somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্য এ্যালকেমিস্ট

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক সন্ধ্যাবেলায় খেয়াল করলাম, আড্ডার ভেতর একটি বই ঘুরছে। সাধারণত, একই বই নিয়ে সবার আগ্রহ থাকে না। তাই, প্রথমবারের মত নিয়মভঙ্গ হতে দেখে— আমিও যেনো খানিকটা আগ্রহী হলাম। হাতে নেওয়ার পর বুঝতে পারলাম, আসলে এটি একটি উপন্যাস। দ্য এ্যালকেমিস্ট (O Alquimista). লেখক পাওলো কোয়েলহো। জন্মঃ ২৪ আগস্ট, ১৯৪৭। ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেইরো'তে। ছেলে অল্পবয়সে লেখক হতে চেয়েছিল শুনে তাঁর মা বলেছিলেন, "My dear, your father is an engineer. He's a logical, reasonable man with a very clear vision of the world. Do you actually know what it means to be a writer?"
অবশ্য, এর পরের ইতিহাস বিস্ময়কর। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, তাঁর দ্য এ্যালকেমিস্ট উপন্যাসটি এখন পর্যন্ত ৮০টি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। আর, এমন একটি রেকর্ডের কারণে স্বাভাবিকভাবেই জীবিত লেখক হিসেবে গিনেস-বুকে ওঠে গেছে ঔপন্যাসিকের নাম। আর, এই বইয়ের বিক্রি? ৮৩ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।



এই উপন্যাসটির মূল চরিত্র সান্তিয়াগো। আন্দালুসিয়ান এই রাখাল ছেলেটি বই পড়তে জানে। তার বাবা-মা চেয়েছিলো সে যাজক হবে। কিন্তু সে পৃথিবীটা ঘুরে দেখতে চায়। তাই, স্বপ্নে দেখা গুপ্তধনের খোঁজে মিশরের দিকে যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে তার সঙ্গে দেখা হয়, স্বপ্ন ব্যাখ্যাকারী এক মহিলা ও নিজেকে সালেমের রাজা দাবি করা এক বৃদ্ধের সঙ্গে। যার নাম মেলসিজেদেক। সে-ও বলে, স্বপ্নকে অনুসরণ করা উচিত। আর, বিদায়কালে দিয়ে যায় সাদা ও কালো রঙের দুটো পাথর। যার প্রথমটার নাম উরিম আর দ্বিতীয়টার নাম থুমিম। যারা তাকে সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের পথ বাতলে দিতে পারে।

এদিকে, যাত্রা পথে সে হারিয়ে ফেলে তার সঞ্চয়। এ জন্য সান্তিয়াগোকে দু'বছর ধরে একটি স্ফটিকের দোকানে কাজ করতে হয়। এই সময়ের বিরতি তাকে দিয়েছিলো অভিজ্ঞতা ও কিছু সঞ্চয়। যা দিয়ে সে মিশরের পথে যাত্রা শুরু করে। সেখানে সফরসঙ্গী হিসেবে দেখা হয় এক ইংরেজের সঙ্গে, যার উদ্দেশ্য এ্যালকেমিস্টকে খুঁজে বের করা। কারণ, তারা সিসাকে স্বর্ণে পরিণত করতে পারে, অন্যদের রোগমুক্ত করতে পারে, এবং দীর্ঘায়ু দান করতে পারে।
আগে, সান্তিয়াগো ভাবতো সে ভেড়াদের কথা বুঝতে পারে, ঠিক সে রকম ভাবেই সে মরুভূমিতে উঠের ভাষাও আয়ত্ব করে নেয়। ওখানে, গোত্র-যুদ্ধের কারণে কিছু সময় সান্তিয়াগোকে মরূদ্যানে থাকতে হয়। আর, সেখানে ফাতিমাকে খুঁজে পেয়ে সে বুঝতে পারে, ভালোবাসা মানুষের সপ্নকে পাল্টে দেয় না। ফাতিমা তাকে জানায়, মরুভূমি তাদের কাছ থেকে আপনজন কেড়ে নেয়। মাঝে মাঝে আর ফিরে আসে না তারা। আরও বলে, ''কেউ কেউ সত্যি ফিরে আসে। তখন আশায় বুক বাঁধে অন্যেরা। আমি হিংসা করতাম সে সব মেয়েকে। এখন থেকে আমিও একজনের অপেক্ষায় থাকব।''
অন্যদিকে, ইংরেজ লোকটা যার খোঁজ করছিলো, সেই এ্যালকেমিস্টের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় সান্তিয়াগোর। সে-ও তাকে জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়। অতঃপর যাত্রাপথে আবারও বিপত্তি। ঘটনাক্রমে তার সঙ্গে বাতাস আর সূর্যের কথা হয়। অবশেষে, অনেক নাটকীয়তা শেষে সান্তিয়াগো তার গুপ্তধন খুঁজে পায়।

জাদুবাস্তবতা আর অভ্যান্তরীণ লক্ষ্যের দিকে পৌঁছে দেওয়ার প্রচুর দিকনির্দেশনা আছে উপন্যাসটিতে। কয়েকটি কিস্তিতে লেখক রীতিমত ঝড় তুলে দিয়েছেন। যা দেখে ব্যক্তিগতভাবে মুগ্ধ হয়েছি। উনিশ শতকের পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাসটির সংলাপগুলো অনেক বেশী তীক্ষ্ণ। যা সহজেই পাঠকের মনোজগত বদলে দিতে পারে। এখানে আরেকটি তথ্য যোগ করি, হলিউড অভিনেতা উইল স্মিথ ও গায়িকা ম্যাডোনার প্রিয় উপন্যাস এটি।

আসলে, পর্তুগিজ ভাষায় এই উপন্যাসটি লেখা হয়েছিল ১৯৮৭-তে। তার ঠিক পরের বছর, মানে, ১৯৮৮-তে ব্রাজিলের ছোট একটি প্রকাশনা সংস্থা উপন্যাসটি প্রকাশ করে। অবশ্য, তারা ৯০০ কপি বের করার পর আর রিপ্রিন্ট করে নি। তখন সফলতা না পেলেও, পাওলো কোয়েলহো 'দ্য এ্যালকেমিস্ট' নিয়ে ভীষণ রকম আশাবাদী ছিলেন।
নব্বই পরবর্তী সময়ে বড় একটি প্রকাশনা সংস্থা উপন্যাসটি আবারও প্রকাশ করে। তারপরেই বইটি আন্তর্জাতিক বেষ্টসেলার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যায়। নিজের লেখার প্রতি পাওলো কোয়েলহোর এমন বিশ্বাস, অনেক লিখিয়েদের জন্যে উদাহরণ হতে পারে।
তবে, এই লেখকের জীবন যাপন বিশ্বাস-অবিশ্বাসের নানা ধারায় প্রবাহিত হয়েছে।
এখন, এই উপন্যাস ও এর ঔপন্যাসিককে নিয়ে দুটো তথ্য দিয়ে রচনাটি শেষ করবো। প্রথম তথ্য, পাওলো কোয়েলহো বছরের অর্ধেক থাকেন জন্মভুমিতে, বাকি অর্ধেক থাকেন বাইরে। আর, শেষ তথ্যটি হল, দ্য এ্যালকেমিস্ট উপন্যাসটি মাত্র দু'সপ্তাহের মধ্যে লেখা হয়েছিলো।

পাদটীকাঃ বইটি এখনও না পড়ে থাকলে, সান্তিয়াগোর অভিযানে সঙ্গী হোন।

লেখাটি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:১৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×