somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘৃণা

৩০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ শেষবার আমার দাদীকে যখন দেখতে গেলাম তার ডান হাত আর পা কেটে ফেলা হয়েছিল। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল। বিছানায় শুয়ে শুয়ে পিঠের বেড সোরে ঘা হয়ে গিয়েছিল। তবুও তিনি আমাকে দেখে হেসেছিলেন। তিনি আসলে বোঝাতে চাচ্ছিলেন তিনি ভাল আছেন , তার কোন কষ্ট হচ্ছে না। তিনি ওমন করে না হাসলে আমি সত্যিই কাঁদতাম না। তার স্নেহের যেন কোন সীমারেখা ছিলনা। তার কষ্টটা আমাকে ক্ষতবিক্ষত করেছিল। মৃত্যুসজ্জায় তিনি যে হাসি হেসে গেছেন সেই হাসি আমার দাদার মুখে কোনদিনও দেখিনি। আজ আমার দাদাও পক্ষাঘাতগ্রস্থ, শরীরের এক পাশ অবস। পুরুষ নার্স তাকে সর্বক্ষন সেবা করে। মেয়ের কাছে সে আছে। কিন্তু, আমি তাকে কোনদিন দেখতে যেতে চাইনা। তার প্রতি আমার ঘৃণা ছাড়া কিছুই নাই। করুনাও নেই। কারণ, সে আমার বাবাকে ছোটবেলায় অন্যের কাছে পালিত হতে দিয়ে দিয়েছিল। তারা তার চেয়েও দরিদ্র ছিল কিন্তু নিঃসন্তান ছিল। এমন না যে তখন দাদারও অনেক সন্তান ছিল, কিংবা অর্থ সামর্থ্যের কোন কমতি ছিল। আমার বাবাকে অন্যের কাছে দিয়ে দেবার অনেক পরে তার দুই ছেলে মেয়ে হয়েছিল। কিন্ত তাদের তিনি কারো কাছে দিয়ে দেননি। পরে আমার বাবা চায়নার সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন।
আমি হতবাক হয়ে যাই কি করে আমার বাবা তার প্রতি এতো শ্রদ্ধাশীল আর স্বাভাবিক থাকেন! ঠিক আর দশটা সন্তানের মতোই !”

- তুমি তোমার বাবার কাছে কোনদিন এর কারণ জানতে চাওনি?
- না , কারণ বাবার এই অতীত আমার মা আমাকে খুব গোপনে আমার ছোটবেলায় বলেছিল এবং এও বলেছিল আমি যেন কোনদিন বাবাকে না বলি। বাবার ভুলে যাওয়া কষ্ট আবার চাগিয়ে উঠতে পারে।
- কিন্তু এখানে অনেক বড় ভুল বোঝাবুঝিও থাকতে পারে। কেন কেউ বিনা কারণে তার প্রথম সন্তানকে অন্যের কাছে দিয়ে দেবে ? তুমি কেন কাউকে জিগেস করছ না? - না কোন ভুল নেই, কারণ , আমার দাদাকে আমার আজীবন একজন হৃদয়হীন মানুষই মনে হয়েছে। তিনি কোনদিন আমাকে স্নেহ করেননি। কোনদিন আমার দিকে তাকিয়ে সেভাবে হাসেন নি পর্যন্ত! তিনি তার সন্তানের সাথে এমন করতেই পারেন। আমি তাই বিশ্বাস করি। আমি তাকে কোনদিন কিছুই জিগেস করবো না। আমি তাকে ঘৃণা করি। আমি তাকে আমৃত্যু ঘৃণা করেই যাব।

ছেলেটা আমার মাস্টার্সের ক্লাসে নতুন। খুব ভদ্র, মনোযোগী একজন ছাত্র। মনখোলা ভাল একটা ছেলে। অভিমানে তার ভেতরটা নীল হয়ে আছে। অভিমান বিষয়টাও এমন যে তা কেবল আপন মানুষের ওপরেই হয় ।আর তা এমনই সর্বগ্রাসী যে কখনো কখনো সত্যিই চিরতরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিজের মনে কাটাকুটি খেলার মতন; একজনের ওপর অভিমান , তো তার নামটাও মনের কনটাক্ট লিস্ট থেকে কেটে ফেলা। জীবিত থেকেও মানুষটার অন্যের মনের ভেতর মরে যায় । আমার নিজের এই দোষ প্রকট, তাই কোন অধিকারে ছেলেটাকে কিছু উপদেশ দেবো ভেবে বের করতে পারিনি।

আমি যেন খোলা চোখেই দেখতে পাচ্ছিলাম তার ভেতরের যেই অংশে পিতামহের নাম লেখা সে অংশটা পঁচে গিয়ে ঘা ছড়াচ্ছে। শিরা -ধমনীতে ছুটে চলা রক্ত বিদ্রোহ করছে।
আপন জনের জন্য সঙ্গোপনে এমন ক্যান্সার অনেকেই বয়ে বেড়ায়। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতিবাচক ভূমিকার জন্য অনেক সন্তান বাবাকে ঘৃণা করে গেছেন , অনেক দৌহিত্র পিতামহ , মাতামহকে জন্ম জনম করে যান । আজকের প্রজন্মও এই প্রজন্মের পাপের জন্য তাঁর পূর্বপুরুষকে করে, আজীবন নিজের রক্তে বয়ে বেড়ায় রক্তের দুরারোগ্য ক্যান্সার যার ট্রিটমেন্ট নিতে কোন ডাক্তারের কাছেও যাওয়া যায়না ।
মানুষ হয়ে জন্ম নেয়াটা এতো জটিল!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৬ রাত ৯:৪১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×