somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ভীষণ লম্বা মানুষ

২৩ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)
সঠিক উত্তরটির পাশে টিক চিহ্ন দিন-
মাহমুদ কলি একজন
(ক) অভিনেতা
(খ) গায়ক
(গ) টঙ দোকানদার
(ঘ) আদম ব্যাপারী
মাহমুদ কলিকে নিয়ে হঠাৎ করেই আমাদের মধ্যে বেশ উৎসাহ সঞ্চারিত হলো। ঘটনা যেদিন ঘটলো তার আগে আমি মাহমুদ কলি নামক কারো কথাই শুনি নি। তাই অফিসের লাঞ্চ ব্রেকের সময়টায় দুই সহকর্মীর সাথে গুলতানি মারতে গিয়ে যখন মাহমুদ কলির প্রসঙ্গ এলো, তখন নিজের জ্ঞান স্বল্পতার হেতু প্রথমে কিছুটা বিব্রত বোধ করলেও পরে "সে একজন মাঝারি মাপের হিট বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা" এ কথা শুনে আমার আফসোস তিরোহিত হলো। বাংলা ছবির অভিনেতাদের সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রেখে কে কবে জাতে উঠতে পেরেছে? প্রসঙ্গটা এলো হঠাৎ করেই। আমরা, মানে আমি জায়েদ আর মাহফুজ লাঞ্চ ব্রেকের মাঝে পিএলএমএস এর বুকলেট নিয়ে 'জরুরী' মিটিং করতে গিয়ে মাঝপথে খেই হারিয়ে বাংলাদেশের কোন অভিনেতা সবচেয়ে লম্বা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সুরাহা করতে মগ্ন হলাম। আমি বললাম, আলমগীর। মাহফুজ বললো ইলিয়াস কাঞ্চন। আর জায়েদ কোত্থেকে যেন কোন সুদূর অতীতের গভীরতম তলদেশ খুড়ে নিয়ে এলো এক অজ্ঞেয় নাম, "মাহমুদ কলি"। এই নাম শুনে আমি আর মাহফুজ মুখ চাওয়া চাওয়ি করলাম। মাহমুদ কলি! এই অদ্ভুত নামের লোকটা কে! নামের সাথে লেজ হিসেবে লাগানো 'কলি' আসলে ফুলের কলির স্নিগ্ধতা বহন করে নাকি কলিকালের নির্দেশক, কে জানে! পৌনে দুই সেকেন্ডের বিমুঢ় নীরবতা ভাংলাম আমি।
-মাহমুদ কলির নাম শুনি নাই। সে কী নায়ক না ভিলেন?
আমার এ অজ্ঞতা তাকে আহত করলো। ইদানিং এ ব্যাপারটা খুব ঘটছে। কিছু বললেই মানুষের অনুভূতি আহত হয়।
-মাহমুদ কলিকে চেনেন না! আপনার কাছে এটা আশা করি নাই। খুব তো ফিল্ম দেখে বেড়ান! টারান্টিনো থেকে তারেক মাসুদ সবই দেখেন। দেলোয়ার হোসেন ঝন্টুর নামও আপনার মুখে দুয়েকবার শুনেছি মনে হয়। আর আপনি মাহমুদ কলির নাম জানেন না! হ্যাঁ, স্বীকার করে নিচ্ছি সে খুব জনপ্রিয় কেউ ছিলো না। তার সিনেমা আপনি নাই দেখতে পারেন। তাই বলে নামই শোনেন নি কখনও, তা মেনে নেয়া যায় না। সে নায়ক ছিলো। অতিকায় সুদর্শন এক নায়ক।
মাহফুজও মাহমুদ কলির নাম কখনও শোনে নি। জায়েদের আত্মম্ভরী, শাণিত ভর্ৎসনায় সে কিছুটা অপ্রতিভ হয়ে দ্বিধার সুরে বললো,
-আমিও সম্ভবত তাকে চিনতে পারছি না। একটু হেল্প করেন না আপনি। সে যেন কোন কোন সিনেমা করেছিলো?
এইবার জায়েদ কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গেলো।
-ইয়ে... কোন কোন সিনেমা যেন... ঠিক মনে আসছে না। আরে ভাই, এত সিনেমার নাম মনে থাকে না কি! আপনারা খালি না বুইঝা চার্জ করেন!
চার্জ আবার করলাম কখন! খানিকটা অবাকই হলাম। তবে সঙ্গে সঙ্গে এটাও বুঝতে পারলাম যে জায়েদ নিজেও তার সম্পর্কে খুব একটা ভালো জানে না। কোন সিনেমা তো দেখেই নি, হয়তো কোথাও তার নাম দেখেছিলো দুই একবার। তারই বদৌলতে এত ফুটানি করছে! আমি আর মাহফুজ তাকে জেঁকে ধরে আবিষ্কার করলাম যে, আমাদের ধারণাই সত্যি। সে মাহমুদ কলির নাম একবার তার বাবার কাছে শুনেছিলো কোন এক প্রসঙ্গে। তিনি বলেছিলেন মাহমুদ কলি অত্যন্ত লম্বা একজন নায়ক। সৌভাগ্যক্রমে আজকের আলোচনার সময় সে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলো, এবং অজস্র স্মৃতি সেঁচে মাহমুদ কলির নাম মনে করতে সক্ষম হয়েছিলো।

