somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"কি করছি আমি অথবা আমরা..."

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল সকাল একজন অচেনা লোক মেজাজটা খারাপ করে দিয়েছে। চা খেতে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে গেলাম। যে বেঞ্চিতে বসলাম ঠিক তার উল্টো দিকের আরেকটা বেঞ্চিতে বসা ছিলো লোকটা। জানতে চাইলো এলিট ফ্যাশনটা কই? জানিনা জানিয়ে বললাম ঠিকানা কি দিয়েছে। জানালেন, বায়িং হাউজে চাকরির জন্য এসেছে। ঠিকানা দিয়েছে এখানেরই। বললাম ছোট ছোট কাগজে বিজ্ঞাপন যে দেয়, সেসব দেখে এসেছেন? উত্তরে, হ্যাঁ। শুনে এক কথায় জানিয়ে দিলাম 'ভুয়া'। চোখে মুখে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে চুপ করে রইলো। পরে জানলাম তার সম্পর্কে। বরিশাল সদর থেকে এসেছেন। সদ্য ডিগ্রি পাশ। হতদরিদ্র ঘরের ছেলে। চাকরি খুঁজছেন।

তার সাথে অনেক কথা। আমার কাছে চাকরি চাইলো। জানালাম নাই কোন চাকরি। বাড়ি যান। দোকান দেন একটা বিড়ি সিগারেটের। আর কিইবা বলার আছে আমার? আমার মেজাজ খারাপ হয়েছে এই কারনে যে, লোকটা আমার মন খারাপ করে মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে। আমি সারাদিন সুখ খূঁজে বেড়াই। কিন্তু রাস্তায বের হলে এসব মানুষের সাথেই আমার দেখা হয়, তারপর মন খারাপ, সবশেষে মেজাজা খারাপ হয়। প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ভিক্ষা করা বৃদ্ধা দাদুটার সাথে। পুরো আমার দাদির মতো চেহারা। আমরা কদিন আগে 'আর্ট সামিট'র রংয়ের কাজে ব্যবহৃত কয়েকটা পুরোনো বালতি দিযেছিলাম তাকে । যেহেতু আমার হাত দিয়ে দিয়েছি। তাই আমাকে দেখলেই গায়ে হাত বুলায়। তার যতো দুঃখের কথা আছে আমাকে শোনায় তিনি। কিন্তু আমিতো সুখের কথা শুনতে চাই। চিকিৎসার টাকা নাই তার। স্বামী সন্তান নাই। রায়েরবাজারে একটা বস্তি ঘরে থাকে। দিন হলে ভিক্ষা করে। ছোট্ট সুমন দেখলেই সেও গায়ে হাত দিবে। জড়িয়ে ধরে পেটে চুমু দিবে। আমাদের সবার সাথে সে একই কাজ করে। আমিতো বুঝি এটা তার পাবলিক রিলেশন। না হয় টাকা জুটবে কি করে।

এদের দেখলেই আমার মন খারাপ হয় । এবং এই মন খারাপ হয় বলেই মেজাজ খারাপ হয়। সকালের অচেনা লোকটা বলছিলো আমার মামা চাচা নাই ভাই। আমি চাকরি কি করে পাবো? যেনো আমাকেই উদ্দেশ্য করে বলা। আমার মামা আছে, চাচা আছে আর বাবা এখনো বেঁচে আছেন। আছে নিজের তৈরি করা বন্ধু বান্ধব। আমিও হয়তো কারো মামা চাচা হয়ে উঠছি। কেনো এরা অপ্রিয় সত্যগুলোর মুখোমুখি দাঁড় করায় বুঝি না। সুমন এভাবেই জড়িয়ে ধরবে। টাকা নিবে। আরো বড়ো হবে। একটু ভালো মানুষি থাকলে গাড়ির হেলপার, তারপর গাড়ির চালক হবে। অথবা চা দোকানদার হবে। আর তা না হলে ছিনতাইকারি। ছিনতাইকারি হলেই বা ক্ষতি কি? সিস্টেমেটিক ওয়েতে যে ভাবে সর্বস্ব কেড়ে নেয়া হচ্ছে প্রতিদিন, তাতে নিয়মের বাইরে গিয়ে কেড়ে নেয়া ছাড়া উপায় কি তা আমার জানা নাই।

