পৃথিবীতে যখন জন্মগ্রহন করেছি,আমার একটা জন্মদিন আছে জানি, এই দিনে কেউ কখনো আমাকে উইশ করেনি, কেউ কখনো করবে তাও ভাবিনি, অবশ্য আমার ভাইয়দের,ভাবীদের,আপুর কাছ থেকে গিফ্ট আদায় করে নেই যখন আমার কিছু প্রয়োজন পরে সেটা জন্মদিন উপলক্ষে চেয়ে নেই, সেটা কখনো জন্মদিনের আগেই নিয়ে নেই কখনো জন্মদিনের পরে। জন্মদিন কোন দিক দিয়ে কখন চলে যায় আমার নিজেরই খেয়াল থাকে না ।
মনিকার সাথে আমার দেখা হয়েছিল অক্টোবর মাসে, বছর ঘুরে সেপ্টেম্বর মাসের ৭ তারিখ আমার জন্মদিন। এর মাঝে দুইবার আমাদের ফোনে কথা হয়েছে।
সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ ভোর ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ,নামাজ, কালাম শেষ করে আয়েশ করে নাস্তা খাচ্ছি, সেদিন আমার স্কুল ছিল না তাই কোন তাড়া নেই। আমার ফোনে রিং হচ্ছে,স্কিনে মনিকা নাম দেখে একটু অবাকই লাগল, এত সকালে মনিকা! তখনো আমার খেয়াল ছিল না আজকে আমার জন্মদিন ।
ফোন রিসিপ করতেই, মনিকার কন্ঠে
Ja, må han leva!
Ja, må han leva!
Ja, må han leva uti hundrade år!
Javisst ska han leva!
Javisst ska han leva!
Javisst ska han leva uti hundrade år! ( এ গান গেয়ে সুইডেনে জন্মদিনে উইশ করা হয়)
তখন আমার খেয়াল হয় আজকে সেপ্টম্বরের ৭ তারিখ, আমি স্তব্ধ হয়ে যাই, কিছু বলতে পারছি না।
মনিকা : আমি জানি,তুমি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাও তাই তোমাকে বিরক্ত করি নাই, ১২ : ০১ মিনিটে আমি পুলকে নিয়ে তোমার জন্মদিন উপলক্ষে কেক খেয়েছি।
আবেগে আমার চোখে পানি ও গলা ধরে আসে, আমার জন্মদিন কেউ এভাবে আমাকে মনে রাখতে পারে!! আমি ধরা গলায় কোন রকমে বলি, মিলিয়ন মিলিয়ন থাক মনিকা।
আমার আম্মুর কথা খুব মনে হল আমার আম্মু কখনো আমার জন্মদিনে এভাবে আমাকে উইশ করেনি কিন্ত আমার আম্মুকে দেখেছি তার প্রতিটা সন্তানের জন্মদিনে রাত জেগে নামাজ পড়তে ও রোজা রাখতে।
এরপর আরো সারপ্রাইজ আছে ভাবিনি।
আমাদের এখানে সম থেকে শুক্রবার ৯- ১১ টার মধ্যে পোষ্ট আসে। এদিন আমার নামে একটা পোষ্ট পেলাম মনিকার পক্ষ থেকে। চিঠিটা খুলে একটা কার্ড ও ২০০ ক্রনার পেলাম, কার্ডে একজন মা তার মেয়েকে ভালবাসার অনেক কথা বলেছে, শেষে লিখেছে তোমার জন্মদিনে তোমাকে পাশে বসিয়ে কিছু খাওতে পারলাম না, তুমি এ টাকাটা দিয়ে একটা কেক কিনে বাসার সবাইকে নিয়ে খেও, কথা বলার সময়ও মনিকা এব্যাপারে আমাকে কিছু বলেনি।
