somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওয়ান ইজ এনাফ

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


*
সে একজন বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মানুষ। তার সমস্যা বা গুণ যাই বলা হোক না কেন তা হলো, কোনকিছু জিজ্ঞেস করলে সে তার জানার সীমা থেকে প্রাসঙ্গিক/অপ্রাসঙ্গিক সবকিছু মিলিয়ে ডিটেইল একটা উত্তর দেবে। আপনি অবশ্য তাকে চিনবেন না মনে হয়। আমাদের এলাকারই অধিবাসী। ছোটখাট দেখতে, ক্রু কাট চুল। গায়ের রঙ বৈশিষ্ট্যহীন। গড়পড়তা বাংলাদেশীদের মত। দুর্জনেরা যাকে বলে ‘কালা কুটকুটা” আর মা-খালারা বলেন “উজ্জ্বল শ্যামলা”। চেনেন না? চিনে যাবেন। এলাকায় নতুন এসেছেন তো, সব কিছু বুঝে নিতে একটু সময় লাগবে। বসেন, চা খান। আরে বসেন! আমিই বিলটা দেবো। ইচ্ছা করলে বাকির খাতায় লিখে রাখতে পারতাম, কিন্তু কাউকে আপ্যায়ন করার জন্যে এটা সঠিক পন্থা না। সে কি রকম ডিটেইল বলে তার একটা উদাহরণ শুনবেন? ধরুন, তাকে জিজ্ঞাসা করলেন ৩১২ নম্বর বাসাটা কোথায়। যদি সে জানে, তাহলে শুধু বাসার ডিরেকশন দিয়ে ক্ষান্ত হবে না। বাসাটা কবে থেকে আছে, কে বানিয়েছে, কারা কারা বসবাস করেছে, ভবন বা অধিবাসী সংক্রান্ত কোন ট্রাজেডি আছে কি না, বাড়ি বানানোর সময়ে কোন অঘটন ঘটেছিলো কি না, মাস্তানরা চাঁদা চেয়েছিলো কি না, ভেজাল ইট অথবা বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছিলো কি না, সব সে বলে দেবে। সব! আপনি প্রথম প্রথম ভুল বুঝতে পারেন। ভাবতেই পারেন সে একজন উটকো আপদ, অতি বাচাল একজন অথবা গাঁজাখোর।
যদি সময় থাকে আরেকটু বসেন না! আজ তো ছুটির দিন। দিলেন না হয় খানিকক্ষণ আড্ডা! চা খান আরেক কাপ? নাস্তা করে বেরিয়েছেন? ও আচ্ছা। তাও খান না এক পিস কেক, অথবা বিস্কুট? হু, সংকোচ করবেন না। কেকটা সস্তা হলেও স্বাদ আছে। যা বলছিলাম, তার এসব বলার পেছনে কিন্তু যৌক্তিক কারণ আছে। আই মিন, তার নিজস্ব যুক্তি। তা হয়তো অনেকটাই উইয়ার্ড অথবা আনঅর্থোডক্স মনে হতে পারে, তবে সবারই যুক্তির নিজস্ব প্যাটার্ন আছে। আপনার সাথে মিললো না বলে বাতিল করে দেয়াটা ঠিক হবে না নিশ্চয়ই! আমাকে ব্যাখ্যা করতে দিন। অবশ্য যদি মনে করেন যে ব্যাখ্যার নামে তার নাম ফাটিয়ে আনফেয়ার এ্যাডভান্টেজ নিতে চাচ্ছি, তাহলে ভাই খোদা হাফেজ। আরে না না, কিছু মনে করার কী আছে এখানে! এই হালকা একটু মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর কি! এরম হয়েই থাকে। তো কোথায় ছিলাম যেন আমরা? ৩১২ নাম্বার বাড়ি খোঁজার ব্যাপারটা, রাইট? হ্যাঁ, ওটা পরিষ্কার করলেই অনেক কিছু বুঝে যাবেন। যেমন ধরেন রডের বদলে