somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যায় কেটে বেলা।।

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কি নাম আপনার?
ইমু
ভালো নাম বলুন ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশনে নাম লিখাতে হলে ভাল নাম বলবেন সব সময়।
আমার কোন ভাল নাম নেই। যা আছে তা আপনাকে বললাম। এই নামে যদি প্রেস্ক্রিপশন না হয় তাহলে বলুন, আপনার ভিজিট দিয়ে আমি বিদায় হই।
আমি ভিজিট দেওয়ার জন্য পকেট থেকে একটা চকচকে পাঁচশ টাকার নোট বের করে হাতে নিলাম।
ডাক্তার চশমা খুলে ভুরু কুচকে আমার দিকে তাকালেন। এরকম রুগির সাথে আগে থেকে হয়ত তিনি পরিচিত নন।
এই ডাক্তারের বয়স বেশি না। বয়স চব্বিশ কি পঁচিশ হবে। দেখতে হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকাদের মতো। চেহারার কোথাও যেন একটা রূঢ় ভাব দেখা যাচ্ছে।অনেক চেষ্টা করেও ডাক্তার ডাক্তার ভাব আনতে পারছেন না।
জন্মের পর হয়ত বাবা ঠিক করে রেখেছিলেন মেয়েকে ডাক্তারি পড়াবেন কিন্তু মেয়ের মেধা ভাল না হওয়ায় মেডিকেলের ভর্তি যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেন নি তাই বলে তো আর বাবা মায়ের স্বপ্ন বৃথা যেতে দেওয়া যায়না তাই মেয়েকে ভর্তি করালেন সার্টিফেকট ধারী ডাক্তার গড়ার কারখানা প্রাইভেট মেডিকেলে। সেখান থেকেই নামে ডাক্তার হয়ে বেরিয়েই একটা চেম্বার খুলে বসেছে সে। চেম্বারের বাহিরে লেখা। “ ডাক্তার সানজিদা রাহমান, স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞ।
নতুন রুগি পাঁচশ টাকা পুরাতন রুগি তিনশ টাকা।”
আমি নতুন রুগি তাই আমার জন্য ভিজেট পাঁচশ টাকা।
ডাক্তার সানজিদা রাহমান একটি সাদা ড্রেসের উপর এপ্রোন পরেছেন। সাদা ড্রেসের উপর এপ্রোন পরায় তাকে খুব মানিয়েছে।
তিনি হাত থেকে কলম রেখে আমাকে বললেন, কি করেন আপনি?
খুন করি।
মানে?
মানে মশা খুন করি।কাজ না থাকলে লোকে যা করে এই আর কি।
মশা মারা কে আপনি খুন মনে করেন?
অবশ্যই মনে করি।
এর পিছনে কারন কি আমি জানতে পারি?
জ্বি পারেন।
বলুন।
কুকুরও একটি অতি নিম্ন শ্রেণির প্রাণী কিন্তু এটিকে হত্যা করলেও আদালতে বিচার হয়। কিন্তু একসময় এই বিচারের ব্যবস্থা ছিলনা এখন হয়েছে। ঠিক তদ্রুপ মশাও একটি নিম্ন শ্রেণির প্রাণী কিন্তু এখনো এটি হত্যার বিচার আদালতে হচ্ছেনা তবে অদূর ভবষ্যতে যে হবেনা তা কিন্তু না। যখন এটি হত্যার বিচার শুরু হবে তখন থেকে মশাকে হত্যা যে করবে সে খুনি হবে। আর তাছাড়া আমি একটু আগেভাগে চিন্তা ভাবনা করে বসে থাকি।তাই আগে ভাগেই নিজেকে খুনি ভেবে বসে আছি।
ওহ আচ্ছা। তো আগেভাগে কি কি চিন্তা করতে পারেন।
যেমন আমি ইনট্যুশন দিয়ে মানুষের ভবিষ্যত বলতে পারি।
ওহ আই সি। আপনি তাহলে এই জন্য আমার কাছে চিকিতসা করাতে এসেছেন।
আপনি আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেন নি তাইতো? অনেকেই করেনা সেটা সমস্যা না। আচ্ছা আপনি রবী বাবুর গান শুনেছেন?
রবী বাবুটা কে?
আরে ওই যে যার দাড়ি গোফের জন্য মুখের ছিদ্র দেখা যেত না। শান্তি নিকেতনে বসে বসে অসাধারণ কবিতা ও গান লিখতেন । মাঝে মাঝে তবো দেখা পাই চিরদিন কেন পাইনা।
আসলে আমি কখনো গান শুনিনি।
ওহ আচ্ছা। ভালো কথা গান না শুনাই ভালো। গান শুনে ডাক্তাররা সময় নষ্ট করেনা। যদি শুনতেন তাহলে আপনার কাছ থেকে দু লাইন শুনতাম। আচ্ছা এখানে কি ভাল কফি পাওয়া যায়?
কফি খেতে চান?
জ্বি।
আমি রুগি দেখার জন্য চেম্বার খুলে রেখেছি রেস্টুরেন্ট নয়। তবুও আমি আপনাকে কফি খাওয়াব কারন আপনার সাথে কথা বলে ভাল লেগেছে।
ভাল লেগেছে বলে আমি যা চাইব তাই পাব?
কি চান আপনি?
আপনার কপালে একটা চুমু দিতে চাই। দিতে দিবেন?
ডাক্তার সানজিদা রহমান চিৎকার দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালেন। you get lost, why talking nonsence?
আমি খুব শান্ত গলায় বিনীত ভাবে বললাম, দেখেন ম্যাডাম আপনি হচ্ছে পাগলের ডাক্তার। পাগল ভালো করার বদলে যদি আপনি নিজে পাগল হয়ে যান তাহলে তো হবেনা।
ডাক্তার সানজিদার মুখ লাল হয়ে গেছে। রাগে তিনি কাঁপছেন। কাউকে রাগিয়ে দিয়ে তার সামনে থেকে মায়াবি একটা হাসি দেওয়ার সৌভাগ্য সবার হয়না কিন্ত আমার হয়েছে। আমি একটা মায়াবি হাসি দিয়ে বললাম,আসি বেচে থাকলে আবার দেখা হবে। ওহ আচ্ছা একটা কথা বলি, আপনার পার্টস ব্যাগে একটা হলুদ রঙ্গের কাগজ আছে যেটিতে লেখা আছে, আজ আর নয়।
এই কথা শুনে ডাক্তার সানজিদা খুব চমকিত হলেন। সুন্দরী মেয়েরা চমকে গেলে তাদের চেহারা বোকা বোকা লাগে। ডাক্তার সানজিদার চেহারাও সেরকম হয়ে গেছে। আমি বিলম্ব না করে নেমে পড়লাম রাস্তায়।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। পাখিরা সব নীড়ে ফিরে যাচ্ছে।পাখিরা সময়ের মূল্য খুব ভালো জানে কিন্ত মানুষরা জানেনা। পাখি দেখে শেখা উচিত।
একটি কবিতার লাইন মাথায় ঘুরছে। ডাক্তার সানজিদার প্রেস্ক্রিপশনের কাগজ নিয়ে আসলে ভাল হতো কবিতাটা লিখে রাখতে পারতাম,
“ অদ্ভুত এক অনুভূতি দিচ্ছে সাড়া
পাখিরা সব যাচ্ছে ফিরে ঘরে
একাকী এই পৃথিবীর পথে হেটে
জীবন থেকে যাচ্ছি দূরে সরে।”

লেখকঃ চৌধুরী মোহাম্মদ ইমরান
এম সি কলেজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×