somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

বিস্ময়কর এবং বৈচিত্রপূর্ণ রহস্যের আধার ডেড সি বা মৃত সাগর

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'ডেড সি’ বা 'মৃত সাগর'!

'ডেড সি’ বা 'মৃত সাগর'! বাবা! কি ভয়ঙ্কর নাম! নাম শুনলেই কেমন গা ছমছম করা এক অনুভূতি জেগে ওঠে! মনের ভেতর ছবি ভেসে ওঠে, মৃত লোকদের বিশাল এক সাগরের, যেখানে ভাসছে লাশ আর লাশ! আসলেও কি তাই? আসলে তা নয় মোটেই। 'ডেড সি’ বা 'মৃত সাগর' মোটেও ভয়ংকর কোনো স্থান নয়; বরং ভীষণ সুন্দর, ভ্রমণে যাওয়ার জন্য, প্রাচীন আমলের বিরল নিদর্শন দেখার জন্য চমৎকার একটি স্থান এই 'ডেড সি’ বা 'মৃত সাগর'। এই 'ডেড সি’ বা 'মৃত সাগরে'র পানি এতটাই ঘন যে ওই পানিতে কেউ চাইলে শুয়েও থাকতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ইচ্ছে করলে শুয়ে শুয়ে বইও পড়া সম্ভব এই সাগরের পানিতে।

'ডেড সি’ বা 'মৃত সাগর' নাম কেন হলো?

'ডেড সি’ বা 'মৃত সাগর' নাম হলেও এটা কিন্তু আসলে কোনো ‘সি’ বা 'সাগর' নয়। নাম ‘মৃত সাগর’ হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি একটি হ্রদ মাত্র। আয়তনে অনেক বড় বলে এর নামের সাথে সাগর শব্দটি যুক্ত হয়ে গেছে। তবে এটি মিঠাপানির কোনো হ্রদ নয়, এর পানি বরং ভীষণ লবণাক্ত। সাগরের পানির লবণাক্ততার কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি। সাগরের পানির লবনাক্ততা এখানকার তুলনায় কিছুই নয়। এখানকার পানির লবণাক্ততা সাগরের পানির তুলনায় সাড়ে আট গুণ বেশি! এত নোনতা পানিতে না বাঁচতে পারে কোনো মাছ, না বাঁচতে পারে সাগরের নিচের অন্য কোনো গাছ। ভাবুন এবার!

এই বিশাল হ্রদে তাই কোনো মাছই নেই। নেই পানির নিচের কোনো গাছপালাও। আর সে কারণেই এই হ্রদকে বলা হয় ‘ডেড সি’ বা ‘মৃত সাগর’।

তবে মাছ নেই বলে যে এই হ্রদে কোনো জীবন্ত প্রাণীই নেই, তা কিন্তু নয়। এই হ্রদে বাস করে নানা রকমের ব্যাকটেরিয়া আর ছত্রাক। ব্যস, এছাড়া আর কিচ্ছুটি নেই।

ডেড সি বা মৃত সাগরের পানি কিন্তু মোটেও বিষাক্ত নয়। অনেকের ধারণা, এই হ্রদের পানি নির্ঘাত বিষাক্ত। নইলে এতে কোনো মাছ বাঁচে না কেন? আসলে এখানে কোনো প্রাণী যে নেই, তা স্রেফ এখানকার পানির লবণাক্ততার কারণে, অন্য কোনো কারণে নয়।

এই ডেড সি-র পুরো অঞ্চলটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এমনকি জানা যায়, এখানকার আবহাওয়া অনেক রোগ সারিয়ে তোলার জন্য তো ভালোই, এই হ্রদের তীর সূর্যস্নান করার জন্যও যাকে বলে একেবারে মোক্ষম জায়গা। তাই জায়গাটি দিন দিন পর্যটকদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে যাঁরা তাদের স্বাস্থের উন্নতির চিন্তায় সুন্দর আবহাওয়া, সুন্দর পরিবেশসমৃদ্ধ বিভিন্ন স্পট খুঁজে বেড়ান, তাঁদের জন্য এটা এক টুকরো স্বর্গ সদৃশ। ইসরায়েল, পশ্চিমতীর ও জর্ডানের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত এই ডেড সি।



ডেড সী/ মৃত সাগরের রহস্য:

