somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রিকেটের মরু গোলাপ-শেষ পর্ব

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সিদ্ধার্থ জানে, এ চিত্র সীমান্তের দুই পাড়ের মিথস্ক্রিয়ারই অংশ। সঙ্গে আকাশ সংস্কৃতির জোয়ার তো থাকছেই। প্রতিদিন চিকিৎসার জন্য দিল্লি ছুটে যায় অসংখ্য আফগান নর-নারী। ভারতকে তারা সত্যিকার অর্থেই ভালবাসে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট কি তাদের পাত্তা দেয় ? নাকি নাক সিঁটকাতে পারলে বাঁচে ? সিদ্ধার্থ নুরের কাছ থেকে জেনেছে, গত বছর এক মিটিংয়ে বিসিসিঅাই সভাপতি শ্রীনিবাসন তাকে সরাসরি বলেন, দশ মিনিট সময় পাবে। এরমধ্যে যা বলার বলো।
আফগান জাতীয় দল কখনো ভারতের বয়সভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গেও খেলার সুযোগ পায়নি। ভারতের অত্যধূনিক ট্রেনিং একাডেমিগুলোতে সময় কাটানো তো অনেক দুরের ব্যাপার !)....তৃতীয় পর্বের পর.....




ভারতের ঠিক বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান। দেশটিকে বলা যায়, আফগান ক্রিকেটের ‌'পালক পিতা'। আফগান ‌'এ' দল এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার পাকিস্তান সফর করেছে। লাহোরের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি মোহাম্মদ নবীদের নখদর্পনে। সেখানে তাদের মিসবাহদের মতোই অধিকার । আর্ন্তজাতিক আঙিনায় আফগানদের প্রথম প্রতিপক্ষও পাকিস্তান। যদিও এই মুহুর্তে পাকিস্তানকে খুব একটা পছন্দ করতে পারছে না আফগানরা। রাজনৈতিক বিবেচনায় তো প্রশ্নই ওঠেনা। ভূ-রাজনীতি আসলে খুবই জটিল বিষয়। আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের ভৌগলিক নৈকট্য অস্বীকার করার উপায় নেই। হামিদ কারজাই একবার বলেছিলেন-‌'আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান দুই অবিচ্ছেদ্য সহোদর।' ডুরান্ড লাইন সীমান্তের এপার-ওপারের পশতু জনগোষ্ঠিকে শুধু ভৌগলিকভাবেই আলাদা করতে পেরেছে। কিন্তু তাদের শরীর এবং মনের মিথস্ক্রিয়া থামানো সম্ভব হয়নি । পাকিস্তান এখনো আফগান মাটিতে প্রতি নিয়ত রক্তের হোলি খেলে চলা তালেবানের নিরাপদ আশ্রয়স্থল । এসব ভাবনার ফাঁকে সিদ্ধার্থের মনে ঘা মারে বেশ প্রচলিত একটি কৌতুক-‌'ভারত হলো, আফগানিস্থানে সেই প্রেমিকা, যাকে তারা কখনো স্পর্শ করতে পারেনি। তাই সুবিধা বুঝে পাকিস্তানকে বিয়ে করেছে আফগানিস্থান' !
সিদ্ধার্থ ভেবে দেখে, তার দেশের এমন বিমাতাসুলভ আচরণ আফগান ক্রিকেটের জন্য একদিক থেকে শাপেবর। দড়ির বাইরের দুনিয়াটা কত স্বার্থপর- তা বোঝার মাধ্যমে খুব ধীর গতিতে হলেও আফগান ক্রিকেটের উন্নতি কিন্তু থেমে নেই । বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে তারা। এজন্য কোন ভাতা নেই ! বোনাসের প্রশ্নই ওঠেনা। কিন্তু তারপরও চ্যালেঞ্জটা জীবিত - বাংলাদেশ এবং স্কটল্যান্ডকে অবশ্যই হারাতে হবে। এরপর অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং শ্রীলংকার মধ্য থেকে যে কোন এক 'দৈত্য'কে পরাভূত করা-তাহলেই পরবর্তি রাউন্ডে উত্তরণ। ক্রিকেটের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়াও বলা যায়।
