somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনটি গল্পে একটি গল্প, অথবা ছোট গল্প ‘সুমন থেকে সুমন’

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনা এক:
ফাল্গুনের শেষ দিকে। ইংরেজি মাস মার্চের আট কি দশ তারিখ হবে। বছরের এই সময়টাতে সবাই শীতের কাপড় বাক্সবন্দি করার কাজ সমাপ্তির দিকে নিয়ে এলেও রাজবাগের গ্রীন লাইন গলির নুরু মিয়া গায়ে এখনো একটা ব্লেজার চাপিয়ে আছে। সেই ব্লেজার চাপিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হটে যাচ্ছে নুরু। এখান থেকেই গল্পের শুরু। তার আগে আরো তিন’জনের পরিচয় করিয়ে দেয়া প্রয়োজন। গলির মাথার সুমনের চায়ের দোকানে ইভান প্রতিদিনের মতো আজও এসেছে। নুরু মিয়া, ইভান, সুমন এরা প্রত্যেকেই এই এলাকারই ছেলে। নুরু মিয়ার বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হলেও বাকি দু’জনের বয়স ২৪ এর বেশি হবে না। আমাদের গল্পে এই এলাকার বাইরের একজন ব্যক্তি আছে। যে কিনা ইভানের বন্ধু। একটা এ্যাড ফার্মে চাকরি করে। নাম তিলক।

নুরু মিয়া যখন সুমনের দোকান পার করে যাচ্ছিলো তখন তিলক আর ইভান রাজনীতি, প্রোপাগন্ডা, ঠকবাজি, জোচ্চুরি, লুইচ্চামি সব কিছুর একটা মিশেল বিজ্ঞাপনের মধ্যে আনার চেষ্টা করছে। তারা প্রমান করতে চাইছে বিজ্ঞাপনের আদতে এসব ছাড়া আর কোন কাজ নেই। এবং তিলক এটা করেই জীবন ধারণ করছে। ইভানও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই যোগ দিবে। তাই ইভান আগে থেকেই ঝালাই হয়ে নিচ্ছে। আলোচনা সমালোচনা যাই বলা হোক, ভালোই চলছিলো; কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধায় সুমন। সুমন হুট করেই নুরুকে পাগল বলে ডাক দিলে নুরু পেছন ফেরে এবং বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ক্ষিপ্ত নুরু ফিরে আসে দোকানের কাছে এবং সুমনের সাথে ব্যাপক চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। তার দাবি আমি সুস্থ আমাকে পাগল বললি কেনো? সুমন হাসে। দোকানে এলাকার অন্যান্য ছেলেপুলেও বেশ মজা পাচ্ছে। এবং বিষয়টা মীমাংসা করবে বলে নুরুকে আরো উসকে দেয়। নুরু তখন কাউকে বিশ্বাস না করে, এলাকার অপরিচিত দেখে তিলকেই বিচারক মানে। তার মনে হয় এই একজনই আছে যার কাছে সে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে যে সে পাগল নয়। অবশেষে তিলকের কাছে অভিযোগ করে কেনো তাকে পাগল বলা হলো? সে তিলককে জানায়, ইউ আর এন এডুকেটেড পার্সন, এন্ড মি অলসো। তাহলে আই থিংক ইউ কুড আন্ডারস্টুড। মে বি আই এম রঙ, বিকজ দীর্ঘদিন আমি ইংরেজি সাহিত্য পড়ি না। শেষ যেবার ইংরেজি সাহিত্য পড়ি সেবার আমার জমিটা ওরা কেড়ে নেয়। আমি তখন মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। তারপর থেকে দলীল পড়ছি। নুরুকে থামিয়ে দিয়ে তিলক বলে, আপনি থামেন। আপনি কি নিয়ে যেনো রাগ করলেন? তারপর তার হুশ ফিরে এবং বলে, ও হ্যা হ্যা হ্যা, ওরা আমাকে কেনো পাগল বলে? আপনার কি মনে হয় আমি পাগল? আমি কিন্তু পাগল না। বিশ্বাস করেন। আমাকে কেনো সামাজিক ভাবে হেও করা হচ্ছে? আমি কি ওদের টা খাই? একথা বলেই সুমনের দিকে তেড়ে গিয়েও যায় না নুরু। একের পর এক হুমকি দিচ্ছে অথচ সুমনের বিকার নেই, সে হেসেই যাচ্ছে। আরো অদ্ভুত ব্যাপার সুমনের দিকে তেড়ে গেলে সুমন বলে চা খান নুরু ভাই, মাথা ঠান্ডা করেন। খোদার কসম আমি আপনারে পাগল কই নাই। চা খান এক কাপ। নুরু বলে চিনি ছাড়া।

