শুধু কী ঘুরলেই হবে? শখের ব্লগ ও তো নিখতে হবে!
লিখবো লিখবো করে সময় ই পাচ্ছিলাম না ৷ আজ লেখবো আমাদের বগা লেক ভ্রমনের গল্প, আমরা ঘুরতে থাকা চিল ৷
গত ২৩-২৬ মার্চ এর ছুটিটা ছিলো ভ্রমনের জন্যে সেরা ৷ তাই আমরা ৭ জন রওনা হলাম বগা লেকের উদ্দেশ্যে ৷ টিকেট নিয়ে বিড়ম্বনা বান্দরবান এর নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা,আর তা যদি হয় টানা কোনো সরকারি ছুটি তাহলে সেইসব দিনের টিকেট বুকিং অন্তত দেড় মাস আগেই হয়ে যায় ৷ আমরা বাধ্য হয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এর এনা বাসের টিকেট কাটি ৷ ভোগান্তির শুরু ঢাকা থেকেই ৷
একটা কৌতুক বলি,
জুয়েলঃ রাত ১২ টা,ঘুমাই একটু ৷ (কাঁচপুর)
জুয়েলঃভোর ৫ টা, ভাই আমরা কোথায়?
আমরাঃ ভাই মেঘনা ব্রীজ !!
জ্বী হ্যা পুরো ৫ ঘন্টা আমরা জ্যাম এ আটকায়ে ছিলাম! একটু একটু করে সময় যাচ্ছিলো আর একটু একটু করে সময় মিলাচ্ছিলাম,প্লান সাজাচ্ছিলাম নতুন করে ৷ সকাল ৯ টা বাজে,পৌছিয়েছি আমরা চট্টগ্রাম ৷ নেই এবার কোনো বান্দরবান এর বাসের টিকেট!! চড়ে বসলাম কেরানীহাট এর বাসে! ভোগান্তি চরম শিখরে! চন্দনাইশ এর জ্যামে আরও ১ ঘন্টা শেষ ৷ বান্দরবান পৌছাই ২ টার সময়!!
যেখানে আজই আমাদের বগা লেক থাকার কথা সেখানে দুপুর হয়ে গেলো মাত্র পৌছালাম আমরা বান্দরবান ৷ ২ঃ৩০ টার রুমার বাস ধরলাম ৷ মনের মধ্যে ক্ষীন আশা,হয়তো শেষ সময়ের জ্বীপ ধরতে পারবো ৷ বাসে ছাদে করে চলে আসলাম রুমা,দুপুর ঘড়িয়ে তখন প্রায় শেষ বিকেল ৷ আজ আর বগা লেক যাওয়া হচ্ছেনা ৷ অনেক খোজাখুজি করার পর খোজ পেলাম লেক ভিউ রিসোর্ট, রুমা বাজার থেকে আরও ২ কিমি দূরের একটি হোটেলের ৷ ভোগান্তি,হতাশা আর ক্লান্ত দেহ সব একসাথে ভর করছিলো ৷
ক্ষুনাক্ষরেও ভাবিনি অন্যতম শ্রেষ্ট একটা রাত,রাতের পর ভোর আমাদের ই অপেক্ষায় ৷
একটি রুম নিলাম সৌজন্যতার জন্যে, যায়গাটা আমাদের পছন্ধ হয়েছে ৷ পাহাড়ের সাথে বিশাল একটি লেক,লেকের ঝুলন্ত ব্রীজ পার করে গেলাম হোটেলে ৷ রাতে থাকবো আমরা তাবুতে ৷ তাবু পিচ করে নিলাম লেক এর পানি ঘেসে ছোট্ট একটু যায়গায় ৷ ততক্ষনাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম,যেই টাকা গাইড এর পিছনে দিতে হতো সেই টাকা দিয়ে নাহয় আজ BBQ করবো ৷ রবিউল নামের একটা পিচ্ছি ছিলো আমাদের সাথে ৷ সবকিছুতেই ও আমাদের সাহায্য করেছে ৷ ওকে নিয়ে বাজার থেকে সব কিছু কেনাকাটা করে নিলাম ৷ দ্রুতই আবার ফিরে আসলাম হোটেলে ৷ নিজের দেশে থেকেও পুরোপুরি স্বাধীন মনে হচ্ছিলো না ৷ কেনো?
