somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত বিড়ালের কাঁধে

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)
আমার সারাদিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে একটি বুদ্ধিমান চৌকোনো যন্ত্রের সামনে বসে। সেখানে আমি মানুষ দেখি, গন্ডায় গন্ডায় মানুষ। মানুষগুলো খুব সুন্দর এখানে। ঘর্মাক্লিষ্ট, রুগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী অথবা ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভোগা মানুষগুলো এখানে ইচ্ছেমত নিজেকে সাজিয়ে দু একটি ভালো-মন্দ কথা বলে ভার্চুয়াল সেলিব্রেটি হবার অবকাশ পায়। এখানে সবাই বিখ্যাত, গর্বিত এবং উদ্ধত। কেউ কেউ আবার বন্ধুত্বপরায়ণও বটে। সিমি আমার বন্ধু কিনা জানিনা, তবে সে আমাকে মাঝেমধ্যেই বন্ধুসুলভ বার্তা পাঠায়, আমার মন খারাপ থাকলে তার কারণ অনুসন্ধান করে।

"কিরে, তোর মন খারাপ ভাব কি কেটেছে? আজ বেশি কথা বলতে পারিনি, আমার পোষা বিড়ালটা খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলো, তার সেবা করছিলাম। আজ রাতটা হয়তোবা টিকবেনা। টিকে থাকলে কালকে পশু হাসপাতালে নিয়ে যাবো। ভালো থাকিস"

সিমির যন্ত্রস্বত্তার মানবিক রূপান্তর আমাকে ভাবায়। আমার আপডেটেড, জমকালো ভার্চুয়াল অস্তিত্ব, ম্যাদামারা মেকি কর্পোরেট বৈশিষ্ট্য, আবেগদীপ্ত শান্তিহীন মন, আর একটা মুমূর্ষু পশু, কার প্রতি সহমর্মিতা বেশি? এই চতুর্মাত্রিক সমীকরণের সমাধানের ভার সিমিকে দিয়ে আমি আমার একমাত্রিক যান্ত্রিক রাতঘরে প্রবেশ করি।

(২)
বিড়ালটা যে রাতে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে, তার আগের কথা। সেদিন সিমির তিন নম্বর প্রেমিক, যে তার সাথে সুস্থির জীবনের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলো, হয়তোবা সেটা একটা কৌতুক ছিলো, হয়তোবা না, তবে সিমির মেধা এবং রসবোধ নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই, তাই সে কিছুদিন এই কৌতুককর জীবন উপভোগ করার পরে যখন রসটা শুকিয়ে খটখটে হয়ে আসে, কোন একটা ছুতো খুঁজে নিয়ে সিমি সেটা নিয়ে তার প্রেমিককে খুব রূঢ়ভাবে ভর্তসনা করে। সিমির নিষ্ঠুরতা এবং রূঢ়তা নিয়েও কোন প্রশ্ন নেই। এটা অবশ্য সমগ্র মানবপ্রজাতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য! তারপরেও যেহেতু সম্পর্কটার সাথে ভালোবাসার লেবেল সাঁটা ছিলো, তাই এর করুণ সমাপ্তিতে আমাদের এক মিনিট নীরবতা পালন করাটা অবশ্যকর্তব্য। অথবা স্পেসবারে দুটো চাপ দিতে পারি।


