somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ- বইমেলা ২০১৭ এ সায়ানতানভি ভাইয়া আর ফরহাদ মেঘনাদভাইয়ার বই

০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এই নাম আর বইটির প্রচ্ছদ নিশ্চয় পুরো ফেব্রুয়ারী মাসটা জুড়ে সবারই চেনা ও জানা হয়ে গেছে। হ্যাঁ ফসিল ১৪টি ছোট গল্পের সমারোহে আর নির্ঝর নৈশব্দভাইয়ার অসাধারণ প্রচ্ছদে এই গল্পের বইটি লিখেছেন আমার অনেক অনেক প্রিয় এবং এই ব্লগের সকলেরই প্রিয় একজন ভাইয়া সায়ান তানভি। ভাইয়ার গল্প যেদিন এখানে পড়ি সেদিনই বুঝেছিলাম ভাইয়া একদিন সায়ান তানভিই হবে।

ছোট ছোট গল্পগুলি যদিও ব্লগে আগেই পড়া ছিলো তবুও পড়তে গিয়ে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত ডুবে রইলাম একের পর এক লেখার মাঝেই। প্রথম গল্পটির জেরিন আর তার স্নিগ্ধ মধুর কিন্তু দৃঢ় অভিব্যাক্তিটি যেন গল্পের ছোট ছোট অক্ষরগুলির মাঝ দিয়ে বই এর পাতায় ফুটে উঠলো আমার চোখে। বৈদ্যুতিক তারে বসে থাকা কাক, ড্রেনের জলে ভেসে যাওয়া রঙ্গিন পলিথিন দেখা আমি বয়ানের নায়কের চেহারাটি এবং দৃশ্যকল্পের অসাধারণ বর্ণনায় মুগ্ধ হয়েছি আমি! এ গল্পে সময়ে বেঁধে দেওয়া প্রেম ও কামের এক অজানা মোহের জগত ও অবশেষে হেরে যাওয়া অথবা জিতে যাওয়া নায়কের শেষ বিস্ময়কর অনুভুতি আমাকেও বিস্মিত করে রেখেছিলো বেশ কিছুটা সময়।

"নিরাক গোধূলী" গল্পটিতে এ যেন আমার ছোটবেলায় পড়া পথের পাঁচালীর গল্পটির আরেক অপুর দেখা পাওয়া যায়। ছেলেবেলায় মা হারানোর বেদনা যত না ছিলো তার, বড় হবার পরে সেই তারই বুকের মধ্যে এক অজানা হাহাকার ছুঁয়ে যায় আমাকেও। সকল পাঠককেই হয়তো ছুঁয়ে যাবে।

"রুটি" গল্পটিতেও দেখা যায় এতিমখানায় এক অনাদরে বেড়ে ওঠা নিষ্ঠুর নির্লিপ্ততার একটি ছেলেকে যে তার মাঝে বারংবার এক কুরে খাওয়া বেদনা বহন করে চলে। নিজেও ক্ষুধার কষ্ট সে কম অনুভব করেনি তারপরও নির্বিকার নির্দ্বিধায় সে এমন একটি অন্যায় করে ফেলে যেই বেদনা ছুঁয়ে যায় পাঠককে।

এভাবেই ভাইয়ার গল্পে নানা রকম চরিত্রের নানা রকম অনুভুতি কখনও সি এন জিওয়ালা, কখনও ভীতু কিন্তু অসম্ভব পজেসিভ সাহসী প্রেমিক পুরুষ বা প্রতিবেশীনী আয়েশা আপার দুঃখে কাতর একটি যুবককে দেখা যায়। সব কিছু ছাপিয়ে অনুভুতি প্রকাশের দক্ষ লেখনী বার বার মুগ্ধ করেছে আমাকে।


ভাইয়ার শ্রেষ্ঠ গল্প "প্রেম" যেখানে এক রুপজীবিনীর সাথে এক নির্দয় ভালোবাসাহীন যুবকের অসাধারণ ভালোবাসার গল্প লিখিতে হয়েছে। এইভাবেই নানা রকম মানুষের বুকের মাঝে যেন ঢুকে গিয়েই বসে বসে লিখেছে ভাইয়া গল্পগুলো। যতই পড়েছি ততই মুগ্ধ হয়েছি। "লাক্সারী বাসের" যুবক বা "ফসিলের" একশো তিন বছরের বৃদ্ধের অসাধারণ স্মৃতিচারণ বর্ণনায় ভাইয়ার লেখকশৈলী সত্যিই মুগ্ধ করার মত।

আমার ধারণা আমি আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্ক দিয়ে ভাইয়া বা ভাইয়ার লেখনী বিশ্লেষন করার ক্ষমতা রাখিনা কাজেই যারা বইটি পড়েছে বা পড়বে তারা আরও অনেক কিছুই আবিষ্কার করবেন। ভাইয়ার প্রতি রইলো একরাশ ভালোবাসা, মুগ্ধতা ও শুভকামনা! ভাইয়া তুমি অনেক বড় হও।

