একজন উচ্চস্তরের জামাত সমর্থক সংস্কৃতিকর্মী এবং সাহিত্যবোদ্ধার কথা-
*জামাত একাত্তরে রাজাকারি করেছিল, এছাড়া জামাতের আর কোন্ জিনিসটা খারাপ দেখাতে পারবেন?
প্রশ্নটা হুবহু এইরকম,
*আপনার মা কে ৯ মাস ধরে নির্যাতন করেছে, এই ছাড়া রাজাকার সাহেবদের আর কোন্ জিনিসটা খারাপ দেখাতে পারবেন?
বিষয় হল, জামাতি, তা সে যত বড় সংস্কৃতির ধারক বাহক হোক, যত বড় শিল্পী/সাহিত্যিক/পৃষ্ঠপোষক হোক, তাদের সবার কাছে নয় মাস ধরে দেশকে নির্যাতন করা বা নয় মাস ধরে মাকে নির্যাতন করার পরও জামাতির আরো ত্রুটি অণ্বেষণের প্রয়োজন পড়ে। এরই নাম জামাতি।
আর মূর্খদের দিয়ে কাজ করানো কত সহজ, তাদের উদ্বেলিত করা, তাদের দিয়ে যা খুশি করানো কত সহজ, তা যদি বাংলাদেশ এখনো দেখে না থাকে, সারা দেশে জামাতের জনসংযোগ চলছে দুই পদ্ধতিতে-
১. মসজিদের ভিতরে। এবাদাত। যে মসজিদ মানুষ জান্নাতে ঘর বানানোর আসায় দান করেছিল। তা দলীয় সম্পত্তিতে পরিণত। মসজিদ ও আল্লাহকে সামনে রেখে ক্ষমতার পূজা। মসজিদ কমিটি আছে, মসজিদ কমিটির লোক জানে রাজাকাররা কী, কিন্তু মসজিদে মানুষকে কিছু সময় অবস্থান করতে দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার অধিকার তাদের নেই।
২. গ্রামীণ আশীর্বাদে জর্জরিত গ্রাম্য মহিলাদের ঘরে। এমন মহিলাদের ঘরে, যারা সামান্য সচ্ছলতার লোভে পায়ের তলা পর্যন্ত সাপ্তাহিক ঋণে ডোবা। যাদের একূল ওকূল দুকূলই আর্থিক ও সামাজিক সম্মানের দিক দিয়ে গেছে। তারা এখন হাসিমুখে ইসলামি ব্যাঙ্ক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের ঘরে বসতে দেয়। জানে, তারা রাজাকার, জানে, তারা সাপ। কিন্তু সাপ তো পয়সা দিচ্ছে! পয়সার নাম- ক্ষুদ্রঋণ তথা পেটপূজা। সেই পয়সায় ক্ষুদ্রঋণ, যে পয়সাটা ইসলামি ব্যাঙ্ক সুদ হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য ব্যাঙ্ক থেকে পায়।
এবং এই উভয়বিধ কাজের সময় মানুষকে ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে বই। এমন একটা বইয়ের কথা বলি, শিবিরের এমন একটা বইতে আটবার শিরোনাম লেখা হয়েছে, 'মাওলানা মওদুদী'র তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে এততম সফর'। প্রায় দুইশ পৃষ্ঠার বইতে মাত্র একবার বাংলাদেশ উচ্চারণ করা হয়েছে। এবং 'পূর্ব পাকিস্তান' ও 'তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান' শব্দটা লেখা হয়েছে ত্রিশবারের উপরে। সম্পূর্ণ বই পড়ার পর বলছি।
এই পূর্ব পাকিস্তান সম্প্রদায় বড় হচ্ছে। বাংলাদেশের দুধকলায় এখনো টান না পড়ে থাকলে ভবিষ্যতে পড়বে। এই জামাতি সম্প্রদায়কে যখন সুযোগ দেয়া হবে, তখন পরবর্তী ত্রুটি দেখার আশা ছাড়া আর কোনও আশায় বুক বাঁধা সম্ভব না।
আর একটা দেশ, একটা জাতি, একটা ভাষাগোষ্ঠী যখন নিজের মায়ের গণধর্ষণের সোজাসাপ্টা জবাব স্বাধীন হয়ে যৌবনে পদার্পণ করেও (৪২+) করতে পারবে না, তখন নিশ্চিত, সে বৃদ্ধ হয়ে মরে যাবে, কিন্তু কোমর উচু করে দাঁড়াতে কোনদিন পারবে না।
আমাদের আশা শুধু অন্যত্র। সারা বাংলাদেশের সব শিশু পূর্ব পাকিস্তান প্রজন্ম হবে না। সব শিশুর মা ক্ষুদ্রঋণে জর্জরিত নয়, আর হলেও তাদের সবাই ঘরে সাপ ঢুকতে দিবে না। বাংলাদেশের সব শিশুর বাবা চাচা যদি নামাজিও হয়ে যায়, তারা পবিত্র মসজিদে নামাজের আগে পরে কখনোই কালসাপের সাথে বসবে না। বরং বুক ফুলিয়ে পাশ কাটিয়ে যাবে।
এবং এটাই হবে। জাতিগতভাবে আমরা পারিনি এক হয়ে দৃঢ় থাকতে। কিন্তু প্রজন্মান্তরে আত্মশক্তি রয়েই যাবে। সেটা যখনি মাথা তুলবে, ততবার, তখনি সাপ মাথা লুকানোর গর্ত পাবে না।