মেনকিউ পাড়া যেনো ছিলো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার মঞ্চ ৷ মেনকিউ পাড়ার সামনের ঝিরিতে বসেই ব্যাগ গুলো কমিয়ে নেই আমরা ৷
৯ টা নাগাদ শামুক ঝিরি ধরে হাটতে শুরু করি আমরা ৷ অসাধারণ নিরবতা, প্রকৃতির মাদকতা আছে এই ঠান্ডা,ছায়া বেষ্টিত প্রশস্ত ঝিরি টিতে ৷
প্রায় ৪০ মিনিট হেটে মূল ঝিরি থেকে হাতের ডানে টার্ন নিয়ে কিছুদুর যাওয়ার পরই পৌছাই আমরা একটি ছোট্ট ঝর্নার সামনে ৷ সঠিক নাম জানিনা, তবে শামুক ঝিরি তে অবস্থান বলে আমরা শামুক ঝর্নাই বলছিলাম,গাইড ও ঐ নাম টাই বলছিলো ৷
কঠিন রাস্তার শুরু ৷ আরও প্রায় ২০ মিনিট পর ছোট্ট একটি ঝিরি ৷ গাইডের বক্তব্য হিসেবে রুংরাং এর আগে এই শেষ পানির উৎস ৷ সবায় পানি ভরে নিয়ে শুরু করলাম যাত্রা ৷
আর যাই হোক, আপনি প্রকৃতি প্রেমী না হলে কখনো মেনকিউ পাড়া থেকে মেনইয়াঙ্ক পাড়ায় পৌছানোর কথা দ্বিতীয়বার কল্পনা করবেন না ৷ চিকন সরু পথ দিয়ে ক্রমান্বয়ে দেড় ঘন্টা যাবত শুধু উঠছি ৷
সেই গতকাল সকালে ১৩ মাইলে শেষ পরিবারের সাথে কথা হয়েছিলো ৷
হঠাত এক পশলা শান্তির ইঙ্গিত দিচ্ছিলো মাঝ পথের একটি অনিন্দসুন্দর মাচাং ঘর ৷ শান্তির মাত্রা দিগুন হয়ে গেছিলো যখন একের পর এক ফোন বাজতে শুরু করলো ৷ জ্বী হ্যা, নেটওয়ার্ক পাওয়া গেছে ৷ এই সুজুগে কথা বলে নিয়েছি সবায় আমরা ৷ আরও দুই দিনের জন্যে বিদায় নিয়েছি ৷
মাচাং ঘরে বিশ্রাম শেষে আবারও হাটতে শুরু ৷ ১০ মিনিট হাটার পরই পেয়ে গেলাম এই চিহ্ন টিকে ৷ মনে হচ্ছিলো আরও একধাপ আদিমতায় পৌছে গেছি ৷
গাইড বলছিলো নিচে একটা ঝিরি আছে,পানি পাওয়া যেতে পারে ৷ আর সেই কথা শুনে পাঁচ জনে মিলে শুধু আমার কাছে অবশিষ্ট থাকা পানি টাও শেষ করলো!! দুপুরের প্রচন্ড প্রখর তাপ মাথার উপর ৷ উঠছি উপরের দিকে, প্রতিটা কদমেই হাহাকার ৷ ফারুক কী যেনো সংগ্রহ করছিলো রাস্তার ধার থেকে ৷ দুপুর ১২ঃ৩০ নাগাদ পৌছাই আমরা মেনইয়াঙ্ক পাড়ায় ৷ বিশ্রামের জন্য কারবারির বাসায় উঠি আমরা সবায় ৷
চলে যাই মেনইয়াঙ্ক পাড়ার নিচের ঝিরি তে , প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হয়েছে একটি পানি সংগ্রহের বিশাল পাথর বেষ্টিত হাউজ ৷ মেনইয়াঙ্ক পাড়ার পানি ছিলো অদ্ভুত মিষ্টি আর ঠান্ডা ৷
ফারুক রান্না করছে, এই ফাকে সবার এক ঘুম ৷ ঘুম থেকে উঠে আমরা বসি খেতে ৷
এ আমার জীবনের সবচেয়ে দুর্ভিক্ষের খাবার!! পাহাড়ি চুয়াই পাতার সাথে শুটকি আর ডাল ৷
আমার খেতেই হবে! আমি না খেলে আর একজন ও খাবেনা ৷ তাই নাক,বন্ধ করে শুধু গিলছিলাম!
