একটা সময়ে সরকার যখন ভিক্ষুকমুক্ত করার বিভিন্ন প্রকল্প নিতো তখন আমি খুব মজা পেতাম। কারণ ওই ভিক্ষুকমুক্ত করার যে অর্থ তা আবার অন্য দেশ থেকে ভিক্ষা করে আনা হতো। পরনির্ভরতার সেই দুঃসময় যেন কেটে যাচ্ছে আমাদের।
পদ্মাসেতুর টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে এই বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক ১টা টাকা না দিয়েই ঘুরালো তিন বছর। সময় নষ্ট করে খরচ বাড়িয়ে দিলো অনেক বেশি। অর্থমন্ত্রীর ভাষায় বিশ্বব্যাংক নিজেই যখন দুর্নীতিগ্রস্ত তখন টাকা না দিয়ে দুর্নীতির প্রসঙ্গ আনা পদ্মা সেতুকে পিছিয়ে দেয়ার নামান্তর। বিশ্বব্যাংকের এমন কোন প্রকল্প কি আছে যেখানে দুর্নীতি নেই?
যেদিন থেকে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিলো নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানাবে এবং বিশ্বব্যাংকে কড়া ভাষায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলো ,বাংলাদেশ সেদিন থেকে উন্নয়নের 3G লেভেলে যাত্রা শুরু করেছে।
যখন দালালরা বললো , সরকারের সিদ্ধান্ত হাস্যকর, তখনোও কেউ চিন্তাও করেনি পদ্মা সেতুতেই থেমে নেই বাংলাদেশ, ৩৬০০০ কোটি টাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানোর ঝুঁকি নিতে পারে। কেউ চিন্তাও করেনি বাংলাদেশে এলিভেটর এক্সপ্রেসের কাজ শুরু হবে,ঢাকার এয়ারপোর্ট রোডে অসাধারণ সব ফ্লাইওভার হবে নিজের টাকায়, নিজের পরিকল্পনায়।
সরকার দ্রুততম সময়ে হাজার সমালোচনা সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন তিনগুণ করে ফেলেছে। ২০০৯ এ মোবাইল ব্যবহারকারী ছিলো ৫.৫ কোটি এখন ১৩ কোটি। কিন্তু সে সব ছাড়িয়ে যে ঘটনাগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নের বুনিয়াদ গড়ে তুলছে, বাংলাদেশের অনেকগুলি সাহসী সিদ্ধান্ত। যেমন -
ঘটনা - ২০০৯:
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাংলাদেশ বিরোধী কার্যক্রমের জন্য দুটো এনিজওর নিবন্ধন বাতিল করেছিলো প্রধানমন্ত্রীর আওতাধীন এনজিও অ্যাফেয়ার্স, কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিব্ন্ধন ফিরিয়ে দিতে হয়েছিলো।
ঘটনা ২০১৫:
সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ডেকে সেখানে তাদের ৩.৮ মিলিয়ন ইউরোর অর্থায়ন বন্ধ করতে বলেছে এবং একটি এনজিওর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছ – যা করার মতো শক্তি বাংলাদেশের ২০০৯ এও ছিলো না।
এবং সরকার কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প’ কক্সবাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার।
যারা এ বিষয়ে জানেন , তারা ভালো করেই বুঝেন যে, এটি কত বড় সাহসী ঘটনা। এবং কতবড় ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত ২৪ বছন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের ভূখণ্ডে জায়গা দিয়ে বাংলাদেশ কী পেয়েছে ? পুরো কক্সবাজারের মূল ব্যবসা রোহিঙ্গারা নিয়ে নিয়েছে, ইয়াবা দিয়ে পুরো দেশ ধ্বংস করছে, মানব পাচারের হাজার কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা গড়ে তুলেছে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সারা বিশ্বে বিভান্ন স্থানে মারামারি করে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন করেছে।
এসব থেকে বাংলাদেশ যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠছে, তার যা করা উচিত, সেগুলো করার সাহসী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে একের পর এক। জনগণের মাঝে এই সাহসের ঢেউ লাগবেই। একটু একটু লাগছেও। তখন যারা অন্যের পা চেটে অভ্যস্ত তারাও সাহস ফিরে পাবে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেই দেশকে স্বাধীনতার পর ভিক্ষুকের মতো গত চার দশক ঘুরতে হয়েছে, দেশের বড় বড় সম্পদ অন্যদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছে, যখন তখন ধমক খেয়েছে, অভ্যন্তরিন বিষয়ে যে যখন ইচ্ছে, সে তখন ধমক দিয়েছে।
ধমকাধমকির দিন শেষ, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যে সাহসী যাত্রা শুরু করেছে , সে সাহস ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে, নাগরিকদের হৃদয় থেকে হৃদয়ে। কোন নাগরিককেই যেন কারো পা চেটে, মাথা নত করে বাঁচতে না হয়।
সাহসকে কোন অর্থনৈতিক সূচক দিয়ে মাপা যাবে না। কিন্তু সাহসই অর্থনীতির প্রতিটি সূচককেই পাল্টে দেয়। প্রতিটি নাগরিকের রক্তে রক্তে সে সাহস সঞ্চারিত হোক।