somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে, সে, এবং সে

১১ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-কত টাকা লাগবে তোর?
-লাখ পাঁচেক
-এত....?
-আমার আর কোন উপায় নেই দোস্ত, ডু অর ডাই সিচুয়েশন..তোর তো অনেক আছে..ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে গেলে তোকে শোধ দিয়ে দেব, কসম!
-আরে এসব কি বলিস! তোর জন্যে এতটুকু করতে পারবোনা! কালকে একবার আসিস অফিসে। নটার মধ্যে, ওকে?
বহুজাতিক সদাগরি প্রতিষ্ঠানের এমডি আশ্বাসবাণী দিলো ব্যবসায়ে ক্ষতিগ্রস্থ যুবকটিকে। এখন সে সানন্দে বাড়িওলার হুমকি সয়ে নিতে পারবে। পাড়ার উঠতি মস্তানদের খিস্তিগুলোও সুশ্রাব্য হয়ে উঠবে খুব।
-জ্বী জ্বী বলুন!
-সাত মাসের বাড়িভাড়া বাকি রাখছেন, সাতদিনের মধ্যে না দিলে কিন্তু লাইথ্যায়া বাইর কইরা দিমু কয়া দিলাম। অনেক সইহ্য করছি, এইবার এ্যাকশোন না নিলে চলবনা।
-জ্বী অবশ্যই! অবশ্যই এ্যাকশান নিবেন। কালকের মধ্যেই দিয়ে দেব ভাড়া।
আমার একজন পরিচিত লোক আছে, যে মোটা বেতনের চাকুরি করে। পরিতৃপ্তির সাথে ভাবলো ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী। সে আমার বন্ধুও বটে।
-যাবি? ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে শুধালো সে।
-চল!

তারা হাঁটতে থাকে নস্টালজিয়ার মসৃণ পথ ধরে।

এসে গেছি! সমস্বরে উল্লাস প্রকাশ করল দুই গীতিকবি।
-আরেকটু জোরে চলনা! গীতিকবি নং এক বলল।
- দৌড়ো দৌড়ো দৌড়ো... এখনও অনেক পথ বাকি।
ওরা দৌড়োতে দৌড়োতে পেড়িয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ সবুজ প্রাঙ্গন, মাতাল মাতাল কবিতা লেখার রাত, উদাস উদাস ক্লাশরুম, আর নেশা নেশা স্বপ্নঘর।
ওরা পৌছে যায় নতুন গন্তব্যে।
-নাম কি তোমার? দেবশিশু নং এক জিজ্ঞাসা করল।
-আমার নাম?...দেবশিশু নং দুই উত্তর দিতে গিয়ে কার যেন কর্কশ কন্ঠে বাধা পেল।

"অনেক হইয়াছে এবার নিজ নিজ গৃহে ফিরিয়া যাও ধেড়ে যুবকেরা"

সময়
বড়
নির্মম
শাসক

ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী হাঁটতে থাকে এলোমেলো পদক্ষেপে। কাল সকালে বেরুতে হবে। রাত্তিরে তাড়াতাড়ি ঘুমুনো দরকার।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর তার নতুন মডেলের গাড়ী করে যেতে যেতে আবেগাপ্লুত হয়। বন্ধুত্বের জন্যে সে মহান হবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আহা! বড়ই আরামদায়ক অনুভূতি। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীর দূরবস্থার বিবরণ শুনে সে তো আজ প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলো। বছর পাঁচেকের ব্যবধান। এর মধ্যে কত পাল্টে গেছে বেচারা! জীবনের কাছে মানবিকতার একি পরাজয়! আরো এক চুমুক তরল আগুন গলায় ঢেলে দিল সে। ভেউ ভেউ! কান্না পাচ্ছে তার। ভার্সিটি থেকে বের হবার পরে বেচারার বাপজান ইন্তেকাল ফরমাইয়াছিলেন। এরপরে পৈতৃক ব্যবসা রক্ষা করার জন্যে কি নিরন্তর সংগ্রাম আর প্রতি পদে পদে পরাজয়! ওহ! ইনটলারেবল। লাইফ ইজ সো আনফেয়ার টু সাম পিপল। আরেক পেগ শেষ করতে করতে ভাবেন এমডি সাহেব।