বাঁশ দিয়ে ঐ বাড়িটা বানানো হয়েছে কি না এই প্রশ্নের জবাব জানা আপনার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। কিন্তু ধরুন ঐ বাড়িতে যাওয়ার পথে ভূমিকম্প হলো, শক্তিশালী আফটার শক আসার সম্ভাবনা, সে ক্ষেত্রে যদি জেনে থাকেন যে বাড়িটায় সিমেন্টের বদলে বালু আর রডের বদলে বাঁশ দেয়া হয়েছে, তাহলে কি আপনি সেখানে যাবেন? সোজা উত্তর, একটা শিশুও বলতে পারবে জবাব। হ্যাঁ আপনি যাবেন না। কারণ ভূমিকম্প হলে ঐ বাড়িটার ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ব্যাখ্যাগুলো এরকমই কম বেশি। সবকিছু বলে আপনাকে বিরক্ত করতে চাই না। তবে একজন শুভানুধ্যায়ী হিসেবে আপনাকে এলাকার খুঁটিনাটি চিনতে সাহায্য করা তো আমার কর্তব্য! উঠবেন এখন? আচ্ছা। আপনাকে আর আটকায়ে রাখবো না। ঠিক আছে ভাই,আবার দেখা হবে। আপনার নামটা যেন কী? আচ্ছা, সোলায়মান। আমি হায়দার।
খোদা হাফেজ। আইসেন মাঝে মধ্যে এই চায়ের দোকানে।

*
এসব চালাকি আমার সাথে চলবে না। বুঝলেন হে পাইকপাড়া বাসী! আজ একজন আমাকে নতুন পেয়ে মজা নিলো খুব। কী সব মাল-টাল বুঝাইলো সেই জানে কেবল! কী এক কাহিনী শুনাইলো! মাঝবয়েসী একজন, সে নাকি কিছু জিজ্ঞাসা করলে হরহর করে চৌদ্দগুষ্টির খবর বলা শুরু করে। তা করুক। দুনিয়াতে পাগলের অভাব নাই। বলতেই পারে। কিন্তু সুস্থ একজন মানুষ কি করে এসবের অনুমোদন দেয়! আবার তার সব ছিটগ্রস্ত প্রলাপের ব্যাখ্যাও দাঁড় করায়! চূড়ান্ত রকম পাগলামী। আমার ধারণা সেও তার উদ্দিষ্ট বস্তুটির মত ছিটগ্রস্ত। সিজোফ্রেনিয়াক হলেই বা আটকাচ্ছে কে! আমি কিন্তু মোটেও বিরক্ত হচ্ছি না বা হই নি। ছুটির দিনে শীতের সকালে চা খেতে খেতে ছিটগ্রস্ত কোনো একজনের কাছ থেকে বিচিত্র একটা গল্প শোনা, মজারই তো ব্যাপারটা! তখন মজা লাগলেও এখন কেমন যেন মায়া লাগছে। হাজার হোক, মানসিক ভারসাম্যহীনতাও তো একটা রোগ। রোগীদের নিয়ে হাসাহাসি না করে তাদেরকে কীভাবে সুস্থ করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা করাই শ্রেয়। জন্ডিস রোগী দেখলে আমরা দুঃখিত হই, কিন্তু সিজোফ্রেনিয়করা আমাদের কাছে বিনোদনের উপকরণ। এটা মোটেও ভালো কথা না।
যাই হোক, সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেই সবজান্তা আধপাগলার সাথে দেখা করে তাকে কোন একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবো। দেখি, সে কী জবাব দেয়। হ্যাঁ,আমি স্বীকার করছি যে গিলটি প্লেজার নেয়া মোটেও কোন বিবেকবান মানুষের কাজ হবে না। কিন্তু সবারই তো সীমাবদ্ধতা থাকে। মাই ব্যাড।
*
-কী খবর ভাই, আজকে অফিসে যান নাই? এত সকাল সকাল চায়ের দোকানে আইসা উপস্থিত?
