আমরা যারা ড্যান ব্রাউন এর অ্যাঞ্জেলস এন্ড ডেমনস পড়েছি তাদের কাছে অ্যাম্বিগ্রাম খুব পরিচিত একটি টার্ম। ইংরেজি ambigram শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। ambi শব্দের অর্থ উভয় এবং gram শব্দের অর্থ বর্ণ। দুটি মিলিয়ে দাড়াচ্ছে উভয় বর্ণ। অ্যাম্বিগ্রাম হল এমন একটি লেখাশিল্প বা চিত্রকর্ম যেটির দ্বারা একটি শব্দ সাধারণভাবে যেভাবে পড়া বা উচ্চারণ করা যায়, শব্দটিকে বিপরীত দিক থেকে দেখলেও ঠিক একইভাবে পড়া যায়। সহজ ভাষায় যে শব্দ বা বাক্যকে একদিক থেকে পড়লে যেমন দেখায় উল্টো দিক থেকেও একই রকম দেখায় তাকে অ্যাম্বিগ্রাম বলে। বেশ মজার এবং ক্রিয়েটিভ একটি শিল্প এই অ্যাম্বিগ্রাম।
Peter NeweLL নামে একজন শিল্পী ১৮৯৩ সালে সর্বপ্রথম অ্যাম্বিগ্রামের প্রচলন করেন। Mark Twain এবং Lewis CarroL এর লেখা বাচ্চাদের জন্য বইয়ে তিনি iLLustration ব্যাবহার করেন যা তাঁকে পরিচিতি এনে দেয়। পরবর্তীতে তিনি ‘invertible iLLustration’ সম্বলিত ২টি বই প্রকাশ করেন। বইটির বৈশিষ্ট্য হল- যে ছবিটি আঁকা হয়েছে তা যদি উল্টো করে দেখা হয় তবে অন্য আরেকটি ছবি দেখা যায়।
১৯০৮ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বৃটিশ দৈনিক পত্রিকা ‘The Strand’ তাদের Curiosity কলামে পাঠকদের পাঠানো অ্যাম্বিগ্রাম প্রকাশ করে। জুনে প্রকাশিত MitcheLL T. Lavin এর “chump” অ্যাম্বিগ্রামটি সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়তা লাভ করে।
তবে অ্যাম্বিগ্রামকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে John Langdon এবং Scott Kim এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশী বলে ধারণা করা হয়।১৯৭৫ সালে সর্বপ্রথম দর্পন অ্যাম্বিগ্রাম প্রকাশ করেন।
১৯৮৩-১৯৮৪ সালের দিকে DougLas R. Hofstadter সর্বপ্রথম অ্যাম্বিগ্রাম শব্দটি প্রকাশ করেন। তিনি বন্ধুদের সাথে বোস্টনে প্রায়ই আড্ডা দিতেন। এই আড্ডা থেকেই কোন এক সময় শব্দটি উঠে আসে। ১৯৭৯ সালে তাঁর প্রকাশিত বই ‘Gödel, Escher, Bach’ এর মলাটে ২টি 3-D অ্যাম্বিগ্রাম ব্যাবহার করা হয়।
অ্যামবিগ্রামের ধরণ:
RotationaL/ঘূর্ণনশীল: এমন ধরনের নকশা যার ফলে কোন একটি শব্দকে অনুভূমিক দিক থেকে পড়ার পর একটি নির্দিষ্ট কোণে ঘুরালেও একইভাবে পড়া যাবে। এই কোণটি সাধারণ ১৮০°, অবশ্য অন্যান্য কোণবিশিষ্ট ঘূর্ণনশীল অ্যামবিগ্রামও রয়েছে; যেমন: ৪৫° এবং ৯০°। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট ঘোরানোর পর শব্দটি একই থাকে; কিন্তু মাঝেমাঝে শব্দের খানিক পরিবর্তন হতে পারে। এর একটি উত্তম উদাহরণ হচ্ছে: down শব্দের সংক্ষিপ্ত রুপ dn যাকে ১৮০° কোণে ঘুরালে পড়া যায় up.