মর্মান্তিক ঘটনাটি ভোলার জন্যে এটি যথেষ্ঠ সময়, অন্তত সিমির জন্যে।

বাসায় ফিরে সিমি তার আন্তর্জালিক যোগাযোগের মাধ্যমে পূর্বে উল্লেখিত শোকাবহ ঘটনাটি নিয়ে বন্ধুদের সাথে যুগপৎ শোক এবং আনন্দ প্রকাশ শেষ করে তার পোষা বিড়ালটিকে খাবার দিতে গিয়ে দেখলো সেটি ইতিমধ্যেই ঢাউস আকারের একটা তেলাপোকা গলাধঃকরণে ব্যস্ত।
"এটা হজম করতে পারবিতো?"
"মনে হয়না। খুব কষ্ট হচ্ছে। ওয়াক!"
"পারবিনা তো গিলতে গিয়েছিলি কিজন্যে? যত্তসব!"
সিমির বদমেজাজের কথা সর্বজনবিদিত। তাই বিড়ালটি ভয় পায়।
"এই সিমি, বিড়ালটা এরকম কাতর স্বরে মিউমিউ করছে কেন রে? ওটার আবার কি হল?"
সিমি তার মা'র এই জিজ্ঞাসা শুনতে পায়না, অথবা এড়িয়ে যায় বিড়ালটির সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত থাকার কারণে।
"খেতে না পারলে উগড়ে দে!"
"ওয়াক! ওয়াক!"
"এইতো বমি করে ফেলেছিস। এখন দেখবি ভালো লাগবে। হালকা লাগবে শরীরটা। তুই একটু অপেক্ষা কর, আমি এসে তোকে পরিস্কার করছি। ভয় পাসনা। ভয়ের কিছু নেই"

"কি হয়েছে রে বিড়ালটার? অসুস্থ্য নাকি?"
"হু"
সিমি এক শব্দে তার মায়ের প্রশ্নের উত্তর দেয়। বিড়ালটি ততক্ষণে বিচিত্র বর্ণের এবং ভয়ানক কটূ গন্ধের বমি শুরু করেছে। সিমি তাকে পরিস্কার করার সময় গায়ে হাত দিয়ে দেখল তাপমাত্রাও বেশ বেড়ে গেছে তার। শ্বাসকষ্টে কাতর হয়ে বিড়ালটি বলল,
"সিমি, আমি মনে হয় বাঁচবোনা। খুব কষ্ট হচ্ছে"
"এই রাতটা কোনমতে পার করে দে, কালকে তোকে নিয়ে বড় ক্লিনিকে যাবো। সাহস রাখ"

আরো রাতে, মুমূর্ষু বিড়াল, মৃত্যুগন্ধা বমি, তৃতীয় প্রেমিকের সাথে চুড়ান্ত বিচ্ছেদপরবর্তী সংকটকাল এবং সারাদিনের ধূলোস্নানের কথা ভুলে থাকতে সিমি তড়িৎচালিত উচ্চ প্রাযুক্তিক যন্ত্রটির সামনে বসে তার বন্ধুকে লেখে,
"কিরে, তোর মন খারাপ ভাব কি কেটেছে? আজ বেশি কথা বলতে পারিনি, আমার পোষা বিড়ালটা খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলো, তার সেবা করছিলাম। আজ রাতটা হয়তোবা টিকবেনা। টিকে থাকলে কালকে পশু হাসপাতালে নিয়ে যাবো। ভালো থাকিস"

(৩)
সিমিকে আমি জবাবে লিখি যে আমি তার পোষা প্রাণীটির আয়ূ কামনা করছি এবং তার তৃতীয় ব্রেক-আপের জন্যে দুঃখিত। দুটো ঘটনার মধ্যে আমার কাছে দ্বিতীয়টি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। মুমূর্ষু বিড়ালের প্রসঙ্গটি ভুলে যেতে আমার সময় লাগেনা, আমি খানিকটা উদ্বেলিত মনে ভাবি, সিমি এবার বেশ একা হয়ে যাবে। প্রেমিক নেই...তৎক্ষণাৎ আমি প্রথম ঘটনাটার তাৎপর্য বুঝতে পারি। যদি বিড়ালটাও না থাকে, তাহলে সে আরো একা হয়ে যাবে। বিড়াল, প্রেমিক অথবা বিড়ালপ্রেমিক অথবা প্রেমিকবিড়াল সবাই মারা যাক! যন্ত্রের বিশ্বস্ত স্বচ্ছ ক্যানভাসে আমি মনুষ্যত্ব, পশুত্ব, ভালোবাসা এবং নির্লিপ্ততা বিষয়ক দার্শনিক দুলাইন লিখে ছড়িয়ে দিই তারঙ্গিক সুব্যবস্থাপনার বদৌলতে 'বন্ধু'দের কাছে।

