somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইমেলা ২০১৭- মন পবনের নাও এবং দূরের মানুষ কাছের মানুষ - কবি ও কবিতারা

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"মন পবনের নাও""দূরের মানুষ কাছের মানুষ" এই কবিতার বই দুটির নাম আমরা এই ব্লগের অনেকেই জানি। বই দুটি লিখেছেন আমার অনেক অনেক প্রিয় দুইজন আপু কাজী ফাতেমা ছবি ও রাবেয়া রাহীম আপু। "মন পবনের নাও" বইটির নামটা শুনলেই মনে ভাসে মহুয়া সুন্দরী, নদের চাঁদ, বেহুলা বা লক্ষীন্দরের রুপকথা বা মিথের চরিত্রগুলির মুখে গাওয়া কোনো গানের কলি। সে কথার আরও বেশি সত্যতা আমার মনে প্রতিষ্ঠিত হলো যখন আপুর বই এ মন পবনের নাও কবিতাটি পড়লাম-
মন পবনের নাও ভাসাইয়া যাচ্ছো কোথায় একা
আমায় ছাড়া জলে পাবে হিংস্র প্রাণীর দেখা!


সে যাইহোক বইমেলা ২০১৭ তে আমার হাতে পাওয়া মন পবনের নাও কবিতার বইটিতে আমার লেখিকা আপুর সহজ সরল বক্তব্য ও মনের গভীরে বয়ে চলা কথকতার সন্ধান পাওয়া যায়। যদিও বইটিতে নানা রকম কবিতা মিলে মিশে একই সাথে রয়েছে তবে বইটি পড়ার পরে আপুর কবিতাগুলিকে আমি কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা, স্বদেশ, অব্যাক্ত অপূর্ণ ইচ্ছাগুলি এবং ভালোবাসার মানুষেরা।

এই বই এর প্রতিটা কবিতা ছন্দবদ্ধ এবং ছন্দে ছন্দে প্রতিটা কবিতাতেই বড় সহজ সরল বন্দনায় রচিত হয়েছে "প্রার্থনা" বা "তার দয়াতেই বাঁচি" কবিতাগুলি যেখানে কবির মনের আর্তি ও ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতার পরিষ্ফুটন ঘটেছে। আবার "স্বার্থ ভুলে মিলে মিশে থাকি" বা "অল্পে তুষ্টি", "শুদ্ধ রাখি মন সদা" এসব কবিতায় নৈতিকতার সাথে আমাদের শৈশব হতে শেখা চির স্মরনীয় বাণীগুলিই যেন মনে করিয়ে দেয়। এছাড়াও আশে পাশের মানুষগুলো বাবা মা, ভাই বোন, বন্ধু বান্ধব হতে শুরু করে দেশ ও প্রকৃতির প্রতি যে কবির মনের ভালোবাসা তা কবিতার ছন্দে ছন্দে মনোরম হয়ে ফুটে উঠেছে। এসব কবিতা যেন নিয়ে যায় আমাদের শৈশবে বা সোনালী কৈশোর বা হারানো দিনগুলোতেই।

কোথায় তুমি দূরের তুমি হারাও চোখের নজর
তোমার জন্য চোখে দেখো অশ্রু ঝরে অঝর
এক পলকে হারাও তুমি চোখের ভেতর নদী
সেই নদীতে ঢেউ উছলায় হায়রে নিরবধি।


তবে এ বই এর প্রেমের কবিতাগুলি আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। কবিতাগুলিতে এক চঞ্চল উচ্ছল বর্নীল প্রজাপতির পরম আকাংখা ও ইচ্ছার প্রকট প্রকাশ একই সাথে না পাওয়ার বেদনায় ভারাক্রান্ত এক ডানা ভাঙ্গা পাখির বেদনার্ত করুন স্বরের আভাসও সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়েছে।
মাঝে মাঝে অবসাদে, নুয়ে পড়ে মনটা
পাশে দেশি কেউ বসে নেই একলা একা ক্ষনটা।
সবাই আছে পাশে আমার চোখ ফেরালে দেখি
তবু কেনো একা হয়ে হাজার কাব্য লিখি.....


বা

অস্থির লাগছে বসে বসে সময় দীর্ঘশ্বাসে
অসময়ে দুঃখ এসে লাগলো বুঝি চাষে।
দুঃখের কথা উড়ে এসে কানের মাঝে বসে
নিয়ে গেলো দুঃখের দেশে মনটা গেলো ধসে।


আপুর কবিতার সব চেয়ে বড় বিষয়টি আমি খেয়াল করেছি কবিতাগুলি প্রাঞ্জল ভঙ্গিমায় লিখিত হওয়ায় বক্তব্য সুস্পষ্ট যা অবশ্যই সহজবোদ্ধতার দাবী রাখে আবার একই সাথে কোনো রকম রুপক বা মেটাফোর ব্যাবহার না করায় আধুনিক কবি ও কবিতাগুলির কাছে কিছু দীপ্ততা হারাবে হয়তো। তবে সবকিছুর পরেও কবিতাগুলি পড়ার পরে এক সহজ সরল সরলতার পরশ বয়ে যায় হৃদয়ে! আপু অনেক অনেক ভালো থেকো সারাটাজীবন এমনই সরলতায় আর নির্মলতায়। তোমার জন্য ভালোবাসা আর শুভকামনা !!!!!! :)



