তাকওয়ার মূল কথা হচ্ছে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য সকল কিছু থেকে অন্তরাত্মাকে খালি করা। আর অন্তরে আল্লাহ পাকের ভয় আজমত মহত্ব ভালবাসাকে সবার উপরে স্থান করে দেয়া। এই দুই জিনিষ যে যতটুকু ধারন করতে পারবে, তার অন্তরও তত স্বচ্ছ হয়ে উঠবে। আল্লাহ পাকের নৈকট্যও তিনি ততটা লাভ করতে পারবেন। কত মানুষইতো আল্লাহকে পাওয়ার এই প্রচেষ্টায় ব্যাপৃত হয়েছেন, হচ্ছেন এবং হবেন। কিন্তু, একাধারে ৪০ বছর ধরে পবিত্র কুরআনের আয়াত ছাড়া একটি কথাও মুখ দিয়ে উচ্চারন না করার মত বিরল ঘটনাও কি বিশ্বাস করার মত! কিন্তু, বাস্তবতা তো অস্বীকার করে নিতেই হয়! এমনই তাকওয়া আর খোদাভীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন আমাদের পূর্বসূরীগন! নিশ্চয়ই এই আলোকিত উদাহরন আল্লাহর অপার রহমত আর কুদরতেরই বহিপ্রকাশ বৈ কিছু নয়। তাঁর রহমতের কি কোন সীমা পরিসীমা থাকে! কতই না মহান তিনি!
বক্ষমান ঘটনাটিতেও এরকম আল্লাহ ভীতিরই বহিপ্রকাশ ঘটেছে অনুপম উচ্চতায়, অন্তহীন সাধনায়।
ইমাম আযম হযরত আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহির অন্যতম ছাত্র হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন: আমি একবার হজ্বে গিয়ে মরুভূমির ভেতরে রাস্তা অতিক্রম করতে গিয়ে এক স্থানে একাকি এক বৃদ্ধা মহিলাকে বসা দেখলাম। বিজন মরুপ্রান্তরে তাকে একাকি এভাবে দেখে আমার মনে হল, তিনি বিপদগ্রস্ত কেউ হবেন। তার সাথে আমার কথোকথন ছিল বিস্ময়কর। তিনি আমার প্রত্যেকটি কথার জবাব কুরআনের আয়াত দ্বারা দিয়েছিলেন। কথোপকথন বিস্তারিত তুলে ধরা হল:
অধিকাংশ ইসলামী স্কলারগনের মতে এই মহীয়সী নারীর নাম 'রাবিয়্যাহ' কিংবা 'উম্মে ইয়াহইয়া'।
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ.: ''আসসালামু আলাইকুম।''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া): ''سَلَامٌ قَوْلًا مِن رَّبٍّ رَّحِيمٍ'' অর্থ: ''দয়াবান রবের পক্ষ থেকে সালাম।'' (সূরাহ ইয়াসিন, ৫৮ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি বললাম: ''আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন। আপনি এখানে বসে কী করছেন?''
জবাবে রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন সূরাহ কাহাফের এই আয়াত: ''مَن يُضْلِلِ اللّهُ فَلاَ هَادِيَ لَهُ وَيَذَرُهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ'' অর্থ: ''আল্লাহ পাক যাকে পথহারা করেন, তাকে পথ দেখানোর কেউ থাকে না।'' (সূরাহ আ'রাফ, ১৮৬ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি বুঝতে পারলাম মহিলাটি পথ হারিয়ে ফেলেছে। তাই জিজ্ঞেস করলাম: ''কোথায় যেতে চান আপনি?''