এখন থেকে প্রায় ৩১০০ বছর পূর্বে বর্তমান জর্দান ও ইসরাইলের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ডেড সী বা মৃত সাগরের স্থানটিতেই ছিল সাদূম গোত্রের আবাসস্থল 'সদম ও গোমরা' নগর। এই নগরের অধিবাসীরা ব্যাপক সমকামিতায় জড়িয়ে পড়লে মহান আল্লাহ তাদের সংশোধনের জন্য তাদের নিকট লুত আলাইহিসসালামকে নবী হিসেবে পাঠান। কিন্তু সাদূম জাতি লুত আলাইহিসসালাম এর আহবানে সাড়া না দিয়ে তাদের অভ্যাস বশত: নিকৃষ্ট কু-কর্ম সমকামিতা চালিয়ে যেতে থাকে। আল্লাহর নবী লুত আলাইহিসসালাম নানাভাবে তাদের বুঝিয়েও যখন চূড়ান্তভাবে হতাশ হন, কোনো কিছুতেই যখন তারা তাদের মন্দ স্বভাব থেকে বিরত হচ্ছিল না, তখন মহান আল্লাহ তাআ'লা তাদের উপর আসমান থেকে অগ্নীকুন্ড নিক্ষেপ করেন এবং তাদের নগরকে উল্টে দিয়ে তাদেরসহ গোটা জনপদটিকে ধ্বংস করে দেন। হাজারো প্রাণের বিচরণ এবং কর্মচঞ্চলতায় মুখর আস্ত একটি জনপদ মুহূর্তেই আল্লাহ তাআ'লার গজবে পরিণত হয়ে যায় বৃহত আকৃতির এক হ্রদে। পরবর্তীতে এই হ্রদটিকেই 'ডেড সী' বা 'মৃত সাগর' নামে ডাকা শুরু হয় এর পানির ব্যাপক লবনাক্ততার কারণে। এ সাগরে আজো পর্যন্ত কোন মাছ বা জলজ প্রাণী বাঁচতে পারেনা। কেবল কিছু ব্যক্টরিয়া ও ছত্রাক জাতীয় অনুজীব পাওয়া যায় ঐ সাগরে। এ জন্যই একে মৃত সাগর বলে। পৃথিবীর সকল খাল, বিল, পুকুর, নদী, সাগরের পানিতে মানুষ সহজে ডুবে গেলেও ডেড সির পানিতে কোন মানুষ চাইলেও ডুবতে পারেনা। পৃথিবীর মানুষের জন্য নিদর্শন হিসেবে আল্লাহ তায়ালা আজও রেখে দিয়েছেন এই ডেড সী বা মৃত সাগর।

এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-

وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّن الْعَالَمِينَ

এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? (সূরাহ আল আ'রাফ, আয়াত: ৮০)

We also (sent) Lut: He said to his people: "Do ye commit lewdness such as no people in creation (ever) committed before you?

إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُونِ النِّسَاء بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ

তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ। (সূরাহ আল আ'রাফ, আয়াত: ৮১)

"For ye practise your lusts on men in preference to women : ye are indeed a people transgressing beyond bounds."

وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلاَّ أَن قَالُواْ أَخْرِجُوهُم مِّن قَرْيَتِكُمْ إِنَّهُمْ أُنَاسٌ يَتَطَهَّرُونَ

তাঁর সম্প্রদায় এ ছাড়া কোন উত্তর দিল না যে, বের করে দাও এদেরকে শহর থেকে। এরা খুব সাধু থাকতে চায়। (সূরাহ আল আ'রাফ, আয়াত: ৮২)

And his people gave no answer but this: they said, "Drive them out of your city: these are indeed men who want to be clean and pure!"

فَأَنجَيْنَاهُ وَأَهْلَهُ إِلاَّ امْرَأَتَهُ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَ

অতঃপর আমি তাকে ও তাঁর পরিবার পরিজনকে বাঁচিয়ে দিলাম, কিন্তু তার স্ত্রী। সে তাদের মধ্যেই রয়ে গেল, যারা রয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। (সূরাহ আল আ'রাফ, আয়াত: ৮৩)

But we saved him and his family, except his wife: she was of those who legged behind.

তখন পরিস্থিতি এমন দাড়িয়ে ছিল যে লুত (আ:) ও তার ২টি কন্যা ছাড়া কেউ মুসলমান ছিল না। অবশেষে আল্লাহ তাদের উপর গজব নাজিল করেন।

আল কুরআনের অন্য স্থানে বর্ণিত হয়েছে :

فَلَمَّا جَاء أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ مَّنضُودٍ

অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম। (সূরাহ হুদ, আয়াত: ৮২)

When Our Decree issued, We turned (the cities) upside down, and rained down on them brimstones hard as baked clay, spread, layer on layer,-

কওমে লূত বা লূত আলাইহিসসালামের সম্প্রদায়ের ভেতরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এই পাপাচার যে কতটা জঘণ্য, কতটা গর্হিত, কতটা সাংঘাতীক এবং পরকালীন জীবনে এর শাস্তি যে কতটা মর্মন্তুদ এবং ভয়ংকর হবে তা দুনিয়ার জীবনে সাদুমবাসীর উপর আল্লাহ তাআ'লার প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষনসহ গোটা একটি জনপদকে উল্টে দেয়ার ফয়সালা থেকে সহজেই অনুমেয়। তাই এ ধরনের জঘন্য মানবতাবিরোধী ন্যাক্কারজনক কুকর্ম হতে পরিবার, সমাজ তথা পুরো মানবজাতিকে মুক্ত রাখতে আমাদের উচিৎ এখনই সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।



