এটা অভিজিৎ রায়ের ফেইসবুক নোটের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা। তিনি পোস্টটা আরিফ জেবতিকের সাম্প্রতিক উগ্র নাস্তিক এবং উগ্র আস্তিক নিয়ে বিরক্তির ফেইসবুক পোস্টের প্রতিক্রিয়া হিসেবে লিখেছেন।
যে কোন বৈপ্লবিক চিন্তাকে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য প্রচন্ড ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবন অনেকবারই হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল, তায়েফের কথা বা মক্কাত্যাগের কথা স্বরণ করা যায়। জিসাসের তো জীবনই দিতে হয়েছে (খ্রীস্টান ধর্মমতে)।
তেমনি রাম বলেন, ফরাসি বিপ্লবের অনুঘটকদের কথা বলেন, সবাইকেই অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। এটাই নিয়ম, প্রচলিত চিন্তার বাইরে বৈপ্লবিক চিন্তা প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে, জীবন দিতে রাজি থাকতে হবে।
ব্লগের নাস্তিকরা নাস্তিকতা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, কিন্তু সেই ত্যাগ স্বীকারটা করতে চায়না। অথচ তাদেরকে অনেক মার খেতে হবে, জামাত-শিবির বা প্রতিক্রিয়াশীলরা আপনাদেরকে অনেক ট্যাঙ্গানি দিবে, ক্ষেত্রবিশেষে মেরে ফেলবে। এই ত্যাগ স্বীকার করার পর জনগন যদি মনে করে আপনাদের মতাদর্শ গ্রহণযোগ্য, তখন তারা সেটা গ্রহণ করতে পারে আবার নাও করতে পারে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করার পরও কত বিপ্লবের কোন ফল আসেনা। জনগন চাইলে তখন নাস্তিকতা প্রতিষ্ঠা হবে আর না চাইলে আপনারা সারাজীবন দৌড়ের উপর থাকবেন, কি আর করা! যদি সেটা সহ্য করতে না পারেন, তাহলে আমার মত গাট্টি নিয়ে তাবলীগে চলেন, কেউ আপনাকে মারতে আসবেনা।
কিন্তু আপনারা চান মার খেলে যেন মধ্যপন্থী ধার্মিকরা বা মুসলমানরা আপনাদের পক্ষে কথা বলে, আপনাদের বাঁচাতে আসে, যাদের ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারাই আবার আপনার পিঠ বাঁচাতে আসুক সেটা চান আপনারা। আপনারা চান কেউ আপনাদের আক্রমণ না করুক কেননা পশ্চিমে এসব বললে কেউ আক্রমণ করেনা, কিন্তু পশ্চিমে এই অবস্থায় আসতে রেনাসাঁ, এনলাইটেনমেন্ট, ফরাসি বিপ্লব ইত্যাদি অনেক আন্দোলনে অনেক রক্ত ঝড়াতে হয়েছে। আপনাদেরকেও আপনাদের মতাদর্শ গ্রহণ করানোর জন্য সেই ত্যাগ করতে হবে। মার খাওয়ার পর মিউ মিউ করে কান্নাকাটি করবেন, মধ্যপন্থি মুসলমানরা কেন আপনাদের পক্ষে বলে না, কেন জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে আপনাদের বাঁচাতে কেউ আসেনা সেসব বলে ফেইসবুকে, ব্লগে কাঁদবেন, এসব কান্নাকাটি শোনার সময় লোকজনের নেই। মার খেতে রেডি না থাকলে শাড়ী-চুড়ি পড়ে ঘরে বসে থাকেন, নাস্তিকতা প্রচার করতে যায়েন না। আপনাদেরকে কেউ বাঁচাতে আসবেনা, কেউ আপনাদের পক্ষে কথা বলবেনা, এটা বুঝেই নাস্তিকতা কায়েম করার ইচ্ছে থাকলে করেন, নাহয় সাইড দেন, সংস্কৃতি