উত্তরে রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ'' অর্থ: ''তিনি একটি পবিত্র সত্তা যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলায় মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকছায় ভ্রমন করিয়েছেন।'' (সূরাহ ইসরা, ১ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি বুঝতে পারলাম মহিলাটি হজ্জের কাজ শেষ করেছেন। এখন তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস যেতে চান। জিজ্ঞেস করলাম: ''কতক্ষন এখানে বসে আছেন?''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) উত্তরে তিলাওয়াত করলেন: ''ثَلَاثَ لَيَالٍ سَوِيًّا'' অর্থ: ''পূর্ন তিনটি রাত ধরে।'' (সূরাহ মারইয়াম, ১০ নং আয়াতাংশ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. জিজ্ঞেস করলেন: ''আপনার কাছে আহারের কিছু দেখছি না। কি খেয়ে কাটাচ্ছেন?''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''وَالَّذِي هُوَ يُطْعِمُنِي وَيَسْقِينِ'' অর্থ: ''তিনি আমাকে খাইয়ে থাকেন এবং তিনিই আমাকে পান করিয়ে থাকেন।'' (সূরাহ শুআ'রা, ৭৯ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. জিজ্ঞেস করলেন: ''কিসের দ্বারা অযু করে থাকেন?''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدًا طَيِّبًا'' অর্থ: ''পাক মাটি দিয়ে তখন তায়াম্মুম করে নিও।'' (সূরাহ নিসা, ৪৩ আয়াতাংশ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বললেন: ''আমার কাছে কিছু খাবার আছে। খাবেন?''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''রাত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে (অর্থাত, সূর্যাস্তের পরে ইফতার করে) রোযাকে পূর্ন কর।'' (সূরাহ বাক্কারাহ, ৮৭ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বললেন: ''কিন্তু এটাতো রমজান মাস নয়।''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ'' অর্থ: ''যে ব্যক্তি সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে নফল ইবাদত করে থাকে আল্লাহ তার কদর করে থাকেন এবং তিনি সব জানেন'' (সূরাহ বাক্কারাহ, ১৫৮ আয়াতাংশ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বললেন: ''মুসাফির অবস্থায় ফরয রোযাও তো না রাখা জায়েজ আছে।''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''وَأَن تَصُومُواْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ'' অর্থ: ''(কত যে সাওয়াব) তোমরা যদি জানতে তাহলে রোজা রাখাটাই ভাল মনে করতে।'' (সূরাহ বাক্কারাহ, ১৮৪ আয়াতাংশ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. জিজ্ঞেস করলেন: ''আপনি আমার মত করে কথা বলছেন না কেন?''
জবাবে রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ'' অর্থ: ''মানুষ যে কথাটিই বলছে খবরদারীর জন্য তার কাছে একজন ফিরিশতা প্রস্তুত আছে।'' (সূরাহ ক্কাফ, ১৮ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. জিজ্ঞেস করলেন: ''আপনি কোন গোত্রের লোক?''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ'' অর্থ: ''যে বিষয়ে জানতে নেই, সে বিষয়ের পেছনে লেগো না।'' (সূরাহ ইসরা, ৩৬ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি আরজ করলাম: ''ভুল হয়ে গেছে। আমি মাফ চাচ্ছি।''
উত্তরে রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''قَالَ لاَ تَثْرَيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ'' অর্থ: ''আজ তোমাদের প্রতি কোন তিরষ্কার নেই। আল্লাহ তোমাদের মাফ করে দিন।'' (সূরাহ ইউসূফ, ৯২ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি বললাম: ''যদি চান তবে আমার উটনির পিঠে সওয়ার হয়ে আপনার দলের লোকের কাছে যেতে পারেন''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''وَمَا تَفْعَلُواْ مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللّهُ'' অর্থ: ''তোমরা যা কিছু ভাল কাজ কর আল্লাহ তা জেনে থাকেন।'' (সূরাহ বাক্কারাহ, ১৯৭ আয়াতাংশ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, এই আয়াত শোনার পরে আমি আমার উটনিকে বসালাম। কিন্তু মহিলা তার পিঠে সওয়ার হওয়ার আগে বললেন: ''قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ'' অর্থ: ''মুমিন ব্যক্তিদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিচের দিকে করে রাখে'' (সূরাহ নূর, ৩০ আয়াতাংশ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি আমার দৃষ্টিকে নিম্নগামী করে তাকে বললাম: ''এবার সওয়ার হোন।''
