somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভ্যাসই অভ্যস্ততা

২১ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




২০০০ এর ৩১সে ডিসেম্বর থাই এয়ারলাইন্সে করে ষ্টকহোমের অরল্যান্ডা এয়ার পোর্টে যখন ল্যান্ড করি তখন ২০০১ এর ১লা জানুয়ারী সকাল ৮ টা। সব ফর্মালেটিস সেরে ভাইয়ার হাত ধরে বের হবার জন্য এয়ারপোর্টের দরজা ঢেলে ফাঁকা করতেই শীতের এমন এক ঝাপটা চোখে মুখে লাগল, মনে হল পুরো শরীর জমে বরফ হয়ে গেল নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, ওমা গো কত্ত শীত!! দুপুর ১২টার মত বাজে কিন্ত সূর্যের কোন আলো নেই, আকাশ কেমন যেন মেঘলা আর কুয়াশায় ঢাকা মনে হল কেবল সকাল হবে।আর নিচের দিকে তাকালে শুধু সাদা আর সাদা। গাড়িতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগল, যে দিকেই তাকাই শুধু সাদা আর সাদা একটু মাটিও দেখলাম না কোথাও।
বাসায় এসে গোসল করে, খাওয়া শেষে দেখি রাত হয়ে গেল, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি মাত্র বাজে ৩টা ! অবশ্য আমার জন্য ভালই হল, আমার ঘুমের দরকার। তখনই ঘুমিয়ে গেলাম। রাত ২ টার দিকে ঘুম ভেংগে গেল, আর তো ঘুম আসে না, দেশের কথা মনে হল , আম্মু- আব্বুর কথা মনে করে চোখ দিয়ে পানি আসল, আরও কত কথা মনে হল। ঘুম তো আর আসে না কি করব কিছুক্ষন বসে কিছুক্ষন শুয়ে আবার কিছুক্ষন রুমের ভিতরই হাটাহাটি করে, জানি না কয়টার দিকে আবার ঘুমিয়েছি।

আবার যখন ঘুম ভাংল তখনও দেখি রাত কেমনটা লাগে!! এমনিতেই মন খারাপ আবার লাগছে ক্ষুদা। চোখের পানির সাথে এবার কান্নার আওয়াজও বের হল। পাশের রুম থেকে ভাইয়া ভাবী দৌড়ে এসে, ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আপুনি কাঁদছ কেন ?
আমি আরো জোরে কাঁদতে কাঁদতে এদেশে রাত শেষ হয় না কেন ?

ভাইয়া,ভাবী হাসতে হাসতে, আরে পাগল এখন তো দিন !! সকালে তোমাকে অনেক ডেকেছি তুমি তো উঠনি , এখন তো দুপুর ২:৩০ বাজে। তুমি প্রায ২৪ ঘন্টা ঘুমিয়েছ।
না, আমি তো মাঝখানে অনেক ঘন্টা জেগে ছিলাম, তোমরা তখন ঘুমাচ্ছিলে।

ভাবী, ওকে এখন উঠ,তোমার ক্ষুদা পেয়েছে,খাবে চল। এভাবেই শুরু হল ঘড়ির কাটায় জীবন চলা। আজান শুনা যায় না,ঘড়ি দেখে নামাজ পড়তে হয়, ৭টায় ক্লাস শুরু,ঘুম থেকে ৬ টায় উঠে সারে ৬ টায় বাসা থেকে বের হই তখন অন্ধকার থাকে আবার আড়াই ৩ টায় স্কুল শেষ হয় তখনও অন্ধকার। প্রথম প্রথম কয়েকদিন খুব খারাপ লেগেছিল এরপর ঠিক করে নিলাম অন্ধকার কোন ব্যাপার না, আমাকে ঘড়ির কাটায় চলতে হবে।
দিন-রাত মোটামুটি একটু সমান্তরালে আসতেছিল কিন্ত এরা করল কি মার্চ মাসের শেষ শনিবার রাত ১২টায় ঘড়ির কাটা টেনে ১টা বাজিয়েদিল, তবু এপ্রিল মাসটা ভালই ছিল। জুন মাসে দিন গুলো এত বড় হল রাত ২টায় সুর্য উঠে চারিদিক আলোকিত করে তোলে তো রাত ১০ টায়ও সে সূর্যের ডুবার নাম নেই । মনে মনে ভাবি বড় রাত তবু ভাল ছিল ঘুমাতে পারতাম আরাম করে। এখন তো রাতের বেলা সূর্যের আলোতে ঘুমই আসে না।
মানুষ চাইলে সবকিছু পারে, আলো আর অন্ধকার কোন ব্যাপার না। আমিও আমার জীবনকে বেধেঁ নিয়েছি ঘড়ির কাটায়। তবে সমস্যা একটু হয়, ছোট দিন গুলোতে যোহর,আসর,মাগরিবের নামাজ এত (১১- ০৩) অল্প সময়ে তিন ওয়াক্ত নামাজ পরা কঠিন হয়ে যায়। এই সময়ে আমাকে হয় স্কুলে বা জবে থাকতে হয়। তবে ইচ্ছা থাকলে আল্লাহ ব্যবস্থা করে দেন ঠিকই।
আবার বরদিন গুলোতে মাগরিব,এশা, ফজর ( রাত ১০- ০২) পরা একটু কষ্ট কর হয়ে যায়। দুনিয়াটা মুমিনের জন্য আরামের জায়গা নয় ভাবলেই কষ্টগুলো আর কষ্ট মনে হয় না।

আর সেই কত্ত শীতই এখন আমার কত্ত প্রিয়। এখনো ভাইয়ার বাচ্চাদের সাথে স্নোবল খেলতে অনেক ভাল লাগে। জুলাই আগষ্টে গরম হয় সর্বোচ্চ ২৫- ২৮ ডিগ্রী, সেটা কয়েকদিন হয়ত বেশীর ভাগ ২০/২২ এর মাঝেই থাকে কিন্ত কি কষ্ট লাগে ঐ সময়টা।

৫ বছর আগে জুলাই মাসের শেষের দিকে দেশে গিয়েছিলাম, এয়ারপোর্টের দরজা টানতেই এমন গরম হাওয়া গায়ে লাগল মনে হল শরীরে আগুনের ছোঁয়া পেলাম।এসি গাড়িতো সবাই ঘেমে যাচ্ছি ভাইয়ার ছোট বাচ্চাদুটো জামা কাপড় সব খুলে ফেলার পর এমন কান্না করছে যা বলার মত না।
বাসায় এসি রুমে কাজ হচ্ছে না ছোট বাচ্চা দুটুই অসুস্থ ভাইয়া ভাবী ওদের নিয়ে হাসপাতালে। ভাইয়ার ৯ বছরের ছেলেটা বলতেছে ফুপ্পী আমি একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি।
কি আবিষ্কার করেছ বাবা?
এদেশের মানুষ দোজখে কষ্ট পাবে না ।
কেন বাবা?
কেন আবার এরা তো আগুনেই আছে। ওর কথা শুনে আর্শ্চযই হয়েছিলাম ।

মানুষ অল্পতেই অভ্যাসেই অভ্যস্ত হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩৭
৪০টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×