somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দীপক চোপড়ার মুহাম্মাদ: আ স্টোরি অভ দ্য লাস্ট প্রফেট ও ঝিম ধরানো বিশ্লেষণ-১

২৬ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড. দীপক চোপড়া। বয়স পঁয়ষট্টি।
আলাপটা হয়েছিল নিউ রিয়েলিটি অনুষ্ঠানে। অ্যালেন স্টেইনফিল্ডের সাথে। পুরোপুরি ভিন্ন আঙ্গিকের বই মুহাম্মাদ: আ স্টোরি অভ দ্য লাস্ট প্রফেট বিষয়ে বলতে গিয়ে লেখক দীপক চোপড়া তাঁর দর্শন ও অদ্ভুত মনস্তত্তের পরিচয়ও দেন।

এককথায় দীপক চোপড়ার পরিচয় দেয়া যায় এভাবে, তাঁর পিতা ছিলেন বিখ্যাত এক চিকিৎসক যিনি সুন্দর সাধনা ও মমতায় খ্যাতি অর্জন করেন। দীপকের ছেলে গৌতম বিখ্যাত আত্মনির্মাণ লেখক। দীপকের তিন বছর বয়েসি নাতি ইংরেজি-চাইনিজ-স্প্যানিশ ও হিন্দিতে কথা বলে। আর এই চার পুরুষের মধ্যে দীপক চোপড়াই সবচে বেশি কাজ করেছেন এবং বিখ্যাত হয়েছেন।

সারসংক্ষেপ করে সেই অশ্রুতপূর্ব, অভাবিতপূর্ব আলাপের মূলটা তুলে দেয়ার লোভ সামলানো কঠিন।


বইটার তিন লেভেল নিয়ে আপনার সাথে আলাপ আমার। সাহিত্যিক দিক, সমাজ-রাজনৈতিক দিক এবং অবশ্যই, আত্মিক-আধ্যাত্মিক দিক। সাহিত্যকাজ হিসাবে এই বই আমাকে স্তম্ভিত করেছে।

ও, ভাল লাগল।

আপনি একজনকে পুরোপুরি ফিল করে তুলে ধরেছেন। কারো দ্বারা, কোন লেখক দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন এই ফিল করার অসাধারণ পদ্ধতিতে?

আমি একজনকে নিয়ে লিখব, যাকে বুঝতে হলে অনেকগুলো জগতের ভিতর দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। অনেক মানুষের ভিতর দিয়ে যেতে হবে, যারা তাঁকে দেখেছিল। দেখেছিল ভিন্ন ভিন্ন গড়নের লেন্সের ভিতর দিয়ে।

তাই আগে সেই আরবের সেই বিশেষ মানুষগুলোকে চিনতে হয়েছে, জানতে হয়েছে। মহান নার্স হালিমা রা., মহান হানিফ মিস্টিক বারাকা... আর ক্রিশ্চান মিস্টিক বাশিরা তো ছিলেন খুবই ইন্টারেস্টিঙ ক্যারেক্টার। সেই পাহাড়ের পথ ধরে দামাস্কাসের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। আর সেই কথা, যে তিনি জানেন, শেষ নবী আসছেন। তিনি তাঁকে দেখতে চান... এমনকি তাঁর দীর্ঘ শত্রু সুফিয়ান, মেয়ে জামাই আলী রা... এই প্রতিটা মানুষই আগ্রহোদ্দীপক। কেউ কেউ ছিলেন বন্ধু, কউ বিশ্বাসী, কেউবা শত্রু আর কেউবা শুধুই কেয়ারটেকার।

আচ্ছা, এই বইতে আঠারো ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি! আপনি তো আসলে চরিত্রগুলোকে পূর্ণভাবে দাফন করে দিচ্ছেন বইতে... আর তাদের প্রত্যেককেই অনুভব করছেন-

হ্যা, অনুভব করছি প্রত্যেককেই। এই মানুষগুলোকে পড়তে পারলেই গল্পটা বলা যাবে। এখানে আছে অসাধারণ সব গল্প। অ্যাডভেঞ্চার, ওয়াহয়ীর আগমন... আমি জীবনটা এই রহস্যের পিছনেই ছুটে পার করলাম, যে দৈববাণী জিনিসটা কী!