মহিলা সওয়ার হতে গেলেন। কিন্তু, উটনি ভয় পেয়ে পালাতে উদ্যত হলো। ধস্তাধস্তির ফলে বৃদ্ধা মহিলার কাপড় ছিড়ে গেল। তখন রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ'' অর্থ: ''যত মুছিবত এসে থাকে তা তোমাদের আমলের কারনে।'' (সূরাহ শুআ'রা, ৩০ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি তাকে বললাম: ''একটু অপেক্ষা করুন। উটনি বেঁধে দিচ্ছি। তারপরে সওয়ার হোন।''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) তিলাওয়াত করলেন: ''فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ'' অর্থ: ''এই সব বিষয়ের সমাধান আমি সুলাইমান (আ কে শিখিয়ে দিয়েছি।'' (সূরাহ আম্বিয়া, ৭৯ আয়াতাংশ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি উটনিকে ভাল করে বাঁধলাম। তারপর তাকে বললাম: ''এবার সওয়ার হোন।''
তখন রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) উটের পিঠে সওয়ার হয়ে এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন: ''سُبْحانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ'' অর্থ: ''পবিত্র সেই সত্তা যিনি এটাকে আমাদের আয়ত্তাধীন করে দিয়েছেন। আমাদের ক্ষমতা ছিল না তাকে আয়ত্ত করার। আর আমরা আমাদের পরওয়ারদেগারের কাছে নি:সন্দেহে ফিরে যাব।'' (সূরাহ যুখরূফ, ১৩, ১৪ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি উটনির লাগাম ধরে হাটতে লাগলাম। খুব জোরে হাটছিলাম আর চিতকার করে করে উটনি তাড়াচ্ছিলাম। এই দেখে তিনি তিলাওয়াত করলেন: ''وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ'' অর্থ: ''স্বাভাবিক পন্থায় হাঁট আর তোমার স্বর অবনত কর।'' (সূরাহ লুক্কমান, ১৯ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, এবার আমি আস্তে আস্তে হাটতে লাগলাম এবং কবিতার কয়েকটি ছন্দ গুন গুন করে গাইতে লাগলাম। এই দেখে তিনি তিলাওয়াত করলেন: ''فَاقْرَؤُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ'' অর্থ: ''কুরআন থেকে যে অংশ সহজ মনে হয় তাই পড়'' (সূরাহ মুজ্জাম্মিল, ২০ আয়াতাংশ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি তাকে বললাম: ''আল্লাহ পাক সত্যি আপনাকে নেককার মহিলা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।''
তখন রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন: ''وَمَا يَذَّكَّرُ إِلاَّ أُوْلُواْ الألْبَابِ'' অর্থ: ''যাদের জ্ঞান আছে তারাই শুধু শিক্ষা গ্রহন করে থাকে।'' (সূরাহ আলে ইমরান, ৭ আয়াতাংশ)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, কিছুক্ষন চুপচাপ চলার পর তাকে জিজ্ঞেস করলাম: ''আপনার স্বামী আছে?''
তখন রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন: ''يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَسْأَلُواْ عَنْ أَشْيَاء إِن تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ'' অর্থ: ''তোমরা এমন বিষয় জিজ্ঞেস করো না, যা প্রকাশ পেলে তোমাদের কাছে খারাপ লাগতে পারে।'' (সূরাহ মায়িদাহ, ১০১ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, এবার আমি পুরোপুরি চুপ হয়ে গেলাম। যতক্ষন কাফেলা না পাওয়া গেল আমি তার সাথে কোন কথা বললাম না। কাফেলা যখন সামনে দেখতে পেলাম তখন তাকে বললাম: ''এই যে সামনে কাফেলা এসে গেছে। এই কাফেলায় আপনার কে আছে?''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন: ''الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا'' অর্থ: ''সম্পদ এবং সন্তান এসবই দুনিয়ার জীবনের বিলাসিতা।'' (সূরাহ কাহফ, ৪৬ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি বুঝতে পারলাম এই কাফেলায় তার ছেলে আছে। জিজ্ঞেস করলাম: ''কি কাজ করে সে এই কাফেলায়?''