বিস্ময়কর 'ডেড সি' বা 'মৃত সাগরের' কিছু রহস্য:

মহান আল্লাহ তাআ'লা শস্য ফুলে ভরপুর সুজলা সুফলা, সবুজ-শ্যামলে আচ্ছাদিত করে আমাদের বসবাসোপযোগী করে সুনিপূন করে সাজিয়েছেন সুন্দর এই ধরণীকে। অনন্ত শুন্যে আমাদের বুকে নিয়ে ভাসমান বিশাল এই পৃথিবী। পৃথিবী সাতরে চলেছে অবিরাম। ভাবলে স্তম্ভিত হতে হয়। থমকে যেতে হয়। পৃথিবী নিজেই এক মহা আশ্চর্যের বিষয়। তার ভেতরে কত ধরণের বিস্ময়কর বিষয় যে রয়েছে তা অবলোকন করলে আশ্চর্যের সীমা থাকে না। পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, সাগর-মরু, ঝর্ণা-উদ্যান, বিচিত্র প্রাণীকুলসহ পৃথিবীর আনাচে কানাচে লুকিয়ে আছে হাজারো বিস্ময়। এই সকল বিস্ময়কর বিষয়ের মাঝে 'ডেড সি' বা 'মৃত সাগর' একটি অন্যতম বিস্ময়।

ডেড সি বা মৃত সাগরের বৈশিষ্ট্য:

হচ্ছে এই সাগরের পানিতে কেউ ডুবে না। এমন কি কেউ ডুবতে গেলেও ডুবতে পারে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পৃথিবীর সকল খাল, বিল, পুকুর, নদী, সাগরের পানিতে মানুষ সহ যেকোনো জিনিস সহজেই ডুবে যায় কিন্তু ডেড সির পানিতে ডুবে না কেন? কি রহস্য আছে এই পানিতে? ডেড সিতে কি কোনও প্রাকৃতিক শক্তি আছে? আসুন আমরা এই সকল প্রশ্নের উত্তর খোজার চেষ্টা করি।



জর্ডানে অবস্থিত ডেড সী বা মৃত সাগর:

পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে লবনাক্ত জলাশয় গুলোর মধ্যে একটি। সাগর বলা হলেও এটি মূলত একটি লেক যার সর্বোচ্চ গভীরতা ১,২৪০
ফুট। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থে সর্বোচ্চ ১৮ কিলোমিটার। এবার চলুন ডেড সী এর রহস্য সম্পর্কে আরও কিছু জানা যাক।

ডেড সি একটি অতি লবণাক্ত পানি সমৃদ্ধ সাগর। এটি জর্ডানে অবস্থিত। ডেড সি’র পশ্চিমে পশ্চিম তীর এবং ইসরায়েল, পূর্বে জর্ডান অবস্থিত। জিবুতির আসাল হ্রদের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত পানির প্রাকৃতিক আধার। মৃত সাগর সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৪২০ মিটার বা ১,৩৭৮ ফুট নিচে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর ৩১.২০ অক্ষাংশ ও ৩৫.২০ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। এন্ডোরেয়িক হাইপার-স্যালাইন ধরনের এই সাগরের পানির প্রধান উৎস জর্ডান নদী। এই সাগরের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ৬৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৮ কিলোমিটার। সমুদ্রের পৃষ্ঠতলীয় ক্ষেত্রফল ৮১০ বর্গ কিলোমিটার। সাগরের গড় গভীরতা ১২০ মিটার বা ৩৯৪ ফুট যার মধ্যে সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৩০ মিটার বা ১০৮৩ ফুট। এই স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিম্নতম স্থান বা স্থলভূমি । এই সাগরের পানির লবণাক্ততা শতকরা ৩০ ভাগ যা অন্যান্য
সমুদ্রের পানির চাইতে ৮.৬ গুণ বেশি লবণাক্ত ।



ডেড সি’র ইতিহাস:

প্রায় তিন মিলিয়ন বছর পূর্বে বর্তমান জর্ডান নদী, মৃত সাগর এবং ওয়াদি আরাবাহ অঞ্চল লোহিত সাগরের পানিতে বারবার প্লাবিত হত। এর ফলে একটি সরু উপসাগরের সৃষ্টি হয়। উপসাগরটি জেজরিল উপত্যকায় একটি সরু সংযোগের মাধ্যমে লোহিত সাগরের সাথে যুক্ত ছিল। প্রাকৃতিক তত্ত্ব অনুযায়ী প্রায় ২ মিলিয়ন বছর পূর্বে উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থলভাগ যথেষ্ট উচ্চতা লাভ করে । ফলে মহাসাগরের প্লাবনে এই অঞ্চলে সৃষ্ট উপসাগরটি পরিবেষ্টিত হয়ে হ্রদে পরিণত হয়। ৭০,০০০ বছর পূর্ব থেকে ১২,০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত ডেড সি’র পানির উচ্চতা বর্তমান উচ্চতার চাইতে ১০০ থেকে ২৫০ মিটার বেশি ছিল । ২৬,০০০ বছর পূর্বে এটির পানি সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছে যায়। প্রায় ১০,০০০ বছর পূর্বে এর পৃষ্ঠ উচ্চতা নাটকীয় ভাবে হ্রাস পেতে শুরু করে , যা সম্ভবত বর্তমান পৃষ্ঠ উচ্চতার চাইতেও কম ছিল । গত কয়েক হাজার বছর ধরে এর পানির পৃষ্ঠ উচ্চতা মোটামুটি ৪০০ মিটারের আশেপাশে অবস্থান করছে।



মৃত সাগরে কিছু ডুবে না কেন:

বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মহাসাগরের পানির সাথে ডেড সির পানিতে মিশে থাকা খনিজ উপাদানগুলোর যথেষ্ট পার্থক্য আছে। মৃত সাগরের পানিতে মিশে থাকা লবণে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। এর লবণাক্ততা শতকরা ৩০%। ফলে পানির ঘনত্ব ১.২৪ কেজি/লিটার। এই সকল উপাদানের কারণে ডেড সি’র পানির প্লবতা শক্তি পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের পানির চেয়ে অনেক বেশী। আর এই উচ্চ প্লবতা শক্তির কারণে এই সাগরে কোনও কিছু ডুবে না। যে কেউ মৃত সাগরের পানিতে ভেসে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ তে অবস্থিত গ্রেট সল্ট লেকেও অনুরূপ ভাবে ভেসে
থাকা যায়।



চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডেড সি:

বর্তমানে মৃত সাগর অঞ্চলটি চিকিৎসা শাস্ত্রের গবেষণাস্থল হয়ে উঠেছে। এর মূল কারণ হিসেবে রয়েছে হ্রদের পানিতে খনিজ দ্রব্যাদির বিপুল উপস্থিতি। আবার এখানের বাতাসে এলার্জি উৎপাদক দ্রব্য, পরাগ রেণুর স্বল্পতা, উচ্চ ভূ-মণ্ডলীয় চাপ, সৌর বিকিরণে অতি বেগুনি উপাদানের কম উপস্থিতি রয়েছে। উচ্চ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ থাকার কারণে এই স্থানটি শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। চর্মরোগ সোরিয়াসিস এর জন্য দীর্ঘসময় সূর্যস্নান বেশ উপকারী। এ অঞ্চলে অতি বেগুনি রশ্মির স্বল্পতা থাকায় সূর্যস্নানের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে এখানে।

মৃত সাগরের জীব বৈচিত্র্য:

ডেড সি’তে কোনও মাছ নেই, কারণ এই সাগরের পানিতে কোনও মাছ বাস করতে পারে না। তেমনিভাবে এর পাশে জর্ডান নদীতেও
কোনও মাছ নেই। এই সাগরের পানিতে কোন উদ্ভিদ বা মাছ বাঁচতে পারে না বলেই মূলত এই সাগরকে ডেড সি বা মৃত সাগর বলা হয়ে থাকে। এই সাগরের পানিতে শুধুমাত্র সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক অণুজীবের সন্ধান পাওয়া যায়। ডেড সি তীরবর্তী পাহাড়ি
অঞ্চলে উট, খরগোশ, খেঁকশিয়াল এমনকি চিতাবাঘ দেখতে পাওয়া যায়। অতীতে জর্ডান নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে প্যাপিরাস এবং পাম
গাছে সমৃদ্ধ বনভূমি ছিল। রোমান এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সময় ইক্ষু, সিকামোর এবং হেনা এ অঞ্চলের উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিল। জেরিকোতে বালসাম গাছের রস থেকে প্রস্তুত করা হত উন্নত মানের পারফিউম এবং সুগন্ধি । ১৯ শতকের মধ্যে জেরিকোর
উর্বরতা হ্রাস পেয়ে শূন্য হয়ে পড়ে। এই সাগরে কেউ ডুবে যায় না এবং এই জায়গাটি দেখলে মনে হয় এটি একটি অভিশপ্ত স্থান। প্রাকৃতিক উপাদান বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে আমরা জানলাম কেন এই সাগরকে মৃত সাগর বা ডেড সি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই স্থানটি কী অভিশপ্ত? যার কারণে এটি মৃত স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে! আসুন আমরা এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করি।



