somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহিলাটি সবাইকে বিস্মিত করেছিলেন

১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহিলাটির বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে। চোখে খুব কম দেখছেন বলে চশমা লাগবে এবং তার পাওয়ারও অনেক। এলাকায় দু’দিন ধরে মাইকিং হয়েছে, চক্ষু শিবিরে নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসা দেয়া হবে। সাত সকালে ঘর সামলে একাই এসেছেন। তাঁর আশা ছিলো ডাক্তারী পরীক্ষার সাথে ঔষধ কিংবা চশমাও পাওয়া যাবে, তবে তা নয়। যদিও স্বল্পমূল্যে কিছু চশমা বিতরণের জন্য আনা হয়েছে, পাওয়ার মিলে গেলে তা দেয়া হবে কম দামেই। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তিনি চশমা-ঔষধ কাউন্টারে গিয়ে জানলেন চশমা লাগবে, যার দাম একশ চল্লিশ টাকা। পরে নিবেন বলে কোন কথা না বলে চলে গেলেন। একটু পরই ফিরে এসে বললেন, “আপনারা কতক্ষণ থাকবেন?” তাঁকে জানানো হলো, “আড়াইটা”।
মহিলার কথা আর কারো মনে নেই। থাকার কথাও নয়। তখন রমজান মাস চলছে আর সেদিন ছিলো দ্বিতীয় রোজা। লাঞ্চের ঝামেলা নেই, তাই প্যাকআপ করার প্রস্তুতি চলছে সোয়া দুইটার সময়েই। এমন সময় এসে হাজির হলেন সেই মহিলা। লাজুক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুটা দূরে। কারো খেয়াল সেদিকে নেই। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে চশমা কাউন্টারের মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলেন। বললেন, “আমার কাছে সাত টাকা কম আছে। চশমাটা দেয়া যাবে?” এবার সবাই তাকালো তাঁর দিকে। “কতো কম?”, একজন জিজ্ঞেস করলো। “সাত টাকা। আমার কাছে একশ তেত্রিশ টাকা আছে”। মহিলার কথায় এমন কিছু ছিলো যে, সবাই কাজ ফেলে ফিরে তাকালো। অনুভূতিহীন কেউ সেখানে ছিলো না, কাজেই সবার আবেগও স্পর্শ করলো কথাগুলো। তাঁকে সসম্মানে ভিতরে এনে বসতে দেয়া হলো। একজন জিজ্ঞেস করলো, “আপনি এ টাকা কোত্থেকে এনেছেন?” বললেন, “আমার কাছে অল্প কিছু ছিলো, বাকীটা ধার করেছি”।
বিনামূল্যে নিতে না চাওয়ায় তিন টাকা ফেরত দিয়ে একশ ত্রিশ টাকায় চশমা দেয়া হলো। ব্যক্তিগত জীবনের খোঁজ নেয়া শুরু করলো কেউ কেউ। তিনি জানালেন, তাঁর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন প্রায় দুবছর আগে। এতে তাঁর কোন দুঃখ নেই। তবে, স্বামী সারা মাস নতুন বউয়ের সাথে থাকে, একটা দিনও তাঁর কাছে আর আসে না। ভরণ-পোষণ দেয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। তাঁর সন্তান দুটি মেয়ে, যাদের বিয়ে হয়ে গেছে। একটি ছেলে আছে যে অনার্স পড়ছে। সেলাই কাজ আর টুকটাক হাতের কাজ করে সংসার চালান নিজে।
একজন জিজ্ঞেস করলো,

“আজ ইফতারে কি খাবেন?” বললেন,

“বাসায় চাল আছে। কিছু শাক কিনে নিয়ে তা ভাত দিয়ে খাব”।

প্রশ্ন করলো, “বুট-বড়া কিছু কিনবেন বা বানাবেন না?”

“না”।

“গতকাল প্রথম রোজায় ইফতারে কি খেয়েছেন?”

“শাক আর ভাত খেয়েছি”।

“এই খেয়ে কি হয়?”

“খেলেও দিন চলে যায়, না খেলেও দিন যায়। আল্লাহ্‌ তো বাঁচিয়ে রেখেছেন”।
সবারই খুব কষ্ট লাগছিলো। মহিলাকে কিছু টাকা অফার করা হলো। নিলেন না, তৎক্ষণাৎ চলে গেলেন। আমি ভাবলাম গতকালের প্রথম রোজায় বাসায় অনেক কিছু বানাবার পরও ইফতার কিনেছিলাম অনেক। পেটের পুরো অংশ ভর্তি করে খেয়েছি। আজ আল্লাহ্‌ যদি আমার জায়গায় এ মহিলাটিকে আর তাঁর জায়গায় আমাকে পাঠাতেন তাহলে কেমন হতো? নিজেকে খুব অপরাধী লাগছিলো। আজও মনে হলে তাই লাগে।
পরিশিষ্টঃ

বহু বিবাহের জন্য আল্লাহ্‌ ফরজ একটি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন সকল মুসলিমের জন্য, তা হলো সাম্য বা ইক্যুয়ালিটি। অন্তর্গতভাবে কোন স্ত্রীকে একটু কম বা বেশী পছন্দ হলেও তার সাথে বাহ্যত কোন ধরণের অতি আহ্লাদ বা অন্যায় করা যাবে না, যা অন্য স্ত্রীর মনোকষ্টের কারণ হয়। সকল স্ত্রীকে একই পরিমাণ সময় দিতে হবে, সবাইকে একই পরিমাণ ভরণপোষণের খরচ দিতে হবে। কারো জন্য একটি গিফট কিনলে অন্যদেরও একই গিফট দিতে হবে, কারো সংসারের জন্য একটি মাছ কিনলে অন্য সংসারের জন্যও একই মাছ কিনে দিতে হবে, ইত্যাদি। আর কেউ যদি এমন সাম্যের ফরজ আদায় না করতে পারে (যা সত্যিই ভীষণ কঠিন কাজ), তাহলে তার জন্য একটিই মাত্র বিয়ের আবশ্যকীয় আদেশ আল্লাহ্‌ দিয়েছেন। আজ আল্লাহর বেঁধে দেয়া ফরজ লঙ্ঘন করে বহু বিবাহ করে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্বতন স্ত্রীকে এই মহিলাটির মতো অসহায় বানিয়ে সদম্ভে সমাজে বিচরণ করছে একদল ক্রিমিনাল, আর এদের এই অপকর্মের বোঝা মুসলিমদের অজ্ঞতার সুযোগে ইসলামের গায়ে এসে পড়ছে। আল্লাহ্‌ এ মহিলাটির মতো অসহায় মহিলাদের ধৈর্য্যের উত্তম বিনময় দুনিয়া এবং পরকালে দিন, আর আমাদের ক্ষমা করুন।
আবু উসাইদ
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×