somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আয়ান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো...

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯ জানুয়ারি- ২০১৭
দুপুর থেকেই আমার মনটা খুব চঞ্চল হয়ে ছিল। কারণ, একজন বিশেষ মানুষ আমার জন্যে অপেক্ষায় ছিল। মিরপুর ১০ নম্বরের একটি অফিস ভবনে বোতলবন্দী শীতের মিঠে রোদটায় ছিল অন্যরকম উষ্ণতা। খিচুড়ি আর মুরগীর মাংস দিয়ে ভরপেট লাঞ্চ করার পর শরীর একটু আরাম চায়, চায় একটু পেলবতা, নরম স্পর্শ, হেলান দেয়ার মতো একটি রিভলভিং চেয়ার, বেশি না বড়জোর সাত মিনিট উনষাট সেকেন্ডের জন্যে! কিন্তু সেদিন আমাকে অলস আয়েশ মোটেও প্রলুদ্ধ করছিল না। যার কাছে যাব, সে যদি আগেই এসে বসে থাকে? যদি তার আসার পথে রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকে, আর আমার পথে দুটো বেমানান ৫ মনি ট্রাক বেমক্কা বিগড়ে বসে? যদি সে বোরড হয়, যদি বিরক্ত হয়, যদি অভিমান করে, যদি মুড অফ হয়, যদি ভুল বোঝে, যদি…

ছোটবেলায় মুরুব্বীরা উপদেশ দিতেন যদির কথা নদীতে ফেলতে। সে উপদেশ বরাবরই মান্য করার আনুগত্য ছিল আমার, তবে এই যদিসপ্তক ছিল অনেক শক্তিশালী এবং যৌক্তিক। তাই এগুলোর আবদার এবং সতর্কতা হৃদপকেটে পুরে নিয়ে চললাম সেই বিশেষ জনের উদ্দেশ্যে।

যার কথা এতক্ষণ বলছিলাম, তার নাম আয়ান। সে ক্লাশ ওয়ানে পড়ে। তার সাথে আমার পরিচয়ের সূত্রটা হলো অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স। ছোটদের জন্যে তৈরি এই সায়েন্স কিটের জন্যে আমাকে কিছু কাজ করতে হয় কর্মসূত্রে। কিন্তু এই জানুয়ারিতে এমন সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে লাগলো, যা একদম ভোজবাজীর মত পাল্টে দিলো পুরো দৃশ্যপট! আমার সাথে যোগাযোগ হলো কিছু অদ্ভুত সুন্দর জিজ্ঞাসু দেবশিশুর। আয়ান তাদের মধ্যে একজন। সে আমাকে তার এক্সপেরিমেন্টের একটি ভিডিও পাঠালো। আলু দিয়ে ব্যাটারি বানানোর এক্সপেরিমেন্ট। এই হাইটেক, ঝকঝকে তকতকে চকচকে নিষ্ঠুর পারফেকশন আর দেখনদারী গ্ল্যামারের যুগে সেই ভিডিওটি ছিলো একদমই আবেদনহীন। ভিডিও কোয়ালিটি গড়পড়তা, শব্দের মানও মাঝারি। কিন্তু তার মধ্যে যে অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ছিল, তা অব্যাখ্যনীয়।

আয়ান এসেছিলো বাণিজ্য মেলায় আমাদের স্টলে। কিছু এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাবে। সেই মরা দুপুরের অফ বিট নির্জনতায় আয়ানকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে ফুরফুরে হয়ে উঠলো আমার মন। জড়তা কাটাতে সে মোটেও সময় নিলো না। নানারকম প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত করে তুলো আমাকে। ওর ফেভারিট আইটেম হলো চুম্বক। ভাগ্য ভালো যে, কিছু বেসিক বিষয় জানা ছিলো, নইলে কী ভীষণ বিব্রত হতে হতো!

আয়ানের কাছে ছিলো ছোট্ট দুটি দণ্ড চুম্বক। দুটোরই আকার হবে আধা ইঞ্চির কম। নর্থ পোল-সাউথ পোল, নর্থ পোল-নর্থ পোল করে বারবার আকর্ষণ আর বিকর্ষণের সুত্র গুলো যাচাই করছিলো। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

-আচ্ছা, আমি যদি চুম্বক দুটির নর্থ পোল ধরে চেপে রাখি তাহলে কি ওরা লেগে থাকবে?

-হ্যাঁ থাকবে। ছোট্ট চুম্বক তো! ওদের শক্তি কম।

-আচ্ছা, যদি আমি ওদেরকে সবসময় চেপে ধরেই রাখি, ওরা কি এমনই থাকবে সবসময়?

-হ্যাঁ, থাকবে। কিন্তু তুমি তো ওদেরকে সবসময় চেপে ধরে রাখতে পারবে না আয়ান! তাহলে তুমি অন্য এক্সপেরিমেন্ট গুলো কীভাবে করবে বলো?

-আচ্ছা, যদি এগুলো ছোট্ট চুম্বক না হয়ে অনেক বড় চুম্বক হয়, তাহলে কী হবে?

এর উত্তর আমার জানা ছিলো না। কিন্তু উত্তর তো আমাকে দিতেই হবে! চট করে ফোনটা বের করে সার্চ দিলাম গুগলে ‘huge magnets repelling’

ততক্ষণে আয়ানের চলে যাবার সময় হয়েছে। ওর বাবা ডাকছিলো ওকে। ভদ্রলোককে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে আবারও গুগল ঘাঁটতে শুরু করলাম। সত্যিই তো, কী হয় যদি অনেক বড় এবং শক্তিশালী দুটো চুম্বক পরস্পরকে বিকর্ষণ করে?

আয়ানের প্রশ্নের উত্তর আমি এখন দিতে পারবো। আপনি পারবেন কি? শুধু আয়ান নয়, লাবিব, মুবিন, কল্প আরো অনেক ক্ষুদে বিজ্ঞানীর সাথে সখ্যতা হয়েছে আমার। ওরা প্রশ্ন করার মানুষ খুঁজছে। ওরা খুঁজছে আপনাকেই, আপনি প্রস্তুত তো?

অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স শুধু একটি পণ্য নয়। আমরা কাজ করছি প্রোপার প্যারেন্টিং নিয়ে। আমরা কাজ করছি শিশুর অবসর সুন্দর করতে,তাদের চিন্তার জগতে অনুরণন তুলতে, মেধার বিকাশ ঘটাতে। এই সময়ে, যখন কোমল শিশুরা প্রোপার প্যারেন্টিংয়ের অভাবে মাদকাসক্ত হচ্ছে, বাবা-মার ওপর হামলা করছে, নানারকম মানসিক অবসাদে ভুগছে, তখন কিছু একটা না করলে আমরা পিছিয়ে যাবো।

চলুন, শিশুর শৈশব সুন্দর করি!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫৩
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×