মানব সভ্যতার ইতিহাসে মৃত সাগর:

মানব সভ্যতার ইতিহাসে ডেড সি’র রয়েছে বৈচিত্র্যময় ইতিহাস। বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থে এই স্থানটির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। ডেড সি বা মৃত সাগর যে স্বাভাবিক কারণে সৃষ্টি হয়নি সেটা এই ইতিহাসগুলো দ্বারা সহজেই অনুধাবন করা যায়। এই সকল ইতিহাসগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,

ইসলাম ধর্মে:

ডেড সি বা মৃত সাগরের কথা ইসলাম ধর্মে বেশী বলা হয়েছে। এই স্থানটি এরূপ হওয়ার কারণ হিসেবে আল কুরআনের তথ্য গুলো সবচেয়ে বেশী সত্য, সঠিক ও বিশ্বাসযোগ্য। ইসলাম ধর্মে এ অঞ্চলকে হযরত লূত (আঃ) এর অনুসারীদের আবাসস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। লূত (আঃ) এর উম্মতগণ এই এলাকায় বসবাস করতো। তখন এই স্থানটি ছিল স্বাভাবিক এবং মানুষ বসবাসের জন্য খুবই
উপযোগী। তৎকালীন সময়ে লূত (আঃ) এর অনুসারীরা চরম পাপে লিপ্ত হয়েছিল। তারা সমকামিতার মতো নির্লজ্জ পাপে মশগুল হয়ে
পড়েছিল। সমকামের এই কঠিন পাপাচারের কারণে এই জাতিকে মহান আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। লূত (আঃ) তার অনুসারীদের বারবার পাপ কাজ হতে বিরত থাকার আদেশ প্রদান করে ব্যর্থ হলে এই জাতির পাপের প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ তার ফেরেশতাদের প্রেরণ করেন তাদের কঠিন শাস্তি প্রদান করার জন্য। আল্লাহর আদেশে ফেরেশতারা এসে এই জাতিকে ধ্বংস করার জন্য
এই স্থানের ভূমিকে উল্টে দেন, ফলে পাপিষ্ঠ জাতিটি মাটি চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। মাটি উল্টে দেওয়ার কারণে এখানের ভূমি নিচে নিমে যায়। বর্তমান বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে প্রমাণ পেয়েছেন যে, বর্তমানে এই স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিচু স্থান। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের সূরা রুম এ লূত (আঃ) এর জাতির এই পাপিষ্ঠ ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।



খ্রিস্ট ধর্মে:

ডেড সি বা মৃত সাগরের দুর্গম এ অঞ্চল বাইজেন্টাইন শাসকদের আমল থেকে গ্রিক অর্থোডক্স সন্ন্যাসীদের আকৃষ্ট করতে শুরু করেছিল। ওয়াদি কেল্টে অবস্থিত সেইন্ট জর্জ গির্জা এবং জুদাই মরুভূমিতে মারসাবা মন্দির খ্রিস্টানদের তীর্থস্থান। এই সকল স্থানে খ্রিস্টানদের যাতায়াত ছিল বহু বছর ধরে।

ইহুদী ধর্মে:

মৃত সাগরের উত্তর তীরবর্তী “জেরিকো” শহরের নামটি ইহুদী ধর্মগ্রন্থগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে। বুক অব জেনেসিস এ উল্লেখিত নবী আব্রাহামের সময়কালে ধ্বংসপ্রাপ্ত সোডম এবং গোমোরা শহর এবং তিনটি “সমতল ভূমির শহর” আদমাহ, জেবোইম এবং জোয়ার শহরের অবস্থান সম্ভবত মৃত সাগরের দক্ষিণপূর্ব উপকূলে বলে ধারনা করা হয়।

মৃত সাগর সম্পর্কে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী:

বাইবেলে মৃত সাগরের লবণাক্ততা বিলুপ্ত হওয়া সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। এজেকেইল এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে- 'মৃত সাগরের পানি স্বাদু হয়ে যাবে, এমনকি মাছের বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠবে'।

জেকরিয়াহ’তে উল্লেখ আছে- 'জেরুজালেমের পানি দু’ভাগে ভাগ হয়ে যাবে, একভাগ জমা হবে পূর্ব সাগর বা মৃত সাগরে এবং অন্য ভাগ জমা হবে পশ্চিম সাগর বা ভূমধ্যসাগরে'।



প্রাকৃতিক সম্পদের আধার ডেড সি:

মৃত সাগর বা ডেড সি’র পাশ দিয়ে চলে গেছে বিশ্বের সবচেয়ে নিচু হাইওয়ে 'হাইওয়ে ৯০'। সমুদ্র সমতল থেকে ৩৯৩ মিটার নিচে
অবস্থিত এ হাইওয়েটি ইসরাইল এবং পশ্চিম তীরের মধ্য দিয়ে চলে গেছে। ব্রিটিশরা উত্তর উপকূলে গড়ে তুলেছিল 'সোডম এবং গোমোরাহ' নামের একটি গলফ কোর্স। ইসরায়েলের আরাদ এর নিকটবর্তী অঞ্চলে প্রধান হোটেলগুলোর নির্মাণ শুরু হয় বিশ শতকের ৬০ এর দশক থেকে। সমসাময়িক কাল থেকে অদ্যাবধি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের ফলে জর্ডান উপকূল ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হচ্ছে । ডেড সি বর্তমানে প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই সাগর থেকে মূল্যবান সম্পদ সংগ্রহ করে থাকে। ২০০১ সালে মৃত সাগর থেকে প্রাপ্ত ব্রাইন থেকে ইসরায়েল ১.৭৭ মিলিয়ন টন পটাশ, ৪৪,৯০০ টন কস্টিক সোডা, ২০৬,০০০ টন ব্রোমিন এবং ২৫,০০০ টন ম্যাগনেসিয়াম ধাতু এবং সোডিয়াম ক্লোরাইড উৎপাদন করেছিল। জর্ডান প্রান্তে ১৯৫৬ সালে স্থাপিত হয় আরব পটাশ বা এপিসি । যেটি বাৎসরিক ২ মিলিয়ন টন পটাশ উৎপাদন করে ।

ডেড সি এখন পর্যটন স্পট:

পর্যটনপ্রিয় মানুষেরা নিত্যনতুন পর্যটন স্পট খুঁজে বেড়ান ভ্রমনের জন্য। ডেড সি বা মৃত সাগর বর্তমানে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিগনিত। প্রায় প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনপদের প্রচুর মানুষ ডেড সি দর্শনে আসেন। পর্যটকরা ডেড সি’র পানিতে নেমে সাতার কাটেন, ডুবে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। কোনো কোনো পর্যটককে এই সাগরের পানিতে শুয়ে শুয়ে পত্রিকা পড়ে সময় কাটাতেও দেখা যায়। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে, এই হ্রদের নিচের মাটি রোগ নিরাময়ের উপাদানসমৃদ্ধ। সে কারণে অনেককে এখানের মাটি
তাদের সমগ্র শরীরে লাগাতে দেখা যায়।

এক নজরে ডেড সি বা মৃত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু তথ্য:

এক. ডেড সি বা মৃত সাগর বলা হলেও আসলে এটি কোনো সাগর নয়। এটি লবনাক্ত পানির একটি হ্রদ।

দুই. এটি পৃথিবীর গভীরতম লবনাক্ত পানির হ্রদ। এর গভীরতা ১০০৪ ফুট বা ৩০৬ মিটার।

তিন. যদি পৃথিবীর অন্যান্য সমুদ্রের সাথে তুলনা করে মৃত সাগরের গভীরতা পরিমাপ করা হয় তাহলেও এর গভীরতা নিছক ফেলে দেয়ার মত নয়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর সমুদ্রতটের ব্যবধান ১৪০১ ফুট বা ৪২৭ মিটার যা পৃথিবীর সর্বনিম্ন সমুদ্রতট।

চার. এই হাইপার স্যালাইন হ্রদটি হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম লবনাক্ত হ্রদ। অনেকের ধারণা, মৃত সাগরই হচ্ছে পৃথিবীর সবচে' লবনাক্ত পানির হ্রদ। কিন্তু আসলে তা নয়। কারণ, কাস্পিয়ান সাগরের উপহ্রদ গ্যারাবোগেযকলের লবনাক্ততা ৩৫%, জিবুতির আসাল হ্রদের ৩৪%, এন্টার্কটিকার ভান্ডা হ্রদের ৩৫% এবং এন্টার্কটিকার ডন জুয়ান হ্রদের লবনাক্ততা ৪৪% হলেও মৃত সাগরের পানিতে লবনাক্ততার পরিমান মাত্র ৩৩.৭%।

পাঁচ. মৃত সাগর বা ডেড সি যেহেতু সাগর নয় বরং একটি হ্রদ মাত্র, এর আয়তনও সাগরের তুলনায় স্বাভাবিকভাবেই কম। এর দৈর্ঘ্য ৫০ কি.মি. এবং প্রস্থ প্রায় ১৫ কি.মি।

ছয়. এই ডেড সির পানির লবনাক্ততার পরিমান অন্যান্য সাগরের পানির লবনাক্ততার তুলনায় ৯.৬ গুন প্রায় এবং এর ভেতরে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণ রয়েছে। এসব উপাদানের উপস্থিতির কারণে ডেড সি -কে সল্ট সিও বলে থাকেন কেউ কেউ।

