somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থানকোয়াইন ও ভিদঘুটে রাত

২৭ শে মে, ২০১৭ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভ্রমনের দ্বিতীয় দিন আজ ৷ আবাসিক এ জম্পেশ একটা খাওয়া দাওয়া করে চাঁন্দের গাড়ী তে করে রওনা হয়ে যাই ১৩ কিলোর উদ্দেশ্যে ৷ আলীকদম-থানচি সড়ক বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সড়ক,যদিও সর্বোচ্চ পয়েন্ট সেই ডিম পাহাড়ের উপর আমরা যাইনি ৷ আকা বাঁকা,উচু নিচু পথ ৷ আর্মি ক্যাম্প এ সকল পরিচিতি তথ্য জমা দিয়ে আমরা ১০ টা নাগাদ পৌছাই ১৩ কিলো তে ৷ ১৩ কিলো থেকেই স্বপ্নের সেই ক্রিস তং চূড়ার দেখা পাচ্ছিলাম সবায় ৷


১৩ কিলো থেকে নামতে শুরু করলাম, প্রায় ২০ মিনিটের মতো নেমে পৌছাই একটি ঝিরি তে ৷ ঝিরির পাশেই ছিলো ছোট একটি ঝর্না,যেটির নিচে প্রায় সবায় শরীর ভিজিয়ে নেই ৷


অনিন্দ্য সুন্দর এই ঝিরি ধরেই আমরা হাটতে শুরু করলাম ৷


কোথায় হাটু পানি,কোথাও বা পানি নেই ৷ দুপুর ২ টা, সূর্য মামা মাথার ঠিক উপরে ৷ ঝিরির তো অভাব নেই তবে পান করার পানির ছিলো অভাব ৷অবশেষে এই ঝিরি থেকেই পানি সংগ্রহ করে নিয়েছিলাম,ঝিরির পাশে বসে বিশ্রাম ও করে নিচ্ছিলাম ৷


ততক্ষনে অবশ্য আমাদের গতি নগন্য ছিলো ৷ ফারুক(গাইড) বারে বারে বলে যাচ্ছিলো আজ আমরা থানকোয়াইন পৌছাতে পারবোনা ৷তখনই যে শুরু করলাম আমি ছুটা,মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম একদমে প্রাথমিক গন্তব্য দুস্রি বাজারে গিয়েই থামবো ৷
সেই গতি তখন যদি না উঠাতাম সত্যিই গন্তব্যে পৌছাতাম না ৷ আমার সাথে ছিলো শাওন, দুজনে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে শুধুই ছুটছিলাম ৷ আর বাকিরাও আমাদের দেখে পা লাগাতে শুরু করেছিলো ৷ ৩ টা নাগাদ পৌছাই মেনকিউ পাড়া ৷
মেনকিউ পাড়া পেরিয়ে এই ঝিরি তে সবায় নিজেদের শরীর এলিয়ে দিয়েছিলাম ৷


খুব বেশী সময় ও নেই ৷আবার শুরু ছুটে চলা,বিশাল এক শস্য ক্ষেত পার করলাম,একের পর এক ঝিরি পেরিয়ে বিকেল ৪ টা নাগাদ পৌছালাম কাঙ্খিত দুস্রি বাজার ৷ নিজেদের খাদ্য তো নিজেদের ব্যাগেই ছিলো,শুধু তেল টা কিনে নিলাম দুস্রি বাজার থেকে ৷
সেদিন প্রায় সব গুলো ঝিরি তেই শরীর ভিজিয়েছি যার দরুন পরবর্তী দিন গুলো আমার জর নিয়েই ট্রেক করতে হয়েছে।


আমাদের এই ভ্রমনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো দুর্গম সাইংপ্রা ঝর্না ৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ফারুক(গাইড) সেই ঝর্নার ব্যাপারে আগে জানতোনা ৷ আমি নিজে যতটুকু বড় ভাইদের থেকে জেনে গিয়েছিলাম, তার মাধ্যমে জেনেছি খেমচং পাড়ার(বর্তমান পারো ও পারা) এর মাংফুয়া , ডন ও বেলাল এই ঝর্না টি চিনে ৷
দুস্রি বাজার থেকে শুরু হয়ে গিয়েছিলো দুর্গমতা ৷ সরু একটি পাহাড়ি পথ ধরে এগুচ্ছিলাম,নিচেই টোয়াইন খাল ৷ যেই টোয়াইন খালের কথা (ট্রাভেলারস অফ বাংলাদেশ এর ভ্রমন সংকলন বই ২ টি প্রচুর শুনেছি,দেখেছি) ৷ প্রথম থেকে টোয়াইন খালের প্রতি প্রেম ছিলো, আজ সেদিকে আমি!!


এখান থেকেই শুরু হয়ে গেছিলো কাহিনী,তবে তা আমরা আরও পরে গিয়ে আন্দাজ করতে পেরেছিলাম ৷
লাতুমনি পাড়ার নিচে টোয়াইন খালে গোসল করেছিলো একটি ছেলে ৷ তাকে জিগ্গেস করেছিলাম সাইংপ্রার কথা ৷ সে আমাদের আশ্বস্ত করেছিলো তার দাদা শুনীল কাল সকালে সাইংপ্রা ঝিরির সামনে থাকবে আমাদের জন্যে ৷ মন মারাত্নক আন্দোলিত, অবশেষে হয়তো দেখা পাচ্ছি দুর্গম সাইংপ্রার ৷ লাতুমনি পাড়া থেকে আবার চলতে শুরু করলাম ৷ বিকেল ৫ টা , পৌছাই বড়ইতলী পাড়া তে ৷
সেখানকার কারবারীর ঘরে নিজেদের ব্যাগ রেখে চলে যাই থানকোয়াইন এর উদ্দেশ্যে ৷ পথ এখান থেকে আরও দুর্গম, বলতে গেলে এখানটায় টোয়াইন খাল সবচেয়ে বেশী প্রশস্থ ৷ আরও প্রায় ২০ মিনিট গিয়ে দেখা পেলাম কাঙ্খিত ঝর্নার ৷ মারাত্নক পিচ্ছিল ঝিরি পেরিয়ে পৌছালাম থানকোয়াইন ঝর্নার কাছে ৷