Mirror-image/দর্পণ: এমন শব্দ যাকে কোন দর্পণের সামনে ধরে প্রতিবিম্ব করলেও একই বা সামান্য বিকৃতভাবে হলেও পড়া যায়। যে অ্যামবিগ্রামগুলোকে দর্পণ প্রতিবিম্ব করলে ভিন্ন শব্দের জন্ম দেয় তাদেরকে 'গ্লাস ডোর অ্যামবিগ্রাম বলা হয়। কারণ এই অ্যামবিগ্রামগুলোকে কাঁচের দরজায় এমনভাবে ছাপানো সম্ভব যাতে ঢোকা এবং বেরনোর সময় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে চোখে পড়ে।
ফিগার-গ্রাউন্ড: এটি এমন এক ধরণের অ্যাম্বিগ্রাম যাতে একটি শব্দের মধ্যে থাকা ফাঁকা স্থানগুলোর মাধ্যমে আরেকটি শব্দ প্রকাশ পায়।
Chain/শিকল : এক্ষেত্রে একটি শব্দ বা অনেকগুলো শব্দ পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে একটি পৌনঃপুনিক শিকলের সৃষ্টি করে। একটি বর্ণ অন্যটির উপর পতিত হয় যার অর্থ দাড়ায় ককটি বর্ণ শেষ হওয়ার আগেই অন্য একটি বর্ণ শুরু হয়ে যায়। অনেকসময় এ ধরনের অ্যামবিগ্রামগুলো বৃত্তের আকৃতিতে উপস্থাপিত হয়।
স্পেস-ফিলিং: অনেকটি শিকল অ্যামবিগ্রামের মতই, তবে এক্ষেত্রে যে দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্রে অ্যামবিগ্রামটি আঁকা হয় তার পুরো স্থান জুড়ে টালিকৃত বর্ণগুলো অবস্থান করে।
স্পাইনোনিম: এ ধরণের অ্যাম্বিগ্রাম সাধারণত একি ধরণের GLyph দিয়ে লিখা হয়। কয়েকটি GLyph ঘুরিয়ে বা উপর-নিচ করে স্পাইনোনিম তৈরি করা হয়।
FractaL/পৌনঃপুনিক জ্যামিতিক গঠন: এক ধরনের স্পেস-ফিলিং অ্যাম্বিগ্রাম যাতে টালিকৃত শব্দগুলো নিজেদের মধ্য থেকেই শাখা তৈরি করে এবং এরপর নিজের মতই আরেকটি রুপে পরিণত হয়। এর ফলে একটি FractaL গঠিত হয়। Scott Kim এ ধরনের অ্যামবিগ্রাম তৈরি করেছেন।
3-DimensionaL/ ত্রিমাত্রিক: এ ধরণের অ্যাম্বিগ্রামে একটি বস্তুকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যাতে একেকদিক থেকে দেখলে একেকটি শব্দ পড়া যায়।
Perceptual Shift (OsciLation)/ প্রত্যক্ষ পরিবর্তন: এই অ্যাম্বিগ্রামে কোন সামঞ্জস্য বা প্রতিসম্যতা নেই, তবে এটি এমনভাবে বানানো হয় যাতে বক্ররেখাগুলোর দিকে তাকালে দুটি ভিন্ন শব্দ দেখা যায়।
NaturaL/ প্রাকৃতিক: এমন ধরনের শব্দ বা বাক্য যা স্বাভাবিকভাবে লিখলেই উপরের যেকোন ধরনের অ্যামবিগ্রামের মত হতে পারে। এক্ষেত্রে কোন আলাদা নকশার প্রয়োজন নেই। উদাহরণস্বরুপ dollop এবং sunsশব্দ দুটি এক ধরনের প্রাকৃতিক ঘূর্ণনশীল অ্যামবিগ্রাম। bud শব্দটিকে উলম্ব অক্ষের সাপেক্ষে দর্পণ প্রতিবিম্ব করলে একই রকম দেখায়। অতএব এটি প্রাকৃতিক দর্পণ প্রতিবিম্ব অ্যাম্বিগ্রাম।CHOICE শব্দটিকে বড় হাতের অক্ষরে লিখলে অনুভূমিক অক্ষের সাপেক্ষে একটি দর্পণ প্রতিবিম্ব অ্যাম্বিগ্রামে পরিণত করা যায়। TOOTH শব্দটিও দর্পণ প্রতিবিম্ব অ্যামবিগ্রাম। তবে এক্ষেত্রে উলম্ব অক্ষের সাপেক্ষে দর্পণ প্রতিবিম্ব করার আগে বর্ণগুলোকে সঠিকভাবে বিন্যস্ত করতে হবে।
সিম্বায়োটোগ্রাম: সিম্বায়োটোগ্রাম হল এমন এক ধরণের অ্যাম্বিগ্রাম যাতে একটি শব্দকে ১৮০ডিগ্রী কোণে ঘুরালে অন্য একটি শব্দ পাওয়া যায়।
MuLti-LinguaL/ বহুভাষিক: এই অ্যাম্বিগ্রামগুলো এক পাশ থেকে এক ভাষায় এবং অন্যদিক থেকে অপর আরেকটি ভাষায় পড়া যায়।
কয়েকটি অ্যাম্বিগ্রাম:
কৃতজ্ঞতা:
উইকিপিডিয়া বাংলায় অ্যাম্বিগ্রাম নিয়ে লিখা আর্টিকেলটা থেকে বেশ কিছু লাইন কপি করা হয়েছে। লেখক এতো সুন্দর ও সহজভাবে লিখেছেন যা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। ওনাকে অন্তরের গহীন থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং বিনানুমতিতে ওনার লিখা কিছু লাইন কপি-পেস্ট করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
ধন্যবাদ আতিকুরকে। পোস্টে এনিমেটেড ছবিটি যুক্ত করতে পেরেছি আতিকুর রহমান এর এ লেখাটি পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:০৮