somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধনেশ পাখির পাহাড়েঃ রুংরাং

১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মেনকিউ পাড়া যেনো ছিলো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার মঞ্চ ৷ মেনকিউ পাড়ার সামনের ঝিরিতে বসেই ব্যাগ গুলো কমিয়ে নেই আমরা ৷


৯ টা নাগাদ শামুক ঝিরি ধরে হাটতে শুরু করি আমরা ৷ অসাধারণ নিরবতা, প্রকৃতির মাদকতা আছে এই ঠান্ডা,ছায়া বেষ্টিত প্রশস্ত ঝিরি টিতে ৷


প্রায় ৪০ মিনিট হেটে মূল ঝিরি থেকে হাতের ডানে টার্ন নিয়ে কিছুদুর যাওয়ার পরই পৌছাই আমরা একটি ছোট্ট ঝর্নার সামনে ৷ সঠিক নাম জানিনা, তবে শামুক ঝিরি তে অবস্থান বলে আমরা শামুক ঝর্নাই বলছিলাম,গাইড ও ঐ নাম টাই বলছিলো ৷


কঠিন রাস্তার শুরু ৷ আরও প্রায় ২০ মিনিট পর ছোট্ট একটি ঝিরি ৷ গাইডের বক্তব্য হিসেবে রুংরাং এর আগে এই শেষ পানির উৎস ৷ সবায় পানি ভরে নিয়ে শুরু করলাম যাত্রা ৷
আর যাই হোক, আপনি প্রকৃতি প্রেমী না হলে কখনো মেনকিউ পাড়া থেকে মেনইয়াঙ্ক পাড়ায় পৌছানোর কথা দ্বিতীয়বার কল্পনা করবেন না ৷ চিকন সরু পথ দিয়ে ক্রমান্বয়ে দেড় ঘন্টা যাবত শুধু উঠছি ৷
সেই গতকাল সকালে ১৩ মাইলে শেষ পরিবারের সাথে কথা হয়েছিলো ৷
হঠাত এক পশলা শান্তির ইঙ্গিত দিচ্ছিলো মাঝ পথের একটি অনিন্দসুন্দর মাচাং ঘর ৷ শান্তির মাত্রা দিগুন হয়ে গেছিলো যখন একের পর এক ফোন বাজতে শুরু করলো ৷ জ্বী হ্যা, নেটওয়ার্ক পাওয়া গেছে ৷ এই সুজুগে কথা বলে নিয়েছি সবায় আমরা ৷ আরও দুই দিনের জন্যে বিদায় নিয়েছি ৷


মাচাং ঘরে বিশ্রাম শেষে আবারও হাটতে শুরু ৷ ১০ মিনিট হাটার পরই পেয়ে গেলাম এই চিহ্ন টিকে ৷ মনে হচ্ছিলো আরও একধাপ আদিমতায় পৌছে গেছি ৷


গাইড বলছিলো নিচে একটা ঝিরি আছে,পানি পাওয়া যেতে পারে ৷ আর সেই কথা শুনে পাঁচ জনে মিলে শুধু আমার কাছে অবশিষ্ট থাকা পানি টাও শেষ করলো!! দুপুরের প্রচন্ড প্রখর তাপ মাথার উপর ৷ উঠছি উপরের দিকে, প্রতিটা কদমেই হাহাকার ৷ ফারুক কী যেনো সংগ্রহ করছিলো রাস্তার ধার থেকে ৷ দুপুর ১২ঃ৩০ নাগাদ পৌছাই আমরা মেনইয়াঙ্ক পাড়ায় ৷ বিশ্রামের জন্য কারবারির বাসায় উঠি আমরা সবায় ৷


চলে যাই মেনইয়াঙ্ক পাড়ার নিচের ঝিরি তে , প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হয়েছে একটি পানি সংগ্রহের বিশাল পাথর বেষ্টিত হাউজ ৷ মেনইয়াঙ্ক পাড়ার পানি ছিলো অদ্ভুত মিষ্টি আর ঠান্ডা ৷
ফারুক রান্না করছে, এই ফাকে সবার এক ঘুম ৷ ঘুম থেকে উঠে আমরা বসি খেতে ৷
এ আমার জীবনের সবচেয়ে দুর্ভিক্ষের খাবার!! পাহাড়ি চুয়াই পাতার সাথে শুটকি আর ডাল ৷
আমার খেতেই হবে! আমি না খেলে আর একজন ও খাবেনা ৷ তাই নাক,বন্ধ করে শুধু গিলছিলাম!
৪ টার সময় যাত্রা করি রুংরাং এর উদ্দেশ্যে ৷ রুংরাং এর নিচের পাড়াই মেনইয়াঙ্ক ৷