দেখতে দেখতে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় ফুরিয়ে এলো। আমরাও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের উচ্চদৈর্ঘ্য নায়কদের সম্পর্কে আলোচনা মুলতবী রেখে নিজ নিজ ডেস্কে ফিরে গেলাম।

(২)
কোনটি কোনটি মাহমুদ কলি অভিনীত ছবি নয়, টিক চিহ্ন দিন।
(ক) মাস্তান
(খ) ভয়াবহ
(গ) নেপালি মেয়ে
(ঘ) কঠিন শাস্তি
(ঙ) গৃহ বিবাদ
(চ) লাভ ইন সিঙ্গাপুর

সাধারণত আমাদের দুপুরের আড্ডাটায় অন্যান্য অফিস-কোর্টকাছারি, হোটেল-রেস্টুরেন্টের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম হাতি ঘোড়া মারা হয়। মানে দেশ-জাতি-সমাজ এর বৃহত্তর স্বার্থ, উন্নয়ন প্রক্রিয়ার গলতি সমূহ , রাজনীতিবিদদের স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না বললেই চলে। গত কয়েক দিন ধরে অফিসের কাজ কর্মও কিছুটা ঢিলেঢালা ভাবে চলছে। তাই একসাথে বসলে গান, সিনেমা, খেলা ইত্যাদি নিয়েই গল্প বেশি হয়। আজকে অফিসের লাঞ্চটা বড় ভালো ছিলো। খিচুড়ি আর গরুর মাংস, আহা! আয়েশ করে সাঁপটে আমাদের মেজাজ-মর্জি বেশ দরাজ হয়ে গেলো। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মাহফুজ গতকালের স্থগিত প্রসঙ্গটি পাড়লো আবার।
-তারপর জায়েদ ভাই, কী খবর আপনার মাহমুদ কলির? নতুন কোন সিনেমা টিনেমা করছে না?
"মাহমুদ কলি বর্তমানে টিভি নাটক নির্মান নিয়ে ব্যস্ত আছেন। ১৯৯৭ সালে তিনি প্রথম একটি ধারাবাহিক নাটক নাটক নির্মান করেন তাহাদের কথা। বর্তমানে তিনি আলোকিত আঙ্গিনা নামক ধারাবাহিক নাটক নির্মান করছেন।" জায়েদ মুখ খোলার আগেই আমি উত্তর দিলাম। গতকালের গপ্পসপ্পের পরে নেটে তার নাম সার্চ করে উইকিপিডিয়াতে এই তথ্যটুকু পেয়েছিলাম। আমার স্মৃতিশক্তি খুব একটু খারাপ না!
-বারেব্বাহ! রেজা ভাই, আপনি দেখি ভালো গবেষণা করেছেন! একদম হুবহু উইকি থেকে তুলে দিলেন। আমি নিজেও অবশ্য গতকাল সার্চ করেছিলাম তাকে নিয়ে। তবে মাহফুজ ভাই যে সার্চ করে নাই এইটা বাজি ধরে বলতে পারি। নতুন কোন বিজনেস স্ট্রাটেজি নিয়ে চিন্তা শুরু করেছেন হয়তো। কীভাবে তার চিন্তা আমাদের গছায়া দিয়া নিজে কাঁচঘেরা ঘরে বইসা পৃথিবী থেইকা আলাদা হয়ে যাবেন এইটাই তার জীবনের চরম চাওয়া-পাওয়া!
খোঁচার সুরে কিছুটা তাতিয়ে তুলে সসপ্যানে রুটি ভাজার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে অলরেডি জায়েদ! মাঝে মাঝে এই কৌশলটা খুব কাজে দেয়। আর সে এটা করতেও পারে ভালো। তবে এইবেলা আর সেটা সম্ভব হলো না। আমাদের আশ্চর্য করে দিলো মাহফুজ।
-আপনার ধারণা ভুল! আমিও মাহমুদ কলিকে নিয়ে কিঞ্চিৎ গবেষণা করেছি। এবং অনেক ঘেঁটেঘুঁটে তার বিয়ের ছবির একটা এ্যালবামও বের করে ফেলেছি।
-ওয়েট আ মিনিট! আই ডিডন'ট সি দ্যাট কামিং! কী বললেন আপনি? মাহমুদ কলিকে নিয়ে ঘেঁটেছেন, শুধু ঘাঁটেন নি, অনেক ঘেঁটেছেন, এবং বসে বসে তার বিয়ের ছবি দেখেছেন? জসিমকে আমাদের ভালো লাগে শুনে নাক সিঁটকান, রুবেলের ড্যান্সিং কুংফু আপনার কাছে হাস্যকর মনে হয়, সেই আপনি মাহমুদ কলিকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন? পৃথিবীটা সত্যিই খুব অদ্ভুত!
বিস্ময় গোপন করতে পারলাম না আমি। অবাক হয়েছে জায়েদও।
-তো ঘাঁইটা কী পাইলেন একটু দেখান আমাদের। সে আসলেই কতটা লম্বা তা দেখা দরকার।
আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তার ছবিগুলো দেখলাম। হু, বেশ লম্বা-ঢ্যাঙ্গা আছে। ছবিগুলোর মধ্যে একটা চমৎকার ক্রোনোলোজি লক্ষ্য করলাম। বিয়ের পিঁড়ি, আয়না দেখা, দোলনায় দুষ্টুমী, অবশেষে কোল জুড়ে এলো চাঁদমুখো শিশু। হাহাহা! তার ছেলেটা এতদিনে অনেক বড় হয়ে গেছে। সেও কি বাবার মত লম্বা হয়েছে? মাহমুদ কলি কি আসলেই আলমগীরের চেয়েও লম্বা? ঘুরে ফিরে আবারও প্রসঙ্গ গুলো চলেই এলো। ব্যাপারটা যেমন ভাবে এগুচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে মাহমুদ কলি প্রসঙ্গ আমাদের মধ্যে এমন আরো অনেক রসময় মুহূর্ত উপহার দেবে। থাকে না, নিজেদের মধ্যে এমন কিছু 'কাল্ট' ফান, যেগুলোর মর্মার্থ নির্দিষ্ট গ্রুপের লোকজন ছাড়া আর কেউ বোঝে না? তেমন ইয়ার্কি আর কী!