আমার মতো যাদের পানির প্রতি ভয় তাদের জন্যে ভয়ংকর এক যায়গা(ঝর্নার ঠিক নিচে) ৷ যারা সাতার পারতো তারা ঝর্নার ঠিক নিচে গিয়ে শরীর ভিজিয়েছিলো, ঝর্নার নিচে কোনো ঠাই নেই ৷ শাওন এর প্রবল ইচ্ছার কারনে তাকে ভেলায় করে নিয়ে গেছিলো ঝর্নার নিচে জুবায়ের আর তন্ময় ৷


সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে , ফিরতে হবে বড়ইতলী পাড়া তে ৷ এই ঝিরি ধরেই কাল পালং খিয়ং,সাইংপ্রা হয়ে ক্রিস তং যাওয়ার প্লান ৷
রাত ঘনিয়েছে বড়ইতলী পাড়া তে ৷ ঘনিয়েছে আমাদের আন্দাজ করার সময় টাও ৷ কিছুদিন আগে এই বড়ইতলী পাড়ার সামনের ঝিরি থেকেই ৩ জন উধাও হয়েছিলো(স্থানীয়দের ভাষ্যমতে) ৷
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে অতিদুর্গম এই ঝিরি তে দুইটি ভিন্ন বাহিনীর অবস্থান ৷
গাইডকে একপ্রকার অবিশ্বাস শুরু হয়ে গেছিলো ৷ বড়ইতলী পাড়া তে আধুনিক সভ্যতার কিছুই নেই, এখান থেকে পালানো ও অল্প সময়ের ব্যাপার না ৷ একপ্রকার লোভে পড়ে গেছিলো পাড়ার মানুষেরা ৷
চলুন খোলস ছাড়াই ৷ বড়ইতলী পাড়া তে নেটওয়ার্ক এর ছিটে ফোটাও নেই,নেই দুর্গম ঝিরি সাইংপ্রা তেও ৷ তাহলে কীভাবে লাতুমনি পাড়ার সেই ছেলেটি তার ভাই শুনীল কে সাইংপ্রা ঝিরির মুখ থেকে আমাদের সাইংপ্রা ঘুরিয়ে আনতে বলবে? বড়ইতলী পাড়ার মানুষেরা সরাসরি না হলেও আমাদের কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকার ই দাবী করছিলো ৷
চিন্তের ছাপ,প্রতিটি মুখে ৷ টিম লিডার হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিলো সিদ্ধান্ত নেওয়া ৷
নেটওয়ার্ক বিহীন এক জনপদে নিজেদের খুব অসহায় লাগছিলো ৷ বড়ইতলী পাড়ার সামনেই বালুর ছোট্ট একটি যায়গা,যার সামনেই ঝিরি ৷ তাবু পিচ করে নিলাম সেখানেই ৷ সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছিলাম,আমরা ফিরবো ৷ ভিদঘুট একটি রাত,মনে ভয় হয়তোবা এই পাড়া থেকেই আর ফিরতে পারবোনা সভ্যতায় ৷
তবে একটি কথা, পিছুটান নিয়ে পাহাড়ে যাওয়া উচিত নয় ৷ আমাদের সবার পিছুটান ছিলো বন্ধন, আমাদের ও পরিবার আছে ৷ হয়তোবা সেই মুহুর্তে পরিবারের সাথে কথা বলতে পারলে এতটাও ভিদঘুটে যেতনা সেই রাত ৷
রাত ১২ টার সময় আমাদের কাছে মাছ ও বিক্রি করতে আসছিলো, এক যুবক ও যুবতী ৷
"বন্ধু,ও বন্ধু মাছ নিবানা?"
জুবায়ের আর আমি ঘুমাইনি তখনও ৷ কথা বলতে বলতে তাবুও ছিড়ে ফেলেছিলো একটি যায়গায় তারা ৷
রাতটা যেনো আরও ভিদঘুটে করে গেলো তারা ৷
কোনো মতে সেই রাত টি কাটিয়ে দিলাম ৷
বড়ইতলী তে সকাল,বিন্দুমাত্র আর দেড়ি না করে ফিরতে শুরু করি মেনকিউ পাড়ার উদ্দেশ্যে ৷দুস্রি বাজার এ পৌঁছে যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম।


এই দোকান তাতে বসেই ১০০ কলা সাবাড় করে দিয়েছিলাম আমরা।


সকাল ৮ টা নাগাদ পৌছে ছিলাম মেনকিউ পাড়ায়।
#তবে অবশেষে কতটুকু সঠিক সিদ্ধান্ত বড়ইতলী তে নিয়েছিলাম জানিনা, তবে অভিজ্ঞতায় আমি এখনো বহুত কাচা,তার প্রমান মিলছিলো ৷ হয়তো সেখানে কারও অভিজ্ঞতার সাহায্য পেলে, অন্য কিছুও হতে পারতো ৷
পরবর্তী পর্বে লেখবো রুংরাং জয়ের কাহিনি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১২:০০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×