সাত. ডেড সিতে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই। এর পানির তীব্র লবনাক্ততাই এর মূল কারণ। অতিরিক্ত লবনাক্ততার কারণে কোনো প্রাণীই এখানে বাঁচতে পারে না। আর প্রাণের অস্তিত্বহীনতার কারণেই এই হ্রদের নামকরণ করা হয়েছে ডেড সি বা মৃত সাগর। অবশ্য বর্ষাকালে এখানকার পানি বৃদ্ধি পেলে তখন লবনাক্ততাও কিছুটা হ্রাস পায় এই হ্রদের। তখন সামান্য কিছু ব্যাকটেরিয়া এখানে জন্মাতে দেখা যায়।

আট. প্রাণীর জীবনধারণের অনুপযোগী এই ডেড সিই বর্তমানে চিকিতসা ও স্বাস্থসেবায় আশার আলো দেখাচ্ছে। পরাগ ও এলার্জি উতপাদক দ্রব্যের উপস্থিতি এখানে খুবই কম। নিম্নাঞ্চল হওয়ায় সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবও এখানে কম। তাছাড়া উচ্চ ভূমন্ডলীয় চাপ, উচ্চ বায়ুমন্ডলীয় চাপ, সর্বোপরি বিভিন্ন ধরণের খনিজ পদার্থের বিপুল উপস্থিতি রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যার ফলে মৃত সাগরকে বর্তমানে চিকিতসাশাস্ত্রের অন্যতম গবেষণা ক্ষেত্র হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

নয়. ডেড সির আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এটি পিচ উতপাদনের গুরুত্বপূর্ণ আধার। ডেড সি থেকে প্রচুর পরিমাণে পিচ নির্গত হয় যা এককালে মিশরের মমি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতো। অস্বাভাবিক রকমের পিচ উতপাদন ক্ষমতার জন্য গ্রীকরা এর নাম দিয়েছিল লেক অফ এফালটাইটস বা পিচের হ্রদ।

দশ. মৃত সাগরের পানি কখনো হ্রদের বাইরে প্রবাহিত হয় না। এর তিনদিকেই ঘেরাও করা। একটি দিক খোলা। এখান দিয়ে অন্যান্য নদী বা ঝর্ণা থেকে পানি প্রবেশ করতে পারলেও বের হওয়ার কোনো পথ নেই। তাই পানি এখানে প্রবেশ করতে পারে ঠিকই কিন্তু বের হতে পারে না কোনোভাবে।

এগারো. আমাদের খাদ্যে ব্যবহৃত লবনের তুলনায় মৃত সাগরের লবণের স্বাদ খুবই তিক্ত যা চর্মরোগের নিরাময়ে খুবই কার্যকর। সোরিয়াসিস, সেলুলাইট, ব্রণ, ফুস্কুড়ি, খুশকি ইত্যাদি দূর করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরের ব্যথা এবং মানসিক চাপ কমাতেও এই লবণের বিশেষ ভূমিকার কথা জানা যায়।

বারো. মৃত সাগর নিজে একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি। বিস্ময়কর হ্রদ। এটির অবস্থান পৃথিবীর আরেক বিস্ময়কর সৃষ্টি 'গ্রেট রিফট ভ্যালি' -র মাঝে। মৃত সাগর। গ্রেট রিফট ভ্যালির সবচে' গভীরতম স্থান হচ্ছে এই মৃত সাগর। ২০ টি দেশের উপর দিয়ে বয়ে চলা প্রায় ৪০০০ মাইল দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট গ্রেট রিফট ভ্যালি দীর্ঘতম উপত্যকা হিসেবে সুপরিচিত।

তেরো. বিশ্বজুড়ে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত পটাশিয়ামের প্রাথমিক উতস হিসেবে পরিগনিত এই হ্রদটি।

চৌদ্দ. ডেড সি অঞ্চলের প্রায় ৬১৮ একর ভূমিতে রয়েছে খেজুরের বিস্তির্ণ বাগান।

পনের. এর আশপাশের জনপদের সিংহভাগ মানুষের জীবিকা কৃষিনির্ভর। এসব অঞ্চলের মানুষের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ আয়ের উতস কৃষিক্ষেত্র। আর এই কৃষিকাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখে ডেড সি।

ষোল. সারা বছরই নানান প্রজাতির পাখপাখালির কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকে ডেড সি। এ্যারাবিয়ান ব্যাবলার নামের এক জাতের পাখি এখানে প্রচুর দেখা যায়।

সতেরো. এই হ্রদ ও সন্নিহিত অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই সামান্য। মাত্র ৫০ মিলিলিটারেরও কম। বৃষ্টিপাতের অপ্রতুলতা এবং তপ্ত আবহাওয়ার ফলে এখানকার জলবায়ু বছরজুড়েই থাকে অত্যাধিক শুষ্ক।

