প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে যোগ দিতে ভারতে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সারা বিশ্বের নজর এখন ভারতে। কি হয়, কি কয়, কে কি লয় ইত্যাদি ইত্যাদি... আসেন, এইসব দিকে নজর না দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের গাড়িখানার দিকে নজর দিই...
বর্তমান মডেলঃ ২০০৯ প্রেসিডেন্সিয়াল লিমুজিন
প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানঃ জেনারেল মোটরস (GM)
নামঃ ক্যাডিলাক ওয়ান, দ্য বিস্ট
ডিজাইনারঃ ক্যাডিলাক
তৈরির সালঃ ২০০৯
পাশ থেকে দ্য বিস্ট
এক নজরে ক্যাডিলাক ওয়ান ওরফে দ্য বিস্ট
মূল কাঠামোঃ টাইটেনিয়াম, সিরামিক, স্টীল ও অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি।
দরজাঃ আট ইঞ্চি পুরু একেকটি দরজার ওজন (মানে ভর আর কি ) একটি বোয়িং ৭৫৭ জেট বিমানের কেবিনের দরজার ওজনের সমান। এর দরজা অনুমোদিত সিক্রেট সার্ভিসের অফিসার, ওবামার স্ত্রী ও কন্যাদ্বয় ছাড়া আর কেউ খুলতে পারবে না। ওভাবেই এর দরজার মেকানিজম সেট করা হয়েছে।
জানালাঃ প্রতিটি জানালা ৫ ইঞ্চি পুরু এবং কমপক্ষে পাঁচটি স্তর আছে।
আসন ব্যবস্থাঃ এই গাড়িতে প্রেসিডেন্টসহ সাতজন বসতে পারে। তিনজন তো মোটামুটি ফিক্সডই... অর্থাৎ ড্রাইভার মানে শোফার, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিসের লিডার আর প্রেসিডেন্ট নিজে। এছাড়া আরো চারটা আসন আছে। এই চারটার মধ্যে তিনটা প্রেসিডেন্টের আসনের মুখোমুখি; এগুলোকে আবার ভাঁজ করে রাখা যায়। আর বাকি একটা প্রেসিডেন্ট যেখানে বসে থাকেন তার পাশে একটা ফোল্ডিং ডেস্ক দ্বারা পৃথক করা।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
প্রেসিডেন্টের আসনে আছে একটি স্যাটেলাইট টেলিফোন। এছাড়া রয়েছে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পেন্টাগনের সাথে সরাসরি যুক্ত ফোন লাইন।
চাকাঃ তারাও সেই মাত্রায় সেইরাম!!! Goodyear ব্র্যান্ডের এই টায়ারগুলো ফ্ল্যাট টাইপ; অর্থাৎ এগুলো পাঙ্কচার হবার সম্ভাবনা বলা হয় একেবারে শূন্যের কাছে। এছাড়া এই গাড়ির টায়ারগুলো কেভলার নামক হাই টেনসাইল এক ধরণের বিশেষ কৃত্রিম ফাইবার দিয়ে তৈরি যেগুলো একেবারেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। হঠাৎ কোথাও ছিঁড়ে গেলে নাকি নিজে থেকেই ক্ষয়পূরণে সক্ষম এরা!!! শেষের কথাটা অনেকের কাছেই (আমার মতো) অবিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। কিন্তু এটা সত্য যে, কোন ভাবে যদি টায়ার ছিঁড়ে বা নষ্ট হয়ে যায়ও, তারপরও ক্যাডিলাক ওয়ান নিরাপদ স্থানে যেতে পারবে। কারণ টায়ারের ঠিক নীচে আছে ষ্টীলের এক ধরণের রিম।
ট্রাঙ্ক (boot/hatch): মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী গাড়ির পেছনের হ্যাচে আছে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা; এবং একই সাথে আছে অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ সিস্টেম।
ফুয়েল ট্যাঙ্কঃ এটি আর্মার প্লেটেড এবং এতে আছে এক বিশেষ ধরণের ফোম যেটি যেকোনো প্রকারের বিস্ফোরণরোধে কাজ করে।
ইঞ্জিনের জ্বালানীঃ প্রধানত ডিজেল। এটি বেছে নেওয়ার কারণ এর কম উদ্বায়িতা যা বিস্ফোরণের ঝুঁকি কমায়। আরেকটি কারণ বিশ্বব্যাপী সহজপ্রাপ্যতা।