(৪)
পশুদের জন্যে চিকিৎসার এত ভাল বন্দোবস্ত আছে সিমি জানতোনা। হাসপাতালটি চমৎকার। অনেক জায়গা জুড়ে, পরিচ্ছন্ন এবং গোছানো। অনেক পশু-পাখি, বিড়াল, কুকুর, খরগোশ, মুরগী...কেউ এসে বেড়িয়ে যেতে পারে চিড়িয়াখানায় ভ্রমণের বিকল্প হিসেবে। বিনোদিত হতে পারে একাকী মানুষেরা।
"ভাইজান, ইমার্জেন্সিটা কই বলতে পারেন?"
সিমির পীঠে হাত রেখে একজন সুসজ্জিত ধর্মপরায়ণ লোক জিজ্ঞেস করে। সিমি ফিরে তাকালে সে যেন জাহান্নামের চৌরাস্তায় উপস্থিত হবার আতঙ্ক অনুভব করে।
"এত চমকাবার কিছু নেই। ভুল করে পীঠে হাত দিয়েছেন, তাতে কিছু মনে করিনি। ইমার্জেন্সিটা সোজা ডানদিকে"
লোকটার উচিত ছিলো সৌজন্যের খাতিরে ভদ্রতাসূচক কিছু বলা, কিন্তু সে উল্টো মনে মনে সিমির অধার্মিক পোষাক এবং চুলের ছাটের নিন্দা করতে করতে প্রস্থান করে। তার মনে হয় যে সিমি একটি নির্লজ্জ পশু বই কিছু না। বেহায়া মেয়েটার জন্যে পরকালে অপেক্ষা করছে অগ্নি, ইহকালে সম্ভব হলে পাথর। সিমির বিড়ালটির মনে হয়, সে সুস্থ্য থাকলে লোকটিকে খাঁমচে দিতে পারতো। সিমি হয়তোবা দুজনের মনের কথাই বুঝতে পারে, তার মত বুদ্ধিমতীর জন্যে তা খুবই স্বাভাবিক। লোকটির মানবিক চিন্তার পশুত্ব এবং বিড়ালটির পাশবিক চিন্তার মনুষ্যত্বের পারস্পরিক তুলনা করে সে নিজেকে অক্ষের মূলবিন্দুতে আবিস্কার করে।

(০,০)

(৫)
অফিসে তুমুল কাজের চাপে হঠাৎ অবসর পেলে আমার নানারকম অদ্ভুৎ চিন্তা মাথায় আসে। মানুষ মরণাপন্ন হলে আমরা অনেকসময় তার জীবন বাঁচাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে পশুপাখিদের জীবন উৎসর্গ করে জীবনের বিনিময়ে জীবন রক্ষার সুপ্রাচীন পন্থা অবলম্বন করি। কিন্তু আজ যখন সিমির বিড়ালটা মরণাপন্ন, তখন তার জীবন রক্ষার্থে কোন মানুষের জীবন উৎসর্গ করা যায় কি? যদি যেত, তাহলে সিমি কি তাই করত? কাকে বেছে নিত সে? আমাকে না তো? নাহ, তা কি করে হয়! আমি আমার চারপাশের মূল্যহীন মানুষগুলোর কথা চিন্তা করি। আমাদের অফিসের পিয়নটাকে বলি দেয়া যেতে পারে। অর্থহীন তার জীবন। আমাদের জন্যে চা-নাস্তা, ডালপুরি এনে আর ফুটফরমাশ খেটে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। অথবা আমাদের সিইও সাহেব, টাকার পেছনে অনর্থক ছুটে জীবনের রঙচঙে পৃষ্ঠাগুলো ধুসর করে ফেলেছে। এদের যে কাউকেই বলি দেয়া যেতে পারে। সিমিকে বলব নাকি ব্যাপারটা? আমি আমার অত্যন্ত মৌলিক চিন্তাধারায় মুগ্ধ হয়ে সিমিকে তড়িৎবার্তা পাঠানোর জন্যে মহান চৌকোনো বাক্সের শরনাপন্ন হতে যাবো, সেই মুহুর্তে একটা নতুন চিন্তা মাথায় এলো। মানুষ বলি না দিয়ে যন্ত্রকেও তো দেয়া যেতে পারে! যেমন আমার কম্পিউটারটা...ভাবতেই আমি আঁতকে উঠি। কি ভয়াবহ চিন্তা! এই মহান যন্ত্রের অভ্যন্তরে আমাদের বন্ধুত্ব, ভালবাসা, রোমান্স, কামনা বাসনা, খ্যাতি সবকিছু সযত্নে সংরক্ষিত আছে। এরকম নিষ্ঠুর চিন্তা আমার মাথায় এলো কি করে! এটা মোটেও ঠিক না। এতটা 'অমানবিক' নিশ্চয়ই হইনি আমরা এখনও!