-কী বানান হাসান ভাই?

চমকে উঠলাম আচমকা মাহফুজের কণ্ঠস্বরে। তার এই এক স্বভাব। প্রতিদিন দুই-একবার তার কাঁচঘেরা ঘরটা থেকে বের হয়ে আমাদের ডেস্কে আসবেই। আমি আর জায়েদ মুখোমুখি বসি। দুজনেই মাহফুজের এই বিশেষ ভঙ্গির জিজ্ঞাসাতে বেশ মজা পাই। যে কোন কাজ করাই হচ্ছে তার কাছে 'বানানো'। যাই হোক, আমি কিছু বানাচ্ছিলাম না। গভীর আগ্রহে মাহমুদ কলিকে নিয়ে গুগলিং করছিলাম।
-জানেন মাহফুজ ভাই, মাহমুদ কলির আসল নাম মাহমুদুর রহমান ওসমানী।
-আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম এইটা। এমন দামড়া একটা ব্যাটার নাম ফুল-পাখি-কলি-ঢলো ঢলো সখী রাখা একমাত্র ঢাকাই ছবির পরিচালকদের পক্ষেই সম্ভব। এই মাত্র তারে নিয়ে লেখা রিসেন্ট একটা প্রতিবেদন পাইলাম। সেখানে লিখছে কেমনে তার এই নাম আসলো।

-আপনাদের হইলো টা কী! খালি মাহমুদ কলি মাহমুদ কলি মাহমুদ কলি! সারাক্ষণ একে নিয়ে থাকলে কাজ করবেন কখন?