রুমা তে নিরাপত্তার স্বার্থে রাত ৯ টার পর হাটাই নিষেধ,টহল চলে আর্মি বাহিনীর ৷
লেকে এসে শুরু করলাম মাংস পোড়ানো ৷ BBQ এর স্বাধ ও হয়েছে অসাধারন ৷ খেয়ে দেয়ে এবার ঘুমানোর পালা ৷
ভোর ৫ টা, অসাধারন! আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না এই সৌন্দর্যের জন্যে ৷ লেক এর পানি থেকে ধোয়ার মতো কুয়াশা উড়ছে,কোকিল ডাকছে, পাহাড়ের ভাজে মেঘ, সূর্যের কিরণ খেলছে কুয়াশার সাথে ৷
জীবনের শ্রেষ্ঠ একটি সকাল, আজ পর্যন্ত নিঃসন্দেহে বলে দিলাম ৷
ব্যাগ ঘুছিয়ে চলে আসলাম রুমা বাজার ৷ নতুন এক বিড়ম্বনা, রুমা বাজারে একজন গাইড ও নেই ৷ অনেক চেষ্টা করেও কাওকে পেলাম না ৷ তাওহীদ(গাইড) ভাই কে ফোন দিলাম ,উনি তার বড় ভাই সাদেক(গাইড) ভাই কে আমাদের জন্যে বগা লেক থেকে পাঠিয়ে দিলেন ৷ সেখান থেকে ৩ জনের একটি গ্রুপ আমাদের সাথে যোগ হয়েছে ৷ জ্বীপ ভাড়া করে রওনা হলাম স্বপ্নের বগা লেক এর পথে ৷ কিছুদুর যাওয়ার পরেই শুরু খেলা!! রাস্তা তো নয় রোলার কোস্টার! ধূলাময় এক রাজ্যে আমাদের আগমন ৷ ২ ঘন্টার রোলার কোস্টার জার্নির পর পৌছালাম বগা লেক ৷ আর্মি ক্যাম্প এ এনট্রি করে চলে গেলাম সিয়াম দিদির ঘরে ৷ তৈরি হচ্ছে আমাদের খাবার,ততক্ষনে সবায় গোসলের জন্যে প্রস্তুত ৷
বগালেক এর স্বপ্ন বহু বছর ধরেই দেখছি,তবে বগা লেক এ গোসল করবো তা কখনো ভাবিনি ৷ স্বচ্ছ,শীতল পানিতে শরীর ডুবিয়ে মনে হচ্ছিলো শান্তির অমৃত তে ভেসে যাচ্ছি ৷ গোসল করে ,খাওয়া দাওয়া করে নিলাম ৷ বিশ্রামের পালা,দুপুর ২ টা পর্যন্ত বিশ্রাম করলাম ৷ আজই আবার চলে যাবো কেওক্রাডং ৷
কিছু ছবিঃ
১)রুমাতে প্রবেশ
২)সাঙ্গু পাড়
৩)লেক ভিউ রিসোর্ট এ প্রবেশ
৪)ঝুলন্ত ব্রীজ
৫)BBQ
৬)লেকের পাড়ে তাবু
৭)অপার্থিব সকাল
৮)বগালেক এর আর্মি ক্যাম্প এর পথে
৯)বগালেক পাড়া
১০)বগালেক এর ইতিহাস
১১)গোসল চলছে
১২)প্রকৃতি দেখছি
১৩)স্থির বগালেক
অপার্থিব সকাল এর ভিডিও: https://www.youtube.com/watch?v=RrVT0mrjh7c
পরবর্তী পর্বে লিখবো কেওক্রাডং জয়ের গল্প ও সেখান থেকে ঢাকা ফেরার কথা ৷
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৩১