সেনাবাহিনীকে তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষা ব্যবসা সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা এখন। অন্যদের মতো তারাও এটা আঁচ করতে পেরছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাও এখন মানুষের নাগালের বাইরে। যেসব স্কুল কলেজের প্রশংসায় আমরা পঞ্চমুখ সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের কি শিক্ষা দেয় তা তো আমার নিজের জিবন থেকে নেয়া। স্কুলের নামের ক্ষমতার জোরে শিক্ষকদের দেখেছি নকল সরবরাহ করতে। কদিন আগে এমনই এক চিত্র টিভি নিউজে দেখলাম জেএসসি পরিক্ষায়। এরাই দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেতাব লাগায়। শুধু তারাই লাগায় না, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া 'অধিকাংশ' ছেলে মেয়েরাও সেই 'সুপেরিওরিটি' কমপ্লেক্সে ভোগে। অথচ আমি জানি এসব প্রতিষ্ঠান কি পয়দা করে, আর কি শিক্ষা দেয়। এবং এই শিক্ষা শুধু মাত্র কাদের গন্ডিতে সীমিত। সুমনদের জায়গা নেই এসব দেশ সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাহলে ভালো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কাদের জন্য?

বড় বড় প্রতিষ্ঠানে অচেনা লোকটার জায়গা নাই। সরকার খালি পাশ করায়। দেখায় আমার কতো শিক্ষিতো। কাকে দেখায়? এতো বেকার ঘুরছে কেনো রাস্তায়? বলে যোগ্যতা নাই। অবশ্যই আছে। কার কিসে যোগ্যতা এটা নির্ধারণ করবে একটা গণ কল্যান মুখি শিক্ষ ব্যবস্থা। শিক্ষা ব্যবস্থা তো সেভাবেই গড়ে উঠবে। লেখাপড়া শেষে চাকরির নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কিন্তু তাতো হয়নি এতো দিনেও। লেখালেখি করতে চাওয়া ছেলেকে যদি কম্পিউটার ইনঞ্জিনিয়ার বানাতে চাওয়া হয় তবে কি হয় তার ভোক্তভুগিতো আমি নিজেই। আমার না হয় সেই 'ব্যাকাপ' ছিলো। এবং সেই ব্যকাপই বা কি করে এলো এটাও প্রশ্নের উর্ধে নয়। কিন্তু যাদের নাই? তারা কি করবে। এর কারনেই কি গণহারে বিবিএ পড়ে আর বেকার ঘুরে বেড়ায়? আমাদের যে কোন কিছুই হয় না তার একটা ছোট্ট উদাহরণ হতে পারে, রাস্তা পারাপার নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের হাস্যকর ঘটনাগুলো। যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়া ঠকাতে সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু লাইন ধরে ফুট ওভার ব্রিজে ওঠা কতোটা হাস্যকর হতে পারে। একটা শহরে যেখানে আড়াই কোটি লোকের বসতি, মানুষের তুলনায় ব্রিজ নাই ব্রিজ নাই বললেই চলে। সেখানে সিস্টেম চুদিয়ে লাভ নেই। গোড়ায় গলদ শব্দটাতো আর এমনি এমনি আবিস্কার হয়নি।

সব ভাঙতে ভাঙতে এতোটাই অধঃপতনে নেমেছি আমরা, তাই এসব দেখতে ভালো লাগেনা বলেই মেকি সুখ খুঁজি। আর অমনি এসব অচেনা লোক সামনে চলে আসে। মেজাজটা খারাপ করে। তবে একটা বিষয় আশ্চর্যজনক। ভিক্ষুক দাদু, সুমন, চা দোকানদার সাইদ ভাই অথবা পরোটা বিক্রেতা বাবুল এরা আমার চোখ পড়তে পারে। আমাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? এতো শুকিয়ে গেছো কেনো? আমি তো আর বলতে পারি না তাদের, আগের মতো স্বপ্ন দেখি না। স্বপ্ন দেখাইও না। আগুন আর জ্বালাই নাই। ভীত ভিষণ। তাই এসব মানুষ আমাকে প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড় করায়। ভাবায়; কি করছো? আমি শুধু ভাবি। আসলেই তো কি করছি আমি অথবা আমরা?

(২৮ নভেম্বর ২০১৪, পল্টন)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×