somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"ভাই, আপনি এরকম আওয়ামি-বিরোধী হয়ে গেলেন কেন?"

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ভাই, আপনি এরকম আওয়ামি-বিরোধী হয়ে গেলেন কেন?" এক ছোটভাই জিজ্ঞেস করল। একসময় আওয়ামিলীগার ছিলাম, সেখানে থেকে তীব্র আওয়ামিবিরোধী হয়ে যাওয়া ছোটভাই মেনে নিতে পারছেনা। ছোটভাই ব্লগের সাথী, সে ২০০৭-০৮ সালের দিকে, তাই আমার চিন্তার বিবর্তনের সাক্ষী সে।

বললাম "আমি আওয়ামিবিরোধী হইছি সেটা অবাক হওয়ার বিষয় না ছোটভাই। বরং অবাক করার বিষয় হল তুমি এখনও কিভাবে আওয়ামিপন্থি রয়ে গেলা?"
"না, মানে, বিম্পি কি আম্লিক থেকে ভাল কিছু?"
"ভাল এক্সকিউজ বাইর করছ জালিমের পক্ষ নেওয়ার জন্য" বললাম আমি, "আম্লিক না বিম্পি ভাল সেটা দেশের মানুষের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ না? তারা ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবে কে তাদের জন্য ভাল।"
"না, তা ঠিক" বলল সে, "কিন্তু গণতন্ত্র কি সবসময় ভাল?"
"শুধু যখন আম্লিক ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য গণতন্ত্র পথ খুলে দেয় তখনই ভাল? অন্য সময় ভাল না, তাই না?"
"হাহা, আপনি ভুল বুঝছেন ভাইয়া, তা বলছিনা। কিন্তু অনেক দেশেই তো গণতন্ত্র ছাড়া উন্নতি করেছে। সিংগাপুরে তো গণতন্ত্র ছিল না।"
"হুমম, এটাও ভাল এক্সকিউজ। তো আমরা কি শীঘ্রই সিংগাপুর হতে যাচ্ছি?"
"সেটাও বলছিনা..।"
"তাহলে কি বলছ?"
"আসলে আম্লিকের বিকল্প নাই মনে করি।"

সেখান থেকেই কথা শুরু করছিলাম, আবার চক্র সম্পন্ন করে শুরুতে ফিরে গেলাম। আমি তর্কে গেলাম না আর। মানুষের রাজনৈতিক বিশ্বাস ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেও দৃঢ় হতে পারে অনেক। বিশেষ করে আম্লিক আর জামাতের ভক্তদের বিশ্বাস। এদের কাছে এদের দলের বিপক্ষে আপনি দুনিয়ার সব সত্য নিয়ে আসলেও আম্লিকের/জামাতের প্রতি ঈমান দূর্বল হবেনা। কোন না কোন এক্সকিউজ নিয়ে আসবেই, এক্সকিউজ দেখে আপনি হতবাকবাকুম হয়ে যাবেন। এটার সাথে শিক্ষার কোন সম্পর্ক নাই। আমার এক্সটেনডেড পরিবারের সবাই ঘোর আম্লিক, এখানে পিএইচডি-ধারী শিক্ষিতও আছে আবার খুব কম শিক্ষিতও আছে, কিন্তু আম্লিকের প্রতি ঈমানে এদের তেমন কোন হেরফের নেই। আমার কাছের এক শ্রদ্ধেয় মুরুব্বিকে যদি কেউ সরাসরি দেখান যে শেখ হাসিনা চুরি করছে, তখন তিনি বলবেন, "দেখছ, কি সুন্দর করে চুরি করছে? শেখের বেটী বলে কথা!" তাই আম্লিকের প্রতি ঈমান আনলে তাকে আর কোন ধরণের ফ্যাক্ট দিয়ে লাভ নেই, সে ঘুরেফিরে তবুও আম্লিক কেন ভাল সেই উপসংহারে চলে যাবে।

বললাম, "এসব কথা বাদ দাও, এ বিষয়ে তোমার আর আমার বুঝ আলাদা মনে হচ্ছে, তর্ক করে কোন লাভ নেই। তোমাকে একটা গল্প শুনাই, সেটা বরং ভাল হবে।"