রাবেয়া রাহীম আপুর "কাছের মানুষ দূরের মানুষ" বই এর নামটিতে জড়িয়ে আছে জীবনের নানা অধ্যায়ে নানা সময়ে কাছে থাকা বা দূরে চলে যাওয়া পরম মমতায় স্মরণ করা প্রিয় মানুষদের কথাই যেন। তবে বইটি পড়তে গিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনে হয়েছে এ যেন নিজের সাথে নিজের কথা বলা! নিজের আত্নকথন বা মনের গভীরে লুকিয়ে রাখা সুখ, দুঃখ, প্রেম ভালোবাসা, পাওয়া ও না পাওয়ার অব্যাক্ত কথনগুলিই কবিতার পংক্তি হয়ে উঠে এসেছে।

আপুর কবিতায় সবচেয়ে যে জিনিসটি আমাকে বেশি টেনেছে তা আপুর কবিতার রোমান্টিক আবহ তৈরীর অপূর্ব ক্ষমতা!
আমার পাতলা ঠোঁটে গল্পের খই, অবাক করা কাছে টানে তোমায়-
অঙ্গের বাঁধনে বেঁধে আমায়, অবাধ্য চুলগুলোকে বশে আনতে
মরিয়া হয়ে বিজয়ী সৈনিকের মত উৎফুল্ল হয়ে তুমি বল
তুমি শ্রেষ্ঠ বলেই অনায়াসে বলতে পারি, কিচ্ছু জানিনে
শুধু বলি ঈশ্বর সাক্ষী!
প্রতিদিন যেন নতুন করে তোমার প্রেমে পড়ি।


কোনো কোনো নয় বেশিভাগ কবিতাতেই নস্টালজিয়া ঘিরে রাখে পুরোটা সময়! কবিতার কথামালার সুতো ধরে আমিও চলে গেছি আপুর সোনালী অতীতে। কল্পনার তরী বেয়ে আপু কবিতাতে কবিতাতে নিয়ে গেছেন সেই অজানা পুস্পগন্ধী পথের রাঙ্গা ধুলোয় যেখানে কবির ভাষায়-

রাস্তায় দুপাশের গাছগুলোয় ফুলের কুঁড়িতে অজানা কিছু গন্ধ
অনেক আগে রোজ তুমি পাশে থাকতে যখন
অদ্ভুত মাদকতাময় এই সুগন্ধী ছেয়ে থাকতো
আর আমি বুকভরে শ্বাস নিতাম- প্রেমে ডুবে যেতাম
এমন সুগন্ধ গন্ধ অন্য আর কোন ফুলে খুঁজে পাইনা
আজকে অনেক দিন পর এই গন্ধ আবার পেলাম
তুমি আসছো কি?


কবিতার পাখা মেলে কখনও কবি আপুটি চলে গেছেন কোনো পাহাড়ী উপত্যকার রাঙ্গামাটির এক চিলতে কুঁড়েঘরে। যেখানে প্রেমময়ী তরুনী ও প্রেমিক তরুণটির অনাবিল অবারিত প্রেম বন্ধনহীন মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ায় শুভ্র কপোত কপোতীর মত নিশ্চিৎ আবেগে।
বাঁধবে ঘর আমার সাথে?
খরস্রোতা নদীর গা ঘেঁষে ছোট্ট একটি টিলা উঠে গেছে,
তার উপরেই-
আড়ম্বরহীন একমুঠো ঘর, কুঁড়েঘরও হতে পারে
পাশেই রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরিতে এক চিলতে উঠোন
উঠোন বেয়ে ঠিক নীচেই সবুজ ধানের ক্ষেত-


কখনও বা গাঁয়ের চঞ্চলা হরিনী কামময়ী প্রেমিকার উদ্দাত্ত আবেগ আহ্ববান! বিহ্বল আকুলতা, নানামুখী হৃদয়াবেগ আমাকে আপ্লুত করেছে।
পীরিতের নজির চাও নাগর?
হাট থেইকা কিনা দেওয়া তাজা ফুলের মালা
রাইখা দিছি যতন কইরা- পীরিত কি আর বাসী অয়, নাগর
তাজা ফুলের লাহান?


কল্পনায় আপু বড় বিচিত্রচারিণী তবে পুরো বইটিতেই কবিতার মাঝে যেন হাহাকার বড় স্পষ্ট! এই হাহাকারের প্রছন্ন ছোঁয়ায় ছুঁয়ে দিয়ে পাঠক হৃদয়-
গোধুলীর রেশ তখনও ছড়িয়ে আছে চারিপাশ
দাঁড়িয়ে আছি খোলা জানালায়, পরণে ঢাকাই শাড়ি।
সতেজ হাস্না হেনার ঘ্রানে পুলকিত মন
মনে হলো তুমি চেয়ে আছো অপলক!

চুলে স্বর্ণচাপা গুঁজে দিতে চেয়েছিলে কি? তাই যেন মনে হল;
দেখে যাচ্ছিলাম দু,চোখ ভরে তোমাকে।
কত কথা বলেছি মনে মনে,
পেয়েছিলে শুনতে?


বইটির সর্বশেষ কবিতা অনিকেত মঙ্গল

মন খারাপ হওয়াটা যেন প্রাত্যহিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে
তিনবেলা আহারের মত, সকলাের নাস্তা বিকালের চায়ের মত
ঠিক যেন হবেই না কোনোভাবে--
তুমি কি কখনও ক্যারাবিয়ান আইল্যান্ডে গিয়েছো অনিকেত?


এই অনিকেত ও এক ব্যার্থ বা সুগভীর কোনো অব্যার্থ প্রেম আপুর কবিতায় দিয়েছে এক সুমধুর ব্যাঞ্জনাময় সুর। প্রেম কিসে ব্যার্থ আর কিসেই বা অব্যার্থ তার কোনো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা জানা নেই আমার তবুও মনে হয়েছে এই অনিকেত প্রেমও খুব খুব পরম সফল হয়ে ওঠে যখন তা কবির কবিতা হয়ে বুকের নির্যাস দিয়ে রচিত হয় পরম মমতায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:১০
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×