আজ থেকে ১৬ বছর আগে সুইডেনের ১০০ ক্রনার আমার কাছে অনেক টাকা মনে হত, সময়ের স্রোতে এখন ১০০০ ক্রনারও আমার কাছে কিছু না। মনিকার এই ২০০ ক্রনার তো শুধু ২০০ ক্রনার নয় এখানে জড়িয়ে আছে মায়ের স্নেহ,আদর আর ভালবাসা। সেই টাকা কি আমি কোন দোকানীকে দিতে পারি!! এখন টাকাটা খরচ করিনি কখনো হয়ত খরচ করতে পারব না, প্লনবুকেই আছে যখনই মন খারাপ হয় টাকাটা বের করে আমার গালের সাথে লাগাই, ঘ্রাণ নেই আমি মায়ের মমতা আর ভালবাসার ঘ্রাণ ও ছোঁয়া পাই আর মনে মনে ভাবি সুইডেনের অজপারা গায়ে আমার এমন একজন আছে যে আমাকে তার সন্তান মনে করে আমাকে ভালবাসে আমার খুব ভাল লাগে।
এ বছরও ভোরবেলা ফোন করে জন্মদিনে উইশ করে এরপর আমি বাহিরে চলে যাই। তিনটার দিকে গাড়ি পার্কিং করে ( আমার গ্যারেজ বাসা থেকে একটু দুর সেন্টরুমের পাশে) ফুলের দোকানের এ্যারাবিয়ান ছেলেটা আমাকে ভাল ভাবেই চিনে কারন আমি মাঝে মাঝেই যাই সে আমাকে সিষ্টার, সিষ্টার ডাকছে, তাকাতেই হাত ইশারায় যেতে বল্ল। যাওয়ার পর হ্যাপি বার্থডে বলে একটা ফুলের তুরা এগিয়ে দিল।
আমি হাত না বাড়িয়ে আবাক হয়ে, আজকে আমার বার্থডে তুমি জানো কি ভাবে, আর তুমি আমাকে ফুলই বা দিচ্ছ কেন ?
না সিষ্টার আমি আমি জানব কি ভাবে!! গতকাল বিকালে কিরনা থেকে মনিকা নামের এক মহিলা ফোন করেছিল, সে তোমার জন্য এই ফুলের তুরার অর্ডার করেছে আর তোমাকে পৌছে দিতে বলেছে। সকালে তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম তুমি ছিলে না তাই ফিরত নিয়ে এসেছি, মনিকা চেয়েছিল এটা যেন তোমার হাতে দেই। আনন্দে চোখে পানি চলে এল।
না আমি ফুল নিব না।
ছেলেটা অবাক হয়ে কেন ?
ফুলগুলো তো কয়েকদিন পরেই ফেলেদিতে হবে, তুমি আমাকে একটা গাছ দাও সেটা অনেক দিন থাকবে ।
তা তুমি নিতে পার। তখন এই গাছটা নিয়ে এলাম ।
মনিকা বিখ্যাত কেউ না,সুইডেনের অজপারা গায়ের সামান্য একজন স্কুল টিচার। আমার কাছে সে একজন মমতাময়ী মা। একজন নারীর এর চেয়ে বড় সন্মান আর কি হতে পারে ।
পাশাপাশি আরও একটা ঘটনা না বল্লেই নয়, এটাও ওখানেই ঘটেছিল একদিন দুপুর বেলা আমি একটু বাহিরে হাঁটছি , এমন সময় এক বৃদ্ধ মহিলা বাজার করে যাচ্ছে সে রোলাথরে ভর করে হাঁটছে, রোলাথরের কড়িতে বাজার আছে মনে হচ্ছে তার কষ্ট হচ্ছে । মহিলা যখন আমার সামনে আসছে আমি একটু তার দিকে তাকিয়েছি, তার চোখে আমার চোখ পরেছে, আমি ওদের কাছে থেকে শেখা একটু মুচকি হাসি দিয়ে তার দিকে আরও একটু এগিয়ে গিয়েছি যদি তার কোন সাহায্য লাগে।
কিন্ত মহিলা আমাকে আবার করে, সে রেগে, আমার দিকে তাকিয়েছ কেন!!!! আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি তাই, আমার চামরা কুচচে গিয়েছে তাই আমাকে দেখে হাসছ!!!
একদিন তুমি এমন হবে বেয়াদব মেয়ে ।।
জীবনটা খুব বড় না হলেও বিভিন্ন ভাষা , বিভিন্ন বর্নের, বিভিন্ন জাতির মানুষের সাথে মিশে দেখেছি আর হয়ত দেখার বাকী, কত অদ্ভুত টাইপের মানুষ আছে দুনিয়ায়
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১২:২০