৪ টার সময় যাত্রা করি রুংরাং এর উদ্দেশ্যে ৷ রুংরাং এর নিচের পাড়াই মেনইয়াঙ্ক ৷
পথটা অত্যাধিক সুন্দর , ৩০ মিনিট হেটে পৌছাই রুংরাং চূড়ায় পৌছানোর শেষ ধাপে ৷ একটা স্লোপ ৭০ ডিগ্রী এঙ্গেলে উঠে গেছে রুংরাং চূড়ার দিকে ৷ একে একে সবায় উঠলাম চূড়া তে ৷ সবার শেষে চূড়ায় পৌছেছিলাম আমি ৷ আর আমার চূড়ায় পৌছানোর সময় ঘড়ি তে ৪ঃ৪৭ মিনিট ৷
আপেক্ষিক ভাবে তখন নিজেকে সর্বোচ্চ যায়াগায় মনে হতে পারতো যদি না সামনে মায়াবী অপরুপ ক্রিস তং দাড়িয়ে থাকতো ৷ চোখের সামনে আরও একটি চূড়া ,আরও একটু বেশী মাদকতা ৷
প্রায় ২০ মিনিটের মতো সময় কাটিয়েছিলাম চূড়ায় ৷ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিলো , চূড়া থেকে নেমে পথ ধরি সামনের দিকে ৷পাড়া একদম কাছে দেখা গেলেও,খুব বেশী কাছে ছিলোনা ৷ আঁকা বাকা পথ ধরে সন্ধ্যার ঠিক একটু আগেই আমরা পৌছাই পারাও পাড়ায় (পূর্বের খ্যামচং পাড়া) ৷ পারাও পাড়ার নিচেই ঝিরি,তবে পানি আছে ছোট্ট একটি খুমের মধ্যে ৷ রাতের অন্ধকারে ঐ অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝিরি তে নেমে সবায় গোসল করে নেই আমরা ৷ পারাও পাড়ার কারবারির ঘরে ঠাই মিলেছে আমাদের ৷
রান্না হয়েছিলো ডিম,ডাল আর ভাত ৷
সবায় খেয়ে দেয়ে স্বপ্ন আঁকছিলাম ক্রিস তং এর ৷
সবার মনে সাইংপ্রা ও ছিলো, গেলাম আমি আর ফারুক মাংফুয়া এর ঘরে ৷
ভাগ্য টাই খারাপ আমাদের, আগামীকাল পারাও পাড়ায় ধর্মীয় উৎসব ৷ শুকরের মাংস রান্না হবে কাল ৷
কেউ আমাদের সাথে সাইংপ্রা যেতে রাজি না ৷ বলছিলো সাইংপ্রা তে কোনো পানি নেই ৷ তারপরেও আমার জোর দাবী নিয়ে চলুন সাইংপ্রা,তা শুনে উপস্থিত সবার বিস্তর এক হাসি!! সবায় মিলে বলছিলো,হাসছিলো , এক কথায় তামাশা করছিলো আমাদের নিয়ে ৷
তাদের কিছু উক্তিঃ
* আগামীকাল ১ লক্ষ টাকা দিলেও কেও পাড়া থেকে কোথাও যাবেনা ৷
*শুকর খাবো শুকর!
তবুও শেষ আরেকবারের মতো বলছিলাম,আর শেষে কী জানো হলো বললো যাবে ১ জন ৷ তাকে ১০০০ টাকা দিতে হবে ৷ খোশ মেজাজ, বিনা দ্বিধায় রাজি ৷ কিন্তু একটু পরেই আবার হোচট, বলছে সাইংপ্রা খুব রিস্কি ৷
মাংফুয়ার উক্তিঃ
যে আপনাদের সাথে যাবে তাকে ১০০০ ৷ আর যখন আপনারা বিপদে পড়বেন আপনাদের বিপদ ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে যতজন যাবে প্রত্যেক কে ১০০০! দশ জনে ১০০০০!!
সিদ্ধান্ত নিলাম,সাইংপ্রা যাবোই তবে এই বর্ষায় ৷ এই ধরনের সকল প্রস্তুতি নিয়েই ৷