এসব দেখে তিলক খুব অবাক হয় এবং পরে বুঝতে পারে লোকটা মানসিক ভাবে সুস্থ নয়। ইভানও তাই ইঙ্গিত করে। তিলক তখন সুমনকে ধমক দেয়। তিলকের ধমক দেখে নুরু আরো সাহস পায়। এক ধরনের জয়ী মনোভাব নিয়ে তিলককে ধন্যবাদ জানায়। এবং তিলক সম্পর্কে জানতে চায়। আবার নিজে নিজেই অনেক কথা বলতে থাকে। ওদিকে নুরুর কোন কথার সাথে কোন কথার মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো কিনা জানা নেই। কারণ নুরুর কথা শুনতে শুনতে তিলক কই যেনো হারিয়ে গেলো। তিলকের মনে হলো তার সামনে কি কোন আয়না দাঁড়িয়ে আছে? নাকি একটা জায়েন্ট স্ক্রিন? যে স্ক্রিনে তিলক টাইম মেশিনে পনের বছর সামনে চলে গেছে। বিষয়টা তাকে ভাবিয়ে তোলে। কারণ অনেকেই আজকাল তিলককে বলছে তোমার কথা অসংলগ্ন।

ঘটনা দুই:
সেই ঘটনার মাস ছয়েক পরে তিলক এবার তার এলাকার চায়ের দোকানের সামনে দিয়ে হাটতে থাকে। এবং ইদানিং তার মনে হচ্ছে একটা আয়না তার সাথেই হাটছে। সেই আয়না, যেই আয়না নুরুর পরিবর্তে সেদিন তিলক দেখেছিলো। অথবা কোন জায়েন্ট স্ক্রিন। যা কিনা টাইম মেশিনে পনেরো বছর এগিয়ে আছে। এমন চিন্তা তিলকের মাথায় ঘূরতে থাকার পর থেকে তিলকের বারবার মানুষকে বোঝাতে হচ্ছে তার স্বাভাবিক অবস্থার কথা। এলাকায় জনে জনে ধরে তাকে বলতে হচ্ছে, আমি ঠিক আছি। কিন্তু তার আগে বলেন কোন আয়না দেখতে পাচ্ছেন কিনা? অথবা কোন জায়েন্ট স্ক্রিন। যদি দেখেন তবে জায়েন্ট স্ক্রিনে আপনাদের খেলা দেখাব। এবং সেই খেলায় চার ছক্কা মারলেই ব্রা পেন্টি পরা নারীরা নাচবে। এই নাচনে তাদের মন নাচবে কিনা জানা নাই। সে জানায়, সব ঐ স্ক্রিনে দেখা যাবে। তিলক আরো বুঝায় চার ছয়েই শুধু নাচবে কারণ তাতে শক্তি আছে। শক্তির কাছেই সবাই মাথা নত করে। শক্তিই নারীকে বাধ্য করছে স্বলবসনে নাচতে। কিন্তু আউট হলে তারা নাচবে না। কেউ আউট হওয়া মানে নিস্তেজ হওয়া। দলছুট হওয়া। জীবন থেকে ছিটকে পড়া। এর অর্থ তুমি ব্যর্থ। তখন আর তারা নাচবে না। তোমরা আরো দেখতে পাবে, খেলার মাঝে মাঝে যে বিজ্ঞাপন দেয় সেখানে যে নারীদের আমরা দেখি তাদের থেকে শুরু করে মাঠের নর্তকী এবং বেশ্যা পাড়ার মুক্ষীরানী সকলের চেহারা একই রকম। যেনো একই মায়ের পেটের জোড়া জোড়া জমজ বোন। যেমনি নাচায় তেমনি নাচে, আমরা খাওইলে তারা খায়।