তিনি চলে গেলেন পাহাড়ে। একাকী। কীভাবে পড়তে হয়, লিখতে হয় জানেন না। তখন হঠাত করেই জিব্রাইল আসেন আর বলেন, পড়ুন, প্রভুর নামে। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ঝুলন্ত রক্তবিন্দু থেকে, পড়ুন! কারণ, আপনার প্রভু হলেন চির দয়াময়, শিক্ষা দেন বইয়ের মাধ্যমে। আপনার কাছে প্রকাশিত, যা আগে কখনো প্রকাশ পায়নি।

কেমন একটা অভিজ্ঞতা! ভয়ানhttp://www.somewhereinblog.net/blog/Qadri/editpostক!

এই রিভিলেশনের বিষয়টা আসলেই ভয়ানক। সব যুগে, সব ইন্সটিটউশনে, দৈববাণীর দাবি করে আসছে মানুষ। এর সাথে অবশ্যই একটা পাওয়ার জড়িত। ভারতে আপনারা বলেন শাকতি!

ঠিক তাই। আপনি অনেককে ইন্টারভিউ করেছেন। মানুষে মানুষে আছে অসংখ্য চ্যানেলিঙ। এই চ্যানেলিঙটা চলছে... আপনারা যাকে বলতে পারেন, দ্য ম্যাট্রিক্স থেকে। নন-লোকাল-কনশাসনেস থেকে। সম্ভাব্যতার মেঘ ও ভাবনার গড়ন থেকে। শরীরের কালেক্টিভ এক্সপেরিয়েন্স, কালেক্টিভ কর্ম, কালেক্টিভ রিভিলেশন এর সাথে। আজকালকার দিনে কিন্তু আমরা এই বিষয়গুলো আগের যুগ থেকে অনেক বেশি খোলাসা করে জানি। মানুষের নার্ভাস সিস্টেম যখন নিষ্পাপতার পর্যায়ে থাকে, তখন ওটা করতে পারে, অবশ্যই।

তাহলে ঠিক কোন বিষয়টা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এত ক্ষমতাবান করল? তিনি এখনো প্রভাব রাখছেন ১.৪ বিলিয়ন মুসলিমের উপর, এই গ্রহে!

তাঁকে স্পেশাল করছে এক্ষেত্রে যে, জিসাস নিজে ছিলেন ঈশ্বর সন্তান। ঈশ্বরিকতার সাথে যুক্ত। ভার্জিন বার্থ। আর বুদ্ধা বলেন, আমি আলোকিত। মুহাম্মাদ দ. কিন্তু তা বলছেন না। তিনি বলছেন আমি তোমাদের মাঝে একজন। যা ভাল হয়, আল্লাহর কাছ থেকে আসে। আর যদি তেমন কিছু ভাল না হয়ই, আমিই নিব দায়ভার, আমিই নিব দোষ। এযুগে যা বলতে পারি, তাঁর জীবনটা ছিল অন্যরকম স্ট্রাগল। একহাতে দৈববাণী, আরেক হাত বিপদ-ঘেরা পরিস্থিতি সামলানো। দুটাই তিনি দক্ষভাবে সামলে নেন। আমার কাছে, মুহাম্মাদ দ. ততটা পরিষ্কার নন। প্যারাডক্সের আকর। তারপরও তাঁর কাছেই ছিল সত্যের চক্র।

আপনি জানেন, বেড়ে উঠেছিলাম ভারতে। বাবার সাথে সূফি ঘরানায় আমার ছিল অবাধ যাতায়াত। মুসলিম বন্ধুও ছিল আমার অনেক। কুরআন শুনেছি অনেকদিন। আপনি ভাষাটা জানেন বা না জানেন, কুরআন শুনতে কিন্তু খুব ইন্টারেস্টিঙ। নাটকীয় একটা গুণ আছে, যেখানে শব্দটাই সচেতনতার ভিতরে প্রতিধ্বণিত হবে।