পথটা অত্যাধিক সুন্দর , ৩০ মিনিট হেটে পৌছাই রুংরাং চূড়ায় পৌছানোর শেষ ধাপে ৷ একটা স্লোপ ৭০ ডিগ্রী এঙ্গেলে উঠে গেছে রুংরাং চূড়ার দিকে ৷ একে একে সবায় উঠলাম চূড়া তে ৷ সবার শেষে চূড়ায় পৌছেছিলাম আমি ৷ আর আমার চূড়ায় পৌছানোর সময় ঘড়ি তে ৪ঃ৪৭ মিনিট ৷


আপেক্ষিক ভাবে তখন নিজেকে সর্বোচ্চ যায়াগায় মনে হতে পারতো যদি না সামনে মায়াবী অপরুপ ক্রিস তং দাড়িয়ে থাকতো ৷ চোখের সামনে আরও একটি চূড়া ,আরও একটু বেশী মাদকতা ৷
প্রায় ২০ মিনিটের মতো সময় কাটিয়েছিলাম চূড়ায় ৷ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিলো , চূড়া থেকে নেমে পথ ধরি সামনের দিকে ৷পাড়া একদম কাছে দেখা গেলেও,খুব বেশী কাছে ছিলোনা ৷ আঁকা বাকা পথ ধরে সন্ধ্যার ঠিক একটু আগেই আমরা পৌছাই পারাও পাড়ায় (পূর্বের খ্যামচং পাড়া) ৷ পারাও পাড়ার নিচেই ঝিরি,তবে পানি আছে ছোট্ট একটি খুমের মধ্যে ৷ রাতের অন্ধকারে ঐ অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝিরি তে নেমে সবায় গোসল করে নেই আমরা ৷ পারাও পাড়ার কারবারির ঘরে ঠাই মিলেছে আমাদের ৷
রান্না হয়েছিলো ডিম,ডাল আর ভাত ৷
সবায় খেয়ে দেয়ে স্বপ্ন আঁকছিলাম ক্রিস তং এর ৷
সবার মনে সাইংপ্রা ও ছিলো, গেলাম আমি আর ফারুক মাংফুয়া এর ঘরে ৷
ভাগ্য টাই খারাপ আমাদের, আগামীকাল পারাও পাড়ায় ধর্মীয় উৎসব ৷ শুকরের মাংস রান্না হবে কাল ৷
কেউ আমাদের সাথে সাইংপ্রা যেতে রাজি না ৷ বলছিলো সাইংপ্রা তে কোনো পানি নেই ৷ তারপরেও আমার জোর দাবী নিয়ে চলুন সাইংপ্রা,তা শুনে উপস্থিত সবার বিস্তর এক হাসি!! সবায় মিলে বলছিলো,হাসছিলো , এক কথায় তামাশা করছিলো আমাদের নিয়ে ৷
তাদের কিছু উক্তিঃ
* আগামীকাল ১ লক্ষ টাকা দিলেও কেও পাড়া থেকে কোথাও যাবেনা ৷
*শুকর খাবো শুকর!
তবুও শেষ আরেকবারের মতো বলছিলাম,আর শেষে কী জানো হলো বললো যাবে ১ জন ৷ তাকে ১০০০ টাকা দিতে হবে ৷ খোশ মেজাজ, বিনা দ্বিধায় রাজি ৷ কিন্তু একটু পরেই আবার হোচট, বলছে সাইংপ্রা খুব রিস্কি ৷
মাংফুয়ার উক্তিঃ
যে আপনাদের সাথে যাবে তাকে ১০০০ ৷ আর যখন আপনারা বিপদে পড়বেন আপনাদের বিপদ ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে যতজন যাবে প্রত্যেক কে ১০০০! দশ জনে ১০০০০!!
সিদ্ধান্ত নিলাম,সাইংপ্রা যাবোই তবে এই বর্ষায় ৷ এই ধরনের সকল প্রস্তুতি নিয়েই ৷
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:২০
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×