somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৯ এপ্রিল বলছি এক ভয়াবহ রাতের কথা ।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভয়াল এই রাতে মুখোমুখি হয়েছিলাম ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের । আমার জীবনে প্রত্যক্ষ চোখে দেখা এক ভয়াবহ রাত । বাতাশের প্রচন্ড বেগ পাশাপাশি অঝোর ধারায় বৃষ্টি, কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ঘর ভর্তি পানি আর পানি । হাহাকার আর উৎকণ্ঠার মাঝে কিভাবে যে সেই রাতটা পার করে ছিলাম । সকাল বেলার দৃশ্য আরও ভয়াবহ চারিদিকে ভাসমান লাশের পর লাশ, মরা মাছ , গাছপালা গবাদি পশুর ধ্বংসলীলা । খাওয়া দাওয়ার নিদারুন কষ্ট । সহায় সম্পত্তি হারা মানুষের চিৎকার আজো ভেসে উঠে দুই চোখে ।



প্রত্যন্ত গ্রামে থাকার কারনে এর ভয়াবহতা খুব কাছ থেকে উপ্লব্দি করতে পেরেছিলাম । এর ভয়াবহতার বিবরণ লেখার মত শক্তি আমার মধ্যে হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত । আমি উলঙ্গ লাশ দেখেছি , ঝোপঝাঁড়ে ভেসে থাকা লাশ । এদের মধ্যে রয়েছে বাচ্চা শিশু, মহিলা , গবাদি পশু । চাচার অক্লান্ত পরিশ্রম , বাড়ির পাশের লাশ গুলো কলা গাছের বেলা বানিয়ে টেনে নিয়ে দাপন করা । আমার দেখা প্রকৃতির এই নিষ্ঠুরতার সবচেয়ে নির্মম শিকার আমাদের দ্বীপের মানুষ ।



এই সব লিখে বুঝানো সম্ভব না । স্মৃতিতে ধারন করে দু ফোটা অশ্রু ঝরে পড়া ছাড়া আর কিছুই বলার নেই । দূর দুরান্ত থেকে আসা আত্মীয় স্বজনের হাহাকার, হারানোর ব্যাথা আজও ভুলতে পারি না । জলোচ্ছ্বাসের পরবর্তী সময়ে খাদ্য এবং পানির সঙ্কট ছিল মহামারি আকারের । রান্না করার জন্য দূর স্কুলের গভীর নলকূপের পানি ব্যাবহার করা হত যা ছিল রিতিমত জগন্য । এ সময়ে অনেক লোক মারা গিয়েছিল খাদ্য পানির সঙ্কট এবং রোগে পড়ে ।

এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছিল দেশী বিদেশী ত্রান তহবিল । বিভিন্ন এলাকার স্কুল কলেজে অবস্থান করে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হত ক্ষতিগস্রদের মাঝে ।

মৃত্যুর আগ অব্দি ভুলতে পারব না এই সময়কে । ভুলা সম্ভব হবে না । পরম করুনাময়ের কাছে একটাই চাওয়া আগামী দিনে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি ।



প্রায় ২২৫ কিলোমিটার বেগে অতিবাহিত ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলীয় ( কক্সবাজার, মহেশখালী, চকরিয়া, বাশখালী, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, সীতাকুণ্ড, পতেঙ্গা ) অঞ্চলে আঘাত হানে । এ ঝড়ের আঘাতে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলো । গৃহহারা হয়েছিল অসংখ্য মানুষ । প্রবল এ জলোচ্ছ্বাসের পানির উচ্চতা ছিল ২০-২৫ ফুট । এতে প্রায় দু’লাখ গবাদিপশু ও প্রাণ হারায় । গাছপালা উপড়ে গিয়ে ও বেড়িবাঁধ ভেঙে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল । ঝড়ের পড়ে অনাহারে ও মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া রোগে আরো প্রায় ২০-৩০ হাজার লোক প্রাণ হারায় । (তথ্যসূত্র ইন্টারনেট)


মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ২২শে এপ্রিল, ১৯৯১ বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্মচাপের সৃষ্টি হয়। বাতাসে গতিবেগের ও নিম্মচাপের আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি ২৪শে এপ্রিল 02B ঘুর্নিঝড়ে রূপ নেয় । ঘুর্নিঝড়টি উত্তর-পূর্বদিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এর শক্তি আরও বাড়তে থাকে। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা প্রচন্ড বৃদ্ধি পায় এবং গতিবেগ ১৬০ মাইল/ঘন্টায় পৌছায় যা একটি ক্যাটাগরী-৫ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। ২৯শে এপ্রিল রাতে এটি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তি অঞ্চলে ১৫৫ মাইল/ঘন্টা বেগে আঘাত করে যা ক্যাটাগরী-৪ ঘূর্নিঝড়ের সমতুল্য। স্থলভাগে আক্রমনের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং ৩০শে এপ্রিল এটি বিলুপ্ত হয় । (উইকি থেকে পাওয়া)



আজকের প্রজন্মের অনেকের হয়ত জন্ম হয়নি সেই সময়ে । কারো হয়ত ভয়াবহ রাতের কথা মনে নেই । প্রজন্মের কাছে হয়ত গল্পের মত শুনাবে । যারা চোখে দেখেননি তাদেরকে বলে বুঝানো যাবে না প্রকৃতির এই নির্মমতার কথা । এখনো অনেক পরিবার রয়েছেন যারা স্বজন হারিয়েছেন সেই সময়ে । হয়ত স্বজন হারানো ব্যাথা নিয়ে বেঁচে আছেন ।

( ছবি কালেক্টেড ফ্রম ইন্টারনেট )

ফেবু
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×