মসজিদুল হারামের সম্মানিত ইমাম ও খতিব সালেহ বিন মুহাম্মদ ইবরাহীম আ-লে ত্বা-লিব (صالح بن محمد إبراهيم آل طالب) আজ সউদি রাজপরিবারের শ্যেন দৃষ্টিতে পড়ে অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে। তার কোনো অপরাধ ছিল না। অপরাধ একটিই। তিনি কিছু সত্য সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন। তাতে মুখোশ খুলে যায় শাসকবর্গের অপকর্মের। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হন শাসক শ্রেনি। তাকে কথা বলার অপরাধে, সত্য প্রকাশের কারনে জেলে পুরে রাখা হয়। ২০১৮ ইং সালের হজের প্রাক্কালে গ্রেফতার হয়ে অদ্যাবধি তিনি কারাগারে রয়েছেন। তাঁর সেই ঐতিহাসিক খুতবাহ, যার কারণে আজ তিনি অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে। প্রিয় বাইতুল্লাহর প্রিয় ঈমাম ও খতিব ...! সত্য কথা বলার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে যুগের এই সাহসী বীর আলেমে দ্বীনকে। আসুন, দেখে নিই তাঁর বিখ্যাত সেই খুতবাহ, জেনে নিই কী এমন কথা তিনি বলেছিলেন তাঁর সেই খুতবায়, যার ফলে তাকে করা হল কারাবন্দী।
সালেহ বিন মুহাম্মদ ইবরাহীম আ-লে ত্বা-লিব এর পরিচয়
সালেহ বিন মুহাম্মদ ইবরাহীম আ-লে ত্বা-লিব এর পূর্বেও বেশ ক'জন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সউদি সরকারের রোষানলে পড়ে কারারুদ্ধ হয়েছেন। রাজ পরিবারের স্বার্থের বিপক্ষে যায় এমন কোনো কথা বললে আর রক্ষা নেই। তা যত বড় নীতি কথাই হোক। তা কুরআন হাদিসের আলোকে যত সুন্দর কথাই হয়ে থাক না কেন। তাকে নিশ্চিত কঠিন পরিনতি ভোগ করতে হবে, এটাই বর্তমান শাসকবর্গের অলিখিত নিয়ম। এই নিয়মেরই সর্বশেষ বলি সম্মানিত খতিব সালেহ বিন মুহাম্মদ ইবরাহীম আ-লে ত্বা-লিব। তিনি একই সাথে কা'বা শরীফের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ৷পাশাপাশি তিনি কাজির দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিলেন।
সম্মানিত খতিব তাঁর প্রদত্ব বয়ানে অশ্লীলতা ও ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ বস্তুগুলো থেকে বিরত থাকা যে ওয়াজিব তার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। যারা বেহায়াপনার প্রচার করছে তাদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করার আদেশ করেন। খুতবাহ দানের পরপরই তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় ৷তিনি বলেনঃ
খুতবাহর বঙ্গানুবাদ:
"মুনাফিকরা তাদের মঞ্চে বলে- তোমরা কুরআনের মজলিসকে বর্জন করো৷ আমরা আমাদের মসজিদের মিম্বার থেকে স্পষ্ট ভাষায় তাদেরকে বলছি, হে মুসলমানরা তোমরা মুনাফেক ও বেঈমানদের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো৷ তোমরা আল্লাহর নাফরমান এবং যারা
এই সমাজের মধ্যে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাকে চালু করছে তাদেরকে বয়কট করো ৷
আমরা ঐ কথাই বলবো যা আমাদের পূর্বসূরী বড় বড় উলামায়ে কিরামগণ বলে গিয়েছেন। তাঁরা বলেছেনঃ তোমরা যে কোনো ধরনের গুনাহের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো৷এবং ঐ সমস্ত মানুষদের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো, যাদের কর্মপদ্ধতি সন্দেহযুক্ত, এবং যারা নারীদেরকে রাস্তায় বের করে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুমতি দেয়, যারা নারীদেরকে উলঙ্গপনার দিকে আহ্বান করে, যারা নারী-পুরুষের অবাধে মেলামেশার দিকে উৎসাহিত করে বর্তমান সমাজে ফাসাদ শুরু করেছে, তাদেরকে বয়কট করো৷
যারা নেশাযুক্ত পানীয়কে বৈধতা দান করে তাদেরকে বয়কট করুন৷আপনারা পরিপূর্ণভাবে গান-বাজনা এবং কমেডি, কৌতুক ও সিনেমার অনুষ্ঠানকে বয়কট করুন৷
যদিও যারা এই সিনেমা ও কমেডি চালু করেছে তারা এটাকে নিছক বিনোদন মনে করে৷ অথচ, এটা কেবল বিনোদন নয় বরং এই সিনেমার অনুমোদন দ্বারা একমাত্র উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা চিন্তা- চেতনাকে লালন করা এবং সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পশ্চিমা আদর্শ ও নীতিকে ঢুকিয়ে দেওয়া৷
যে নাচগানের এবং কমেডি নাটক সিনেমার অনুমোদন একেবারেই ইসলামে নেই! ইসলামি শরীয়ায় এ কাজ হারাম! ইসলাম এই কাজের অনুমোদন প্রদান করে না!
