সবাই জানেন অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসা আর ল্যান্ড ব্যবসা মোটামুটি ভেঙে পড়েছে। আসলেই তা। এই ব্যবসা যে কারণে আর জেগে উঠবে না, তার কয়েকটি তথ্য দিচ্ছি যাতে বিনিয়োগকারীরা একটু সতর্ক হতে পারেন :
১. প্রথমত রিয়েল অ্যাস্টেট ব্যবসায়ীরা ৫০ বছরে যে ব্যবসা করার কথা তারা তা ২০ বছরেই করে ফেলেছেন। গ্যাস ক্ষেত্র থেকে অতিরিক্ত গ্যাস তুললে যে অবস্থা হয়, এক্ষেত্রে তাই হয়েছে। ডিমান্ডের কোন হিসাবই এরা করেননি।
২. ২০৩০ এর পরে ঢাকায় নতুন ফ্লাট বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামবে। যারা বিক্রি করার জন্য কিনছেন, তাদের না কেনায়ই ভালো। ঢাকায় যে পরিমাণ ফ্লাট বিক্রি হয়েছে তা দিয়ে ২০৫০ সাল পর্যন্ত চলবে। (আরেকটু পরিষ্কার হওয়ার জন্য পয়েন্ট.৫ পড়ুন)
৩. ল্যান্ড এবং ফ্লাটে বিনিয়োগ অবশ্যই ভুল বিনিয়োগ। 'নিজের একটা ফ্লাট/বাড়ি' এই স্লোগান ঢুকিয়ে মধ্যবিত্তকে বোকা বানিয়ে ফ্লাট কেনার জন্য দৌড়ানো হয়েছে। ঘুষ আর লোনের টাকা দিয়ে যারা কিনেছেন, তাদের একটা অংশ ফ্লাটের বিনিময়ে ঘুম হারাম করেছেন। লোনের কিস্তি দিতে গিয়ে স্ট্রোকের সংখ্যা বাড়ছেই! ব্যাংক আর রিয়েল অ্যাস্টেট ব্যবসায়ীরা লোভ দেখিয়ে হাজার হাজার ক্রেতাকে বোকা বানিয়ে এখন তাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন, ঘুষের রেইট বাড়িয়ে দিয়েছেন। নাগরিকরা সম্ভবত এ ধরনের ভুল লোভ থেকে বা শস্তা স্লোগানের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে শিখেছেন।
৪. এখন যাদের বয়স ২৫-৩০, তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার একটা দারুণ ট্রেন্ড শুরু হয়েছে - সেটা খুবই শুভ লক্ষণ। একই সাথে যাদের বয়স ৪০-৪৫ গত ১৫ বছর ভালো বেতন পেয়েছেন, তারাও কেউ কেউ চাকুরি ছেড়ে আবার কেউ কেউ পাশাপাশি উদ্যোক্তা হচ্ছেন। মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার যে হাওয়া লেগেছে তার পূর্ণ সুযোগ নিতে তরুণ পেশাজীবীরা প্রস্তুত এবং তারা দৌড় শুরু করে দিয়েছেন। এই জেনারেশান, ল্যান্ড আর ফ্লাটে বিনিয়োগ করবে না - ভেরি ক্লিয়ার। সেটা ২০২৫ থেকে পুরোপুরি পরিষ্কার দেখা যাবে।
৫. পুরনো ফ্লাট আর ল্যান্ড বিক্রির আগ্রহী বিক্রেতা বেড়ে গেছে। একটা অংশ দেশ ছেড়ে চলে গেছে, আরেকটা বড় অংশ যাবে। ঘটিবাটি বিক্রি করে প্রচুর লোক বাংলাদেশি পাসপোর্ট ত্যাগ করে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে এবং যাবে। নতুনের চেয়ে আগামীতে পুরনো ফ্লাটের বিক্রেতা বাড়বে কিন্তু বাড়বে না ক্রেতা। ফ্লাট এবং ল্যান্ডের জন্য আগামীতে আরো দুঃসংবাদই আসবে।
৬. একটি ভয়াবহ ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, জনসংখ্যা ২০৫০ সালে ৩২ কোটি হবে। এটা পুরাই ভুয়া ফালতু হিসাব। লক্ষ লক্ষ পরিবারে এখন দু সন্তান বা এক সন্তান। এই একটা অংশ আবার যাচ্ছে বিদেশে। খেয়াল করে দেখবেন, দেশে এস এস সি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে না! ২০২৫ এর পরে এটা কমবে! নিশ্চিত থাকুন।
এখনি ১ কোটি লোক বিদেশে আছে এবং তারা অনেকেই অবিবাহিত, তরুণ আর যারা বিবাহিত সঙ্গত কারণেই তার সন্তান সংখ্যা কম। ২০৫০ সাল নাগাদ আরো ৩-৪ কোটি যাবেন। পয়দা হবে কম এবং বেশ কম!
৭. আসছে পদ্মা সেতুর ধাক্কা! এটি ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে দারুণ স্লো করে দিবে। পদ্মা নদীর দুই তীর ঘিরে হংকং এর আদলে শহরায়ন হবে, গার্মেন্টস অনেক চলে যাবে মুন্সিগঞ্জ আর শরীয়তপুরে। ঢাকার জনপ্রবাহ অনেক ঠেকাবে এই পদ্মাসেতু। গাজিপুর, ময়মনসিংহের মতো হবে এই দুই জেলা।
৮. ২০২১ থেকে দুর্নীতি কমা শুরু হবে যদি সরকারের " অল থ্রু অনলাইন " পরিকল্পনা ২০২১ এর মধ্যে শেষ হয়। সেক্ষেত্রে ল্যান্ড এবং ফ্লাটের ব্যবসায়ে আরো ধ্বস নামবে।
৯. তরুণরা দৌড়াচ্ছে, মানুষদের গতি আর বাড়বে - গতি বাড়লে সেক্স ট্রেড বাড়ে কিন্তু জনসংখ্যা কমে। ২০৫০ নয়, ২০৩০ এই জনসংখ্যা স্থির হয়ে যেতে পারে। আগামী ১৬ বছরে অন্তত দেড় কোটি লোক বিদেশের শ্রম বাজারে যাবে যার অধিকাংশ তরুণ তরুণী। খারাপ ভালো জানি না, তবে নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার গতি বাড়ছে এবং তা হয়তো এক দশক পরে জাম্প করবে যদি না সরকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে নারী শ্রমিকদের বাহিরে যাওয়া বন্ধ না করে দেয়।
এই ৯টি কারণ ছাড়াও আছে আরো কিছু কারণ। আপাতত এই ৯টি যথেষ্ট আপনি ফ্লাটে বা জমিতে বিনিয়োগ করবেন কি করবেন না!
ভালো থাকুন সবাই।