টলোমলো পায়ে ঘরে ফেরেন এমডি সাহেব। তার জীবনসঙ্গিনী একজন নামকরা ডেন্টিস্ট। সে কেমন সরু চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
-আজকে কি বেশি টেনে এসেছো নাকি? রোষের সাথে জিজ্ঞাসা করে সে।
- ওহ ফরগেট দ্যাট বেইবি। আজকে আমার মনটা খুব খারাপ। আমার বন্ধুর লাইফ ইজ এ্যাট স্টেক আর আমি আমার বিলাসী জীবনে মত্ত.. শত ধিক আমাকে! গলা ছেড়ে কেঁদে উঠলো সে।
- কি হয়েছে? কার কথা বলছো?
ডেন্টিস্ট জেরা শুরু করল। সবকিছু শোনার পরে সে তার চশমাটা ভালো করে দুচোখের মাঝে এঁটে নিয়ে হিসহিস করে বলল,
-বেকুব!
- কি বললে?
-বললাম যে তুই একটা বেকুব।
- কেন বললে? ও যে বড় অসহায়! আমি ওর জীবন বাঁচাতে চাই। মাস্তানদের কাছে ওর অনেক দেনা, ওরা ওকে মেরে ফেলবে।
-তুই এত বড় একটা কোম্পানির হিসাব নিকাশ মিলাস আর এই সামান্য হিসাব বুঝতে পারছিসনা!
ডেন্টিস্টের দন্ত যেন সাপের বিষদাঁত। ছোবল দেয়ার জন্যে ফুঁসছে সর্পিনী।
- কি হিসাব?
কাতর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে বন্ধুর দূরবস্থায় ব্যথিত হরিণশাবক। ভীত চোখে তাকায় ভয়ানক কালসর্পের দিকে।
সর্পিনী হিলবিল করে চলে ফেরে। বিষদাঁতে করে বয়ে নিয়ে আসে হিসেবকারি যন্তর।
ওরা হিসেব করতে থাকে।
৫ বছর বিরতি+ ৫ লাখ টাকা + বন্ধুত্বের অন্যায় সুযোগ=

ত্রিমাত্রিক সমীকরণ। তিনটে সমাধান পাওয়া যায়।

-সঠিক উত্তর কি হবে বল? মাস্টারনী শুধোয় ছাত্তরকে।
- এ্যাঁ..ও.. মাথা চুলকোতে চুলকোতে উত্তর দেয় সে, মিথ্যে বলেছে তাইনা ম্যাডাম? টাকার জন্যে মিথ্যে বলেছে। ওটা দিয়ে সে ফূর্তি করবে।
- ঠিক হয়েছে! তুমি পাস। দশে দশ। নাও, পুরস্কার হিসেবে এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস খাও।এটা ইচ্ছে না হলে তোমার ঢাউস বোতলের ঐটাও খেয়ে নিতে পারো।
-হুমমম। ম্যানেজিং ডিরেক্টর গলায় ঢেলে দেয় এক পেগ। আবার সে আবেগাক্রান্ত হয়ে পরে। মনে হয় কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। খুব ভুল হচ্ছে হিসেবে। অংকটা ঠিকমত হয়নি। তার আবার কান্না পায়। পরক্ষণেই প্রবল বিবমিষা অনুভব করে। পাকস্থলি থেকে উগড়ে বের হতে থাকে

বন্ধুতা
মানবিকতা
তার মায়াবতী স্ত্রী করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