তারা অশ্লীলতাকে বিনোদন নামের পোশাক পরিয়ে এবং বেহায়াপনাকে মুক্তচিন্তা-চেতনার চাদরে মুড়িয়ে উপস্থাপন করছে৷ অথচ সেগুলো যুবক যুবতীদেরকে নাচ-গান, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও অবাধ মেলামেশার দিকে ধাবিত করার মাধ্যম। আর সেটাই যেন তথাকথিত এই বিনোদনের আসল উদ্দেশ্য!
তাদের এই অসৎ উদ্যোগ পবিত্র এই ভূমির জন্য লজ্জাজনক বিষয় এবং এই পবিত্র ভূমিকে লাঞ্চিত করার শামিল, তাদের এই অসৎ উদ্যেগ ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ সংকেত।
এমন এক সময় আসবে যখন এই বেহায়াপনাই 'কুদওয়াতুন লিশ্বাবাব' তথা যুবকদের উত্তম মডেল হিসাবে স্থান পেয়ে যাবে৷
ওহে সীমাহীন উদ্ধতগন! তোমরা জনগণের ধন সম্পদকে অন্যায়ভাবে, অহেতুক পাপ কাজে খরচ করছো। এতে না আছে জনগণের কোন রকম উপকারের ছিটাফোঁটা! না আছে জনগণের কল্যাণ!
হে বিপদগামীগন! যদি তোমরা জনগণের পয়সাকে পাপকাজে খরচ করা বন্ধ না করো, তাহলে একদিন আসবে যেদিন এই অপরাধ ও
পাপ তোমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে এবং তোমাদের জন্য বড়ই আফসোসের কারণ হবে। আর ফলে তোমরা পরাজয় বরণ করবে৷
হ্যাঁ, অচিরেই তোমাদেরকে শক্তি এবং আদর্শের পরাজয় হবে৷
তোমাদেরকে তারাই পরাজিত করবে যারা সর্বদায়ই দ্বীনের উপর অটল থাকে। তারাই একদিন তোমাদের বিনোদন নামক বেহায়পানা ও অশ্লীলতাকে ময়লা আবর্জনার ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করবে, তাদের নিজেদের উত্তম আদর্শ এবং সঠিক নিয়্যাত ও ইসলামি আকিদাহের মাধ্যমে৷
অচিরেই তোমাদের অশ্লীলতার মঞ্চকে কুরআনের ধারকবাহকগণ আদর্শের যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করবে৷
অচিরেই তোমাদেরকে পরাজিত করবে ঐ 'আল্লাহু আকবার' ধ্বনির আওয়াজ যা দিবারাত্রি পাঁচ বার কানে ভেসে আসে, এবং আমাদের অন্তরে সেই পবিত্র আওয়াজের বাতাস প্রবাহিত হয় ও চক্ষু শীতল হয়৷"
সৌদি আরবের জালিম প্রশাসকদের কব্জা থেকে মুক্ত হয়ে স্বপদে ফিরে আসুন প্রিয় খতিব
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা যুগের সাহসী কন্ঠস্বর, বাতিলের আতঙ্ক এই আলেমে দ্বীনকে হিফাযত করুন। তাঁর নি:শর্ত মুক্তি চাই। শাসক শ্রেনির অত্যাচার থেকে তাকে নিষ্কৃতিলাভ করে তিনি ফিরে আসুন তাঁর স্ব-পদে। কারান্তরিন এই আলেমে দ্বীনকে আল্লাহ পাক তাঁর খেদমতে পুনর্বহাল করুন।
ছবি পরিচিতি ও কৃতজ্ঞতা: বাইতুল্লাহ শরীফের বাইরের প্রাঙ্গনের ছবি। গুগল থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৮:৫১