-অফিসে যাই নাই।
-কেন?শরীর খারাপ নাকি?
-তা কিছুটা। কালকে রাতে ঘুম হয় নাই। সারারাত নির্ঘুম থেকে ক্লান্তি কাটানোর জন্যে আসলাম আর কি একটু চা খেতে। আপনাকে এখানে দেখে ভালো লাগলো।
-আচ্ছা আপনি যেন কোথায় আছেন?
-কোথায় আছি মানে?এই তো পাইকপাড়াতে!
-না, আমি জিগাইতেছিলাম কোথায় জব করেন!
-ওহ আচ্ছা! আমি আছি আর কি, একটা এ্যাড ফার্মে। কপি রাইটার হিসেবে।
-কপি রাইটার! মানে আপনি বিজ্ঞাপন লেখেন। ভালো কাজ। আপনি কিন্তু একটা কাজ করতে পারেন। ওয়াসিম, মানে ঐ পোলাডা যার কথা কালকে বল্লাম,ওকে নিয়ে একটা স্টোরি বানায় ফেলতে পারেন।
-এলাকা নিয়ে আপনি অনেক ভাবেন,তাই না?
-হ্যাঁ তা তো ভাববোই। জন্ম এখানে, এখানেই বেড়ে ওঠা...ওই যে দেখেন,ওয়াসিম আসতেছে। যান ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করে দেখেন, কী বলে।
-ভাই, সত্যি কথা বলি, কিছু মনে নিয়েন না। আমি মনে করি সে অসুস্থ। তার চিকিৎসা দরকার। তার অসুখের কারণে অবশ্য কারো কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তবে তাকে এরকম দ্রষ্টব্য জিনিস বানায়া প্রদর্শনের জন্যে সাজায় রাখাটা মোটেও ভালো দেখায় না।
হায়দার খুব একটু গুরুত্ব দিলো না সোলায়মানের কথায়। ওয়াসিমকে ডেকে এনে বসালো।
-আরে আসো ওয়াসিম। এলাকায় নতুন মানুষ আইলো আর তুমি কোন খোঁজই রাখলা না,এটা কেমন ব্যাপার হ্যাঁ? পরিচিত হও। ইনার নাম সোলায়মান।

-স্লামালিকুম
-ওয়ালাইকুম। ভালো আছেন?
-জ্বী।

সোলায়মান বেশ কৌতুহল আর আগ্রহ নিয়ে তাদের এ্যাটিচুড নিরীখ করছে। হায়দার বেশ আগ্রহী। কিন্তু ওয়াসিমের মনের ভাব বোঝা যাচ্ছে না। সবাই অপেক্ষা করছে কোন একটা কিছুর, যাতে এই অস্বস্তিকর নীরবতা ভাঙে। সোলায়মানের অভদ্রতা করতে ইচ্ছে করলো না। আনমনে প্রশ্ন করে বসলো,
-কী খবর ওয়াসিম ভাই? ভালো আছেন?
-জ্বী ভালো আছি। বেশ কয়েকদিন ধরেই ভালো আছি। এর আগে খারাপ ছিলাম কিছুদিনের জন্যে। এখন ভালো আছি। ভালো থাকার একটা কারণ, নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হলো। নতুন মানুষ, নতুন অনুভূতির আদান প্রদান। হয়তো বা আপনার কাছ থেকে আমি কোন উপকার পাবো, অথবা আমার কাছ থেকে আপনি। পজিটিভলি ভাবছি আর কী। হয়তো বা আপনি আমাদের পেঙ্গুইন যুব সংঘের ফুটবল দলের গোলকিপিং সমস্যার সমাধান করতে পারেন, অথবা সমবায় সমিতির ভারপ্রাপ্ত কোষাধক্ষ্য হতে পারেন। এসব ভেবে ভালো লাগছে। ভালো আছি।
-দেখলেন ভাই? দেখলেন? তার কথার মধ্যে কিন্তু আর্ট সায়েন্স লজিক সবই আছে। অনেকেই বেশি কথা বলে, তাদের সাথে একে মিলালে কিন্তু হবে না ভাইজান।
-আপনি মনে হচ্ছে তার গুণমুগ্ধ একজন ভক্ত?