আঠারো. জানা যায়, রাণী ক্লিওপেট্রা, সৌন্দর্য্য চর্চায় যার বিপুল খ্যাতি ছিল, তিনি নিজেও রূপচর্চার ক্ষেত্র হিসেবে ডেড সি-কে বেছে নিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, এর ফলশ্রুতিতেই ডেড সির তীরেই প্রসাধনী কারখানা গড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

উনিশ. এরিস্টটলের বিভিন্ন রচনায় ডেড সি বা মৃত সাগরের উল্লেখ পাওয়া যায়।

বিশ. এই হ্রদে প্রাপ্ত খনিজ এবং লবণ সুগন্ধি ও প্রসাধনী তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

একুশ. এবারে আসি মৃত সাগরে কোন প্রাণের অস্তিত্ব নেই বা কোন প্রাণী যে বাঁচে না সেই ব্যাপারটিতে। এই হ্রদে যে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই, কথাটা আংশিক সত্য। অতিমাত্রায় লবণ থাকার কারণে মৃত সাগরে কোন মাছ বা অন্যান্য জীবজন্তু টিকতে পারে না। এমনকি মানুষরাও এই সাগরে ডুবসাঁতার দিতে গিয়ে পানি খেয়ে ফেললে শ্বাস আটকে মারা যেতে পারে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেড সির গভীর তলদেশে ডাইভ করে বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু ব্যাক্টেরিয়ার পুরু স্তর পেয়েছেন। এছাড়াও পাওয়া গেছে অণুজীবের কলোনি। এর কারণ মৃত সাগরের তলদেশে কিছু ছোট ছোট স্বাদুপানির “ফোয়ারা” বা জেটস্ট্রিমেরও সন্ধান পেয়েছেন তারা। ব্যস, স্বাদুপানি যতখানি জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, সেখানে লবণাক্ততা কম। জায়গাগুলো প্রায় ৩৩ ফুট চওড়া ও ৪৩ ফুট গভীর। এরকম বেশ কিছু স্পটে একইরকমের ব্যাকটেরিয়ার প্রাচুর্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সুতরাং, এটা দিনের আলোর মতই পরিষ্কার যে মৃত সাগরের অতিমাত্রায় লবণই প্রাণীদের জন্য ক্ষতিকর, আর যেখানে লবণের পরিমাণ কম, সেখানে প্রাণ জন্মাতে সময় লাগেনি। এর সাথে কোনো অলৌকিক ব্যাপার জড়িত নয়।



পরিশেষে:

ডেড সি শুধু আনন্দ বিনোদনের একটি স্থান কিংবা বিষয় নয়। বহুকালের প্রাচীন বিশাল এই জলাধারটি সৃষ্টির পেছনের ইতিহাস জেনে তা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সমকামিতার মত যে জঘন্যতম পাপাচারের কারণে এই ডেড সি'র সৃষ্টি, আজ সেই পাপাচারের অবাধ চাষ হচ্ছে পৃথিবীর দেশে দেশে। পশ্চিমের অধিকাংশ দেশ আজ এই মানব প্রকৃতি বিরোধী অপকর্মের উর্বরতম স্থান। হাল আমলে আমাদের দেশেও কিছু বিকৃত রুচিসম্পন্ন মানুষের বাতচিত লক্ষ্য করা যায় ন্যাক্কারজনক, গর্হিত এই নোংরা কাজটির সমর্থনে। এই পাপাচার রোধে আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ডেড সি’র পানিতে কিছু ডুবে যায় না, এটা মানুষের কাছে অতি বিস্ময়কর একটি বিষয়। মানুষ এটা দেখে অবাক হয়। আশ্চর্য্য হয়। তবে শুধু আশ্চর্য্য হয়ে থেমে গেলে হবে না, এই ডেড সি থেকে শিক্ষা গ্রহন করলেই কেবল ফায়দা। কারণ, মনে রাখতে হবে, এখানকার অধিবাসীদের পাপাচারের কারণেই সৃষ্টি হয়েছিল এই ডেড সি। একই পাপাচারে বর্তমান পৃথিবীবাসী যদি নিমগ্ন হতে থাকে, তবে একই অপরাধের ফলে, একই পাপাচারের পুনরাবৃত্তির কারণে এই যুগে এসে আবারও কোনো মৃত সাগরের যে সৃষ্টি হবে না তার গ্যারান্টি কে দিবে? আল্লাহ পাক আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা:

১. Click This Link
২. Click This Link
৩. http://itibritto.com/dead-sea/
৪. https://bigganjatra.org/dead_sea_mythbuster/
৫. অন্যান্য।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:২৬
১৯টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×