somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরবানীর গরু ও তার মালিক হাশিম

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কাল আমার ভায়রা গরু কিনতে নতুন বাজারে যাবার সময় আমাকে নিয়ে গেল। গরুর বয়স বুঝা, কোনটা গৃহস্থালি আর কোনটা ব্যাপারীর তা বুঝতে পারা, দরাদরি করে জিতে আসা, এ সব বিষয়েই সে বেশ পাকা। গরু কেনার কলা কৌশলে তার নিজের কিছু স্টাইল আছে। প্রথমেই সে টার্গেট করে বিক্রেতাকে। আমি বলি তুমি তো গরু দেখবা, কে বেচলো তা নিয়া তোমার কাজ কি? সে বলে "তুমি বুঝবানা, গরু আর তার মালিক - দুইটাই পছন্দ হইতে হবে" । আধা ঘন্টা হাটাহাটি করার পর গাঢ় ছাই রঙা একটা গরু পছন্দ করলো, ৪০-৪২ বছরের মালিক তার নাম হাশিম। জামালপুর থেকে এসেছে।একটাই গরু নিয়ে এসছে দুপুর দুটায়। আমরা যখন গেলাম সেটা রাত ১১টা। দাম চাইলো ৬৫ হাজার আর রফা হোল ৫০ হাজারে। এর মধ্যেই বুঝা গেল গরুটা তিন বছর থেকে সে নিজের হাতে লালন করেছে। গরুটা বেশ তাগড়া ধরনের, ভায়রা দেখেই বললো কমছে কম ৩ মন মাংস হবে। গরুর মালিক হাশিম নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলো বাসা পর্যন্ত পৌছে দিতে হবে কিনা। সাথে সাথে এও আশ্বস্ত করলো এর জন্য বাড়তি কোন টাকা লাগবে না। আমাদের জন্য তো এটা খুব ভালো কথা, বললাম চলেন। আমাদের সাথে আরো তিনজন ছিল, ওরা গরুকে দুদিক থেকে রশি দিয়ে বেঁধে আগে আগে হাটছিলো আর আমরা দুজন হাশিমের সাথে গল্প করে করে পিছনে হাটছিলাম। হাশিমকে জিজ্ঞেস করলাম ঘড়ে তার কে কে আছে। বললো বউ আর তার বুড়ো মা। একটা মেয়ে ছিল ৯ বছর বয়সে অসুখে মারা গেছে। আর কোন ছেলে মেয়ে হয় নাই। বললাম এতদিন পাললেন গরুটাকে কোন নাম দেন নাই? লজ্জাই পেল বলে মনে হোল, বললো আমার বউ তারে ডাকে আকাশী বইলা। প্রায় ১৫ মিনিট হাটার পর হঠাৎ গরুটা বেপরোয়া হয়ে উঠলো। তিনজনের হাতের দড়ি ছিড়ে মুহুর্তেই দৌড়ে কিছুদুর গিয়েই পিছনের দুপা ছড়িয়ে দাড়িয়ে ঘোৎ ঘোৎ করতে লাগলো। গরুর এই অকস্মাৎ বিদ্রোহে আমরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। রাস্তার গাড়ি চলাচল থমকে গেল, লোকজন নিরাপদ জায়গায় নিজেদের আড়াল করলো। আর অমরা তো দিশেহারা। হাশিমের হাত ধরে ভায়রা বললো এই হাশিম এখন কি হবে? নির্বিকার হাশিম গলার কি একটা স্বর আর ধ্বনী দিয়ে গরুটাকে ডাকলো আর এগিয়ে গিয়ে পিঠে হাত ছোয়ালো। অদ্ভুত ম্যাজিকের মতন কাজ হোল। মুহুর্তের মধ্যেই গরুটা মাথা নিচু করে পুরো সমর্পন করলো নিজেকে।
বাসায় পৌছানোর পর হাশিম গরুর থাকার জায়গাটা নিজ হাতে পানিতে ধুয়ে দিল। ভায়রার বাসার লোক গরুটার পায়ের কাছে মশার কয়েল জ্বালিয়ে দিল। হাশিম কয়েলটা ফেরত দিয়ে বললো এইটা ভালো না, বিষাক্ত গন্ধ। খর দিয়ে বেণী বানিয়ে আগুন ধরিয়ে হাশিম বললো মশার জন্য এর থিকা বড় কোন অষুধ নাই। যাবার আগে গরুটার গলার রশি নিয়ে কিসব করলো। হাশিম গরুটাকে হাত বুলাতে বুলাতে বেশ অনেক সময় ধরে দাড়িয়ে রইলো, কয়েকবার চোখের পানিও মুছলো। রাত দুটার জামালপুরের ট্রাক ধরার জন্য একটায় হাশিম বিদায় নিল।
আজ সকালে নামাজে যাবার জন্য ভায়রার বাসায় য়খন এসেছি গেইটের পাশে দেখি হাশিম হাটু মুড়ে বসে আছে। আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। বললাম কি ব্যাপার তুমি বাড়ি যাও নাই? মনে হোল যেন লজ্জাই পেল, বললো না যাই নাই, আজকে যাব, মনে অইলো একটু দেইখা যাই, তাই আসলাম। আমি নামাজে চলে গেলাম। কিন্তু পুরো নামাজেই আমার মাথায় ঘুড়ছিলো হাশিমের মরা মেযেটার কথা, তার নামটা জিজ্জ্ঞেস করা হয়নি। খুব জানার ইচ্ছে ছিল নামটা । নামাজ থেকে ফিরে আমি হাশিমকে খোঁজ করেছিলাম। মুনলাম সে আরো একঘন্টার মতন ছিল, কসাইরা আসার আগে আগে চলে গেছে।
যা যা লিখলাম তার কোনটাই কিন্তু গল্প না। তবে মনটা আমার আজকে একদম ভালো না।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:৩৫
১৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×