মাহফুজ খুব নির্বিকার ভাবে সার্কাজম করতে পারে। ফলে সে সিরিয়াস না কি আমাদের লেগ পুলিং করছে ঠিক বুঝতে পারলাম না।

হঠাৎ আমার ভেতরের হতচকিত ভাবটা কীভাবে যেন ভীষণ রকম প্রাণবান হয়ে তড়পাতে লাগলো। একটা সম্মিলিত ঐক্যের ধক গরমাগরম ঝাপটা দিয়ে গেলো আমার হৃদকোঠরে। আমি কীভাবে যেন বুঝে গেলাম কিছু একটা ঘটছে এখানে। অশুভ, অদ্ভুত, হাস্যরসাত্মক, অপমানজনক চতুর্মুখী অনুভূতিমাকড়ের দংশনে উল্লম্ফিত হয়ে চ্যালেঞ্জ করে বসলাম মাহফুজকে।
-আমি শিওর, আপনিও মাহমুদ কলিরে নিয়াই সার্চ দিতাছিলেন। আপনার ব্রাউজারের হিস্টোরি ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে। চলেন চলেন দেখি! এই শালার মাহমুদ কলির কারণে আপনি আমাদের কাজের খোঁটা দিলেন...
জায়েদকে উৎসাহ দিলাম।
-খবরদার মাহমুদ কলিরে নিয়ে কোন টাল্টিবাল্টি করবেন না। সে হইতে পারে তেমন জনপ্রিয়তা পায় নাই, কিন্তু লোক হিসাবে ভালো। অনেক ভালো। হ্যাঁ স্বীকার করলাম আমিও তারে নিয়া একটা আর্টিকেল পড়তাছিলাম, তবে এর সাথে বৃটেনের ইইউ জোট থিকা বাইর হইয়া আসনের কোন সম্পর্ক নাই।
-ঠিক যেমন যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযানে হাজার হাজার লোক ধরার সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই।
জায়েদ সঙ্গত করলো।
-তেমনই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথেও তার কোন সম্পর্ক নাই।
সবাই আমার সাথে একমত পোষণ করে চিয়ার্স করলো এই মোস্ট আন্ডাররেটেড মহানায়কের জন্যে।

(৩)
সিনেমা ছাড়া মাহমুদ কলি আর কী কী ব্যাপারে পারদর্শী ছিলেন? টিক দিন।
(ক) রিয়াল লাইফ এ্যাকশন হিরো
(খ) গনমনস্তাত্ত্বিক সম্মোহন
(গ) কর্পোরেট টিম ম্যানেজমেন্ট

(আমার কথা)
মাহমুদ কলি কেবল মাত্র একজন রোমান্টিক সোশাল ফ্যামিলি মুভির নায়কের ভূমিকায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারেন না। তিনি অবশ্যই বিশেষ। গড়পড়তা বাঙ্গালির চেয়ে তিনি অনেক বেশি লম্বা, ওয়ে এ্যাহেড! এটাই তো তার বিশেষত্ব প্রমাণের জন্যে যথেষ্ট। এছাড়াও দেখুন, এতগুলি চলচ্চিত্রের অভিনয় করার পরেও কারো সাথে লুচ্চামি করেছেন, কারো প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছেন, এমন কথা কেউ বলতে পারবে না।একটি মাত্র বিয়ে করেছেন। সেই বিয়ে এখনও টিকে আছে। নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করেছেন। বাবা হয়েছেন। বয়স হয়ে গেলে ভুড়িটাকে সঙ্গে করে সঙ্গোপনে কেটে পড়েছেন সেলুলয়েড দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে। বেছে নিয়েছেন পরিবার। সত্যিকারের হিরো তো এমনই হওয়া উচিত। তিনি এড়িয়েছেন পাপ, এড়িয়েছেন প্রলোভন, গড়েছেন পরিবার, বলেছেন পষ্ট, হন নি পথভ্রষ্ট ... হানিফ সংকেতের ইত্যাদির মত আমারো এসে গেল ছন্দ, মাহমুদ কলির ফ্যানের এ আনন্দ...এক্সকিউজ মি,আমি একটু আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম, ফলে কথার ভলিউমটা বেশি বেড়ে গিয়েছিলো যা মোটেই এটিকেট সম্পন্ন না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, তার চলচ্চিত্র ছিলো পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মত পরিচ্ছন্ন সামাজিক এ্যাকশান ছবি…
আমি নিজেকে একটু সামলে নেই ততক্ষণে আপনারা বরং জায়েদের কথা শুনুন,

