আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে থলের বিড়াল! অনেক নয় ছয় করেও শেষ রক্ষা বুঝি আর হল না! বন্ধু রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিদের অনৈতিক কাজকে ধামাচাপা দেয়ার অনেক কসরত করেও শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ট্রাম্প প্রশাসন সত্য প্রকাশ না করে বুঝি আর পারলেন না! যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানই দেশটির রাজতন্ত্র-বিরোধী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অবশেষে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে বলে জানিয়েছে, আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। আমেরিকার পূর্বেকার অবস্থান থেকে সরে এসে সত্য উচ্চারন করাটা ছিল বড় একটি ব্যাপার। খাশোগি নির্মমভাবে খুন এবং খুনের পরে তার লাশ গুম করার পর থেকে আমেরিকা সৌদি রাজপরিবারের পক্ষে ব্যাপক সাফাই গেয়ে এসেছে। গত মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলস্থ সৌদি কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন খাশোগি।
আমেরিকার প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট গতকাল ১৬.১১.২০১৮ সংশ্লিষ্ট অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সিআইএ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে মোহাম্মাদ বিন সালমানই খাশোগিকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন যদি সৌদি আরবের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগে আমেরিকায় বসবাসরত খাশোগি ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত কলাম লিখতেন।
পত্রিকাটি আরো জানিয়েছে, সিআইএ যেসব তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের ছোট ভাই ও আমেরিকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের সঙ্গে খাশোগির টেলিফোনালাপ। ওই ফোনালাপে খালিদ খাশোগিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গিয়ে সৌদি কনস্যুলেট থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করতে বলেন এবং এই নিশ্চয়তা দেন যে, তার কোনো ক্ষতি হবে না।
কিন্তু খাশোগি সেখানে গিয়ে নিহত হন এবং এর দু’দিন পরই খালিদ বিন সালমান আমেরিকা থেকে তড়িঘড়ি করে সৌদি আরবে ফিরে যান। তাকে আর ওয়াশিংটনে ফেরত পাঠানো হয়নি বরং অন্য কাউকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট আরো জানিয়েছে, খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পরপরই ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট থেকে করা একটি ফোনকলও আমলে নিয়েছে সিআইএ। ওই ফোনকলে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ঘাতক দলের সদস্য মাহের মুতরেব জানান, অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের কাছে ১১ হাজার কোটি ডলারের সমরাস্ত্র বিক্রির স্বার্থে খাশোগি হত্যায় সৌদি যুবরাজের হাত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে এতদিন যেসব বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন সিআইএ’র এই মূল্যায়নের পর তা আর সম্ভব হবে না। আমেরিকার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে খাশোগি হত্যার জন্য সৌদি যুবরাজকে দায়ী করা হয়নি।
যুবরাজের নাম খাসোগি হত্যাকান্ডের প্রথম থেকেই আলোচিত। এত দিন পরে সিআইএ'র 'স্থির সিদ্ধান্ত' সে আলোচনার পাল্লাকে আরও কিছুটা ভারী করে তুললো। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে পর্দার অন্তরালে মঞ্চায়িত নাটকের বাকি দৃশ্যগুলোও উম্মোচিত হোক। বিচারের আওতায় আনা হোক খাশোগি হত্যাকান্ডে জড়িত সকল অপরাধীকে। যুবরাজ বলে কারও জন্য কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। পার্সটুডে, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দৈনিক নয়াদিগন্ত অবলম্বনে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:৫২