রাজ্যের আলসেমি ভর করে আজকাল। ঘুম থেকে উঠতেই মন চায় না। কি বাইরে ,কি ঘরে সব খানে যেন শুন্য শুন্য গন্ধ লেগে আছে। ক্লাস থাকলে ঠিক ঠিক চলে যায় দিন গুলি। ব্রাস করে বাইরে গিয়ে কিছু খেতে হবে।
ঈদের ছুটির আমেজ এখনো ঢাকা শহরের রাস্তা ঘাটে লেগে আছে। হুস হুস করে ছুটে জাচ্ছে লোকাল বাস, পাশে অসহায় ভিখিরি রাস্তার পাসে ব্যাগ থেকে কি যেন বের করে মুখে পুরে দিল। গতকাল ভোর রাতে ঢাকায় পা দিয়ে আজ পর্যন্ত কিছু পেটে যায় নি। খিধের জ্বালায় পেটে গুরুম গুরুম শব্দ শুরু হয়ে গেছে। খিদে টা ভালই লাগছে, মাথা ঘুরা ঘুরা ভাব নিয়ে রাস্তার এপাশ ওপাশ করতে করতে টঙ্গের দোকানে গিয়ে বিড়িতে প্রথম টান দিয়েই মনে হল সাথে এক কাপ চা না হলে চলবে না। আকাশ কালো হয়ে ঝুম বৃষ্টি শুরু হল। আচ্ছা দু দিন আগে দেখা গ্রামের বৃষ্টি আর এখানের বৃষ্টি কি আলাদা ? এখানে টিনের চালের শব্দ নেই , সো সো আওয়াজ টাও নেই। বাবালা চাচার পাগলামি নেই। একটা সিগারেট নয় টাকা চা দিয়ে পনেরো টাকা। বাড়ি থেকে আসার সময় বাবা টাকা দিয়ে বলল অপচয় না করতে। বিড়ি টা মনে হয় অপচয় হল। আচ্ছা আমার ছেলে যদি বিড়ি খায় আমার কি খারাপ লাগবে?
হাজার রকমের চিন্তা করতে করতে আবার ঘরে আসে দেখি বুয়া নাই , বরিশালে বাপের বারিতে টাইফয়েড নিয়ে হাসপাতালে পড়ে আছে নাকি। যাক বাচা গেলো, বাজার করতে হবে না। বাজার করতে ভালই লাগে কিন্তু দোকানদার টাকা নিয়ে খুচরা ফিরত দিতে গিয়ে যে কিছুখন দেরি করে ঠিক তখন আর সহ্য হয় না। বাজার সদাই বুয়াই করে আনে। দু চার টাকা চুরিও করে। তের পেলেও কিছু বলা হয় না , চুরি না করতে দিলে থাকবে নাকি?
আচ্ছা আব্বা যদি আর টাকা না দেয়, যদি বলে নিজেরটা নিজে দেখ। লেখা পড়া টা শেষ হবে না, কোথাও কোনও অফিসে পিওন টাইপ চাকরি করতে হবে। দাদু এত টাকা তঁ আব্বার জন্নে খরচ করে নি। আমার চাইতেও অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। আমি কি পারবো এখন ? না মনে হয়। সকারি ভার্সিটি তে পড়লে খরচ কম লাগত, এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো তে টাকার বস্তা নিয়ে বসে থাকতে হয়। এই সেমিস্টার এ ৯০ হাজার টাকা নাকি দিতে হবে। এরা পারেও টাকা নিতে আমারাও পারি দিতে। হায় দেশ , এর পর ও শুনতে হয় “ও বেসরকারি । স্কলারশিপ এরেঞ্জ করতে পারলে টাকা কিছু টা কম লাগে। সেই স্কলারসিপ আনতে গিয়ে ওজন ৫ কেজি কমে গেল।
একটা প্রবলেম প্রিন্ট করা, এলগরিদম করা হয় নি , এলগরিদম করে তার পর আবার একে প্রগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে আনতে হবে। কাজ টা শেষ করেতেই হবে। একটা ঘুম দিলে মাথা টা ঠাণ্ডা হয়, ঘুম টা দিয়েই কাজ শুরু করতে হবে। কয়েক দিন টেবিলে না বসে ধুলো পড়ে আছে সব বই আর উপর টায়।
ঘুমাতে যাবার আগে সেলফ সাটডাউন মুডে পিসি রেখে একটা গান ছেড়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে, মায়ের সেলাই করা কাথা নিয়ে আবার দুপুরে ঘুমানোই ভালো হবে বাইরে গিয়ে লাঞ্চ করার চাইতে। ঘুমে চোখ জড়িয়ে জাচ্ছে, গান টা এত শুন্দর না শুনে মরে জেতেও ইচ্ছা করছে না। গানের কথা গুলোও অদ্ভুত, আচ্ছা আমার মাও কি তার বাবার বাড়ির কথা মনে করে, তার শৈশব......... এই গান টাই লিঙ্কে গান