(জায়েদের কথা)
আমার কথা সিম্পল। সে সাধারণ কেউ না। কেন? অত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে যাইতে পারুম না। অত টাইমই নাই। তারপরেও যদি তর্ক করতে চান, সুন্দর এক বিকেলে অফিস থেকে বেড়িয়ে দেলোয়ার ভাইয়ের দোকানে কফি খেতে খেতে কথা বলা যাবে খন, যদি মুড ভালো থাকে। দেলোয়ার ভাইয়ের দোকানে বারো রকম কফি পাওয়া যায়। বারো রকম মানুষ নামে একটা ধারাবাহিক নাটক হইতো আগে বিটিভিতে। মনে আছে? ইমদাদুল হক মিলনের লেখা। আগে নাটক সিনেমার একটা কোয়ালিটি ছিলো। এখন যে কই নামছে! জ্বী না,আমি অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতাছি না। খেয়াল কইরা দেখেন, যে আমলের নাটকের কথা বলছি, মাহমুদ কলি সেই সময়েই অভিনয় করতেন। গুড ওল্ড নাইন্টিজের একটা আলাদা চার্ম আছে। এটা মোটেও মধ্যবয়সী জল্পনা না। ফ্যাক্ট। দিজ শিট ইজ ফাকিং ফ্যাক্ট! পারডন মাই ল্যাঙ্গুয়েজ। বাট সি, সাইকোলজিক্যাল ব্যাপার কিন্তু চলেই আসে। ইউ কান্ট ডিনাই দ্যাট। সে শুধু নায়ক না। একজন সাইকোলজিস্ট। কাউন্সেলর। হিপ্নোটিস্ট। এই দুঃসময়ে, এই চাপাতি কোপাতির যুগে সে একজন ইন্সপারেশন। আমাদের একেবারে যা তা ভাইবেন না। মাথা বেইচা খাই। মাঝেমধ্যে ভাবতে ভাবতে মগজের ধুসর কোষ বেদনায় নীল, ব্যথায় লাল হয়ে যায়। সো পেইনফুল স্টাফ। গত কয়েক দিন ধইরা আমাদের মাথা খাইতাছে,এমনি এমনি না। এটা ডানো দুধ না যে এমনি এমনি খাওয়া যাইবো। আর সবচেয়ে বড় কথা হইলো, তার চলচ্চিত্র ছিলো পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মত পরিচ্ছন্ন সামাজিক এ্যাকশান ছবি…
মাহফুজ ভায়া কী বলেন?
(মাহফুজের কথা)
কী আর বলবো, বলতে গেলেই তো প্যাট্রিক লিঞ্চিওনির সেই বিখ্যাত কর্পোরেট ফিকশনের কথা মনে পড়ে যায়। "দ্যা ফাইভ ডিসফাংশনস অফ আ টিম"। বইয়ের মত বই ছিলো বটে। তিনি বইটিতে দেখিয়েছেন, পাঁচটি মূল বিষয়ের অভাবে টিমে ফাটল ধরে যাবেই। মাস্ট! সে যতই দুর্দান্ত এক্সিকিউটিভ দিয়ে টিম সাজাক না কেন! বিষয়গুলি হলো,
১। বিশ্বাসের অভাব
২। দ্বন্দ্বের ভয়
৩। কমিটমেন্টের অভাব
৪। জবাবদিহিতার অভাব
এবং,
৫। লক্ষ্যভ্রষ্টতা
এখন আসুন, বিশ্লেষণ করা যাক কীভাবে কর্পোরেট লাইফের কালচার সিনেমাতেও ঢুকে যায়। কাগজেই লিখি।
বিশ্বাসের অভাব- এই যেমন ধরেন হেবাং নামক সেই অনলাইন শপটির কথা। চাকমা উপজাতির নিজস্ব কালচারের খাওয়া দাওয়া বিক্রী করে অনলাইনে। বাঁশের শাস দিয়ে মাংস বানায়। এটা কিন্তু খুব সিগনিফিকেন্ট। আপনি ভাবতে পারেন বাঁশ খাবার ব্যাপারটা মিথ্যা। যদিও আমরা সকলেই বাঁশ খাই নিয়মিত। মাহমুদ কলি ভাই থাকলে এটা হতো না কিন্তু।
দ্বন্দ্বের ভয়- দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে, এই ভয়ে কর্পোরেট জগতে একে অন্যের সমালোচনা করতে ভয় পায়। কিন্তু মাহমুদ কলির সিনেমা দেখুন, তার কত শত শত্রু ছিলো! কেউ তার বাবাকে মেরেছে, কেউ মাকে মেরেছে, কেউ বোনকে ধর্ষণ করেছে, কেউ তার ক্ষতি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, সে কিন্তু কাউকেই ছাড়ে নি। দ্বন্দ্ব কে ভয় পায়নি।
কমিটমেন্টের অভাব- তিনি................................................
_________________________________________________________________
---আর সবচেয়ে বড় কথা হইলো, তার চলচ্চিত্র ছিলো পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মত পরিচ্ছন্ন সামাজিক এ্যাকশান ছবি…