এই বই লিখছেন শুনে তো আমি আঁতকে উঠেছিলাম। খুবই রিস্কি কাজ হবার কথা।


হু। মানুষ আমাকে জিগ্যেস করে, ফতওয়ার ভয় নেই আপনার? আমার মনে এইসব ভাবনার কোন স্থান নেই। বই লিখছি। মহান একজনকে নিয়ে মহান এক গল্প লিখছি। যিনি এত মানুষকে প্রভাবিত করেছেন আর এখনো প্রভাবিত করছেন এই দেশের (অ্যামেরিকা) রাজনৈতিক বাতাবরণ, সারা পৃথিবীর প্রতিটা অঞ্চলের আবহ।

নানা পত্রিকায় নানা আলোচনা। আমিও লিখেছি। কেন শুধু শুধু আঙুল টিপে টিপে হাঁটা- যেন ডিমের খোসার উপর দাঁড়িয়ে আছি? এত ভীত হবার তো কোন কারণ নেই। ইহুদিবাদ নিয়ে লেখা হয়, লেখা হয় খ্রিস্টবাদ নিয়ে, হিন্দুত্ব নিয়ে। অ্যালেন, আমি বলি কী, আসুন, এত বেশি ভদ্র হওয়া বাদ দেই। আসুন বলি, চলো, কথা বল, বেশিরভাগ মধ্যপন্থী মুসলিম এবং সবাই। আর কেন চুপ করে থাকা। তোমাদের ধর্মকে সামান্য কয়েক গোত্র ফান্ডামেন্টালিস্টের হাতে ছিনতাই হয়ে যেতে দিও না। ওরা একটা ধর্মকে ছিনতাই করছে, ছিনতাই করছে একটা সঙস্কৃতি।

অবশ্যই, কেউ কেউ কথা বলে ওঠেন। এখানকার ইমামের* মত (সম্ভবত শাইখ হামজা ইউসূফ এর কথা বলা হচ্ছে) যিনি আন্তবিশ্বাস-আলাপ শুরু করেছিলেন। সূফি নিয়ে কথা বলছেন দশ বছর ধরে। গড়ে তুলছেন একটা ইসলামিক সেন্টার, অনেকটা ওয়াইএমসিএ* (ইয়াং মেন্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন) এর মত করে। তারপর হঠাৎ করেই সবাই অন্য সবার সাথে তুলনা শুরু করে দেয়।

আমি শুনে এসেছি, মুসলিমরা সুন্দর, ভালবাসাপূর্ণ, দেশগুলোতে মানুষকে খুব উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়... কিন্তু আমি চিন্তিত হই আপনাকে নিয়ে। আসলে বিষয়টা মুহাম্মাদ দ. এর নয়, বিষয়টা মানুষের, মানুষ কীভাবে মুহাম্মাদ দ. কে দেখে। আপনি ঠিক কীভাবে ওই বণিকদের মত হলেন? ওই পথের ভিখারির মত হলেন, যে মুহাম্মাদকে দ. দেখছে নিজের নিজের চোখে?

জানেন তো, এক হিসাবে সব মানুষই আর্কিটেক্ট। আপনার আছে অসীম সম্ভাবনা। মেডিটেশনের মাধ্যমে আমি নন-লোকাল ডোমেইন, স্থানভেদী-কালভেদী অবস্থিতিতে যাই। যাই একটা সম্ভাব্যতার অনন্ত মাঠে। যেন আলো। সেটার ভিতরে হারিয়ে গিয়ে তারপর হঠাৎ করে উদিত হই, যার রূপে উদিত হতে চাই, তার রূপে। বহু বহু বছর ধরে করে আসছি এমনটা। বেরিয়ে আসতে পারি আফ্রোদিতির রূপে, জিউস হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৪৭
১৩টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×