সায়ানভাইয়ার ব্লগ - সায়ান তানভি

ট্রাকচাপায় নিহত ঘুমগুলো ।


এটা একটা কবিতার বই। লিখেছেন আমার প্রিয় ফরহাদ মেঘনাদভাইয়া।
এই ভাইয়ার সাথে পরিচয় আমার গানের ভেতর দিয়ে। ভাইয়া একজন গীতিকার। তার গান শুনে আমি যখন হাবুডুবু তখনই শুনলাম আর জানলাম এবং পড়লামও ভাইয়ার কবিতা। তাই এবারের বইমেলায় শুধু একটা না আরও কয়েকটা নিয়ে আসলাম তার বই নিজে পড়বার জন্য ও অন্যদের উপহার দেবার জন্যও। ভাইয়ার উন্নত এবং একেবারেই ভিন্নরকম করে ভাবা চিন্তা চেতনা এবং অসম্ভব উন্নত ভাষাশৈলীর সাথে যে অসাধারণ যোগসাজোস তা আসলে ভাষায় বর্ণনার মত নহে। খুব অবাক হয়ে যখন পড়ি-

সব কথা কি শোনার থাকে লোক?
কিছু কথা ঘাসের সাথেই হোক।

অবাক লাগে আর অবারও অবাকই হই আমি!!! কই এমন করে ভাবতে পারিনা তো আমি....

মাঝ রাস্তায় গুড়ুম করে ফুল ফুটেছে
ফুলের কাটা স্প্লিন্টারে দুই প্রাণ লুটেছে
ফুল যদি না ভাবতে পারো রুখে দাঁড়াও
দাঁড়িয়েছিলাম, হাত উপরে, বিলর্ড বললো চামড়া ছাড়াও।

বোমা ফোটার সাথে ফুল ফোটার তুলনা! এও কি সম্ভব! আর তুলনাটা করেই ফেল্লে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান!

ভাইয়ার কবিতা "বৃথাই"। একবুক হাহাকারের মাঝেও স্বপ্নীল হাত ছোঁয়া-
সাদা পৃষ্ঠায় বাইসাইকেল লিখছি, তাতেই উড়ছি
কিছু সুঘ্রানও এর ওর জন্য তাতে চড়ে খুঁজে যাই
সাদা পৃষ্ঠার শূন্যতাটাকে তোমার আদল দিচ্ছি
আমার জন্য তোমার প্রতিও করা তাতে বনসাই.......

ভাইয়ার কবিতায় অসাধারণ সব ভাবনা। চিন্তা এবং চেতনা.....
কাঠঠোকরা
কিচ্ছু বলিনি, বারণও করিনি আমি
পাগলি যখন পাখি হতে চেয়েছিলি
ধনেশ, চড়ুই, শালিক না হয়ে তবু
পাগলি কেনো রে কাঠ ঠোকরাই হলি?
কাঠঠোকরাই না হয় হলি কিন্তুু
এবুকটাকেই ভাবলি কেনোরে কাঠ?
কাঠই না হয় ভাবলি কিন্তু বুকের-
দুঃখপোকা না খুঁটে, কেনো চুকালি বুকেরি পাঠ?
যাইহোক ভাইয়ার অবাক করা কবিতাগুলি নিয়ে লেখা বইটি থাকবে আমার হৃদয়ের অলিন্দে সারাটাজীবন।

ভাইয়ার লেখা গান......
যদি আসবিনা ঘুম, কেন আগে বললিনা?
আচ্ছা
Divorce by Farhad Meghnad
ভাইয়ার গাওয়া গান
ব্লগ- ফরহাদ মেঘনাদ



সবশেষে, জিনিভাইয়া, আশিকুরভাইয়া, কাজী ফাতেমা ছবি, গেমুভাইয়া, অপু তানভিরভাইয়া, মোজামভাইয়া,জাহিদ অনিকভাইয়া, সত্যের ছায়াভাইয়া, রুপক সাধুভাইয়া, আমার অনেক প্রিয় একজন ফরহাদভাইয়া,শাকিলভাইয়া, এস কে ফয়সালভাইয়া,গিয়াসভাইয়া
খায়রুলভাইয়া, রাতুলভাইয়া, সাবিহা আপু,কারিমা, মৌমনি, জেসনভাইয়া, সুলতানা আপু, সায়ানভাইয়া, হাবিব শুভভাইয়া, ইখতামিনভাইয়া, নেয়ামুলভাইয়া,তারিকভাইয়া, এস কাজি, এম এ আলীভাইয়া, হৃদয়ভাইয়া সকলের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা। :) :) :)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৪৫
৫৭টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×