"ঠিক আছে, শুনান।"
"ক্লাশ ফোরে পড়ে এক ছেলে, তো তার কাছে বাংলা রচনা খুব কঠিন লাগে। সে অনেক কষ্টে একটা রচনা শিখতে পারছে, "আমাদের ছোট নদী" রচনা। কিন্তু প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় আসল কুমিরের রচনা। সে লিখল, 'কুমির নদীতে থাকে, আমাদের ছোট নদীতেও কুমির আছে। এ নদীর ছোট ছোট বাঁক আছে, বৈশাখ মাসে নদীর জল কমে আসে, তখন আমরা হেটেই নদী পার হতে পারি, নদীর পানি থেকে আমাদের চাষাবাদে সহায়তা হয়, নদীতে নৌকা চালিয়ে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে, নদীর মাছ আমাদের পুষ্টি যোগায়.....।'
শিক্ষক খাতা দেখার সময় বিরক্ত হল, ছাত্রকে বকে দিল যে কুমিরের রচনাতে নদীর রচনা লেখা চলবেনা। শিক্ষক দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় একটা চালাকি করল, পরীক্ষায় দিল গরুর রচনা, ভাবল গরুর রচনাতে নদীর রচনা লেখা সম্ভব না, গরু তো আরো কুমিরের মত নদীতে থাকেনা।
কিন্তু ছাত্র লিখল, 'আমাদের একটা গরু আছে, আমার বাবা সে গরুকে আমাদের ছোট নদীতে গোসল করাতে নিয়ে যায়। এ নদীর ছোট ছোট বাঁক আছে, বৈশাখ মাসে নদীর জল কমে আসে, তখন আমরা হেটেই নদী পার হতে পারি, নদীর পানি থেকে আমাদের চাষাবাদে সহায়তা হয়, নদীতে নৌকা চালিয়ে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে, নদীর মাছ আমাদের পুষ্টি যোগায়.....।'
শিক্ষক রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়ল, মনে হচ্ছে ছাত্র তার সাথে গেইম খেলছে। বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে দিল বিমানের রচনা, ভাবল এইবার জব্দ করা যাবে ছেলেটাকে, বিমান নদীতে থাকেও না, গোসলও করেনা, এখন দেখা যাবে।
ছাত্র লিখল, ''বিমান আকাশে উড়ে, কিন্তু অনেক সময় বিমান দূর্ঘটনাবশত নদীতে পড়ে যায়, আমাদের ছোট নদীতেও বিমান পড়ে যেতে পারে। এ নদীর ছোট ছোট বাঁক আছে, বৈশাখ মাসে নদীর জল কমে আসে, তখন আমরা হেটেই নদী পার হতে পারি, নদীর পানি থেকে আমাদের চাষাবাদে সহায়তা হয়, নদীতে নৌকা চালিয়ে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে, নদীর মাছ আমাদের পুষ্টি যোগায়.....।''

ছোটভাই হাসল, বলল গল্পটা বেশ মজার। তার নাকি জানা ছিলনা আগে।

আম্লিকের সমর্থকদের জন্য আম্লিক হল সেই নদী। যে বিষয়েই রচনা লিখতে বলুন তারা শেষ পর্যন্ত নদীতে গিয়ে ঠেকবে। তাই আপনারা যারা এখনও আশা নিয়ে বসে আছেন আম্লিকের সমর্থকরা, বিশেষ করে বুদ্ধিজীবিরা একসময় আম্লিকের জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, আপনারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। যারা গালিবাজ আম্লিক, তারা তো আম্লিকের কোন দোষ কোনদিন স্বীকার করবেনা, আপনাকে মা-বাপ নিয়ে অশ্লীল কথা বলবে বা পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিবে। আর যারা একটু ভদ্র আম্লিগার, তারা আপনার সাথে আম্লিকের অপশাসন, জুলুম নিয়ে একমত হবে, তবে শেষে এসে বলবে, "তবুও এটা স্বীকার করতেই হবে আম্লিকের বিকল্প নাই।"
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:৩৮
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×