somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্নের শিখরেঃ ক্রিস তং

২৫ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভোর হলো,রাত টা খুব শীতেই কাটিয়েছিলাম। এই মে মাসেও পাহাড়ে শীত,মেঘের ভিতর এ ছিলাম আমরা। সকালে নুডুলস দিয়ে নাস্তা করে নিয়েছিলাম,যেই নুডুলস গত ৪ দিন ধরে কাধে নিয়ে হাটতে হয়েছিলো,অবশেষে তা খাওয়ার সুযোগ মিললো।
সকালেই পথ ধরি আমরা ক্রিস তং এর। গতকাল রুংরাং থেকে দেখা মাদকতার সর্বোচ্চ চূড়া ক্রিস তং। অসাধারন ছায়া বেষ্টিত বিশাল বিশাল গাছের এক স্বপ্নময়ী জঙ্গলের পথ ধরে আমরা হেটে চলছি । কখনো পথ অনেক খানি উপরে উঠে যাচ্ছে আবার কখনো সেই টুকুই নামছে। গাছ কাটার ব্যাবসা টা আরো রমরমা করার জন্নেই তো এই রাস্তা বানানো,পাহারের বুক কেটে!


একের পর এক ঘন জঙ্গল আর পাহাড় পেরুচ্ছি, প্রায় ১ ঘন্টা হাটার পর পেয়েছিলাম সবচেয়ে কঠিন পথ। চিকন সরু পথ ধরে উপরে উঠতে হবে, বা পাশেই মৃত্যু। একদম সোজা একটি খাদ,সেই খাদ দিয়েই দেখা যাচ্ছিলো আরেকটি পাড়া ।


যখন আমরা সবায় ক্রিস তং এর চূড়ায় তখন বাজে ৯ঃ২০ । কতক্ষন দেখছিলাম সামনের খাদ, উচ্চতা কে অনুভব করতে চাচ্ছিলাম।


মাথার উপর প্রচণ্ড প্রখর রোদ, বাশ জঙ্গলের ভিতর একটু ছায়া খুজছিলাম। এখানেই বিশ্রাম করেছিলাম ২০ মিনিট এর মতো।


আজই আমাদের ফিরতে হবে মেঙ্কিউ পাড়ায়,তাই বেশিক্ষণ সময় নষ্ট না করে আবার ফিরতি পথ ধরি। ফিরতি পথে প্রচুর কস্ট হয়েছিল পানির জন্নে। মাথার উপর রোদ,হাতে ছিলনা কোনো পানি!! এই ভ্রমনে পানির জন্নে আমাদের হাহাকার ছিল অনেক বেশি,যখন যেখানে পানি দেখেছি ফিরে পেয়েছিলাম প্রান ।
প্রতি ফোটা পানি তে এক এক টি জীবন!
শহরে তো ফিরেছি কিন্তু পানি খেলেই চিন্তায় চলে আসে পারো ও পাড়া(খেমচাং) ও মেনইয়াংক পাড়ায় প্রতি ফোটা পানির জন্নে আমাদের হাহাকার!!
কিভাবে, কোথায় থেকে আমরা পানি সংগ্রহ করে পান করেছি তা আজীবন মনে থাকবে .........

কোথা থেকে পানি খেতে হয়েছিলো তার একটি ছোটো ভিডিওঃ https://youtu.be/8h7kRbv4TyU
১১ টা নাগাদ আমরা পৌছাই পাড়াও পাড়ায় । কারবারির ঘরে প্রবেশ করে ১ ঘন্টার মতো ঘুমিয়ে নেই। ঘুম থেকে উঠে চিড়া মাখিয়েছিলাম, খিদার তাড়নায় ২ মিনিট লেগেছিলো সবার ১.৫ কেজি চিড়া শেষ করতে। তারপর আবারও সেই একি পথ ধরে ফিরা শুরু ।


৩ টা নাগাদ পৌছাই সেই মাচাং ঘর টিতে। প্রকৃতি প্রেমিরা মাচাং ঘরে এক আজব নেশা পায়, সকল ক্লান্তি যেনো মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যায় । সবায় মিলে তো আমার কাছে বায়না ধরেই বসে আজকের রাত তা এই মাচাং ঘরেই কাটাবে বলে! বলতে গেলে কিছুটা আমার মন চাইলেও সময় এর অপর্যাপ্ততা ও খাবার,পানি সাথে ছিলোনা বলেই সবায়কে পাত্তা না দিয়ে মেঙ্কিউ পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।


এবার শুধুই নিচে নামার পালা, ৪০ মিনিটেই পোঁছে গেছিলাম শামুক ঝিরি তে।
বিকেল ৫ টা নাগাদ পৌছাই আজকের গন্তব্য মেঙ্কিউ পাড়ায়। এখানে একটা গোসল ও সেড়ে নিয়েছিলাম আমরা।


হলুদ পাহাড়ি ড্রেসে শামুক ঝিরি ধরে একটি পাখি ফিরে যাচ্ছিলো তার ঘরে, হয়তো আমার দেখা জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটি মেয়ে সে,কে জানে পরী ও হতে পারে।

মেঙ্কিউ পাড়ায় পৌঁছে সবায় তাবু ঠিক করে নিলাম। তন্ময়,বাপ্পি,আরিফ,তারেক ও আর ২-৩ জন দুসরী বাজার এ গিয়ে কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে আসলো। খোজ ছিলো মুরগির, কিন্তু পাওয়া গেলোনা!! রাতে খেয়েছিলাম খিচুড়ি।
তাবু ভেঙ্গে যাওয়াতে আমি,জুবায়ের আর শাওন রাত টা খোলা মাঠেই কাটিয়ে দিয়েছিলাম।


সামনে ঝিরি,পিছনে পাহাড় ৷ বিশাল এক পাড়া মেনকিউ ৷ তার বিশাল মাঠে খোলা আকাশের নিচে শুয়ে পুরো রাতটা কাটিয়ে দেওয়া ৷ সাথে ছিলো ঝিরির পানির কলকল শব্দ, মেঘে ঢাকা পরিষ্কার মেনকিউ,অজানা অনেক ধরনের ডাক!
যেমন অসাধারন ছিলো সে রাত, ছিলো পাশাপাশি ভয় ও!
সকালের মেঙ্কিউ পাড়া ছিলো এক টুকরো স্বর্গ । মেঘে ঢাকা পাহাড়,পাশেই ঝিরির কলকল শব্দ!


সকালে আমরা ফিরতি পথ ধরি ১৩ কিলোর। পথের সেই দুস্রি খালের মুখে আবারো একটি শান্তির গোসল সেড়ে নিয়েছিলাম।


১১ টা নাগাদ ফিরেছিলাম ১৩ কিলো, এ যেনো আলোকিত জীবনে ফিরে আসা! জীপ করে ফিরেছিলাম শহরে, সময় থাকাতে এক ফাকে ঘুরে এসেছিলাম আলীর গুহা ও । প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি এই সুড়ঙ্গ! হিম ঠাণ্ডা সুড়ঙ্গের ভিতর!!


সেখান থেকে জিপে করে ফিরেছিলাম চকরিয়া, তারপর গ্রপ এর ৪ জন সেখান থেকে কক্সবাজার, ১ জন বরিশাল, ২ জন চুয়াডাঙ্গা ও বাকিরা সেফ ভাবে ঢাকায় পৌঁছেছে।
ক্রিস তং যাওয়ার পথের ভিডিওঃ
আমাদের অন্যান্য ভিডিওঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:২৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×