ঘুম থেকে উঠে বিকেলে আর বাইরে জেতে ইচ্ছা করল না, বাইরের কেচ ম্যাচ এখন সকালের চাইতেও বেশি মনে হচ্ছে। ঘরে খাবার তৈরি করতে করতে এশার না মাগরিবের আজান দিল বুঝা গেলো না । খেয়ে এক কাপ চা খেয়ে টেবিল সংস্কার করলাম। এবার সমস্যা টা নিয়ে বসা যাক। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে ঘড়ি টা চোখের সামনে থেকে খাটের নিচে রেখে দিলাম। কাজ টা অর্ধেক শেষ না হতেই মনে হলও নাজকে রেজাল্ট দেবার কথা, নেটে ঢুকে দেখলাম সব ঠিক ঠাক মন টা ভালো হয়ে গেলো। সব প্লাস শুধু একটাতে এ । যাক এই সেমিস্টার টা গেলো।
মন বেশি খুসি থাকলেও কাজ হয় না। রেজাল্ট বাসায় বলা দরকার , জদিও CGPA কি আমার আব্বা মা খুব কম ই জানে, তবুও বলা দরকার। অনেক রাত এখন আর ফোন দেয়া যাবে না, কালকে বললেই হবে। হাই স্কুলে , কলেজে আমার কোনও ভালো রেজাল্ট বাসায় আসতো না, সব খারাপ খারাপ ছেলেরা যেমন করত আমিও ঠিক তেমন ই করতাম। এখন পরতে ইচ্ছা করে পরি , তখন পরতেই ইচ্ছা করত না। মাস্টার দের হাতে বেত দেখলেই আমার পরা মনে থাকতো না। মাইর খাইতাম আমি সব চাইতে বেশি। এর হরেক রকম কারন ছিল।
এখন আর ছেলে বেলা নেই , এখন বড় হচ্ছি তার পর বড় লোক হতে হবে, আরও কত কি।
ঘাড়ের বেথা টা এখনো যায় নি, মিজানুর ছেলেটা ভালো ছিল, গ্রামের মসজিদের ইমাম ছিল, সাদা ধবধবে পাঞ্জাবিটা কি লাল হয়ে গেলো মুহুরতেই। ঢাকায় আসার চার দিন আগে ঈদের পর দিন গ্রামের বন্ধুটা মারা গেলো মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে। ওর লাশ টা খুব বেশি ভারি ছিল, খাটলি কাধে নিয়ে কবর পর্যন্ত যেতেই ঘাড়ের বেথা। বারান্দায় চক চকে চাদের রুপালি আলোয় ছেলেটার মুখ যেন এখনো দেখা জাচ্ছে।
২২/১০/২০১৩---১১/১৭/২০১৩
আজও ঘুম থেকে উঠতে দেরি হল, বাস স্টপ এ মানুষ গিজ গিজ করছে,এত মানুষ এ কোথায় থেকে আসে ভেবে পাই না আর আসে সুধু এই ঢাকা শহরেই যেন। লেগুনা , বাস , সি এন জি একটাও নাই। পা টা সুধু ধরা বাকি কেউ নরে না , কসম খাইছে এরা আজকে যাবে না। শেষ মেশ এক সি এন জি পাইলাম। পকেটের অবস্থা বেজায় রকমের খারাপ! ১৫ টা দিন বাইক ছাড়া ঢাকা শহর আমার ১২ টা বাজায়া দিছে। যা হবার হউক আগে কেম্পাসে অন টাইমে যাই টাকা না থাকলে পরে লোকাল বাসে যাব , টাকা থাকতে কষ্ট করার মানেই হয় না।
সকালের ভীর আর দুপুরের ভিরের মধ্যে কি একটা অমিল আছে যেন, সকালে সবাই শান্ত , দুপুরে ঠিক একি জায়গায় একি মানুষেরা যেন অন্য রকম। আজকাল বাইক ছাড়া অন্য কিছু তে উঠলে ভয় লাগে।
দেখেত দেখেতে এই ভার্সিটি তে একটা বছর কেটে গেল। ভাল গেল না খারাপ গেল বুঝলাম না বাট গেল তো ! আরও দুইটা বছর। মাঝে মাঝে এখন ক্লান্ত লাগে, ছেরে ছুরে কোথাও ভেগে জেতে ইচ্ছা করে আবার মাঝে মাঝে মনে হয় শেষ টা দেখেই যাই। সেই কবেকার কোথা সব উল্টে গেল, আবার টেনে টুনে কনও ভাবে কুঁড়ে ঘরের মত একটা জিনিস হয়ে গেল, এখনো নরে চরে মাঝে মাঝে। ২০১০-২০১২ দুইটা বছর !! যাক গেছে তো ? ভাল গেল না খারাপ গেল তাতে কি?
আবার বসা চেঞ্জ করতে হবে এই মাসের শেষে, রিফিউজি লাইফ !
নতুন বাসার বিসাল অবস্থা। ১০ তালায়। ভয় ভয় লাগে বাট উপরে থকার মজাই আলাদা। ঢাকা শহর টাকে বিল্ডিং এর গ্রাম লাগে।