-এক্সকিউজ মি মামা রা। এখন দশটা বাজে। আমাদের বার বন্ধ হবার টাইম। আপনারা ওঠেন।
-উঠবো মানে? আমাদের ক্রিয়েটিভ কনসালটেন্টকে ইনসাল্ট! এত বড় কথা!
ক্ষেপে উঠি আমি। বলে যাই,
জানেন উনি একজন টাকার কুমীর! সে কেবল বলা শুরু করেছিলো...আপনি বলে যান মাহফুজ ভাই। বলে যান। বোওলে যান। বোওওওলে যান। আপনার কেবল কথা ফুটতাছে আরি রে আরি রাং...দ্যা নাইট ইজ স্টিল ইয়াং...
(৪)
নিম্নের পাঁচটি প্রশ্নের সব গুলোর জবাব দিন।
পূর্ন মান- আহমেদ কলির সর্বমোট অভিনীত ছবির সমান (আনুমানিক ৫০)
সময়- তার অভিনীত ছবি গুলোর গড় দৈর্ঘ্য আনুমানিক (১৩৫ মিনিট)

১/ তিন জন মধ্যবয়েসী চাকুরের মনের মধ্যে মাহমুদ কলির পদার্পণের ফলে তাদের পানাসক্তি বেড়ে যাওয়াটা দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সুফল নিয়ে আসবে, কেন?
২/ সাকুরা বার থেকে পশ্চাদ্দেশে লাথি খেয়ে বেরিয়ে গিয়ে ল্যাম্পপোস্টের দৈর্ঘ্য দেখে তাকে মাহমুদ কলির সমান লম্বা ভেবে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করাটা এলজিবিটি মুভমেন্টের জন্যে ইতিবাচক-ব্যাখ্যা করুন।
৩/ মাহমুদ কলির মিডিওকার, ছিমছাম ঝিমঝাম ফিল্ম ক্যারিয়ার দেশের গর্জায়মান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ‘হতে পারতো’ হিরো জনৈক পুলিস অফিসারের পরিত্রাতা ইমেজের জন্যে হুমকি স্বরূপ- স্বপক্ষে যুক্তি দিন।
৪/ প্যাট্রিক লিঞ্চিওনির বই, ইমদাদুল হক মিলনের নাটক এবং হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের সাথে মাহমুদ কলির সিনেমার যোগসাজশে মিলেনিয়ামের রক্তাপ্লুত কৃষ্ণ নক্ষত্রেরা মিল্কিওয়ের ভেতর স্বর্গের শিশুদের জন্যে কবরখানা গড়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, মোড়ল রাষ্ট্রেরা তার বাস্তবায়ন ব্যাহত করতে বদ্ধ পরিকর, কেন? বিস্তারিত লিখুন।
৫/ তিন পানাসক্ত মধ্যবয়েসী যুবক তাদের মাহমুদ কলি বিষয়ক বচনে বারবার তার সিনেমা গুলো পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মত, এবং সে একজন সুপার হিরো, এই তুলনায় সামাজিক এবং ব্যক্তিগত অস্থিরতায় নাচার হয়ে একজন মিডিওকার অভিনেতার শরণাপন্ন হবার ফলে সামষ্টিক অক্ষমতা তুলে ধরার যে মেটাফরিক রূপ দান করেছেন, তা যথার্থ- ব্যাখ্যা করুন।

(৫)
লেখা শুরু হবার আগেই যে খাতা নিয়ে গেলো, সে আসলে কে ছিলো? টিক দিন।
(ক) প্রধান সেনাপতি
(খ) প্রধান আসমানী বালাই বিশারদ
(গ) প্রধান কারণিক
(ঘ) ওপরের সবগুলোই
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৫১
২৭টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×