চর্চা করেন বা কবিতা-উপন্যাস-গদ্য রচনা করেন, সুকুমারবৃত্তির চর্চা করেন, রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে গবেষণা করেন, প্রেমের কবিতা লিখেন, সুন্দর দেখে বিয়ে করে সংসারী হোন, চাকরি করেন, বাচ্চা পয়দা করেন, তাদেরকে স্কুলে পাঠান, তাদের স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তিমা করেন, পিকনিকে যান বা শ্বশুরবাড়িতে যান অথবা জাহান্নামে যান। মধ্যপন্থী মুসলমানদের খেয়েদেয়ে কাজ নেই তারা আপনার পিঠের মাইর নিজেদের পিঠে নিবে। তারা বরং খুশীই হবে, কেননা আপনারা তাদের মনে আঘাত দিয়েছেন। সেটা মেনে নিয়ে তারপর নাস্তিকতা কায়েম করতে চাইলে করেন, নাহয় বিটিভিতে উচ্চাঙ্গ সংগীত শুনেন, কেউ আপনাদেরকে মারতে আসবেনা।এখন মাইরের ভয়ে তো ঠিকই চুপচাপ আছেন, রাজীব মারা যাওয়ার পর তো আপনাদের নাস্তিকতা প্রচারে ভাটা পড়েছে। সেরকমই থাকেন যদি ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি না থাকেন।
বর্তমান শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আপনারা ডিসপেন্সেবল, আপনারা আন্দোলনের বোঝা। আন্দোলনের আজকে শ্লথ গতির জন্য আপনাদের কমরেডদের দীর্ঘসময় ধরে তীব্র সাম্প্রদায়িক ধর্মবিদ্বেষের একুমুলেটেড ইফেক্ট দায়ী, জামাত যেকোন সুযোগ নিবে, আপনারা সে সুযোগ তাদের দিয়েছেন। আপনাদের বিশ্বাসবিদ্বেষের কথা জনগন জানলে সেটা আন্দোলনের বৃহত্তর স্বার্থের বিপক্ষে যাবে। তাই আপনাদেরকে কেউ মারলে সেটা নিয়ে আন্দোলনের কেউ মাথা ঘামাবেনা। কেননা আপনাদের বালছাল নাস্তিকতা চর্চায় জনগন কোন লাভ দেখছেনা, জনগন দেখছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করাটাই মূল লক্ষ্য, আপনাদের সামিউর কোন বাল ছিড়ছে সেটা আপনারা হিসেব করেন বসে বসে, আন্দোলনের লোকদের সেটা নিয়ে চিন্তার সময় নেই, অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে আছে তাদের। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লক্ষ্যে নেমে আপনাদের কোন নাস্তিকের বিশ্বাসের জন্য কে মাইর খেল, কার জীবন গেল, সেটা আপনারা নিজেরা নিজেরা দেখেন, নিজের পিঠ নিজে বাঁচান, হেডম থাকলে শিবিরের মত রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙ্গেন বা শিবিরের সাথে মারপিট করেন। সেই হেডম আপনাদের না থাকলে কান্নাকাটি করতে আসবেন না, আন্দোলনের মানুষের আপনাদের কান্নাকাটি শোনার সময়, ধৈর্য্য এবং ইচ্ছে কোনটাই নেই।
ফ্র্যাংকলি ডিয়ার, পিপল ডোন'ট গিভ আ র্যাট'স এস!
পূণশ্চ: সরকার নাকি উগ্র ঘৃণাবাদি নাস্তিকদের ঠ্যাঙ্গানির পরিকল্পনা করেছে, এই শুনে গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে বিএসসি পাশ করা ফেইসবুকের ভিআইপি মেম্বার (কে সেটা জানেন আপনারা) মুহম্মদ (সাঃ)-এর ব্যাপক প্রশংসা করে পোস্ট দিয়েছে! মাইরের উপর ভাইটামিন নাই!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