somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'কাফেলা'র শাইখ নূরুল ইসলাম ফারুকী রা. স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের সাথে আপস না করায় শহীদ হলেন

২৭ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছবি: শীর্ষ ১০ আলিম হত্যায় নেমে পড়ার পর গ্রেফতার শিবিরকর্মী। লিস্ট করা এই ১০ আলিমের একজন আল্লামা ফারুকী র. কে জবাই করা হয়।

মতবাদের নামে সন্ত্রাসের বিরোধী বিখ্যাত উপস্থাপক আল্লামা নূরুল ইসলাম ফারুকী রা. কে আজ রাত নয়টার পর তাঁর বাসভবনে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। ঠিক ৭১ সনে বাংলাদেশের প্রতিটা শহরে যে ঘটনা ঘটতো, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ১৪ ডিসেম্বর পরাজয় নিশ্চিত জেনেও ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার বিরোধী পশুশক্তি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে হত্যা করেছিল, সেই ঘটনার ছায়া খেলে গেল।

ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, উত্তর আফ্রিকার তিউনিশিয়া, লিবিয়া, বা মধ্য আফ্রিকার নাইজেরিয়ার দেশগুলোর মত, মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মত, আরব দেশগুলোর মত মতবাদের নামে নিরস্ত্র অসহায় মানুষকে জবাই করে হত্যা করা বাংলাদেশেও শুরু হল।

মতবাদের পার্থক্যের কারণে মানুষকে হত্যা করা যায় না। ধর্মর নামে, ফিরকার নামে, ভাষা জাতি বর্ণের নামে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা যায় না। কিন্তু তাদের ইসলাম ধর্ম কে শেখাবে? তাদের কুরআন হাদীস কে শেখাবে? মানবতা বিবেকের কথা নাহয় বাদই রইল।

যতদূর জানা যায় ঘাতকদের তিনদিন ধরে যাতায়াত চলছিল তাঁর বাসায়। তাঁর হজ এজেন্সি ছিল, সেই সূত্র ধরে। প্রথমে দুজন যায় এবং পরে তিনজনের মত। পরিবারের সদস্যদের অন্য রুমগুলোয় আটকে রেখে কারো কারো চোখ বেঁধে ডাইনিং স্পেসে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায় পশুর দল।

আল্লামা ফারুকী রা. আলিয়া মাদ্রাসা ক্ষেত্রের উজ্জ্বল ছাত্র ছিলেন। কর্মজীবনের লম্বা সময় অতিবাহিত করেন আরব বিশ্বে, ইমাম হিসাবে। দেশে ফিরে এসে চ্যানেল আই এর বিখ্যাত কাফেলা অনুষ্ঠান তৈরি শুরু করেন। সারা পৃথিবীর ইসলামি নিদর্শনসমূহ সরেজমিন প্রচারিত হতো প্রতিদিন রোজার ইফতারের সময়। দুই শতাধিক পর্ব করেন। সম্পূর্ণ আরব বিশ্ব সহ উত্তর আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া এমনকি ভারত পাকিস্তান ও মাতৃভূমি বাংলাদেশের মুসলিম নিদর্শনসমূহ তিনি দেখিয়েছেন অনুষ্ঠানে। পাশাপাশি সেই নিদর্শনের সাথে জড়িত কুরআনের আয়াত, হাদীসসমূহ এবং ঘটনা ও বইপত্রের রেফারেন্স সহ আলোচনা করতেন। ইসলামের পূর্ববর্তী নবীগণের নিদর্শনের পাশে স্থান দেখিয়ে দেখিয়ে ঘটনা বর্ণনা অসাধারণ চিত্রকল্প তৈরি করতো। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। টেলিভিশনে ইসলামি মাসআলা ও ফতোয়ার অনুষ্ঠানগুলোতে তাঁর উপস্থিতি ছিল উজ্জ্বল।

সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট মসজিদের জুমার নামাজের খতিব ছিলেন।

রাসূল দ.'র হাদীস থেকে, কুরআন থেকে বারবার আমরা বারবার পাই, আমি মধ্যপন্থী, আমার উম্মাহ মধ্যপন্থী। তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। অতীতে যারাই ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে, তারাই ধ্বংস হয়ে গেছে। যে একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করলো, সে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল। যে কাফির নয় এমন কাউকে কাফির বলে, সে কাফির হয়ে যায়। যে মুশরিক বলে আক্রমণ করে নিজ প্রতিবেশিকে, সে মুশরিক হয়ে যায়।

এই মধ্যপন্থী মানুষটা কোনক্রমেই জামাত শিবির রাজাকার আলবদরের সাথে আপোষ করেননি। হেফাজতের নাটকে অংশ নেননি, বরং টেলিভিশনে, রেডিওতে মানুষকে সচেতন করেছেন।

তিনি কোনদিন অস্ত্র তুলে নিতে বলেননি, যুদ্ধ করতে বলেননি, আক্রমণ করতে বলেননি। যা তার সত্য মনে হয়েছে, যা সত্য বলে তিনি জেনেছেন ৫৫ বছরের দীর্ঘ জীবনে, সেই কথাই বলেছেন। বাংলা মায়ের সাথে তিনি প্রতারণা করেননি, বাংলাদেশের সাথে ঘাতকতাকারীদের সাথে কোনমতেই হাত মেলাননি।

এই মানুষটাকে আমরা দেখি পর্বের পর পর্বে, ইসলামের শত শত নিদর্শনে গিয়ে কাঁদতে। কেঁদে কেঁদে এই নিদর্শনসমূহের সাথে জড়িত মহান ঘটনাগুলোকে বলতে।

হায়, একজন আবেগী মধ্যপন্থী মানুষ নিজ দেশকে, নিজ নবী ও তাঁর প্রিয়জনদের, ধর্মকে ভালবাসার 'অপরাধে' যখন হত্যাকান্ডের শিকার হয়, তখন বুঝতে হবে, দেশের ভিতরে কোন পাশবিক মাত্রার পরিবর্তন আসছে। এবং আল্লাহ ভালবাসেন না অত্যাচারী জাতিকে।

(পোস্টটি আপডেট হবে পর্যায়ক্রমে।)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৩০
২৯টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×