somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামান্য ক্ষতি

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সামান্য ক্ষতি’ নামে একটি কবিতা আছে। কবিতাটিতে রানী মাঘ মাসের শীতে আগুনের উষ্ঞতা নেবার জন্য গরীব প্রজাদের ঘরে-বাড়িয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। রানী ঠিকই উষ্ঞতা পায়, কিন্তু গরীব প্রজাদের ঘর-বাড়ি পুড়ে যায়। রানী কিন্তু বুঝতেই পারে না, সে প্রজাদের কি ক্ষতি করে ফেলেছে।

আবার ইটালির পঞ্চম রোম সম্রাট ক্লডিয়াস সিজার নিরো, রোম নগরী যখন আগুনে পুড়ছিল, তখন তিনি ৩৫ মাইল দূরে বসে মনের আনন্দে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। সংগীত,সুর আর বাঁশি ছিল তাঁর খুবই প্রিয়।

ঠিক কিভাবে প্রতিবাদ করব বুঝতে পারা যাচ্ছে না। ঠিক কতটা প্রতিবাদ করব তাও বুঝতে পারা যাচ্ছে না। আদৌ কোন প্রতিবাদী কথা লিখব কি না, তাও বুঝে উঠতে পারছি না। কিছু দুষ্কৃতিকারী যখন মানুষভর্তি বাসে বোমা মেরে ২৯ জনকে দগ্ধ করে দেয় এবং তার বিচার যখন সেই দেশের সরকার করতে পারে না, তখন সেই সরকারের কিভাবে নিন্দা করব, সেটাও বুঝে উঠা আমার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বিগত দুই সপ্তাহের পৈশাচিকতায় মারা গেছেন অন্তত ৩০ জন মানুষ। যান-বাহনে আগুন লাগানো ও লংরুটে বাস না চলায় ক্ষয়-ক্ষতি পাঁচশ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ট্রেন প্রায়ই লাইনচ্যুত হচ্ছে। আগে নদীপথ নিরাপদ ছিল। এখন তো লঞ্চেও আগুন দেয়া হচ্ছে। এভাবে ঠিক কতদিন চলবে, তা কারও জানা নেই। সেই অবস্থা প্রতিকারের ব্যবস্থা না নিয়ে যখন আমাদের মন্ত্রীরা বলে ওঠেন, যাত্রাবাড়ির সহিংসতা শুধুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কিংবা বলে ওঠেন, দেশের পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক, ঠিক তখনই আমার রবি ঠাকুরের ‘সামান্য ক্ষতি’ বা নিরোর বাঁশি বাজানোর কথা মনে পড়ে যায়।

এতসব পেট্রোল বোমা কোথা থেকে আসে। কারা এসব তৈরী করে। কারা এগুলো বহন করে। এগুলো তৈরীর উপাদানের যোগান কারা দেয়। দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র‌্যাব,বিজিবি- তারা কি করেন। চাইলে এমন হাজারটা প্রশ্ন আজ করা যায়। আগেও বহুবার বলেছি, এবং না বললেও সবাই নিশ্চই বুঝতে পারে যে, এগুলো আসলে কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এগুলো হচ্ছে সন্ত্রাস। তাই, এগুলোর দায় কেউ নেয় না। শুধু একে অন্যের দোষ দেয়।

আর যাদের মদদে এসব হচ্ছে, আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা তাদের শাস্তি দিতে পারব না। আমরা সবই ভুলে যাই, আমাদের কিছুই মনে থাকে না। আমর যেমন, ৯৬, ২০০১, ২০০৬ সবই ভুলে যাই, তেমনি ভুলে যাই ১৯৪৭,৫২,৬৯ কিংবা ৭১। ঠিক একই ভাবে এই নরহত্যা গুলোও আমরা ভুলে যাবো। আবার নির্বাচন হবে, আমরা আবার ওদেরকেই ভোট দেব। আমরা আবার মরব। সুপুরুষরা নাকি একবার মরে, বারবার নয়; ন্যাড়া নাকি একবার বেলতলায় যায়, দুই বার নয়। আমরা আর সুপুরুষ নই, আমরা বারবার মারা যেতে পছন্দ করি, আমরা ন্যাড়ার থেকে অধম। আমরা ন্যাড়া হয়ে বারবার বেলতলায় যেতে পছন্দ করি। ওরা সিংহাসনের জন্য মারামারি করে। আর অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমরা পুড়ি।

বি.এন.পি চেয়ারপার্সন এসবের দায় এড়াতে পারেন না, কোনভাবেই না। ওনার ছোট ছেলে মৃত্যু বরণ করলেন। উনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন, প্রিয়জন মারা গেলে কেমন লাগে। আশা করব, এই বোধটুকু নিয়েই তিনি এগুবেন, তাঁর নির্দেশে যে রাজনৈতিক আন্দোলন, সেই আন্দোলনে ভাড়াটে আন্দোলনকারীরা যদি কোন মায়ের সন্তানকে পুড়িয়ে মারে, সে কষ্টটা তিনি আগে না বুঝলেও এখন নিশ্চই বুঝতে পারবেন। আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও। তিনিও বোঝেন, কাছের মানুষের অকালমৃত্যু কেমন লাগে। তারপরও কেন তাঁদের মিলিত প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষগুলো মারা যাচ্ছে, এ প্রশ্নের কোন উত্তর নেই।

ক্ষমতাসীনদের কাছে অনুরোধ, হয় আপনারা এই পৈশাচিকতা বন্ধ করুন, নয় তো ক্ষমতা থেকে সরে যান। মানুষের নিরাপত্তা দিতে না পারলে কোন সরকার, কোন প্রশাসন আর কোন প্রজাতন্ত্রেরই আমাদের দরকার নেই।

কবিগুরুর ‘সামান্য ক্ষতি’ কবিতাটিতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত রানীকে কঠোর শাস্তি পেতে হয়। তাকে বাড়ি-বাড়ি ভিক্ষে করে অর্থ জোগাড় করে প্রজাদের ঘরগুলো পুণরায় গড়ে দেবার দায়িত্ব দেন রাজা। আর লোভী নিরো কিন্তু জনতার রোষানলে পড়ে ধারালো ছুড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। গণতন্ত্রে কিন্তু রাজা সাধারণ মানুষ। তাই গণতন্ত্রের রাজারা চাইলে ‘সামান্য ক্ষতি’ বা নিরোর কাহিনীটির পুনরাবৃত্তি ঘটতেই পারে।

অতএব, সাধু সাবধান। মানুষকে বাঁচান। মানুষ আপনাদেরকে রাখবে। আমরা কখনওই এমন বাংলাদেশ চাইনি। আমাদের চাওয়া বেশি নয়। আমরা অল্পতেই খুশি। আপনারা দয়া করে এমন কিছু আমাদেরকে দেবেন না, যা আমরা কখনওই চাইনি।।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×