উগড়ে বের হতে থাকে

স্মৃতির গলিত মাংসপিন্ড

-খুব কষ্ট হচ্ছে? স্বামীর দুর্দশায় ব্যথিত হয় স্ত্রী।

-যা যা সরে যাহ! আমার কাছে ঘেঁষবিনা। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীর বন্ধুটি বলে। পরক্ষণেই আবার বিকট শব্দে বমি করে সে।

উগড়ে দেয়

হৃৎপিন্ডের একাংশ।

-স্যরি ডিয়ার.. আমার কথায় কিছু মনে করনা। আমি আসলে খুব কনফিউজড.. বেচারাকে কথা দিয়েছি.. ওর সত্যি খুব সমস্যা..কিন্তু এতগুলো টাকা..ধুর..আবেগটাকে যে কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা.. ঐ শালা এতবছর পরে কেন যে আসলো.. কি যে করি..

-অত কিছু এখন ভাবতে হবেনা তোমার। কোমল কন্ঠে বলল তার স্ত্রী। এখন আসো ফ্রেশ হয়ে অল্প একটু খেয়ে নাও। পরে তোমার যা মনে হয় কর।
-ধুশ শালা! কি এক প্যাঁচে পরলাম। অসহিষ্ণুতা প্রকাশ প্রায় তার স্বামীর কন্ঠে।

**********************************************

ক্ষুধামান্দ্য একটা জটিল রোগ। তবে এর সমাধানও আছে আমাদের কাছে। আজকের বিশেষ কনসেশনে আপনারা নাম মাত্র মূল্যে এর চিকিৎসা পাবেন....শুয়ে শুয়ে ভাবছিলো স্বপ্নালু যুবক। একসময় এসবও করতে হয়েছে। তবে এখন তার ভাবনার দিন শেষ। কাল পরশু টাকাটা পেলে সব দেনা শোধ করে দেবে, আর নিজেও একটা ব্যবসা শুরু করবে। ভাবতে ভাবতে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। জোরে জোরে। বার বার।
"কে"?
উত্তরে ওপাশ থেকে আরো জোরে কড়া নাড়ার শব্দ হতে লাগলো।

###############################################

-খাবানা?
-নাহ ক্ষুধা নাই।
-একটু খাও!
- আমি পরে খাব ডিয়ার, তুমি খেয়ে নাও। আমি একটু নিউজটা শুনে আসি কেমন?
-নিউজ আর কি শুনবা! সেইতো..

"আসসালামুয়ালাইকুম, রাতের সংবাদে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি.."
...সেইতো গতানুগতিক সব খবর
রাজনীতি
"বিরোধী দলের নেত্রী এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন, ইতিমধ্যেই এই সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করা শুরু করেছে.."

...হু, ঠিকই বলেছো রাজনীতি, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি..এসবই তো..

স্বামী, স্ত্রী একে অপরের সাথে মতবিনিময় করে।
-আর হচ্ছে খুন। এটা যা বেড়েছে ইদানীং!

" আজ রাতে দক্ষিণ কমলাপুরে সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছে.."

সে এবং সে বড় বড় চোখ করে টিভি স্ক্রিনের দিকে চেয়ে থাকে।
"সে'ই না?" জিজ্ঞাসা করে সে।
"হ্যাঁ!" উত্তর দেয় সে।
"ভেরি স্যাড ইনডিড"

কয়েকমুহূর্ত নীরবতা। তারপর নামকরা বহুজাতিক কোম্পানির সফল এমডি এবং একজন সুখী স্বামী তার স্ত্রীকে আদুরে কন্ঠে অনুরোধ করে,

"ক্ষুধা লেগেছে ভীষণ। চলো একসাথে ডিনারটা সেরে ফেলি"

ওরা হাসে। ওরা খুনসুটি করে। ওরা খায়। ওরা খেয়েই চলে।

অথবা ওদেরকে গোগ্রাসে গিলে চলে কেউ....




সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৪৭
২১৩টি মন্তব্য ২১৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×