খুনি ও রাষ্ট্রীয়
সন্ত্রাস পরিচালনাকারীদের হাতেও আমরা নোবেল শান্তি পুরস্কার
উঠতে দেখেছি। দেখেছি অং সান সুচির মতো নারীর এই
পুরস্কারটি পেতে যিনি পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় মদদে সংঘটিত
রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর গণহত্যার সময় নীরব সমর্থন
যুগিয়েছেন। আর বর্তমান বিশ্বশান্তির প্রতি সবচেয়ে বড়
হুমকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাতো ২০০৯
সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে বিশ্ববাসীকে তাক
লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে কতো আফগান আর
ইরাকি নাগরিকের রক্তে তাঁর হাত রঞ্জিত
হয়েছে তা হয়তো তিনি নিজেও জানেন না। আমাদের ডঃ ইউনুস এর
আবার মার্কিন শাসকদের সাথে অতলগভীর সম্পর্ক। আর সেই
মার্কিন শাসকদের নাকে দড়ি দিয়ে নাচায় ইহুদি নামক ক্ষুদ্র
একটি অসভ্য জাতি। এই ইহুদি জাতির ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার
ক্ষমতা আজ পর্যন্ত কোন মার্কিন মোড়লের হয়নি। আবার
জাতিসংঘ নামক যে শুয়োরের খোঁয়াড়টি আছে তার উপর
রয়েছে মার্কিন মুল্লুকের একচ্ছত্র আধিপত্য। জাতিসংঘের
মহাসচিব অধিকাংশ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক সচিব
হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। উপরের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার
উদ্দেশ্য একটাই। গত ৮ জুলাই অবৈধ ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল
গাজার নিরীহ, নিরস্ত্র, রোজাদার মুসলমানদের উপর যে বর্বরতম
হামলা শুরু করেছে তার সাথে উল্লিখিত কুশীলবদের
একটি যোগসূত্র রয়েছে। আশ্চর্য হচ্ছেন? আশ্চর্য হওয়ার কিছু
নেই।
এবার চমৎকার মিলটা দেখুন। ইসরাইল ৮ জুলাই গাজা আক্রমণ শুরু
করার পর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য নিরীহ
গাজাবাসীকে হত্যা করে চলেছে। গাজার নিষ্পাপ শিশুদের ছোট্ট ঐ
শরীরে অসংখ্য স্প্লিন্টারবিদ্ধ মর্মবিদারী ছবি আর
সারি সারি মৃতদেহ যখন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের চোখ
অশ্রুসিক্ত করে চলেছে তখন বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর
তার গৃহপালিত প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ মানবতার সব ধরনের
সংজ্ঞার মাথা খেয়ে আশ্চর্য নীরব ভূমিকা পালন করে আসছিলো।
আশ্চর্যজনকভাবে শান্তিতে নোবেলজয়ী ডঃ ইউনুসও তাঁর
প্রভূদের সাথে তাল মিলিয়ে এই সময়টাতে সম্পূর্ণ নীরব থাকেন।
যেহেতু গাজায় গণহত্যার শিকার মানুষেরা আর ইউনুস সাহেব একই
ধর্মমতের অনুসারী সেহেতু অন্তত এই কারণে হলেও
আমি আশা করেছিলাম গাজা আক্রমণের পরপর এর
নিন্দা জানিয়ে তাঁর কাছ থেকে কোন বিবৃতি আসবে। কিন্তু
তা হয়নি। কাকতালীয় ব্যাপার হলো, ঠিক যখনই হামাসের
যোদ্ধারা ইসরাইলি হানাদারদের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ
গড়ে তুললো, যখন হামাসের হাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক
ইসরাইলি সেনা হতাহত হওয়া শুরু হলো ঠিক তখনই জন কেরি, বান
কি মুন এবং ইউনুসেরা একযোগে গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠলেন।
মিঃ কেরি গাজায় ইসরাইলি গণহত্যাকে 'ইসরাইলেরও আত্মরক্ষার
অধিকার আছে' বলে ন্যায্যতা প্রদানের চেষ্টা করলেন। মিঃ বান
কি মুন দু'সপ্তাহ পর এসে যতোটা সম্ভব মোলায়েম ভাষায়
ইসরাইলকে গাজায় হামলা বন্ধ করতে বললেন। মজার ব্যাপার হলো,
তাঁর সামনেই নেতানিয়াহু হামাস ও
ফিলিস্তিনি জনগণকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তুলোধুনো করলেন।
ঠিক একই সময়ে আমাদের ইউনুস সাহেবও নিতান্ত ঠেকায়
পড়ে ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রদান করলেন।
সেটিও আবার একটি যৌথ বিবৃতি। বিষয়টা হচ্ছে এরকম,
সমগোত্রীয়রা যখন হুক্কা হুয়া ডাক ছেড়েছে তখন আমিও
কী করে আর ঘরে বসে থাকি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার
হলো, ইউনুসের এই বিবৃতিটি আসলো গাজা আক্রমণের দুই সপ্তাহ
পর। ততক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। বান কি মুন আর ইউনুস
সাহেবরা যদি শুরুর দিকে মুখ খুলতেন তাহলে হয়তো কিছু নিরীহ
ফিলিস্তিনির প্রাণ রক্ষা পেতো। তা যদি নাও হতো তাঁরা অন্তত
নিজেদের মনুষ্যত্ববোধের পরিচয় দিতে পারতেন এবং তাঁদের নামের
প্রতি কিছুটা হলেও সুবিচার করতে পারতেন। কিন্তু ইউনুস
সাহেবরা সেটা করতে ব্যর্থ হলেন। তাঁরা নিজেদেরকে মানুষের
শ্রদ্ধা অর্জনের অযোগ্য প্রমাণ করলেন; নোবেল
শান্তি পুরস্কারের অমর্যাদা করলেন। সর্বোপরি তাঁরা বিশ্ববাসীর
চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মার্কিনি ও ইহুদি প্রভাববলয়ের
বাইরে এসে কিছু করার ক্ষমতা তাঁদের নেই।
পুনশ্চঃ আলফ্রেড নোবেল এর শান্তি পুরস্কার নয়, দিনের
শেষে তাঁর ডিনামাইটেরই জয় হলো।