চালকঃ সিক্রেট সার্ভিসের অফিসাররাই ক্যাডিলাক ওয়ানের চালক হয়। তবে তাদের স্পেশালাইসড প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এই গাড়ির চালকদের J-turn এর উপর পারদর্শী হতে হয়। এই টার্নিং নেওয়া খুবইই কঠিন। গাড়িকে ব্যাক গিয়ারে চলন্ত অবস্থায় পুরো ১৮০ ডিগ্রি কোণে ঘুরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াই J-turn... আমার মতোই পুরোপুরি বোঝেন নাই তাই না? এই ছোট্ট ভিডিওটা দেখতে পারেন
কই থেকে কই চলে গেলাম! এছাড়াও শোফারকে (অভিজাত গাড়ির চালক) অন্যান্য বিভিন্ন কঠিন প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়।
চালকের কম্পার্টমেন্টঃ স্টিয়ারিং হুইলের কথা আর নাই বললাম। এই গাড়ির ড্যাশ বোর্ডে আছে বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের ব্যবস্থা এবং জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম।
অন্যান্যঃ এই গাড়ির সামনে আছে বাম্পার মাউন্টেড নাইট ভিশন ক্যামেরা যা রাতের বেলায় নিকষ আঁধারেও চলতে সাহায্য করবে... আছে ইনফ্রারেড ভিডিও সিস্টেম যার মাধ্যমে চালক ধোঁয়ার ভিতর দিয়েও সহজে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। আরো আছে রেমিংটন পাম্প-অ্যাকশন শটগান, টিয়ার গ্যাস ক্যানিস্টার; এমনকি ধারণাপ্রসূত অসমর্থিত উৎসমতে, কেউ কেউ গ্রেনেড লঞ্চার আছে বলেও মনে করেন। White House Down মুভিতেও কিন্তু আমরা গ্রেনেড লঞ্চার দেখেছি। এছাড়া বাইরের শব্দ কোনোভাবেই গাড়ির ভিতর প্রবেশ করে না। এটি প্রায় সব ধরণের রাসায়নিক ও জীবাণু আক্রমণ থেকে মুক্ত। এর নিচের অংশ স্টীল দিয়ে তৈরি যা বোমা হামলা প্রতিরোধক্ষম। এই গাড়িতে প্রেসিডেন্টের জন্য জরুরী সময়ে ব্লাড ট্রান্সফিউশনের প্রয়োজনীয় রক্ত সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
পতাকাঃ দেশের ভিতরে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কোথাও যান তখন তার গাড়িতে আমেরিকা ও প্রেসিডেন্সিয়াল পতাকা থাকে। কিন্তু বৈদেশিক সফরে প্রেসিডেন্সিয়াল পতাকার বদলে সফররত দেশের পতাকা থাকে।
ভারতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের গাড়ি
রাতের বেলায় এই পতাকাগুলো লেড (LED) এর সাহায্যে জাজ্বল্যমান থাকে। আর বিদেশের মাটিতে প্রেসিডেন্টের এই দানব গাড়িটিকে বহন করে নিয়ে যায় Boeing C-17 Globemaster III নামের সামরিক পরিবহন বিমান।
সংক্ষেপে ক্যাডিলাক ওয়ানঃ
এটি ৮০০০ সিসির গাড়ি
মূল্যমানঃ ১.৫ মিলিয়ন ডলার
দৈর্ঘ্যঃ ১৮ ফুট
উচ্চতাঃ ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি
ভরঃ ৮ টন (মতান্তরে ১০ টন)
ইঞ্জিনঃ ৬.৫ লিটার ডিজেল ইঞ্জিন। ধারণা করা হয়, এটিতে জেনারেল মোটরসের Duramax ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন রয়েছে।
ফুয়েল ইফিসিয়েন্সিঃ প্রতি ইউএস গ্যালনে ৮ মাইল
সর্বোচ্চ গতিঃ ঘণ্টাপ্রতি ৬০ মাইল
০ থেকে ৬০ মাইল/ঘণ্টায় পৌঁছতেঃ মাত্র ১৫ সেকেন্ড
অ্যানিমেটেড ভিডিওচিত্রে ক্যাডিলাক ওয়ান
তথ্যসূত্র, ভিডিওসূত্র ও ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট ছাড়া আর কোথা থেকে বলেন!