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন: ''وَعَلامَاتٍ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ'' অর্থ: ''অনেক চিহ্ন আছে। আর নক্ষত্রের সাহা্য্যে তারা পথের নির্দেশ গ্রহন করে থাকে।'' (সূরাহ নহল, ১৬ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, বুঝতে পারলাম তার ছেলে এই কাফেলার পথ নির্দেশক 'রাহবর'। মহিলাকে নিয়ে কাফেলার তাবুতে গেলাম। সেখানে গিয়ে বললাম: ''এইবার বলুন, এখানে আপনার কে আছে?"
রাবিয়্যাহ (উম্মে ইয়াহইয়া) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন:
'' وَاتَّخَذَ اللّهُ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلاً'' অর্থ: ''এবং আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আ কে দোস্ত হিসেবে গ্রহন করেছেন।'' (সূরাহ নিসা, ১২৫ আয়াত)
''كَلَّمَ اللّهُ مُوسَى تَكْلِيمًا'' অর্থ: ''আর মূসা (আ এর সাথে আল্লাহ পাক কথা বলেছেন।'' (সূরাহ নিসা, ১৬৪ আয়াত)
''يَا يَحْيَى خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ'' অর্থ: ''হে ইয়াহইয়া! শক্ত করে কিতাব ধারন কর।'' (সূরাহ মারইয়াম, ১২ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, এই আয়াতগুলো শোনার পরে আমি চিতকার করে ডাকতে লাগলাম: ''হে ইবরাহীম! হে মূসা!
হে ইয়াহইয়া!"
কিছুক্ষন পর চাঁদের মত সুন্দর কয়েকজন নওজোয়ান আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমরা যখন স্থির হয়ে আসন গ্রহন করলাম তখন মহিলা তার ছেলেদের বললেন: ''فَابْعَثُوا أَحَدَكُم بِوَرِقِكُمْ هَذِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ فَلْيَنظُرْ أَيُّهَا أَزْكَى طَعَامًا فَلْيَأْتِكُم بِرِزْقٍ مِّنْهُ'' অর্থ: ''এই টাকা দিয়ে তোমাদের মধ্যে হতে কাউকে শহরে পাঠাও। সে অনুসন্ধান করে দেখবে কোন খাবারটি অধিক পবিত্র। তখন সে তোমাদের জন্য সেখান থেকে কিছু খাবার নিয়ে আসবে।'' (সূরাহ কাহফ, ১৯ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, এই আয়াত শুনে তাদের মধ্যে থেকে একটি ছেলে উঠে গেল এবং কিছুক্ষন পরে খাবার নিয়ে আসলো। খাবার আমার সামনে যখন রাখা হলো তখন মহিলাটি বললো: ''كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الْأَيَّامِ الْخَالِيَةِ'' অর্থ: ''সানন্দে খাও এবং পান কর। এগুলো তোমাদের সেই কাজের বিনিময় যে কাজ তোমরা ইতিপূর্বে করে এসেছো।" (সূরাহ আল হাক্কাহ, ২৪ আয়াত)
আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. বলেন, আমি আর থাকতে পারলাম না। ছেলেদের বললাম: "এই খাবার আমার জন্য হালাল হবে না যতক্ষন ন তোমরা এই মহিলার রহস্য বলছো।''
ছেলেরা বললো: ''চল্লিশ বছর যাবত আমাদের মায়ের এই অবস্থা। এই চল্লিশ বছরে তিনি কুরআন পাকের আয়াত ছাড়া একটি বাক্যও বলেন নি। এই জন্য এই নিয়ম তিনি পালন করছেন যেন জিহবা থেকে কোন অপ্রয়োজনীয় কথা বের না হয়ে পড়ে। তাহলে আল্লাহ নারাজ হবেন।''
আমি বললাম: ''এসব আল্লাহ পাকের অনুগ্রহের নিআমত। যাকে ই্চ্ছা প্রদান করেন। আর আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহশীল মহান।'' (সূরাহ আল হাদীদ, ২১ আয়াত)
সংগ্রহ: আল-আবশেহী (র। আল মুসতাতারফু ফি কুল্লি ফান। মুসতাতারফ ১ম খন্ড ৫৬ ও ৫৭ পৃষ্ঠা। মিশর ১৩৬৮ হিজরী।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:২৬