-আপনার কথার মধ্যে খানিকটা পিঞ্চিং আছে অবশ্য। ইগনর করলাম। গুণের কদর করার দরকার হলে করবো কদর! মানী লোকরে সম্মান দিলে এতে নিজের অসম্মান হয় না।
-হায়দার ভাই, কারো সামনে এইভাবে প্রশংসা করলে সে বিব্রত হয়। আশা করি আপনি সেটা বুঝবেন। অনেক বার বলা হয়েছে আপনাকে তারপরেও যে কেন এরম করেন! আসুমই না আপনার সামনে আর।
-হ, উচিত কথা কইলেই তোমগো লাগে! এত কিসের লাজ, শরম, ন্যাকামি হ্যাঁ? তুমি তো কম ভোগান্তি পোহাও নাই। মাইনষে যা বলে বলুক। সত্যটা প্রকাশ করতেই হবে। আমি...
গত দুইশ বছরের মধ্যে এটাই সম্ভবত সোলায়মানের জীবনের সবচেয়ে উত্তেজনাকর মুহূর্ত ছিলো। ব্যাপারটা যত হালকা ভেবেছিলো তত হালকা না মোটেও। কিছু একটা রহস্য আছে। হায়দার সেটা বলার উপক্রম করতেই ওয়াসিমের আচমকা আক্রমণে তার জিহাদী জজবা কেটে গেলো। সে সত্য প্রকাশের বদলে চায়ের দোকানের সাধারন কাস্টমার হয়ে গেলো, চায়ের মধ্যে চিনি আর আদার মিশ্রণের খুঁত ধরাটাই যার মূল কাজ। বেশি কিছু না, ওয়াসিম তার কলার ধরে তাকে হুমকি দিয়ে খুন করার ইচ্ছেটা জানিয়েছিলো। এতেই কাজ হলো। ওয়াসিম গট গট করে চলে গেলো, আর হায়দার গোমড়া মুখ করে বসে রইলো। কিছুতেই আর তার মুখ খোলানো গেলো না।
*
-তারপর কী হইল, তারে প্রচুর টর্চার করলো হ্যারা। শুনা যায়, তার বিচি কাইটা খাসী কইরা দিছিলো। এরপর থিকাই সে এমুন হইছে। বেশি কতা কয় খালি।
টঙয়ের দোকানদারের কাছে সোলায়মান এক আশ্চর্য নিষ্ঠুর ঘটনা শুনলো। হায়দার আর ওয়াসিম ছিলো দুই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বয়সের পার্থক্য থাকলেও তা কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় নি। এক ম্লান গোধূলি লগ্নে তারা একসাথে বসে ধূমপান করছিলো। সে সময় কোত্থেকে এক মারদাঙ্গা, পেটোয়া পুলিশযান এসে তাদের দুজন কে গ্রেপ্তার করতে ঝাঁপিয়ে পড়লো। হায়দার কোনক্রমে কেটে যেতে পারলেও ওয়াসিম ধরা খেয়ে গেলো। কেন, কী জন্যে এসবের কোন উত্তর কখনও পাওয়া যায় নি। এলাকার এক পুলিশের সোর্স পরবর্তীতে নিজেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবী করে তাকে অত্যাচারের প্রক্রিয়া গুলো ছড়িয়ে দিলো সবার কাছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো তাকে খোজা বানানোর ব্যাপারটা। পয়ত্রিশ বছরে এসেও বিয়ে না করাটা এই গুজবের পালে ভালোই হাওয়া দিলো। বিদ্ধস্ত অবস্থায় ফিরে আসা বন্ধুর জন্যে চরম ভাবে শোকাতুর হয়ে পড়লো হায়দার। এই এলাকার মানুষজন স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য বাঙালীর মত হুজুগে হলেও তাদের মধ্যে মায়া দয়া আছে। দুই বন্ধুর মানসিক ভারসাম্যের পতনে তারা আহত হলো। তাই তারা দুজনকেই খানিকটা প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। ওরা থাকছে নিজের মত। কারো তো ক্ষতি করছে না। তাহলে অসুবিধা টা কোথায়!
