মালিকের মজলিশে তোমার আসন
জানিনা জান্নাতে ঢালে কীরূপ সুষমা
মুনকার নকীরের কোন্ আচরন
ঝড়িয়েছে মনিবের দয়ার উপমা
তোমার জিসিমে থাকা আরবের খাক
মিশে গ্যাছে বাংলার জমাট জমিনে
ফলকে আকীর্ন নয়, তবু ওই পাক
মাটির ঠিকানা লোকে নিতে পারে চিনে।
আউলিয়া-তাজ তুমি হে প্রিয় পিতাজী!
উড়িয়েছো আজীবন দ্বীনের নিশান
অফুরান দিয়ে গ্যাছো নেয়ামতরাজী!
এখনো মাতাল করো স্মৃতির ঈষান!
প্রভূর বাগিচা আজ ঠিকানা তোমার
ইলাহীর দয়া ঝড়ে বে-হদ-শুমার।
নোট: ২০১৫ ইং সালের ০৮ মার্চ, ২৪ ফাল্গুন ১৪২১ বাংলা, ১৭ জমাদিউল উলা ১৪৩৬ হিজরি রোজ রোববার দিবাগত রাত ১:০০ ঘটিকায় মহান প্রভূর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান আমাদের নয়নমনি প্রিয়তম আব্বা। তিনি ছিলেন আমাদের মহান অভিভাবক, সবচে' বড় বন্ধু, পৃথিবীতে সবচে' আপন, নি:স্বার্থ আত্মার আত্মীয়। এ দিনটিতে আমাদের মাথার ওপর থেকে সরে যায় নিরাপদ আশ্রয়ের শেষ অবলম্বনটুকু। কোমলমতি প্রিয়তম মায়ের স্নেহের আচল খসে পড়েছে সেই কবে। ১৯ মার্চ ১৯৯৫ ইং, ০৫ চৈত্র ১৪০১ বাংলা, ১৮ শাওয়াল ১৪১৫ হিজরি রোজ রোববার বেলা ১২:০০ টায়। মা চলে যাওয়ার পরে কালের পরিক্রমায় পেরিয়ে গেল প্রায় ২০ টি বছর। এই ২০ টি বছর পিতৃস্নেহের পাশাপাশি বাড়তি তিনি আমাদের দিয়েছেন মাতৃস্নেহও। প্রায় শতবর্ষী প্রিয় আব্বা ঘূনাক্ষরেও পারতপক্ষে তাঁর অসহায়ত্ব, শারীরিক দুর্বলতা আমাদের বুঝতে দেননি। মা চলে যাওয়ার পরে বৃদ্ধ বয়সে আব্বার সেবা শুশ্রুষার কথা চিন্তা করে, বার বার অনুরোধ করা হলেও দ্বিতীয় বিয়েতে তিনি রাজী হননি কোনভাবেই। আমাদের সাত ভাই-বোনকে আগলে রেখেছেন যুগপথ মাতৃ এবং পিতৃস্নেহে। হয়তো আমাদের উপলব্ধিতে আনতে দিতে চাননি, মায়ের অভাব। পৃথিবীতে তিনি ছিলেন সম্মানের পাত্র। সকলের শ্রদ্ধাভাজন। সকলের প্রতি আন্তরিক। প্রতিবেশির প্রতি মহানুভব। আত্মীয়দের প্রতি অনুরাগী। তাঁর প্রতি মহান মালিকও একই রকম দয়ার আচরন করুন। আমীন।
আব্বার বেশিরভাগ সময় কাটতো ইবাদত বন্দেগীতে। ফজরের পূর্বে উঠে জায়নামাজে পেতাম তাকে। ভেজা চোখে তার সকাতর প্রার্থনা ঘরের ভেতর গুনগুন গুঞ্জরন তৈরি করতো। নফল নামাজ, তিলাওয়াতের নিয়মিত অভ্যাসের ব্যত্যয় ঘটতো না কখনওই। জিকির এবং তিলাওয়াতের প্রতি ছিল আলাদা ঝোঁক। বড় বড় সূরাহ তাঁর মুখস্ত ছিল। প্রতিটি সুন্নতের উপর গুরুত্ব দিয়ে আমল করার প্রতি যত্নবান ছিলেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
আসলে আমি আব্বাকে নিয়ে বেশি ভাবতে পারি না। তাঁর কবরের পাশে দাড়ালে আমি অধীর অস্থির হয়ে যাই। বাধভাঙ্গা অশ্রুর জোয়ার দমিয়ে রাখতে পারি না। তাঁর স্মৃতি ভাবলে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আল্লাহ পাক তাঁর অবস্থানকে জান্নাতে উঁচু করুন। আমার স্নেহময়ী মায়ের প্রতিও। বাবা-মায়ের জন্য যাদের হৃদয় কাঁদে তাদের মাতা পিতার প্রতিও। সবশেষে আসুন, বিগলিত হৃদয়ে আল্লাহ পাকের শিখিয়ে দেয়া কথামালায় দোআ করি প্রিয়তম বাবা মায়ের জন্য- 'রব্বিরহামহুমা কামা রব্বাইয়ানী ছগীরা'।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:০৮