আমি কখনো পিছনে ফিরে তাকাই না
আমি কখনো আমাদের হিসাবের খাতায় গুণিনা
আমরা মানে আমি,তোরা আর আমাদের বন্ধুত্ব
আমাদের এক ঝাঁক সকাল বিকেল উজাড় করার গল্প আছে
আমাদের এক হাড়ি ভর্তি ঝগড়া জমা আছে
আর আমাদের অভিমানের তালিকাটাও বেশ বড়
তবুও আমরা বন্ধু ছিলাম,আমাদের বন্ধুত্ব ছিল
আমরা কখনো বন্ধু হয়ে শত্রুতা করিনি
আমরা এখন শত্রু হয়ে বন্ধুত্বের ছলনা করি
আমাদের বিকেলগুলো রঙ্গিন ছিল
মুনিয়াদের বাড়ির মিষ্টি বানানো এক মাসি ছিল
তার জীবনের গল্প যে মিষ্টি ছিল না আমরাই জেনেছিলাম এক বিকেলে
আমাদের জীবনের টক ঝাল গল্পগুলো হার মেনেছিল সেই সত্যের কাছে
আমরা দল বেঁধে গোল্লাছুট খেলতাম
আমাদের চিরপরিচিত সেই গোল্লা এখন কোথায়?
সেও কি এখন কোথায় বসে ভাবে সেই বিকেলের কথা?
যে বিকেলে ইচ্ছে করে সে দাড়িয়ে পড়েছিল মাঝ মাঠে
পরমার হাতের ছোয়া পেতে,আমরা হেরে গিয়েছিলাম
পরমা আমাদের হারিয়েছিল,পরমা তাকে জিতিয়েছিল
আমাদের মাছ ধরার গল্প নিয়ে হাসাহাসি করত সবাই
আমরা ঠিকই তিনটে ইয়া বড় শিং মাছ ধরেছিলাম
কিন্তু আমাদের তপন নিজের হাতে তিনটে প্রাণ হত্যা করতে চায়নি
বলেছিল,ওতে নাকি নরকে যেতে হয়
সেই তপন এখন রোজ রোজ মানুষের মৃত্যু দেখে
ফরেনসিক ল্যাবের টেবিলে রোজ মৃত মানুষের গল্প শোনে
আমাদের মধ্যে সবচাইতে চুপচাপ ছিল মুনিয়া
আমাদের বিকেল বেলায় হেরে গলায় গানের আসরে ওই ছিল একমাত্র গায়িকা
মেয়েটা এখন বারে গান গায়
মায়ের অসুখের কথাটা জানার মত বন্ধু হই নি আমরা
সকাল বিকেল পরিপাটি করে চুল আচড়াতো সুদীপ্ত
আমরা বাবু বলে খেপিয়েছি রাতদিন
সুদীপ্তকে দেখলে ওর মাও চিনবে না এখন মাইরি
ওর চুল এখন ধর্মতলার ভিখারীর মতো খড়ি ওঠা
হেরোইন ওকে ওর চুলের মতোই ঝাঝড়া করে দিয়েছে
আরও একজন ছিল আমাদের -অনির্বান
আমাদের দলে একমাত্র স্বপ্নালু মানুষ ছিল
ওর স্বপ্নের আহবানে আমরা মাঝরাতেও ঘুমোতে ভুলে যেতাম
অনিবার্নের শিখা নিভে গেছিল শিখার মৃত্যুর সাথে সাথে
না শিখা আমাদের কেউ ছিল না
শিখার একমাত্র দোষ ছিল সে মেয়ে
পশুদের থাবা থেকে বাঁচতে গলায় দড়ি দিয়েছিল
অনির্বানের কাঁধের চেয়ে চারহাতি দড়ি বেশি প্রিয় ছিল তার
অনির্বান সেই থেকে আর কোনদিন আমাদের স্বপ্ন দেখায়নি
আমরা এখন আর আমরা নেই
কদিন বাদে স্কুলের রিইউনিয়ন,ওখানে আবার দেখা হবে
এত বছরে বদলে যাওয়া মুখের ভিড়ে সবাই ছেলেবেলার বন্ধুটাকে খুঁজবে
ছেলেবেলার বন্ধুটা নিখোজ শুনে আরও একবার বয়সকে অভিশাপ দেবে
আমি হাই তুলি,আমি এখনো চোখ বন্ধ করলেই ওদের দেখি
হাফ প্যান্ট পড়া তপন,লিকলিকে মুনিয়া আর চশমা আটা অনির্বান
ভাবছি আমি যাব না আর
কারণ সত্যিকারের বুড়ো হয়ে যাওয়া মুখের মাঝে হারিয়ে যাওয়া কাউকে খোজার চাইতে
কল্পনার ছেলেবেলার মুখগুলো অনেক অনেক ভাল