নিজের ভাবনা এবং অনুমান এভাবে মিলে যাওয়ায় সোলায়মানের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটা ছিলো চরম!
*
ইয়েস! আমি একটা জিনিয়াস! কী দারুণ ভাবেই না আমার অনুমান মিলে গেলো! এ তো ঝড়ে বক মেরে কামেল হয়ে যাওয়া কেরামতবাজী ধুরন্ধরের ধান্দা না, একজন ঠান্ডা মাথার যুক্তিবাদী প্রতিভার চিন্তার স্বচ্ছতা। অবশ্য তাদের পরিণতিটা দুঃখজনক,আই মাস্ট এ্যাডমিট। এটা নিয়ে পত্রিকায় একটা স্টোরি করলে ভালোই হত। বন্ধুরা অনেকেই আছে সাংবাদিক। কাকে কাকে বলা যায়? ভেবে দেখি।
বিছানায় শুয়ে ভাবতে ভাবতে সে থৈ হারিয়ে ফেললো। কোলবালিশ টা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো শিশুদের মত।
*
-ভাইজান, ও ভাইজান! ঘুমান কেন, ওঠেন! আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো। কাউকে বললে মনটা হালকা হইতো। শুনবেন আমার কথা?
ওয়াসিমের দিকে নিস্পলক কৌতূহলে তাকিয়ে থাকলো সোলায়মান। ওয়াসিম হঠাৎ তার বিশাল লম্বা হাতের সূচাগ্র নখ বের করে তার চোখ খোঁচাতে লাগলো।
-ওরা এমনে আমার চোখ গাইলা দিতে চাইসিলো।
বলার সাথে সাথে তার মুখ থেকে অজস্র টিকটিকি বেরিয়ে সোলায়মানের রাতের আরাম পোষাকের নিম্নাংশে ঢুকে যেতে লাগলো। তার তার উরু কামড়ে ধরলো। ছুটোছুটি করতে লাগলো অণ্ডকোষ থেকে যৌনাঙ্গের মাথা, নাভীমূল থেকে গলায়, গলা থেকে
নাকে
চোখে
মুখে।
-আর তারপর করলো কী জানেন? আমার মাথার চাঁদির চুল চাইছা তার মধ্যে তিন সেকেন্ড পরপর এক ফোঁটা করে পানি ফেলতে লাগলো। আমারে পেশাব করতে কইলো একটা বাল্টির মধ্যে। ঐখানে কারেন্ট ছিলো। আমার ধনটা জ্বইলা গেলো রে ভাই! দেখেন কী অবস্থা।
সে আচমকা তার লুঙ্গি খুলে ফেলে পুরুষাঙ্গটা ধরে টানতে লাগলো। তা বড় হতে লাগলো রাবারের মত। অতি চিকন, ল্যাড়ব্যাড়া এক কুৎসিত দর্শন বস্তুতে পরিনত হলো সেটা।
-আপনারে চুদুম।
ভয়ানক ভয় পেয়ে দৌড়ুতে শুরু করতে লাগলো সোলায়মান। আর বিশ্রী হাসি হেসে তার পেছন পেছন যাচ্ছে ওয়াসিম।
মজার এই দৃশ্য দেখে ধরণী কাঁপিয়ে হাসি শুরূ করলো হায়দার।
-হাহাহাহাহাহাহাহাহা!এত ভয় পান কেন মিঞা! ও কিছু করতে পারবে না। ও না খোঁজা?
