somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ সহস্র বন্দীর দেশে

১১ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়লে সাধারণত সমাজে সহিষ্ণুতা বাড়ে। আর্থিক সামর্থ বাড়লে সাধারণত সমাজে নীতির জয় হয়। বাংলাদেশ সে হিসেবে নিশ্চয়ই এখন অনেকটা স্বচ্ছল। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা আগের থেকে অনেক বেড়েছে। সে অনুযায়ী সমাজে সহিষ্ণুতা বাড়ার কথা। হয়ত বেড়েছে, হয়ত আমার চোখে পড়ে না। অন্তত রাজনকে ও রাকিবকে যেভাবে হত্যা করা হল, তারপর এই ব্যাপারটি বিশ্বাসযোগ্যও নয়। খুব সাম্প্রতিক সময়ে একদল অন্যদলকে ’কুকুরের মত’ পেটাতে চাইছে, একদল অন্যদলের ’হাড্ডি-মাংস আলাদা’ করতে চাইছে। এগুলো সমাজে সহিষ্ণুতা বৃদ্ধির লক্ষণ নয়। খুব সম্প্রতি গোটা দেশ যখন ক্রিকেট আনন্দে আত্মহারা, ঠিক সেই সময়ই হবিগঞ্জে সুখিয়া রবিদাস নামের এক মধ্যবয়েসী ভদ্রমহিলাকে রাস্তায় ফেলে কাঠ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীকে পুলিশ আটক করেছে- স্বস্তির বিষয়! বিষয়টি জমিদখল সংক্রান্ত। এমনিতেও সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি কুক্ষিগত করা সহজ কাজ, সে কাজটুকু আরও সহজ হয়ে যায় রাষ্ট্রের ও আর্থসামাজিক উস্কানিতে। খুনিপক্ষ সুখিয়া রবিদাসের বসতভিটা দখলের আকাঙ্ক্ষায় সুখিয়া রবিদাসের উপর নির্যাতন করে তাকে ঘরছাড়া করতে তৎপর হয়। এর আগে তার স্বামীকেও একই ভাবে বাড়ির পাশে হত্যা করা হয় ৮ বছর আগে। ২০১৩ সালে হত্যা করা হয় সুফিয়ার চাচা অর্জুন রবিদাসকে। প্রতিক্ষেত্রে আসামী একজনই- শাইলু মিয়া। সুখিয়া ধর্ষণের অন্ধকার সইতে না পেরে প্রতিবাদ করেছে, বাঁচার জন্য ছুটেছে। পারেনি। একটি দেশের প্রতিটি ব্যক্তি যখন নিজেকে প্রভাবশালী ভাবা শুরু করে- তার যন্ত্রণা আইন বইতে পারে না। দেশের প্রতিটি ব্যক্তি এখন ‘অমুকের তমুক’, যেমন- মন্ত্রীর ভাতিজা, জেলা সভাপতির ভাগনে, প্রতিমন্ত্রীর নাতজামাই ইত্যাদি। প্রত্যেকের পেছনে আছে ক্ষমতা, আছে অস্ত্র। কথা বলার উপায় কোথায়! প্রতিবাদ করলেই বজ্রপাত ভেসে আসে-’জানিস্, আমি কে?’


সুখিয়া রাস্তায় পড়ে যখন মার খেয়ে খেয়ে মরে যাচ্ছিল- তখন সবাই শুধু তা দেখছিল ! কেউ এগুতে সাহস পায়নি। খুনিপক্ষ নিশ্চয়ই প্রভাবশালী, নিশ্চয়ই ‘অমুকের তমুক’। তাই মানুষ সাহস করে এগিয়ে যায় নি। আমরা এমনটি দেখেছি সিলেটের খাদিজার বেলায়। আক্রমণকারী প্রভাবশালী ছাত্রনেতা, হাতে অস্ত্র আছে, জনবল আছে, রাষ্ট্রক্ষমতা আছে। ভয়ে অসংখ্য মানুষ এগিয়ে আসেনি। অসংখ্য মানুষ অনেক দূর থেকে ভিডিওচিত্র ধারণ করেছে। তারপরও ’দেশটা বিচারহীনতায় ভরে গেছে’- এমন দাবী করার উপায় নেই। কারন অসংখ্য অপরাধের বিচার হচ্ছে। অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে। তবুও কেন আমরা বারবার বিচারহীনতাকে দায়ী করি? উত্তর আগেই দিয়েছি- যেদেশে ‘সবাই রাজা’, সেদেশে আইন চলে না। কোটি কোটি প্রভাবশালীর প্রতিপত্তি আইন ঠেকাতে পারে না; এটা অসম্ভব। যদিও, ৮ বছর আগেই যদি উল্লিখিত হত্যাকান্ডের বিচার হত, তবে সুখিয়া রবিদাস হত্যাকান্ড ঘটত কি না, তা বিতর্কসাপেক্ষ।

অপরাধ, সন্ত্রাস- এসব নাকি রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ; যেমন অবিচ্ছেদ্য অংশ জনগন ও সার্বভৌমত্ব। তবুও অপরাধ কি নির্বিবাদে মানা যায়? অপরাধের পর আমরা প্রতিবাদ করি, বিচার চাই। কিন্তু অপরাধের মাত্রা যখন বেড়ে যায়, যখন স্কেলের হিসেবে অপরাধ পরিমাপের সামর্থ নষ্ট হয়ে যায়- তখন কি মরিচা ধরে প্রতিবাদের ভাষায়? সম্ভবত হ্যা। নইলে সুখিয়া রবিদাসের খবরে আমাদের কষ্ট নেই কেন, এমন নৃশংস হত্যাকান্ড আমাদের বিবেককে আঘাত হানে না কেন? আমরা কেন এ হত্যাকান্ডের খবর জানি না বা জানতে চাই না? যে দেশের 'সবাই রাজা', সে দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বন্দীশালা জন্ম নেয়। প্রত্যেকে রাজা হয়েও প্রজার চেয়ে অধম জীবন-যাপন করে। দেশে রাজার সংখ্যা বাড়ছে, অর্থাৎ দেশে বন্দীশালার সংখ্যাও বাড়ছে। এদেশের প্রত্যেকটি রাজা এক একটি পৃথক বন্দীদাস, ন্যায়রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন পাপাচারপূর্ণ দ্বীপের একাকী নরকবাসী।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৩০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×