সে যাই হোক, যেহেতু বেশ্যাদের কথা চলেই এসেছে সো, তোমাদের কিছু উপদেশ তো দিতেই হয়। আমি বলে রাখি, একজন বেশ্যাকে ভালোবাসা যায়। কিন্তু বেশ্যা মুক্ষীরানীতে পরিনত হলে তাকে আর ভালোবাসা যায় না। কারণ বেশ্যা থেকে মুক্ষীরানীতে পরিনত হতে যে কাল একজন বেশ্যা অতিক্রম করে ততদিনে তার বুকে এক বিশাল পাথর জমা পড়ে যায়। যে পাথর কেউ কোন দিন দেখেনি। দেখছে শুধু ব্লাউজের নিচে যতোটুকু দেখা যায়। গভীরে কেউ দেখেনি, কিভাবে বুক আর সেই পাথর ব্যাস্তানুপাতিক হারে দিনে দিনে বিশাল থেকে বিশাল হয়েছে। এতোটাই বিশাল পাথর জমাপড়ে যে এর ভার সে বইতে বইতে একসময় আর কোন কিছুকেই কিছু মনে হয় না। কারণ কেউতো এসে একটু ভারটা নিতে চায়নি কখনো। তাই ভালোবাসার কথা শুনলে সে জীবনানন্দের বনলতা সেনের মতো বলবে, এতোদিন কোথায় ছিলে। আর খিল খিল করে হাসবে। এই হাসিতে তিরস্কার না পুরস্কার কোনটা আছে তা আমি তোমাদের বলতে পারবো না।

জায়েন্ট স্ক্রিন থেকে বেশ্যা, কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছে। মাঝখানে খেলা, ব্রা পেন্টি পরা নারী, বিজ্ঞাপন। এমন উদ্ভট কথার কেউ খেই ফেরাতে পারে না। মসজিদ থেকে জুম্মা পড়ে বের হওয়া লোকজনও তার কথা শুনছে। কেউ কেউ লুঙ্গীর উপর দিয়ে একটু একটু করে শিশ্নে হাত বুলিয়ে নিচ্ছে। আর বলছে ছি! ছি! ছি! ওজুটাই ভাইঙ্গা দিলো। এদিকে এলাকার সম্মানি বৃদ্ধ মান্নান সাহেব আরেকটু দুরে একটা জটলা পাকিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বয়ান দিচ্ছেন, তিলকের বাপরে কইসিলাম পোলারে বিবিএ পড়াও। আমার পোলাতো তিলকের ফার্মেরই পাবলিক রিলেশন অফিসার। প্রমোশনও হইবো অল্প কয়দিনের মইধ্যে। আর ও গেছে কি সাহিত্য কপচাইতে। লিখতে গেছে ‘জ্বলে উঠুন কাছে থেকে’। জ্বলতাসে না খুব?

ঘটনা তিন:
তিলকের পাড়ায় একটা নতুন চা দোকান হয়েছে। চা দোকানদারের নাম সুমন। তিলকের সাথে প্রতিদিন ঝগড়া করে। ঝগড়া শেষে চিনি ছাড়া এক কাপ চা খায়। সুমন আদরের সহিত চা খাওয়ায়।

(২৮ মার্চ ২০১৫, পল্টন)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×