চারিদিকে তার এই ভাষ্য প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।
ও না খোঁজা! ও না খোঁজা! ও না খোঁজা!
অবশেষে তারা তাকে বাগে পেলো। দুইজন দুদিক থেকে ধরে শার্টের কলার ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলতে লাগলো, “দেখা যাবে আপ্নে কেমন বিচিবান।“

*
ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। অনেক দিন আগে পত্রিকাতে পড়া পুলিশের টর্চারের ভয়াবহ বর্ণনা চমৎকার টাইমিং করে ফিরে আসলো সোলায়মানের স্বপ্নে! তবে ভয়াবহ অনুভূতির সাথে সাথে কিছুটা আত্মবোধনও হলো। দুজন আধপাগল মানুষের বৈচিত্রময় আচরণের বিনোদন ভ্যালু কতটা অমানবিক সে উপলব্ধি হলো। আর সেই সাথে ম্যাজিকের মত এও বুঝতে পারলো কেন ওয়াসিম কোন প্রশ্নের জবাবে এত বেশি কথা বলে। পুলিশের রিমান্ড বিষয়ক সে প্রাচীন গল্পটা মনে পড়ে গেলো তার। যেখানে জিজ্ঞাসাবাদের তোড়ে শেয়ালও হড়বড় করে বলে ফেলে কীভাবে সে টাইম মেশিনে করে তার নখ দিয়ে আঁচড়ে ডাইনোসরদের মেরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করে দিয়েছে।
সুতরাং ওয়াসিম যে টর্চারের স্বীকার হয়ে এমন অনেক কথা হড়বড় করে বলে দিয়েছে, তাতে আর সন্দেহ কী! এখনো সেই অভিজ্ঞতার জের টানছে সে। সব প্রশ্নের জবাবে ডিটেইলস বলে, যাতে সবাই তাদের জিজ্ঞাস্য পুরোপুরি বুঝে পায়। তার তরফ থেকে কোন গলদ যেন না থাকে।
বেচারা! তার জন্যে কিছু করা দরকার! এই শব্দখেকো বিভিন্ন ধারা উপধারার যুগে সে এত কথা বলে যাচ্ছে, তার জন্যে একটা পুরষ্কার অবশ্যই তার প্রাপ্য। নিজের প্রতিবাদহীন, আয়েশী, নিস্তরঙ্গ জীবনে সুখ পাওয়া যাচ্ছে না কিছুতেই। কিছু একটা করা দরকার। ভীড়ের মানুষ থেকে সামনে এগুতে হবেই তাকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাথরুমে গেলো সে। হাতে নতুন কেনা স্টেইনলেস স্টিলের ব্লেড।

*
৩১২ নং বাড়ির সামনে একটা সাইকেল এসে থামলো। কলিংবেল টিপলো।
-এটা কি ওয়াসিম সাহেবের বাড়ি?
-হ্যাঁ, আমিই ওয়াসিম। আমি সাধারণত একবার বেল টিপলেই দরোজা খুলে দেই না। কিছুক্ষণ ভাবি, কে হতে পারে। তারপর...
তার কথায় বাগড়া দিলো কুরিয়ারের বেরসিক লোকটা।
-আপনার জন্যে একটা পার্সেল আছে। এই নেন। গরমে টায়ার্ড হইছি। দশটা টাকা দেন।
*
মোড়কটা খুললো সে। কেমন যেন আঁশটে গন্ধ। কেমন যেন নোনা ধরা ঝিনুকের মত টক টক আবহ।
একটি অণ্ডকোষ। সাথে ছোট্ট একটা চিরকূট।
প্রিয় ওয়াসিম,

ওয়ান ইজ এনাফ।
শুভেচ্ছান্তে

সোলায়মান।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৩১
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×