(৬)
-আপনার বিড়ালটার তো মরমর অবস্থা। আরো আগে নিয়ে এলেননা কেন?
-কালকে রাত থেকে এ অবস্থা। সকাল হবার সাথে সাথেই নিয়ে এসেছি।
"ডাক্তারটা কি বলছে সিমি? আমি কি বাঁচবো?" বিড়ালটা সিমির চোখের দিকে তাকায়। "চিন্তার কিছু নেই, একটা ইনজেকশন দিলেই ঠিক হয়ে যাবি" সিমি বিড়ালটার চোখের দিকে তাকায়। ডাক্তারটা সিমির চোখের দিকে তাকায়, তার চোখ ধীরে ধীরে নীচে নামতে থাকে। "খাসা মেয়ে" সে ভাবে। বিড়ালটা ডাক্তারের চোখের দিকে তাকায়। সে আবারও খাঁমচে দেবার প্রবল স্পৃহা অনুভব করে।

এসময় একজন নার্স কক্ষে প্রবেশ করলে তিনজোড়া চোখের বহুমাত্রিক রসায়ন বিঘ্নিত হয়।
"স্যার, এই যে ইনজেকশনটা এনেছি"। "আহারে বিড়ালটা খুব কষ্ট পাচ্ছে, কিরকম মিউমিউ করছে!" দরদ প্রকাশ পায় তার কন্ঠে।
"দরদ দেখাবেননা,আগে এই লুচ্চা ডাক্তারটাকে সামলান" বিড়ালটা গর্জে ওঠার বৃথা চেষ্টা করে।
"শান্ত হ, এসব কিছুনা।" সিমি ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়।
নার্সটি আরো একবার সহানুভূতিসূচক শব্দ করে চলে যায়।

(৭)
মানুষ১-তুই কি এক্ষণি একটু আসতে পারবি পশু হাসপাতালে?
অমানুষ২- অবশ্যই! অবশ্যই!
আমার মনে পড়ে যে সদ্য ব্রেক-আপ হওয়া একাকী মানুষ১ এর জীবনের দরজা আমার জন্যে কিছুটা উন্মোচিত হয়েছে।
মানুষ১-আমি টাকা আনতে ভুলে গিয়েছি। কিন্তু বিড়ালটাকে বাঁচাতে হলে আরো বেশ কিছু টাকা দরকার। হাজার দুয়েক টাকা নিয়ে আসিস অন্তত।
যন্ত্র২-আচ্ছা!
আমার উৎসাহে কিছুটা ভাটা পড়ে। আমি খানিকটা ভয়ও পাই। অমানুষ১ আবার আমাকে বলি দেবার ফন্দি করছেনাতো! পশু এবং মানুষের পারস্পরিক তুলনা করতে গিয়ে আমার নিজেকে পরাজিত মনে হয়।

(৮)
বিড়ালটি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠছে। ইনজেকশন এবং ঔষধপত্রগুলো ভালো কাজে দিয়েছে। ডাক্তার এবং নার্সরাও ছিলো কুশলী। আমি বিড়ালটিকে সুস্থ্য হতে দেখে কিছুটা আশাহত হই। বিড়ালটা মারা গেলে সিমি'র একাকীত্বের সুযোগের পূর্ণ সদ্বব্যবহার করা যেত। অন্তত চেষ্টা করে দেখতাম!
"আর কিছুক্ষণ পরে একে নিয়ে যেতে পারেন" ডাক্তার সুসংবাদ জানায়।
বিড়ালটি আদুরে গরগর শব্দ করে ওঠে।
"সিমি, আই লাভ ইউ"
"জানিরে জানি!"
"সিমি আই ওয়ান্ট ইউ" আমি মনে মনে বলি।
সিমি কি ভাবে? সম্ভবত "আই নিড ইউ"।