গ্রীক পুরাণের 'ফিনিক্স' পাখির কথা মনে পড়ে যায় সিদ্ধার্থের। আফগান জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটারদের বেশিরভাগই যুদ্ধশিশু। কিন্তু দড়ির ভেতরে সবাই সমান। শুধু জয়ই তাদের একসুত্রে গেঁথে রাখতে পারে। হতাশা অাছে, বাধাও বিস্তর ; কিন্তু, আশার কথা হলো প্রত্যাশার পরিমাণটাও নেহায়েত কম নয়।
জন্মভূমি এবং পরিবারের বিরোধিতা উপেক্ষা করে এখানে কাজ করছেন কোচেরা। কাবুলে তাদের প্রাত্যহিক জীবনের রোজনামচা একেবারেই অন্যরকম অভিজ্ঞতা। ফোরহুইল ড্রাইভের পশমী সিটে গা এলিয়ে দিয়ে সিদ্ধার্থ তার ভাবনার পাখা মেলে দেয়- আচ্ছা, সে চলে যাওয়ার পরও তো সাইদ রহমানকে ক্রিকেট সর্ম্পকিত নানা প্রশ্নবানে অস্থির করা থেকে নিস্তার দেবে না ক্ষুদেরা ? লন্ডনে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও তো সামান্য ফুরসত পেলেই ইজাতের ওপর নজর রাখবেন তার চাচা ? ফরিদ উইকেট পেলে আনন্দের আতিশায্যে নিশ্চয়ই আকাশপানে কয়েক রাউন্ড একে-৪৭ এর গুলি খরচ করবে তার গর্বিত পিতা ? আগামি শীতে আরেকটু ভাল ঘরের আশায় বুক বেঁধেছেন আফসার ? এতসব আশার মাঝে কেউ কেউ তাদের পেশাদারিত্বকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। বাকিরা হয়তো ভুলে যাবে জাতিগত সহিংসতা। ঐক্যবদ্ধ হবে একই সীমানার ছায়াতলে। স্বপ্নের চারাগাছে এখন থেকেই জলসিঞ্চন করছে অনেকে- আমার সন্তানকেও যদি মোহাম্মদ নবী বানাতে পারতাম ! ব্যবসায়ীরা দিনরাত খেটে চলছেন। নবী-শেহজাদদের মুখ বেচে কিভাবে, আরও দুই পয়সা বেশি রোজগার করা যায় ? প্রশাসকদের লক্ষ্যও অভিন্ন। সত্যিই, এই বিশ্বকাপ তার বাকি সন্তানদের কাছে হতে পারে মহাগুরুত্বপুর্ণ, কিন্তু আফগানদের কাছে তা বাঁচা-মরার লড়াই। প্রাগৈতিহাসিক কালের অতিকায় হস্তী লোপ পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু ওই একই কালের ক্ষুদ্র তেলাপোকা তো আজও টিকে আছে স্বমহিমায় ? আফগানরা তেলাপোকা নয়, ফিনিক্স পাখির মতো ছাইভষ্ম থেকে উড়াল দিতে চায়। আর তাই, বিশ্বকাপে রোজ প্রত্যুষে ধূমায়িত ‌'সেঞ্চা'র সৌরভে মৌ মৌ করবে প্রতিটি আফগান কুঁড়েঘর। কান পাতলে, নান রুটির দেহ কয়েক টুকরো হওয়ার শব্দও হয়তো ভেসে আসবে ! তখন এ যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাটি কি কেবল শুধুই উষর মরুভূমি ? নাকি -'‘ইস দ্যশত ম্যেইন এক শেহের হ্যায়' ?


তথ্যসুত্র : দ্য ক্রিকেট মান্থলি অবলম্বনে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৪৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×