(৯)
আমি, সিমি আর বিড়ালটি রাজপথ ধরে হাঁটছি। ক্লান্ত বিড়ালটি সিমির কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর সিমি স্বভাববিরুদ্ধ চপলতায় বকবক করে চলেছে।
"এই নিয়ে তিনটা ব্রেক-আপ হল। এই খেলা খেলতে মজাই লাগে বুঝলি? কালকে যখন ঐ হাবলাটা করুণ চোখে তাকিয়ে মিনতি করছিলো, কি যে হাসি পাচ্ছিলো! বেশ একরকম বিকৃত আনন্দ পেয়েছি বলতে পারিস!"
"তুই অনেক নিষ্ঠুর"
"নাহ, আমি আসলে একা। তবে নিষ্ঠুরও বটে, অস্বীকার করবনা। হাহাহা!"
আরেকটু একা হলে ভালো হত, যদি বিড়ালটা মারা যেত। আমি ভাবি। সেইসাথে মনে হয় আমিও কম নিষ্ঠুর না!

রাস্তা পার হবার সময় এক অসতর্ক মুহূর্তে বিড়ালটি সিমির কোল গলে পড়ে যায়। নিমিষেই একটা বাসের নীচে চাপা পড়ে তার ভবলীলা সাঙ্গ হয়। ভবলীলা সাঙ্গ হয় অথবা পটল তোলে- এ জাতীয় বাক্যাবলীই আমার মাথায় ঘুরছিলো। আমার আবারও মনে হয় আমিও কম নিষ্ঠুর না!

(১০)
সিমির তড়িৎবার্তা,
"মনটা অসম্ভব খারাপ। কেন তা তো তুই জানিসই। ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে অনেকদিন পরে। ভালো থাকিস"
আমি জবাব দিই,
"কোন চিন্তা নেই, আমি আছি না!"
জবাবটা লিখে সন্তুষ্টচিত্তে কম্পিউটার এবং বাতি বন্ধ করে ঘুমুতে যাবার সময় অন্ধকারে হঠাৎ দুটো হিংস্র জ্বলন্ত চোখ দেখতে পাই। সিমি'র বিড়ালটা না! এ আবার এত রাতে কোথা থেকে এলো? মরেও শান্তি দেবেনা!

'যাহ! জানোয়ার কোথাকার! চলে যা এখান থেকে কুৎসিত পশু!"
সে হুমকিতে ভয় না পেয়ে ধীরে ধীরে আমার দিকে এগুতে থাকে। আমি ভয়ে সিঁটিয়ে যাই।
"পশু! পশু! পাশবিক ব্যাপার স্যাপার!" আমি আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকি।
মৃত বিড়ালের কোনরকম শব্দ করতে পারার কথা না, কিন্তু সে কিভাবে যেন তার চোখে আগুন নিয়ে, নখে শান দিতে দিতে নিঃশব্দে আমার দিকে আসতে থাকে। আমার ঘরটা সংকুচিত হতে থাকে তার অগ্রসরবর্তী হবার সমানুপাতে। পালানোর কোন পথ নেই। আমার একদম কাছাকাছি চললে আসলে আমি তার রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত দেহটা দেখতে পাই। অগত্যা আমি আমার কম্পিউটার এবং সেলফোন নিয়ে তার চোখের নির্দেশ অনুসারে পীঠে চড়ে বসি। মৃত গলিত বিড়ালের ওপর চড়ে এ যাত্রা মোটেও সুখকর কিছু না। কিন্তু সে আমাকে বয়ে নিয়ে চলে। এত শক্তি কোথায় পেল তার ক্ষুদ্র দেহ কে জানে! আমি কাঁপা কাঁপা হাতে সেলফোনটা নিয়ে ডায়াল করতে থাকি সিমির নম্বরে।
"সিমি, ঘুমিয়ে পড়েছিস? এত তাড়াতাড়ি ভোসভোস করে ঘুমোনোর কি হলরে বাবা!"
রিং হতে থাকে। ফোন ধরেনা কেউ।

মৃত বিড়ালের কাঁধে চড়ে আমি আমার যক্ষের ধন যন্ত্রসমূহ নিয়ে অনিশ্চিতের দিকে অগ্রসর হতে থাকি...

১২৮টি মন্তব্য ১২৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×